আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

প্রশ্নঃ ১২৯৮৩. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমি দুইটা খোয়াব অনেক বার দেখি, কয়দিন পর পর একই খোয়াব দেখি আর কিছুটা ভয় পাই। খোয়াব দুইটা ভয়ানক, আমি দোয়া দরুদ পড়ে ঘুমাতে যাই ,এখন আমাকে এই বিষয়ে কিছু বললে খুশি হব।,

২৩ জানুয়ারী, ২০২২

ঢাকা

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم






ভয়ংকর বা দুঃস্বপ্ন দেখলে করণীয় কী?

কেউ যদি রাতে ভয়ংকর বা দুঃস্বপ্ন দেখে; যা দেখে সাধারণত মানুষ পেরেশান বা হাঁপিয়ে ওঠে। চরম ভয় পায়। রাতের ওই সময়টি অস্থিরতায় কাটে। শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি বেড়ে যায়। সর্বেপরি প্রচণ্ড ভয়ে ঘুম ভেঙে যায়; তখন করণীয় কী? এ সম্পর্কে কী বলেছেন বিশ্বনবি?

হাদিসের পরিভাষায় অকল্যাণকর স্বপ্নকে হুলুম বলা হয়। এ হুলুম বা ভয়ংকর স্বপ্ন মূলত শয়তানের কাজ। ভয় দেখানো ছাড়াও ঘুমের মধ্যে অকল্যাণ করার জন্যই শয়তান ভয়ংকর স্বপ্ন বা দুঃস্বপ্ন নিয়ে মানুষের কাছে উপস্থিত হয়। দুঃস্বপ্ন যে শয়তানের পক্ষ থেকে আসে, এ সম্পর্কে হাদিসে পাকে এসেছে-


হজরত কাতাদাহ রাদিয়াহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ভালো স্বপ্ন হচ্ছে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে আর হুলুম বা খারাপ স্বপ্ন হচ্ছে শয়তানের পক্ষ থেকে।’ (বুখারি ও মুসলিম)

সুতরাং কেউ যদি রাতে এ ভয়ংকর বা দুঃস্বপ্ন দেখে থাকে। যে স্বপ্নে মানুষের মধ্যে প্রচণ্ড ভয়ের সৃষ্টি হয়। সে স্বপ্ন পরবর্তী করণীয় সম্পর্কেও রয়েছে হাদিসের সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা। তাহলো-

১. হজরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, তোমাদের কেউ যদি রাতে এমন কোনো স্বপ্ন দেখে; যা সে অপছন্দ করে (যা খুবই ভয়ংকর)। সে যেন তার বাম দিকে ৩ বার থুথু ফেলে। আর সে যেন ৩ বার আল্লাহ তাআলার কাছ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে। আর (স্বপ্ন দেখাকালীন) যে কাত বা পাশ হয়ে ঘুমে ছিল; সে যেন পাশ পরিবর্তন করে অন্য পাশ বা কাত হয়ে ঘুমায়।’ (মুসলিম)

২. অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কেউ যদি রাতে খারাপ বা ভয়ংকর স্বপ্ন দেখে থাকে তবে সে যেন তার বিছানা পরিবর্তন করে নেয়। (অর্থাৎ কেউ যদি ডান দিকে শোয়া অবস্থায় স্বপ্ন দেখে তবে সে বাম দিকে ঘুরে শোবে। বা বাম দিকে শোয়া থাকলে ডান দিকে ঘুরে ঘুরে শোবে।) আর বাম দিকে ৩ বার থুথু ফেলে। সে যেন স্বপ্নের ভালো দিক আল্লাহর কাছে কামনা করে। আর মন্দ দিক থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চায়।’ (ইবনে মাজাহ)


উল্লেখিত দুই হাদিসের আলোকে সুস্পষ্ট যে, ভয়ংকর বা দুঃস্বপ্ন দেখার পর ৯ কাজ করা আবশ্যক। তাহলো-

১. শয়তানের অনিষ্টতা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া।

২. বাম দিকে ৩ বার থু থু ফেলা।

৩. শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা ৩ বার তাউজ পড়া-

اَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ

উচ্চারণ : আউজুবিল্লাহি মিনাশ শায়ত্বানির রাঝিম।

অর্থ : আমি বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

৪. পাশ বা বিছানা পরিবর্তন করে ঘুমানো। স্বপ্ন দেখার পর যদি আরও ঘুমানোর প্রয়োজন হয় তবে পাশ কিংবা বিছানা পরিবর্তন করে ঘুমানো।

৫. ভয়ংকর স্বপ্ন দেখার পর আর ঘুমাতে না চাইলে- অজু করা এবং দুই রাকাআত নামাজ আদায় করা।

৬. স্বপ্নের কথা কাউকে না বলা। ভয়ংকর খারাপ স্বপ্ন দেখলে সাধারণ কাউকে না বলাই উত্তম। যদি একান্তই কাউকে বলতে হয় তবে যে স্বপ্নের ব্যাখ্যা করতে সক্ষম বা জ্ঞানী, শুভাকাঙ্ক্ষী কিংবা ইলম ও আমল আছে; এমন লোকের কাছে স্বপ্নের কথা বলা।

৭. আল্লাহর কাছে স্বপ্নের ভালো দিক কামনা করা। এবং স্বপ্নের মন্দ বা অকল্যাণ থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া।

৮. স্বপ্নের অকল্যাণ থেকে বাঁচতে সম্ভব হলে আল্লাহর রাস্তায় দান-সাদকা করা। কেননা দান-সাদকায় বালা-মুসিবত দূর হয়।

৯. ভয়ংকর কিংবা দুঃস্বপ্ন দেখলে আল্লাহর কাছে এ দোয়া করা-

হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, যখন কোনো মানুষ ঘুমের মধ্যে ভয় পায় তখন সে যেন বলে-

أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ غَضَبِهِ وَعِقَابِهِ وَشَرِّ عِبَادِهِ وَمِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِيْنِ وَأَنْ يَّحْضُرُوْن

উচ্চারণ : আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন গাদাবিহি ওয়া ইক্বাবিহি ওয়া শাররি ইবাদিহি ওয়া মিন হামাযাতিশ শায়াত্বিনি ওয়া আই-ইয়াহদুরুন।’ (তিরমিজি, মুসনাদে আহমদ)

অর্থ : আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালেমার উছিলায় তাঁর ক্রোধ, শাস্তি এবং তাঁর বান্দাদের অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় চাচ্ছি এবং শয়তানের কুমন্ত্রণা ও তার উপস্থিতি থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ভয়ংকর স্বপ্ন বা দুঃস্বপ্নের ক্ষতি থেকে বাঁচার তাওফিক দান করুন। স্বপ্ন দেখার পর ক্ষতি থেকে বাঁচতে হাদিসে বর্ণিত করণীয়গুলো যথাযথ বাস্তবায়ন করার তাওফিক দান করুন। হাদিসে উল্লেখিত দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনার তাওফিক দান করুন। আমিন।
(সংগৃহীত)

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি
বাইতুল কুরআন মাদারাসা , মোহাম্মাদপুর

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৯০৫১৯

মেসেঞ্জারে বিবাহ করলে‌ কি তা হয়


২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

Gazirchat

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

৮৩৬৫৯

কোন নামাজে কোন সূরা


৪ জানুয়ারী, ২০২৫

চাঁদপুর

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শফিকুল ইসলাম হাটহাজারী

৮৭৩৫১

আল্লাহ কেন অমুসলিমদেরকে এমন অনেক বিষয় দান করেন যা অনেক সময় মুসলিমরা পায়না?


২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

বগুড়া

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী নাঈম সিদ্দীকী বিন আব্দুস সাত্তার

৯০২১৪

রজব শব্দটি মুনসারিফ নাকি গায়রে মুনসারিফ?


২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

৮P৩C+GV৭

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী নাঈম সিদ্দীকী বিন আব্দুস সাত্তার

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy