প্রবন্ধ
সৃষ্টির ইতিহাস
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন,الله خالق كل شيء وهو على كل شيء وكيل অর্থ : আল্লাহ তা'আলাই সমস্ত বস্তুর স্রষ্টা এবং তিনিই প্রত্যেক বস্তুর রক্ষণাবেক্ষণকারী। (সূরা যুমার- ৬২)
অধিকাংশ উলামায়ে কেরামের মতে আল্লাহ তা'আলা সর্বপ্রথম আরশ সৃষ্টি করেন। অতঃপর কলম সৃষ্টি করে তাকে কিয়ামত পর্যন্ত ঘটিতব্য সকল বিষয় লিখতে নির্দেশ দান করেন।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি নবীজীর ইরশাদ নকল করেন,
كتب الله مقادير الخلائق قبل أن يخلق السماوات والأرض بخمسين ألف سنة قال وعرشه على الماء.
অর্থ : আল্লাহ তা'আলা আসমান ও যমীন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর আগে সৃষ্টিকুলের 'তাকদীর' লিখে রেখেছেন। আর তখন আল্লাহ তা'আলার আরশ পানির উপর ছিল। (সহীহ মুসলিম; হা.নং ২৬৫৩)
হাফেয ইবনে কাসীর রহ. এ হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন,
فهذا التقدير هو كتابته بالقلم المقادير. وقد دل هذا الحديث أن ذلك بعد خلق العرش فثبت تقديم العرش على القلم الذي كتب به المقادير كما ذهب إلى ذلك الجماهير.
অর্থ : 'তাকদীর' দ্বারা উদ্দেশ্য হল,কলম দ্বারা ভাগ্য লিখন। উল্লিখিত হাদীস এ কথার প্রমাণ বহন করে যে, 'তাকদীর লিখন' আরশ সৃষ্টির পর সম্পন্ন হয়। সুতরাং আরশ সৃষ্টি কলম সৃষ্টির পূর্বে হওয়াটা প্রমাণিত হয়। এটাই অধিকাংশ উলামায়ে কেরামের অভিমত। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২/৩১)
ইবনে জারীর ত্ববারী (মৃত্যু ৩১০হি.) বলেন, অন্যান্যদের মতে আরশের পূর্বে আল্লাহ তা'আলা পানি সৃষ্টি করেছেন। যেমনটি ইমাম সুদ্দী আবূ মালেকের সূত্রে হযরত ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণনা করেছেন। নবীজী বলেন,
إن الله كان عرشه على الماء ولم يخلق شيئا مما خلق قبل الماء.
অর্থ : আল্লাহর আরশ পানির উপর ছিল। পানি সৃষ্টির পূর্বে আল্লাহ তা'আলা অন্য কিছু সৃষ্টি করেননি। (আল বিদায়া ওয়া ননিহায়া ১/৩২)
কারো মতে সৃষ্টির ধারাবাহিকতা হল, কলম, কুরসী, আরশ, বাতাস, অন্ধকার অতঃপর পানি। (আল বিদায়া ওয়া ননিহায়া ১/৩২)
তবে আল্লামা ইবনুল আসীর রহ. (মৃত্যু ৬৩০হি.) বলেন, আল্লাহ তা'আলা কলমের পর লওহে মাহফুয সৃষ্টি করেছেন। (আলকামেল ১/১৮)
আরশ, কুরসী লওহে মাহফুয
বিশুদ্ধ মতানুসারে আরশ এবং কুরসী দু'টি ভিন্ন ভিন্ন সৃষ্টি। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ১/৩৬)
আরশ
আল্লামা মুহাম্মাদ ইবনে উসমান ইবনে আবী শাইবা সিফাতুল আরশ গ্রন্থে বলেন, আরশ সৃষ্টি করা হয়েছে লাল রংয়ের মূল্যবান ইয়াকুত পাথর দ্বারা। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ১/৩৪)
আল্লামা ইবনে কাসীর রহ. (মৃত্যু ৭৭৪হি.) বলেন, আরশ এবং সপ্তম যমীনের মাঝে পঞ্চাশ হাজার বছরের দূরত্ব এবং তার প্রশস্ততা পঞ্চাশ হাজার বছরের। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ১/৩৪)
আরশের উপরাংশ এবং নিম্নাংশের মাঝেও আসমান-যমীনের দূরত্ব এবং তা সপ্ত আসমানের উপর অবস্থিত। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ১/৩৩)
কুরসী
হযরত আবু যর গিফারী রাযি. এর সূত্রে বর্ণিত, কুরসী সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তরে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ঐ সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ, সাত আসমান এবং সাত যমীন কুরসীর তুলনায় বিস্তৃত ময়দানের মাঝে নিক্ষিপ্ত (حلقة) আংটির মত। আর আরশের তুলনায় কুরসীর ভূমিকাও উক্ত (حلقة) আংটির মত। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ১/৩৬)
লওহে মাহফুয
হযরত ইবনে আব্বাস রাযি. বর্ণনা করেন, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লওহে মাহফুয সম্পর্কে বলেন, আল্লাহ তা'আলা লওহে মাহফুয সৃষ্টি করেছেন শুভ্র মুক্তা দ্বারা যার পৃষ্ঠাগুলো লাল ইয়াকুতের। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ১/৩৭)
আসমান ও যমীন সৃষ্টি
আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন, الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا فِي ستة أيام অর্থ : যিনি আসমান এবং যমীনসমূহকে এবং এতদুভয়ের মধ্যে যা কিছু আছে তা ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। (সূরা ফুরকান- ৫৯)
আল্লামা ইবনে কাসীর রহ. বলেন, অধিকাংশ উলামায়ে কেরামের মতে উল্লিখিত আয়াতে 'ছয় দিন' পরিমাণে আমাদের দুনিয়ার ছয় দিনের সমান। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ১/৩৮)
হযরত ইবনে আব্বাস রাযি. বলেন, আল্লাহ তা'আলা সর্বপ্রথম যমীন সৃষ্টি করেন, এরপর সাত আসমান অতঃপর যমীন বিছিয়ে দেন। এ কারণেই আল্লাহ তা'আলা বলেন,وَالْأَرْضَ بَعْدَ ذَلِكَ دَحَاهَا অর্থ : আর এরপর (আসমান সৃষ্টির পর) যমীনকে বিছিয়ে দিয়েছেন এবং যমীন হতে পানি ও তৃণ উদগত করেছেন এবং পর্বতসমূহ স্থাপন করেছেন। (আলকামেল ফিততারীখ ১/১৯, সূরা নাযি'আত- ৩০-৩২)
ফেরেশতা সৃষ্টি
সৃষ্টির প্রতিটি স্তরে প্রতিটি শ্রেণীতে রয়েছে মহাপরাক্রমশালী স্রষ্টার অসীম কুদরতের বহিঃপ্রকাশ। আল্লাহ তা'আলার অসীম কুদরতের একটি নিদর্শন হল, ফেরেশতা সৃষ্টি। আল্লাহ তা'আলা মানব জাতিকে সৃষ্টির ফেরেশতাদেরকে সৃষ্টি করেন 'নূর' থেকে। আম্মাজান হযরত আয়েশা রাযি. সূত্রে বর্ণিত, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,خلقت الملائكة من نور অর্থ : ফেরেশতাদেরকে 'নূর' থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। (সহীহ মুসলিম; হা.নং ২৯৯৬)
আল্লাহ তা'আলা ফেরেশতাদেরকে একটি বিশেষ ক্ষমতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। আর তা হল, তারা আপন আকৃতি ভিন্ন অন্য আকৃতি ধারণ করতে পারে। যেমন সূরা মারইয়ামের ১৬-১৯ নং আয়াত এবং সূরা হুদের ৬৯-৭০ নং আয়াতের বর্ণনায় জানা যায় যে, হযরত জিবরাঈল আ. যথাক্রমে হযরত মারইয়াম এবং হযরত ইবরাহীম আ. এর কাছে 'মানুষ রূপ' ধারণ করে এসেছিলেন। অনুরূপভাবে হাদীসের বর্ণনা থেকে জানা যায়, হযরত জিবরাঈল আ. নবীজীর কাছে কখনো সাহাবী দিহইয়া কালবী আবার কখনো অন্য কোন মানুষের আকৃতিতে আগমন করতেন।
ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান প্রসঙ্গ
ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহ. ইমাম বাইহাকী রহ. এর সূত্রে আলহাবাইক ফী আখবারিল মালাইক গ্রন্থে বলেন,
والإيمان بالملائكة ينتظم في معان: أحدها التصديق بوجودهم.
والثاني: إنزالهم منازلهم، وإثبات أنهم عباد الله وخلقه كالإنس والجن، مأمورون مكلفون لا يقدرون إلا قدرهم الله عليه، والموت عليهم جائز، ولكن الله تعالى جعل لهم أمداً بعيداً. فلا يتوفاهم حتى يبلغوه ولا يوصفون بشيء يؤدي وصفهم به إلى إشراكهم بالله تعالى جده، ولا يدعون آلهة كما دعتهم الأوائل.
والثالث: الإعتراف بأن منهم رسول الله يرسلهم إلى من يشاء من البشر، وقد يجوز أن يرسل بعضهم إلى بعض، ويتبع ذلك الإعتراف بأن منهم حملة العرش، ومنهم الصافون، ومنهم خزنة الجنة، ومنهم خزنة النار، ومنهم كتبة الأعمال، ومنهم الذين يسوقون السحاب، وقد ورد القرآن بذلك كله أو أكثره.
অর্থ : ফেরেশতাদের প্রতি কয়েকটি বিষয়ে ঈমান রাখতে হবে। যথা,
(১) তাদের অস্তিত্বে বিশ্বাস করা।
(২) সৃষ্টির শ্রেণীভেদ হিসেবে তাদেরকে আপন অবস্থানে ঠিক রাখা এবং এ কথার স্বীকৃতি দেয়া যে, তারা মানব ও জীন জাতির মতই আল্লাহর বান্দা এবং সৃষ্টি। তাদের উপরও আল্লাহর আদেশ-নিষেধ আরোপিত হয়। আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমতা বলেই তারা কিছু করতে পারে। তাদের হায়াত সুদীর্ঘ হলেও পরিশেষে তাদের মৃত্যু হবে এবং তারা কখনো আল্লাহর সঙ্গে অংশীদার সাব্যস্ত করে না। তাদেরকে প্রতিপালকের মর্যাদাও দেয়া হয়নি। যেমনটি পূর্ববর্তী অনেক উম্মত মনে করেছিল।
(৩) তাদের মাঝে (ওহীর) বাহক রয়েছে। যাদেরকে আল্লাহ তা'আলা মানুষের কাছে প্রেরণ করে থাকেন। (যেমন জিবরাঈল আ.)।
উক্ত বিশ্বাসত্রয়ের সাথে সাথে দায়িত্বের ক্ষেত্রে ফেরেশতাদের শ্রেণীভেদ সম্পর্কেও ঈমান রাখতে হবে। যেমন, তাদের মাঝে কেউ আছেন 'আরশ বহনকারী', কেউ আছেন সদাসর্বদা আল্লাহর ইবাদাতে দণ্ডায়মান অবস্থায় আত্মসমাহিত, আবার কেউ আছেন জাহান্নামের দারোগা, কেউ আছেন জান্নাতের প্রহরী (জান্নাতের প্রহরীর নাম রিযওয়ান; আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া),
কেউ আছেন মানুষের ভালো-মন্দের আমল লেখক (কিরামান কাতিবীন), আবার কেউ আছেন আকাশের মেঘরাজির সঞ্চালক।(মীকাঈল আ.), আবার কেউ আছেন প্রাণীর রূহ কবজা করার দায়িত্বে (আজরাঈল আ.)।
ফেরেশতাদের গুণাবলী
(১) গুনাহ থেকে পবিত্রতা।
আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন,لَا يَعْصُونَ اللَّهَ مَا أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ অর্থ : তারা আল্লাহ তা'আলা যা আদেশ করেন, তা অমান্য করে না এবং যা করতে আদেশ করা হয়, তাই করে। (সূরা তাহরীম- ৬)
এ আয়াতের ব্যাখায় ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহ. আলহাবাইক ফী আখবারিল মালাইক গ্রন্থে বলেন,
والصواب عصمة جميهم وتنزيه نصابهم الرفيع عن جميع ما يحط من رتبهم
অর্থ: সঠিক আকীদা হল, ফেরেশতাগণের সকলকেই গুনাহ থেকে পবিত্র মনে করা এবং তাদের সম্মানের হানি হয় এমন সব বিষয়ের উর্ধ্বে বিশ্বাস করা। (আলহাবাইক ফী আখবারিল মালাইক; পৃষ্ঠা ২৫২)
(২) পুরুষ-নারীর বিভাজন থেকে পবিত্রতা।
তারা মানুষের মত পুরুষ-নারী শ্রেণীতে বিভক্ত নয়। বরং তারা সকলেই এক শ্রেণীভুক্ত আল্লাহর বিশেষ এক সৃষ্টি।
(৩) আহার গ্রহণ না করা। পবিত্র কুরআনে 'সূরা যারিয়াত'-এর ২৪-২৮ নং আয়াতে হযরত ইবরাহীম আ. এর একটি ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে।
পাপাচারের ফলে কওমে লূতকে ধ্বংস করার নিমিত্তে মানব আকৃতিতে আগমনকারী ফেরেশতাদেরকে হযরত ইবরাহীম আ. মেহমান হিসেবে খানা পরিবেশন করলেন। কিন্তু ফেরেশতারা তা খেলেন না। এ ঘটনায় প্রতীয়মান হয় যে, ফেরেশতাদের খাদ্য গ্রহণের প্রয়োজন হয় না।
ইমাম সুয়ূতী রহ. আলহাবাইক ফী আখবারিল মালাইক গ্রন্থে ফেরেশতারা আহার গ্রহণ করে না এবং তাদের বিয়ে শাদীরও প্রয়োজন হয় না মর্মে উলামায়ে কেরামের ঐকমত্য বর্ণনা করেছেন। (আলহাবাইক ফী আখবারিল মালাইক; পৃষ্ঠা ২৬৪)
ফেরেশতাদের সংখ্যা
ফেরেশতাদের সঠিক সংখ্যা একমাত্র আল্লাহ তা'আলাই জানেন।
পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে, وَمَا يَعْلَمُ جُنُودَ رَبِّكَ إِلَّا هُوَ.
অর্থ : আপনার পালনকর্তার বাহিনী সম্পর্কে একমাত্র তিনিই জানেন। (সূরা মুদ্দাসসির- ৩১)
তবে এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, ফেরেশতাদের সংখ্যা অসংখ্য অগণিত। আল্লামা ইবনে কাসীর রহ. আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া গ্রন্থে ইমাম ত্ববারানী রহ. এর সূত্রে হযরত ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে একটি হাদীস বর্ণনা করেন। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
البيت المعمور في السماء يقال له الضراح وهو على مثل البيت الحرام بحياله لو سقط لسقط عليه يدخله كل يوم سبعون ألف ملك ثم لا يرونه قط فإن له في السماء حرمة على قدر حرمة مكة.
বাইতুল হারাম অর্থাৎ পবিত্র কা'বা ঘর বরাবর (সপ্ত) আসমানের উপরে (ফেরেশতাদের ইবাদতে) সর্বদা আবাদকৃত ঘরটির নাম 'দুরাহ'।
প্রতিদিন সত্তর হাজার ফেরেশতা সেখানে ইবাদত করে। অতঃপর দ্বিতীয়বার আর সে ঘর দেখার সুযোগ তাদের হয় না। নিশ্চয় (সপ্ত) আসমানের উপর এ ঘরের সম্মান পবিত্র কা'বা ঘরের মতই। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ১/৬৬)
একটি ভিত্তিহীন ঘটনা
পবিত্র কুরআনে সূরা বাকারার ১০২ নং আয়াতে হযরত সুলাইমান আ. এর পরবর্তী সময়ে হারূত ও মারূত নামে দু'জন ফেরেশতার দুনিয়ায় আগমনের একটি ঘটনা বিবৃত হয়েছে। আগমন পরবর্তী সময়ে যুহরা নাম্মী একজন নারীকে কেন্দ্র করে হযরত হারূত ও মারূত আ. সম্পর্কে একটি ভিত্তিহীন ঘটনা লোকমুখে প্রসিদ্ধ রয়েছে।
সংক্ষেপে ঘটনাটি এই,
যুহরা নামে এক (অপরূপা সুন্দরী) নারী ছিল। হারূত ও মারূত ফেরেশতাদ্বয় যখন তার কাছে মন্দ অভিপ্রায় ব্যক্ত করল তখন উক্ত নারী ইসমে আ'যম শিখানোর শর্তে তাদের অভিপ্রায় পূরণের আশ্বাস দিল। ফেরেশতাদ্বয় তাকে ইসমে আ'যম শিখিয়ে দিলে সে তা পড়ে আকাশে উড়ে গেল এবং 'যুহরা' নামে একটি তারকার আকৃতিতে আকাশে স্থান পেল। উপর্যুক্ত ঘটনাটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আল্লামা ইবনে কাসীর রহ. এ ঘটনার সনদ প্রসঙ্গে বলেন,
ومثل هذا الاسناد لا يثبت به شئ بالكلية. وإذا أحسنا الظن قلنا هذا من أخبار بني إسرائيل كما تقدم من رواية ابن عمر عن كعب الاحبار ويكون من خرافاتهم التي لا يعول عليها
অর্থ : সারকথা হল,এটি একটি ভিত্তিহীন কল্পকাহিনী যার উপর কোনভাবেই নির্ভর করা যায় না। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ১/৬২)
আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহ. বলেন,
والجواب عن قصة هاروت وماروت أنها لم يرو فيها شيء لاسقيم ولا صحيح عن رسول الله صلى الله عليه وسلم
অর্থ : হারূত ও মারূত ফেরেশতাদ্বয় সম্পর্কে যুহরা নারীর সম্পৃক্ততার ঘটনাটি সহীহ কিংবা যঈফ কোন বর্ণনায়ই নবীজী থেকে বর্ণিত নেই। (আলহাবাইক ফী আখবারিল মালাইক; পৃষ্ঠা ২৫২, আলইসরাইলিয়্যাত ওয়ালমউযূ'আত; পৃষ্ঠা ১৫৭)
সুতরাং পবিত্র ফেরেশতাদের সম্পর্কে এ জাতীয় ভিত্তিহীন কল্প-কাহিনী বর্ণনা করা কিংবা বিশ্বাস করা থেকে বিরত থাকা ঈমানের দাবী।
মন্তব্য (...)
এ সম্পর্কিত আরও প্রবন্ধ
শরয়ী বিধানে প্রাণীর ছবি (পর্ব দুই)
ইমাম নববী রহ.বলেন, قال الزهري: النهي في الصورة على العموم وكذلك استعمال ما هي فيه ইমাম যুহরী রহ. বলে...
শরীয়তের দৃষ্টিতে ফেসবুক ব্যবহার
সামাজিক যোগাযোগের অতি জনপ্রিয় মাধ্যম হিসেবে ডিজিটাল জগতে আগমন ঘটেছিল ফেসবুকের। কিন্তু ইতোমধ্যে ফেসব...
আদর্শ শিক্ষকের গুণাবলী
[প্রদত্ত বয়ান থেকে সংগৃহীত] হামদ ও সালাতের পর... আদর্শ শিক্ষকের পরিচয় হলো- যে শিক্ষক তার নিবিড় অধ...
পরীক্ষায় সফলতা লাভের উপায়
ইলমে দীন শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যর্থতা বলতে কিছু নেই। ইলমে দীন অর্জনে চেষ্টা করতে পারাই অনেক বড় সফলতা।...