সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোযা রাখাঃ
ইবাদত-বন্দেগীর মধ্যে দুটি প্রকার রয়েছে : এক. যা অবশ্য পালনীয়, দুই. যা ঐচ্ছিক।
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, অবশ্য-পালনীয় ইবাদতসমূহের গুরুত্ব ঐচ্ছিক ইবাদতসমূহের চেয়ে বেশি। হাদীস শরীফে পরিষ্কার বর্ণিত হয়েছে, ‘বান্দা আল্লাহ তাআলার সবচেয়ে বেশি নৈকট্য অর্জন করে ফরয ইবাদতের মাধ্যমে।’ তবে নফল ও ঐচ্ছিক ইবাদতের ফযীলতও এত বেশি যে, তা মুমিনকে উদ্দীপ্ত ও আগ্রহী করে তোলে। তন্মধ্যে সোমবার ও বৃহস্পতিবার নফল রোযা রাখা অন্যতম। হাদীস শরীফে নফল রোযার অনেক প্রকার ও অনেক ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও নফল রোযা রেখেছেন, উম্মতকেও এর ফযীলত শুনিয়েছেন। এ দুই দিনের রোযার সবচেয়ে বড় ফযীলত হল, এর মাধ্যমে আল্লাহ গোনাহ মাফ করেন।
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবীজী (ﷺ) (গুরুত্বের সাথে) সোম ও বৃহস্পতিবার রোযা রাখতেন। ফলে নবীজীকে জিজ্ঞাসা করা হল-
আল্লাহর রাসূল! আপনি (গুরুত্বের সাথে) সোম ও বৃহস্পতিবার রোযা রাখেন! (এর কারণ কী?)। তখন নবীজী বললেন-
সোম ও বৃহস্পতিবারে আল্লাহ সকল মুসলিমকে ক্ষমা করে দেন। তবে ঐ দুই ব্যক্তি ছাড়া, যারা একে অপরকে বর্জন করেছে। তাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘তারা পরস্পর মিলে যাওয়া পর্যন্ত এদেরকে আপন অবস্থায় ছেড়ে দাও।’
-সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৭৪০
উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রা. বলেছেন-
নবী (ﷺ) সোমবার ও বৃহস্পতিবারে রোযা রাখার ইহতিমাম করতেন। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৭৪৫
হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন-
সোমবার ও বৃহস্পতিবার আমলসমূহ পেশ করা হয়। আমার এটা অধিক পছন্দ, আমার আমল যেন পেশ করা হয় আমি রোযাদার অবস্থায়।
-জামে তিরমিযী, হাদীস ৭৪৭
সপ্তাহের দিনগুলোর মধ্যে সোম ও বৃহস্পতিবার গুরুত্বপূর্ণ। আমলের মাধ্যমে কল্যাণ লাভের বিচারে সপ্তাহের সব দিনই গুরুত্বপূর্ণ, তবে কিছু দিবস একটু বিশেষ গুরুত্বের দাবি রাখে।
সোমবার তো বিভিন্ন দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ; যাঁর মাধ্যমে আমরা আমাদের রবকে চিনেছি, যাঁর মাধ্যমে আল্লাহ আমাদের হেদায়েত দিয়েছেন, যাঁর মাধ্যমে আমরা ওহীর আলোর সন্ধান পেয়েছি, সারকারে দো আলম, সায়্যিদুল মুরসালীন মুহাম্মাদ (ﷺ) এ দিনেই জন্মগ্রহণ করেছেন। যে কিতাবের মাধ্যমে আমরা রবের কালাম লাভ করেছি, আসমানী নূরে স্নাত হয়েছি, হেদায়েতের বাণী লাভ করেছি- সে কিতাবও নাযিল হয়েছে সোমবারে।
হযরত আবু কাতাদা আনসারী রা. থেকে বর্ণিত-
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে সোমবারের রোযা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হল। (এ দিনের রোযার ফযীলত কী? বা কেন আপনি গুরুত্বের সাথে এদিন রোযা রাখেন?) তিনি তখন উত্তরে বললেন-
এ দিনেই অমি জন্মলাভ করেছি এবং এ দিনেই আমার উপর ওহী নাযিল হয়েছে।
-সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৬২