আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

প্রশ্নঃ ১৩২৩২. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ।।। শাইখ আমি জেনারেল শিক্ষিত একজন ছাত্র, মাদ্রাসায় পড়ার সুযোগ আমার হয় নাই, আমার পরিবারের সদস্য চারজন তার মধ্যে আমার বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। এখন আমি কলেজে অধ্যায়নরত আছি, আমার মা বাবা আমার জন্মের আগে অনেক কষ্ট করে সংসার চালিয়েছেন এরকম আমি তাদের থেকে শুনেছি। তারপর তারা আর এই কষ্ট সহ্য করতে না পেরে কারো বুদ্ধি শুনে হারাম উপার্জনের দিকে ধাবিত হয়। এভাবে চলতে থাকে । এরপর আমি যখন আস্তে আস্তে বড় হতে থাকলাম এবং বুঝতে পারলাম যে তারা এই কাজ করে। তখন আমি তাদের মানা করতে শুরু করলাম। কিন্তু প্রথম প্রথম আমি বুঝিনাই যে ব্যাপারটা এত গুরুতর । এই জন্য আমি তাদেরকে সেই ভাবে গুরুত্বারোপ করিনি। এবং তারাও আমার কথায় অতটা গুরুত্ব দেয়নি। এভাবে চলতে থাকে, সময়ের সাথে সাথে আস্তে আস্তে আমার কাছে ব্যাপারটা আরোও স্পষ্ট হতে থাকে। আমি তাদের মানা করি কিন্তু তাদের যুক্তির কাছে আমি হেরে যাই, অবশ্য আমার মানা করাতেও যথেষ্ট হেকমতের অভাব ছিল। তাই হয়তোবা কাজ হয়নাই, আল্লাহই ভালো জানেন।। তারপর আমার বয়স আরো বাড়তে লাগলো এবং ব্যাপারটা আমার কাছে আরোও বেশি গুরুতর হয়ে উঠলো এবং আমি আল্লাহর কাছে পানাহ্ চাইতে শুরু করলাম।। এরপর লেখাপড়ার দরুন আমাকে বাহিরে আসতে হলো। এখন আমি অনুপ্রাণিত হতে লাগলাম বিভিন্ন স্কলারদের কথা শুনে। আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইলে তিনি দয়া করে আমার জন্য একটা হালাল উপার্জনের ব্যাবস্তা করে দেন।আলহামদুলিল্লাহ।।।এখন আমি আমার মা বাবা কে নিষেধ করতেছি হারাম উপার্জন ছেড়ে দিতে এখন তারা অবশ্য আমার কথা শুনে, কিন্তু এখনো সুদ ছেড়ে দিতে পারেনি। আমার মা আমাকে অনেক ভালোবাসে , আমিও তাকে ভালবাসি। আমার মা এই কাজ ছেড়ে দিতে চায় কিন্তু আমার বাবার কারনে পারেনা। আমার বাবা এখন বিভিন্ন অসুখে ভোগেন তবে ওনাকে দেখে মনে হয় সুস্থ সবল মানুষ। উনি এখন কোনো কাজ করতে চান না । উনি কোনো কাজ করতে সাহসি পাননা । এজন্য এই অবৈধ কাজের হিসাব নিকাশও আমার মায়ের দ্বারা করায় । আমার মা আর কিছু বলতে পারে না । আমাকে যখন এই ব্যাপারে বলে তখন আমিও কিছু বলতে পারি না। এখন তারা দুজনই নামাজ পড়ে । তারাও শিকার করে ব্যাপারটা অনেক খারাপ কিন্তু তাদের অজুহাত যে তারা তো অভাবের কারণে এসব করতেছে , না হলে কি করে খাবে । এখন তারা চেষ্টা করতেছে এই কাজ ছাড়ার কিন্তু এখনো ছাড়েনি। এদিকে আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা'য়ালা আমাকে যে কাজের ব্যাবস্তা করে দিয়েছে তাতে শুধু আমার খাওয়ার খরচ এবং আনুষাঙ্গিক কিছু খরচা হয়ে যায়। কিন্তু আমার অন্যান্য চাহিদা পূরণ হয় না। কেননা বেতন অনেক কম। আলহামদুলিল্লাহ।। আমি লেখাপড়ার পাশাপাশি এই কাজ করতেছি। এখন এই পরিস্থিতিতে আমি কি করবো বুঝতে পারছি না। এখন তো আমার সংসয় হচ্ছে, বাড়িতে যেতে, বাড়ি থেকে টাকা নিতে, বাড়ির খাবার খেতে, ইত্যাদি আরও অনেক বিষয়ে। আমার কাছে বাড়ি থেকে পাঠানো কিছু টাকা ও চাল আছে এগুলো খরচ করতে আমার অনেক সংশয় হচ্ছে। আর এখন আবার আমার বাড়ি যাওয়ার ইচ্ছাও অনেক বেড়ে গেছে। আমার মাকে আমি ব্যাপারটা একটু বলেছি সে একটু দুঃখ পেয়েছে কিন্তু বুঝেছে সম্ভবত। এখন এই পরিস্থিতিতে আমি কি করবো বুঝতে পারতেছি না , আমাকে যদি দয়া করে কোরআন সুন্নাহর আলোকে একটু বুঝিয়ে পরামর্শ দিতেন তো অনেক উপকৃত হতাম ইংশাআল্লাহ ।।। জাযাকাল্লাহু খাইরান।।।

৩১ জানুয়ারী, ২০২২
ঢাকা ১২০৮

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم




দুনিয়াটা পরীক্ষার স্থান, এখানে আল্লাহ তাআলা কাউকে ধন সম্পদ দিয়ে পরীক্ষা করেন, আবার কাউকে দারিদ্রতা দিয়ে পরীক্ষা করেন। আর দারিদ্রতার অভিযোগে কেউ যদি হারাম কাজে জড়িয়ে পড়ে তার মানে হলো যে, সে আল্লাহতালার পরীক্ষা ফেল করে ফেললো। তাই দুনিয়াতে চলার ক্ষেত্রে যত কষ্টই হোক না কেন আল্লাহ তাআলার হুকুম অমান্য করা যাবে না। তাছাড়া যারা হারাম পথে উপার্জন করা হতে বিরত থাকে আল্লাহ তা'আলা তাদের রিজিকের ব্যবস্থা করে দেন, এর নজির সর্বত্রই ব্যাপৃত। তাই আপনাকে আপনার মা-বাবাকে যেভাবেই হোক এই হারাম কাজ থেকে ফেরাতে হবে । কেননা সুদ এমন একটি গুনাহের কাজ যা কেবলমাত্র হারামই নয়, বরং তা আল্লাহ তা'আলা ও তাঁর রাসূলের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার মতো গুনাহ। আর এটা তো নিশ্চিত যে, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হবে তাদের ধ্বংস অনিবার্য। তাই আপনি নিজেও হালাল উপার্জনের জন্য আরো সচেষ্ট হোন, আরো চেষ্টা করুন। প্রয়োজনবোধে আপাতত পড়ালেখা বন্ধ করে হলেও কামাই রুজি করে আপনার মা-বাবার প্রয়োজন পূরণ করুন এবং তাদেরকে এহেন গর্হিত ও গুনাহের কাজ হতে ফেরানোর চেষ্টা করুন। নচেৎ তাদের ধ্বংস অনিবার্য, সাথে সাথে উনাদের সাথে যারা আছে তাদেরও। আল্লাহ তা'আলা আপনার জন্য বিষয়টাকে সহজ করে দিন, রিজিকে প্রশস্ততা দান করুন , আমিন।

والله اعلم بالصواب

মোহাম্মদ আমীর হোসাইন, মুফতি ও মুহাদ্দীস, শাইখ আবু সাঈদ ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, মোহাম্মাদপুর।
প্রসঙ্গসমূহ:

মন্তব্য (0)

কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন