আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

প্রশ্নঃ ১২৭১০. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, যৌবন কালের একটি সিজদাহ্ বৃদ্ধ বয়সের ৮০ বছরের ইবাদতের সমান হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু এই কথাটি কতটা সহি একটু জানালে উপকৃত হব,

১৬ জানুয়ারী, ২০২২

GHC৩+M২W - Nahil - Abu Dhabi - সংযুক্ত আরব আমিরাত (AE)

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم






যৌবনের ইবাদত যে কারণে মর্যাদাবান
------------------------------------
আল্লাহ তাআলার দরবারে যুবক বয়সের ইবাদত-বন্দেগির মর্যাদা ও গুরুত্ব অনেক বেশি। কারণ যৌবনের টগবগে সময়ে একজন তরুণের মাঝে এক ধরনের কামনা, বাসনা, উত্তেজনা আবার চরম হতাশা কাজ করে। আর তাতে সে ইবাদত-বন্দেগি তথা আল্লাহর ভয় থেকে গাফেল হয়ে যায়।

যারা বয়ঃসন্ধিক্ষণে যৌবনের উম্মাদনা থেকে নিজেদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, তারাই সফলকাম। এ কারণেই যৌবনে নিজেকে নির্মল, সৎ ও চরিত্রবান হিসেবে গড়ে তুলতে কুরআন ও হাদিসে জোর তাগিদ দেয়া হয়েছে।


আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘তিনি (মুসা আলাইহিস সালাম) যখন পূর্ণ যৌবনে পৌছিলেন, তখন তাকে প্রজ্ঞা ও বুৎপত্তি দান করলাম।’ (সুরা কাসাস : আয়াত ১৪)

আসহাবে কাহাফের ৭ ব্যক্তিও ছিল যুবক। যারা এক আল্লাহর ইবাদতে বিশ্বাসী ছিলেন। যাদেরকে শত্রুর হাত থেকে আল্লাহ তাআলা রক্ষা করেছিলেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যখন যুবকেরা পাহাড়ে আশ্রয় গ্রহণ করে তখন দোয়া করে- হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদেরকে (তোমার) নিজের কাছ থেকে রহমত দান করুন এবং আমাদের কাজ সঠিকভাবে পরিচালনা করুন।’ (সুরা কাহাফ : আয়াত ১০)

অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘(হে রাসুল!) আপনার কাছে তাদের ইতিবৃত্তি সঠিকভাবে বর্ণনা করেছি। তারা ছিল কয়েকজন যুবক। তারা তাদের পালনকর্তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছিল এবং আমি তাদের সৎ পথে চলার শক্তি বাড়িয়ে দিয়েছিলাম।’ (সুরা কাহাফ : আয়াত ১৩)

একান্তই যারা যৌবনে ইবাদত-বন্দেগি ত্যাগ করে বিপথে জড়িয়ে গেছে, তাদের জন্যও আল্লাহ তাআলার রহমতের দরজা খোলা। তাদেরকে নিরাশ না হতে কুরআনে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-


‘(হে রাসূল!) আপনি বলুন, হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সুরা যুমার : আয়াত ৫৩)

যুবক বয়সের অধিকাংশ নারী-পুরুষই দুনিয়া অর্জন তথা ধন-সম্পদ, বাড়ী-গাড়ী ও চাকচিক্যময় জীবন-যাপন নিয়েই ব্যস্ত থাকে। পরকালে কথা বেমালুম ভুলে থাকে। আল্লাহর বিধান ও পরকালের সীমাহীন জীবনের সুখ-শান্তির কথা মনে থাকে না।

মানুষের প্রকাশ্য দুশমন বিতাড়িত শয়তান দুনিয়াতে তরুণ-তরুণীকে পরস্পরের সামনে সুমিষ্ট ও সুশোভিত করে তুলে। আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি ও বিধানের ব্যাপারে এ ভাবে অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয় যে, আল্লাহর বিধান যৌবনে পালনের জন্য নয়; তা পালন করবে বৃদ্ধাবস্থায়।

শয়তান মানুষের সামনে দুনিয়ার চাকচিক্য প্রকাশের মাধ্যমে এ চিন্তা-চেতনা থেকে দূরে রাখতে যাবতীয় কৌশল অবলম্বন করে।

মানুষ যেন কোনোভাবেই পথভ্রষ্ট না হয়, সে কারণেই আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিম নাজিল করেছেন। প্রিয়নিব হাদিসে যৌবন বয়সের ইবাদতের গুরুত্ব বারংবার তুলে ধরেছেন।

ইসলামে যৌবনকালের ইবাদত-বন্দেগির গুরুত্ব সীমাহীন। এ সময়ের ইবাদত যে আল্লাহ তাআলার কাছে খুবই প্রিয়, তা ওঠে এসেছে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বর্ণনায়-

‘সাত শ্রেণির মানুষকে আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তাঁর (আরশের) ছায়ায় আশ্রয় দেবেন। এর মধ্যে দ্বিতীয় শ্রেণির মানুষ হলো সে সব যুবক-যুবতি; যারা তার রবের ইবাদতের মধ্য দিয়ে বড় হয়েছে।’ (বুখারি)

যুবকদের উদ্দেশ্যে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নসিহত হলো- ‘একজন বৃদ্ধের ইবাদতের চেয়ে আল্লাহ বেশি খুশি হন যেসব তরুণ-তরুণী যৌবন বয়সে আল্লাহর ইবাদতে লিপ্ত থাকে।’

প্রিয়নবি আরো বলেন, ‘কেয়ামতের দিন ৫টি প্রশ্নের উত্তর দেয়া ব্যতীত মানুষকে এক কদম নড়তে দেয়া হবে না; তার মধ্যে একটি হলো- ‘সে তার যৌবনকাল কোন পথে ব্যয় করেছে।’

অন্য হাদিসে তিনি ৫টি অবস্থার পূর্বে ৫টি অবস্থাকে মর্যাদা দেয়ার কথা বলেছেন, তন্মধ্যে একটি হলো- ‘তোমরা বার্ধক্যের আগে যৌবনকে মর্যাদা দাও।’

হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহ আনহু বলেন, ‘যৌবনের ইবাদত বৃদ্ধ বয়সের ইবাদতের চেয়ে অনেক বেশি দামী। আবার বৃদ্ধ বয়সের পাপ যৌবনের পাপের চেয়ে অনেক বেশি জঘন্য।’

হজরত শেখ সাদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, ‘দুনিয়া ও পরকালের জন্য যা কিছু প্রয়োজন তা এ যৌবন কালেই সংগ্রহ কর।’

আল্লাহ তাআলা যুগে যুগে নবুয়ত ও রেসালাতের দায়িত্ব দিয়ে নবি ও রাসুলদেরকে টগবগে যুবক বয়সেই দুনিয়াতে প্রেরণ করছেন।

এ কারণেই হজরত আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা যুবক ছাড়া যেমন কোনো নবি পাঠাননি তেমনি যুবক ছাড়া কাউকে ইলমও দান করেননি।’

বর্তমান সময়ে যুবসমাজের সার্বিক অবক্ষয়ের বড় কারণ হলো সন্তানদের প্রতি পরিবারের দায়িত্বশীলদের যথাযথ তদারকির অভাব। সমাজের অনেক পিতা-মাতা, নিজ সন্তানের চলাফেরা ও গতিবিধির প্রতি লক্ষ্যই রাখেন না।

তাছাড়া ছোটবেলা থেকে নৈতিক শিক্ষা, নামাজ-রোজা ও কুরআন সুন্নাহর বিধিবিধানের প্রতি বেখায়াল থাকা; যা তার সন্তানকে যুবক বয়সেও আল্লাহর ইবাদত বন্দেগিতে গাফেল রাখে।

পরিশেষে...
কুরআন এবং সুন্নাহ মনীষীদের আলোচনা থেকে বুঝা যায় যে, যৌবনকাল মানুষের জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। উজ্জ্বল ভবিষ্যত ও সুন্দর সমাজ বিনির্মাণের উপযুক্ত সময়ও এটি। এ বয়সের ইবাদত-বন্দেগির মর্যাদাও বেশি।

তাই যুবক-যুবতী যৌবনের উচ্ছ্বলতায় বিবেক, বুদ্ধি হারিয়ে ভুল পথে যাতে পা না বাড়ায়; সেদিকে আগে থেকেই দায়িত্বশীল অভিভাবকদের যেমন সতর্ক থাকা জরুরি। তেমনি যুবক-যুবতীর উচিত কুরআন ও সুন্নাহ মোতাবেক জীবন পরিচালনা করা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহ সব যুবক-যুবতীকে কুরআন সুন্নাহর বিধান মেনে তার ইবাদত-বন্দেগিতে নিজেদেরকে নিয়োজিত রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।
(সংগৃহীত)

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি
বাইতুল কুরআন মাদারাসা , মোহাম্মাদপুর

প্রসঙ্গসমূহ:

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৯০০৫৫

হিফজের ছাত্রীদের পিরিয়ড অবস্থায় তেলাওয়াত


১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

সিলেট

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

৯০২৩৩

তোমাদের সন্তানদের সন্ধ্যায় ঘরে আটকিয়ে রাখ এবং কিছু সময়ের পর ছেড়ে দিও এটা কোরান বা হাদীসের কোথাও কি আছে?


২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী নাঈম সিদ্দীকী বিন আব্দুস সাত্তার

৭৯৩৮৪

টাকা দিয়ে মিথ্যা ব্যাংক স্টেটমেন্ট বানানো কি জায়েয?


২০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

Narayanganj

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী নাঈম সিদ্দীকী বিন আব্দুস সাত্তার

৯০৩৯৭

সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য সার্জারী করে স্তন করা ছোট করা যাবে কি?


২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

ON M৩C ১A২

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy