আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

প্রশ্নঃ ১৩৪৮৬. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, মাসুদের বাবা মাসুদকে আট লক্ষ টাকা খরচ করে বিদেশ পাঠায়।মাসুদ ৫ বছর বিদেশ করে তার বাবা কে ১৫ লাখ টাকার মত দেয়,এই ১৫ লাখ টাকার মধ্য থেকে ৬ লাখ টাকা এই শর্তে তার বাবার কাছে দেয় যে,মাসুদ বাড়ি আসলে তাকে ৬ লাখ টাকা ফিরিয়ে দিতে হবে। কিন্তু পরবর্তীতে মাসুদ বাড়ি আসলে তার বাবা তাকে টাকা দিতে অস্বীকার করে।মুহতারাম এর কাছে জানার বিষয় হলো,এই ৬ লাখ টাকা কি তার বাবার জন্য বৈধ হবে? মাসুদ কে টাকা না দিলে,তার বাবা কে কি হাশরের ময়দানে আসামির খাটগরায় দাড়াতে হবে??

৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২২
Pancharukhi

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم





প্রশ্নের ধরণ দেখে বুঝা যাচ্ছে মাসুদ তার বাবার কাছে ওই ছয় লক্ষটাকা আমানত রেখেছিল যা বিদেশ থেকে ফিরে আসলে তার বাবা তাকে ফেরত দেওয়া কথা ছিল। কিন্তু তিনি তা ফেরত দেননি।
শরঈ দৃষ্টিতে মাসুদের বাবার জন্য এই টাকা হালাল হবে না। যদি তিনি মাসুদকে ওই টাকা ফেরত না দেন তাহলে তিনি
খেয়ানতকারী বলে সাবস্ত হবেন। হাশরের ময়দানে এর কারণে তিনি বিচারের মুখোমুখী হবেন।

কুরআনুল কারীমে আমানত রক্ষার ব্যাপারে কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমানত রক্ষা সম্পর্কে নিম্নে কয়েকটি আয়াত উদ্বৃত হলো।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَخُونُوا اللَّهَ وَالرَّسُولَ وَتَخُونُوا أَمَانَاتِكُمْ وَأَنْتُمْ تَعْلَمُونَ-

হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের সাথে খেয়ানত করো না এবং জেনে-শুনে পরস্পরের আমানতসমূহ খেয়ানত করো না’ (আনফাল ৮/২৭)।

إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُكُمْ أَنْ تُؤَدُّوا الْأَمَانَاتِ إِلَى أَهْلِهَا وَإِذَا حَكَمْتُمْ بَيْنَ النَّاسِ أَنْ تَحْكُمُوا بِالْعَدْلِ إِنَّ اللَّهَ نِعِمَّا يَعِظُكُمْ بِهِ إِنَّ اللَّهَ كَانَ سَمِيعًا بَصِيرًا-

“নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ দিচ্ছেন যেন, তোমরা আমানতসমূহ তার যথার্থ হকদারদের নিকট পৌঁছে দাও। আর যখন তোমরা লোকদের মধ্যে বিচার করবে, তখন ন্যায়বিচার করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে সর্বোত্তম উপদেশ দান করছেন। নিঃসন্দেহে আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা’ (নিসা ৪/৫৮)।

وَالَّذِينَ هُمْ لِأَمَانَاتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَاعُونَ- وَالَّذِينَ هُمْ عَلَى صَلَوَاتِهِمْ يُحَافِظُونَ- أُولَئِكَ هُمُ الْوَارِثُونَ- الَّذِينَ يَرِثُونَ الْفِرْدَوْسَ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ-

(৩) ‘আর যারা তাদের আমানত ও অঙ্গীকার সমূহ রক্ষাকারী। এবং যারা তাদের ছালাত সমূহের হেফাযতকারী। তারাই হবে উত্তরাধিকারী। যারা উত্তরাধিকার লাভ করবে জান্নাতুল ফেরদৌসের। যেখানে তারা চিরকাল থাকবে’ (মুমিনূন ২৩/৮-১১)

হাদিস শরিফে রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, মনতুষ্টি ছাড়া অন্যের মাল বক্ষণ করা হালাল নয়।
কাজেই মাসুদের বাবার উচিত ওই টাকা ছেলেকে ফিরিয়ে দেওয়া।

উল্লেখ্য, বাবা মা আমাদের জীবনের অমূল্য সম্পদ। সম্পদ হারালো ফিরে পাওয়া যায়। কিন্তু বাবা-মা হারালে আর ফিরে পাওয়া যায় না। যেখানে বাবা-মা আমার ‍অস্তিত্বের প্রমাণ সেখানে তুচ্ছ সম্পদের কারণে বাবা-মায়ের সাথে সম্পর্ক নষ্ট করা দুনিয়া- আখেরাতে বরবাদীর কারণ হয়ে যেতে পারে। আবার বাবা-মায়ের দোয়া পৃথিবীতে বহু অসাধ্যও সাধিত হতে পারে। যার দৃ্ষ্টান্ত অতিত ইতিহাস তো বটেই আমাদের সামাজের দিকে চোখ বুলালেও হয়তো আমরা দেখতে পাবো।

কাজেই সম্মানিত প্রশ্নাকারীর প্রতি আমাদের সনির্বদ্ধ আবেদন তিনি যেন সামান্য এই কায়টি টাকার জন্য বাবার সাথে দুর্বব্যবহার না করেন। হতে পারে এর কারণে আপনি বাহ্যিকভাবে কিছুটা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন বা হবেন। কিন্তু যদি এই ক্ষতিকে বরদাশত করে বাবা-মায়ের মুখে হাসি ধরে রাখতে পারেন। ইনশাআল্লাহ আল্লাহ তায়ালা আপনাকে দুনিয়া ও আখেরাতে ভরপুর কামিয়াবী ও সফলতা দান করবেন। আর দুনিয়াতেও আপনি একজন দৃষ্টান্তবান সন্তান হিসেবে স্বগৌরবে বেঁচে থাকবেন। আল্লাহ তায়ালা আমাদের ওপর পিতা-মাতার ছায়া দীর্ঘায়িত করুন। তাদের খেদমত ও দোয়া লাভের তাওফিক দান করুন।

والله اعلم بالصواب

মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি বাইতুল কুরআন মাদারাসা , মোহাম্মাদপুর

মন্তব্য (0)

কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন