আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

স্বামী আমাকে অযথা সন্দেহ করে

প্রশ্নঃ ১৪৫৭৬. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমি একজন হিফজের ছাত্রী। আমি বিবাহিত। আমার স্বামী আমাকে অযথা সন্দেহ করে আমি কিছু করি না তারপর ও যা তা বলে। আমি তাকে হাদিস শুনালে সে রেগে যায়।এমন কোন আমল আছে যে সে ঠিক হবে... আমি আল্লাহর কছে প্রাথনা করি তাকে যেন হেদায়াত দান করেন। আমিন।,

২৬ অক্টোবর, ২০২৩

শ্রীপুর

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


একজন মেয়ে বাবা-মায়ের নয়নমনি। ঘরের আলো। ভাই-বোনের ¯েœহ-ভালোবাসার পাত্রী। এদের মাঝেই সে বেড়ে ওঠে। এদেরকে নিয়েই আবর্তিত হয় তার জীবন। একসময় তার জীবনধারায় পরিবর্তন আসে। সে হয়ে যায় আরো কিছু মানুষের আত্মীয়। কিছু অচেনা মানুষের আপনজন। অচেনা-অজানা এক পুরুষ হয় তার একান্ত আপন-স্বামী। তাকে নিয়ে সে স্বপ্ন দেখে, তাকে ঘিরে নতুন জীবনের নতুন বাগান সাজায়।

একজন সৎ ও নেককার স্ত্রী স্বামীর জন্য রহমত, অনেক বড় নিআমত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দুনিয়ার সবচেয়ে উত্তম সম্পদ হিসেবে গণ্য করেছেন।

হযরত আলী রা. থেকে বর্ণিত, যখন এই আয়াতটি নাযিল হল-

وَالَّذِينَ يَكْنزونَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلا يُنْفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ الله.

(যারা স্বর্ণ-রৌপ্য জমা করে এবং তা আল্লাহ্র রাস্তায় খরচ করে না, তাদেরকে কষ্টদায়ক মর্মন্তুদ আযাবের সুসংবাদ দিন।) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন বার বললেন, ‘স্বর্ণ-রূপার বিনাশ হোক’ কথাটি সাহাবায়ে কেরামের জন্য কিছুটা ভারী মনে হল। তাই তারা জিজ্ঞেস করলেন, তাহলে আমরা কোন্ বস্তুকে সম্পদ হিসেবে গ্রহণ করব? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-

لِسَانًا ذَاكِرًا، وَقَلْبًا شَاكِرًا، وَزَوْجَةً تُعِينُ أَحَدَكُمْ عَلَى دِينِهِ.

যিকিরকারী যবান, শোকরকারী অন্তর, এবং এমন স্ত্রী, যে তার স্বামীকে দ্বীনের কাজে সহযোগিতা করবে। -তাফসীরে ইবনে কাসীর ২/৫৪৮ (দারুল ফিকর); মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৩১০১, ২২৩৯২

স্ত্রী হিসেবে একজন নেককার নারী তালাশ করা সকল পুরুষের কর্তব্য। আর প্রতিটি নারীর কর্তব্য, স্বামীকে দ্বীনের কাজে পরিপূর্ণ সহযোগিতা করা।

একজন নারী হিসেবে বিভিন্নভাবে আমি স্বামীর দ্বীনদারিতে সহযোগিতা করতে পারি, স্বামীকে দ্বীনের পথে আনতে পারি। যেমন, স্বামী নামায পড়েন। কিন্তু জামাতের সাথে নয়, জামাতের ব্যাপারে তার উদাসীনতা রয়েছে। আমার উচিত তাকে উৎসাহ দেওয়া এবং প্রতি ওয়াক্তে মসজিদে যাওয়ার ব্যাপারে সহায়তা করা। ইনশাআল্লাহ একসময় তিনি আর জামাত ছাড়তে চাইবেন না। তিনি হয়ত পর্দা করেন, আমাকেও করান, কিন্তু পরিপূর্ণ শরয়ীভাবে নয়। সব শিথিলতা ত্যাগ করে সব বাধা অগ্রাহ্য করে আমাকে অবশ্যই শরয়ী পর্দা করতে হবে। তাকেও পর্দার উপর আনার চেষ্টা করতে হবে। স্বামীর আমলের আগ্রহ কম। কোনো আমল কিছুদিন শুরু করে আবার ছেড়ে দেন। তখন আমি আমার আমল বাড়িয়ে দিব। আল্লাহ্র কাছে দুআ, রোনাজারী করতে থাকব এবং তাকে তারগীব ও উৎসাহ দিতে থাকব। ইনশাআল্লাহ এসবের প্রভাবে তার মধ্যে আমলের জযবা তৈরি হবে।

স্বামী নামায পড়ে না, রোযা রাখে না। তখন স্ত্রীই পারে বুঝিয়ে শুনিয়ে তাকে নেককার বানাতে, নামায রোযা দ্বীনী আমলের প্রতি আগ্রহী করতে। বুঝিয়ে-শুনিয়ে, ভালোবাসা দিয়ে, আল্লাহ্র কাছে দুআ করে স্বামীকে অন্যায় থেকে বিরত রাখতে পারে। যতদিন বিরত না হয়, ততদিন চেষ্টা করে যাওয়া। কতদিন আর না শুনে থাকবে স্ত্রীর কথা। একদিন না একদিন ইনশাআল্লাহ প্রচেষ্টা সফল হবেই।

কারো স্বামীর উপার্জন হালাল নয়। বিভিন্ন অনৈতিক কাজের সাথে তার পেশা যুক্ত। তখন স্ত্রীকে বুদ্ধিমত্তার সাথে নরমে-কঠোরে যেভাবেই হোক হারাম থেকে স্বামীকে মুক্ত করতেই হবে। হারামের অভিশাপ থেকে নিজেদেরকে বাচাঁতে হবে। হালাল রিযিকের প্রতি উৎসাহ দিতে হবে এবং হালাল রিযিকের জন্য যত কষ্টই হোক, তার উপর সবর করার দৃঢ় মনোভাব পেশ করতে হবে। তাতেও যদি স্বামী বিরত না হয়, তাহলে স্বামীকে বুঝাতে হবে যে, না খেয়ে মরে যাব, তবুও হারামের কোনো অংশ পেটে যেতে দিব না।

স্বামী নিজে পর্দা করে না, স্ত্রীকেও পর্দা করতে দেয় না। তখন হতাশ হলে চলবে না। সবসময় তাকে বুঝাতে হবে। তার হেদায়েতের জন্য নিয়মিত আল্লাহ্র কাছে দুআ করতে হবে। ইনশাআল্লাহ, আল্লাহ সাহায্য করবেন। অনেকের দৃঢ় ইচ্ছা- ঘরে পরিপূর্ণ দ্বীনী পরিবেশ তৈরি করার এবং শরয়ীভাবে পরিবারটাকে গড়ে তোলার। কিন্তু স্বামী তা চায় না। বিভিন্নভাবে বাধা সৃষ্টি করে। তখন দৃঢ়ভাবে নিজের ইচ্ছার উপর অটল থাকতে হবে। একজন নারী হিম্মতের সাথে, হেকমতের সাথে যদি এগিয়ে যায় তাহলে তার দ্বারা একটি পরিবারে দ্বীনী পরিবেশ কায়েম হতে পারে।

স্বামী যদি ঘরে টিভি বা এই ধরনের খারাপ বস্তু আনে, তাহলে হেকমতের সাথে স্বামীকে বুঝাতে হবে। এসবের বিভিন্ন কুফল তার সামনে তুলে ধরতে হবে এবং এসবের প্রতি তার মনে ঘৃণা সৃষ্টি করে ঘর থেকে এগুলো দূর করতে হবে।

স্বামী সন্তানদেরকে দ্বীনী শিক্ষা দিতে চায় না। কুরআন-হাদীস শেখাতে চায় না। মাদরাসায় পড়াতে চায় না। তখন তাকে দ্বীনী শিক্ষার ফযীলত শোনাতে হবে। ইলমের মর্যাদা, তালিবুল ইলমের মর্যাদা এবং দ্বীনী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা তাকে বুঝাতে হবে। সন্তানকে দ্বীনী শিক্ষা না দেয়ার কুফল, আল্লাহ্র কাছে জবাবদিহিতার বিষয় তার সামনে তুলে ধরতে হবে।

আবার এসবের বিপরীতও হয়। যেমন স্বামী চান, তার স্ত্রী নামায পড়–ক, রোযা রাখুক, ইবাদত বন্দেগীতে মশগুল থাকুক, কিন্তু স্ত্রী চায় না; চায় নামায রোযা বাদ দিয়ে আনন্দ-বিনোদন আর ভোগ-বিলাসে মত্ত থাকতে। বেপর্দায় থেকে নিজের খেয়াল-খুশি মত চলতে, সন্তানদের দ্বীন ও ঈমান থেকে মাহরূম রাখতে, দ্বীনী ইলম থেকে দূরে রাখতে। এক্ষেত্রে স্বামীকে ধৈর্য ধরতে হবে এবং তাকে বুঝাতে হবে। তাকে বিভিন্ন দ্বীনী মজলিশে নিয়ে যেতে হবে, দ্বীনী পরিবেশে উঠাবসা করার সুযোগ করে দিতে হবে। যাতে তার মাঝে দ্বীনী চেতনা জাগ্রত হয়, দ্বীনদারির প্রতি আগ্রহ হয়, দ্বীনী জীবন গ্রহণ করা সহজ হয়।

স্ত্রীকে বুঝাতে হবে- এই যিন্দেগীটাই শেষ নয়। এরপরে চিরস্থায়ী একটি যিন্দেগী আছে। সেই যিন্দেগী হয় চিরশান্তির হবে, নয় তো চির দুঃখের। কে চায় তার যিন্দেগীটা দুঃখে ভরা থাক। সবাই তো চিরশান্তিই চায়। তো সেই শান্তি পেতে হলে আমাকে, আমার পরিবারকে আল্লাহর বিধান অনুযায়ী চলতে হবে। আর সেই বিধান জানার জন্য আমাকে এবং পরিবারকে অবশ্যই দ্বীন শিখতে হবে।

ঘরে দ্বীনী পরিবেশ বজায় রাখার জন্য, পরিবারের লোকদের মাঝে দ্বীনী মেজায তৈরি করার জন্য ঘরে নিয়মিত তালীমের ব্যবস্থা করব। বাচ্চাদেরকে দ্বীনী তালীম দিব তারগীব ও তারহীবের সাথে। স্বামীর সাথে বোঝাপড়ার সবগুলো কাজ স্ত্রীকে করতে হবে ভেবে চিন্তে হেকমতের সাথে, বুদ্ধিমত্তার সাথে। হৃদ্যতা, আন্তরিকতা ও ভালোবাসার সাথে। স্বামীর সাথে ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হওয়া, অন্যায় আচরণ করা মোটেই সমীচীন নয়। নিজের দুনিয়াবী ভোগ বিলাস পরিত্যাগ করে, নিজের অন্যায় খাহেশাতগুলোকে বিলীন করে পরিপূর্ণ শরয়ীভাবে নিজে চলার চেষ্টা করা। স্বামীকে চলতে উৎসাহ দেওয়া এবং সন্তানদেরকে সেভাবে চালানো। এমন স্ত্রীর কথাই বলা হচ্ছে-
وَزَوْجَةً تُعِينُ أَحَدَكُمْ عَلَى دِينِهِ.
(এমন স্ত্রী, যে দ্বীনদারির ক্ষেত্রে স্বামীকে সহযোগিতা করে।)

আমাদের প্রতিটি নারীর মাঝে আল্লাহ এই গুণ দান করুন।

উচ্চারণ : ‘আল-ওয়াদুদু’
অর্থ : ‘প্রকৃত বন্ধু’; যে তাঁর অনুগত ও তাঁর দিকে ফিরে আসে তিনি তাকে ভালোবাসে। তাদের প্রশংসা করেন এবং তাদের প্রতি তিনি ইহসানকারী।

ফজিলত
>> স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে যদি মিল মহব্বত কমে যায় বা উভয়ের মাঝে বনিবনা না হয় বা তাদের একজন অপর জনের ওপর অসন্তুষ্ট হয়; তখন আল্লাহ তাআলার পবিত্র গুণবাচক নাম (اَلْوَدُوْدُ) ‘আল-ওয়াদুদু’ ১০০১ (এক হাজার এক) বার পাঠ করে কোনো খাবার-দ্রব্যের মাঝে ফুঁ দিয়ে উভয়কে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করলে আল্লাহর রহমতে উভয়ের মধ্যে মিল-মহব্বত ও আন্তরিকতা সৃষ্টি হয়।
>> সেই সাথে সকাল সন্ধা ফরজ নামাযের পর একশত বার করে ''আল্লাহুস সামাদ'' পাঠ করুণ।

প্রিয় বোন >>>>
উপরোক্ত কাজগুলো ইন্‌শাআল্লাহ ফলদায়ক হবে এবং ধীরে ধীরে স্বামী দ্বীনের দিকে ও স্ত্রীর দিকে আকৃষ্ট হতে থাকবে। এরপরও যদি ফল না হয়, স্বামীর বদ-দ্বীনী বাড়তে থাকে, তাহলে নিজের ও সন্তানদের আখিরাতের চিন্তায় মুরব্বীর মাধ্যমে স্বামী থেকে খোলা তালাক গ্রহণ করে তার থেকে পৃথক হয়ে যাওয়ার অবকাশ রয়েছে।
উল্লেখ্য, এ ব্যাপারে অনেক মূর্খ মহিলা যাদু-টোনা, তাবীজ-কবজের মাধ্যমে স্বামীকে নিজের মুঠের মধ্যে রাখতে চেষ্টা করে, এটা জঘন্য অপরাধ। কারণ, পুরুষদেরকে আল্লাহ তা‘আলা তুলনামূলক জ্ঞান বুদ্ধি বেশি দিয়েছেন, তার অভিজ্ঞতাও বেশী।

সুতরাং, সে স্বাধীনভাবে মুরব্বীদের পরামর্শে চললে তার নিজের, বিবি বাচ্চাদের সকলের উন্নতি হবে। সংসারে শান্তি আসবে।
আর যদি অবৈধ পন্থায় তার স্বাধীনতা হরণ করে তাকে বেকুব বা গর্দভ বানিয়ে রাখা হয়, তাহলে এ ধরনের অকেজো স্বামী নিজ স্ত্রীর গোলামী করলেও তার দ্বারা স্ত্রীর নিজেরও কোন কল্যাণ হবে না; বরং ভবিষ্যতে মারাত্মক বিপদে পড়তে হবে।

#সারকথা, স্বামীর স্বাধীনতা হরণ করাও নাজায়েয এবং যাদু টোনা করাও হারাম কাজ। আর কোন কোন অবস্থায় কুফরী কাজ। সুতরাং, কোন অবস্থাতেই স্বামীকে বশ করার জন্য এ সব হারাম কাজ করে নিজের আখিরাত বরবাদ করবে না।
(ইমদাদুল ফাতাওয়া, ৪/ ৮৭, ৬/ ১৯৮)

আল্লাহ তা‘আলা সকল দম্পতিকে তাঁর হুকুম এবং প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের তরীকা মত চলে দুনিয়া ও আখিরাতে কামিয়াব হওয়ার তাওফীক দান করুন।
আমীন।

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ফাতওয়া বিভাগ

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৯১০৫৯

মৃত্যুর পর কি শরীর এর কোনো অঙ্গ মানুষকে দান করা যাবে


২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

Sylhet ৩১০০

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

৫০০৫১

ইবনে জুরাইজ এর ঘটনা


২৮ ডিসেম্বর, ২০২৩

বাজিতপুর

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

৪৫৬৩০

হরতাল-অবরোধ:ইসলামী দৃষ্টিকোণ


১৩ নভেম্বর, ২০২৩

ঢাকা ১২১৭

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

৮৮২০৮

শ্বশুর বাড়ীর গিফট


৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

Selangor

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy