আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

প্রশ্নঃ ১৩৪৪৮. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, السلام علیکم ورحمة الله وبركاته.সায়েখ কেউ যদি ফানাফিল্লা আকিদা পোশোন করে তার পিছেন ইক্তেদা করা কি যাবে?,

৩০ জানুয়ারী, ২০২২

ঢাকা

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم






এটি একটি কুফরী আকিদা।
এমন আকিদা বিশ্বাসী ব্যক্তি মুসলমান থাকে না। এবং তার পিছনে নামাযের ইক্তিদা করাও শুদ্ধ হবে না ।



<<আরো একটি প্রশ্ন ও তার জবাব >>-------------------------------------
ফানাফিল্লায় পৌঁছলে আর ইবাদত লাগে নাঃ এটি কি সঠিক বক্তব্য না কুফরী বক্তব্য?

জবাব>>>-------------
ফানাফিল্লাহ বলতে যা বুঝানো হয়ে থাকে, তাহল, বান্দা আল্লাহর সাথে সম্পূর্ণ মিশে যাওয়া। [নাউজুবিল্লাহ!]
এটা সম্পূর্ণ কুফরী আকিদা।

তবে কোন ব্যক্তি আল্লাহর প্রেমে পাগল হতে পারে। এতে আশ্চর্যের কিছু নেই। তবে সেই পাগলামী শরীয়তের কোন দলীল নয়। সেই পাগলামী অর্জন করার মেহনত করাও জায়েজ নেই।

তবে আল্লাহর মোহাব্বত পাওয়ার মেহনত করা শুধু জায়েজই নয় উত্তম। তাসাওউফের মেহনত মানেই আল্লাহকে পাওয়ার মেহনত।

হাদীসে এসেছে। যখন জিবরাঈল আঃ রাসূল সাঃ কে প্রশ্ন করেন-

قَالَ: مَا الإِحْسَانُ؟ قَالَ: «أَنْ تَعْبُدَ اللَّهَ كَأَنَّكَ تَرَاهُ، فَإِنْ لَمْ تَكُنْ تَرَاهُ فَإِنَّهُ يَرَاكَ

ইহসান কি জিনিস? রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন, তোমরা আল্লাহ তাআলার ইবাদত কর এমনভাবে, যেন তুমি আল্লাহকে দেখতে পাচ্ছো। যদি দেখতে না পাও, তবে নিশ্চয় তিনিতো তোমাকে দেখতে পাচ্ছেন। {বুখারী, হাদীস নং-৫০}

মৌলিকভাবে এটাই তাসাওউফের মেহনত। আল্লাহর ভয় ও মোহাব্বত নিয়ে শরীয়তের প্রতিটি মাসায়েলকে মান্য করা। ইবাদতকে দায়িত্ব নয় বরং মোহাব্বত নিয়ে আদায় করা। ভালবাসা নিয়ে আদায় করা। আল্লাহ তাআলা সবই দেখছেন সেই মনোভাব নিয়ে ইবাদত করা। পরিশুদ্ধ নিয়তে শরীয়তের প্রতিটি বিধান পালন করা। এর নামই তাসাওউফ।

কিন্তু ফানাফিল্লাহ নামের যে ভয়ংকর ঈমান বিধ্বংসী আকিদার কথা বলা হয় তা সুষ্পষ্ট কুফরী আকিদা। মৃত্যু পর্যন্ত কোন বান্দার জন্যই শরীয়তের কোন আমল রহিত হয়ে যায় না। সবার জন্যই সমান।

শুধুমাত্র তিন ব্যক্তি থেকে শরীয়তের বিধান রহিত থাকে। যা হাদীসে পরিস্কার ভাষায় এসেছে-

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” رُفِعَ الْقَلَمُ عَنْ ثَلَاثَةٍ: عَنِ النَّائِمِ حَتَّى يَسْتَيْقِظَ، وَعَنِ المُبْتَلَى حَتَّى يَبْرَأَ، وَعَنِ الصَّبِيِّ حَتَّى يَكْبُرَ “

হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, তিন ব্যক্তি থেকে হিসাব কিতাবের কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। একজন হল ঘুমন্ত ব্যক্তি জাগ্রত হওয়া পর্যন্ত, দ্বিতীয়জন হল পাগল ব্যক্তি সুস্থ্য হওয়া পর্যন্ত। নাবালেগ ব্যক্তি বালেগ হওয়া পর্যন্ত। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪৩৯৮, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-২০৪১}

এছাড়া সকলের উপর মৃত্যু পর্যন্ত শরীয়তের প্রতিটি বিধান মানা আবশ্যক। এ কারণেই রাসূল সাঃ এবং সাহাবায়ে কেরাম মৃত্যু পর্যন্ত শরীয়তের প্রতিটি বিধানের প্রতি ছিলেন পরিপূর্ণ পাবন্দ।

যারা ফানাফিল্লাহ এ পৌঁছলে ইবাদত লাগে না বলে দাবি করছেন, তাদের মতে কি রাসূল সাঃ এ মর্যাদায় পৌছতে পারেননি? তাহলে নবীজী সাঃ কেন মৃত্যু পর্যন্ত এত গুরুত্বের সাথে ইবাদত করে গেলেন? কেন নামায জামাতের সাথে পড়ার জন্য এত মেহনত করে গেলেন?

সাহাবায়ে কেরাম রাঃ কি এ মর্যাদায় পৌছতে পারেননি?

তাহলে সাহাবায়ে কেরাম কেন এত মুজাহাদা আর কুরবানী দিলেন মৃত্যু পর্যন্ত দ্বীনের জন্য?

নবীজী সাঃ এবং সাহাবায়ে কেরামের মৃত্যু পর্যন্ত ইবাদত গুজারীতে কাটানোই পরিস্কার প্রমাণ করে যে, এটি একটি ধোঁকাবাজীপূর্ণ দাবি। যদি এমন কোন পর্যায় থাকতো, যেখানে গেলে আর ইবাদত লাগে না, তাহলে সেটি অবশ্যই রাসূল সাঃ এর অর্জিত হতো। তারপর সাহাবায়ে কেরাম রাঃ ও সেই মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হতেন।

অথচ পবিত্র কুরআনে মৃত্যু পর্যন্ত সকলকে ইবাদত করতে বাধ্য করে ইরশাদ হয়েছে-

وَاعْبُدْ رَبَّكَ حَتَّى يَأْتِيَكَ الْيَقِينُ (99

তোমরা মৃত্যু পর্যন্ত তোমাদের রবের ইবাদত কর। {সূরা হিজর-৯৯}

একথা সর্বজন বিদিত যে, নবীগণ এবং সাহাবায়ে কেরামগণের চেয়ে অধিক বিশ্বাস আর কারও হতে পারে না। তবু তাদের উপর আমরণ শরীয়তের বিধান পালনের দায়িত্ব ছিল। সেই সাথে তারা মৃত্যু পর্যন্ত তা গুরুত্বের সাথে পালন করে গিয়েছেন।

হযরত ঈসা আঃ এর ব্যাপারে কুরআনে কারীমে ইরশাদ হচ্ছে-

قَالَ إِنِّي عَبْدُ اللَّهِ آتَانِيَ الْكِتَابَ وَجَعَلَنِي نَبِيًّا [١٩:٣٠

সন্তান বললঃ আমি তো আল্লাহর দাস। তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন এবং আমাকে নবী করেছেন।

وَجَعَلَنِي مُبَارَكًا أَيْنَ مَا كُنتُ وَأَوْصَانِي بِالصَّلَاةِ وَالزَّكَاةِ مَا دُمْتُ حَيًّا [١٩:٣١

আমি যেখানেই থাকি, তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন। তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, যতদিন জীবিত থাকি, ততদিন নামায ও যাকাত আদায় করতে। {সূরা মারইয়াম-৩০-৩১}

যেখানে নবীকে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে, যতদিন জীবিত থাকবে ততদিন ইবাদত করে যেতে, সেখানে উম্মতীর জন্য এমন সুযোগ থাকার কোন মানেই হয় না। তাহলে উম্মতী নবী থেকেও উপরের মাকামে চলে যেতে পারে নাউজুবিল্লাহ।

তবে কেউ যদি মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে যায়। তাহলে উক্ত ব্যক্তির উপর শরীয়তের কোন বিধান প্রযোজ্য নয়। যা ইতোপূর্বে বর্ণিত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। পাগলের জন্য কোন বিধান নেই।

তাই কেউ যদি এমন ভারসাম্যহীন হালাতে পৌছে যায়, তাহলে তার জন্য শরীয়তের কোন বিধানই প্রযোজ্য নয়। একথা সত্য। ফানাফিল্লাহ অর্থ যদি এই ধরা হয় যে, ব্যক্তি পাগল হয়ে যাওয়া, তাহলে উপরোক্ত বক্তার বক্তব্যটি সঠিক। অর্থাৎ পাগল হওয়ার কারণে তার উপর শরীয়তের কোন বিধান প্রযোজ্য নয়। কিন্তু ফানাফিল্লাহ অর্থ যদি এই ধরা হয় যে, বান্দা আল্লাহর সাথে মিশে গেছে [নাউজুবিল্লাহ] তাহলে এটি একটি কুফরী ও শিরকী আকিদা।

আল্লাহ তাআলা এসব কুফরী আকিদা থেকে আমাদের মুক্ত থাকার তৌফিক দান করুন। আমীন।

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ফাতওয়া বিভাগ

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৯০৭৩৭

ফরয নামাযের সিজদায় অতিরিক্ত দু‘আ করা


২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

মনাইর কান্দি

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী মাহমুদুল হাসান

৭৫৮০৯

প্রথমে কেরাত শুদ্ধ পড়ে পরে ভুল পড়লে নামায হবে?


২০ অক্টোবর, ২০২৪

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

৫০৬৬৪

আসরের পর কাজা নামাজ পড়ার বিধান


৩ জানুয়ারী, ২০২৪

কালিয়াকৈর

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

৯৩২৯৫

ফরয নামাযের শেষ দুই রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য সূরা মিলালে সাহু সাজদা দিতে হবে?


৫ মার্চ, ২০২৫

মোল্লাপুর ইউনিয়ন

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy