প্রবন্ধ

শরয়ী বিধানে প্রাণীর ছবি (পর্ব দুই)

লেখক:মাওলানা মাকসুদুর রহমান
১৪ অক্টোবর, ২০১৪
৩৬৭৮ বার দেখা হয়েছে
মন্তব্য

ইমাম নববী রহ.বলেন,

 قال الزهري: النهي في الصورة على العموم وكذلك استعمال ما هي فيه 

ইমাম যুহরী রহ. বলেন, সব ধরণের প্রাণীর ছবি নিষেধ। তদ্রূপ যে জিনিসে ছবি থাকে তা ব্যবহার করাও নিষেধ। (শরহে মুসলিম ১৪/৭৬) আল্লামা ইবনে আব্দুল বার রহ. (মৃত- ৪৬৩হি.) নিজস্ব সনদে লাইস থেকে বর্ণনা করেন,

رأيت سالم بن عبد الله متكئا على وسادة حمراء فيها تماثيل فقلت له في ذلك فقال إنما يكره هذا لمن ينصبه ويصنعه 

নিষিদ্ধ ছবি হলো, যা টানানো হয় কিংবা অঙ্কন করা হয়। অর্থাৎ ছবি আঁকা এবং টানানো উভয়টিই হারাম। (আল-ইসতিযকার ৮/৪৮৭) 

ইমাম ত্বহাবী রহ. (মৃত- ৩২১হি.) প্রতিকৃতি তৈরি এবং চিত্রাঙ্কনের ব্যাপারে দু'টি মাযহাব উল্লেখ করেন,

فقال قوم قد دخل في ذلك صورة كل شيء مما له روح ومما ليس له روح قالوا لأن الأثر جاء في ذلك مبهما. وخالفهم في ذلك آخرون فقالوا ما لم يكن له من ذلك روح فلا بأس بتصويره وما كان له روح فهو المنهي عن تصويره واحتجوا في ذلك بما روى عن بن عباس…. 

এক. উলামায়ে কেরামের কারও কারও মত হল, হাদীস দ্বারা প্রাণী এবং প্রাণহীন উভয় ধরণের ছবি অঙ্কন করা উদ্দেশ্য। অর্থাৎ সব ধরণের ছবি আঁকাই হারাম। 

দুই. অপর এক জামা'আতের অভিমত হল, হাদীসে হারাম ছবি দ্বারা উদ্দেশ্য প্রাণীর ছবি; প্রাণহীন ছবি অঙ্কনে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই।

 ثم قال: وقد دل على صحة ما قال بن عباس من هذا قول رسول الله صلى الله عليه وسلم فإن الله معذبه عليها حتى ينفخ فيها الروح فدل ذلك على أن ما نهى من تصويره هو ما يكون فيه الروح 

ইমাম ত্বহাবী রহ. বলেন, প্রতিকৃতি তৈরির মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহকারীর ব্যাপারে ইবনে আব্বাসের হাদীস দ্বারা বোঝা যায় দ্বিতীয় মতটি সহীহ। (শরহু মা'আনিল আসার ৪/৯৮)

ইমাম আবূ হানীফা, ইমাম মালেক,ইমাম শাফেয়ী এবং ইমাম আহমদ (রহ.) ছবি অঙ্কনের ব্যাপারে হারাম হওয়ার মত পোষণ করেন। ইমাম নববী রহ. (মৃত-৬৭৬হি.) মুসলিম শরীফ'র ভাষ্যগ্রন্থ আল-মিনহাজ-এ চার ইমামের মাযহাব উল্লেখ করেন,

قال أصحابنا وغيرهم من العلماء تصوير صورة الحيوان حرام شديد التحريم وهو من الكبائر لأنه متوعد عليه بهذا الوعيد الشديد المذكور في الأحاديث وسواء صنعه بما يمتهن أو بغيره فصنعته حرام بكل حال لأن فيه مضاهاة لخلق الله تعالى وسواء ما كان في ثوب أو بساط أو درهم أو دينار أو فلس أو إناء أو حائط أو غيرها وأما تصوير صورة الشجر ورحال الابل وغير ذلك مما ليس فيه صورة حيوان فليس بحرام هذا حكم نفس التصوير وأما اتخاذ المصور فيه صورة حيوان فإن كان معلقا على حائط أو ثوبا ملبوسا أو عمامة ونحو ذلك مما لا يعد ممتهنا فهو حرام وإن كان في بساط يداس ومخدة ووسادة ونحوها مما يمتهن فليس بحرام ولكن هل يمنع دخول ملائكة الرحمة ذلك البيت فيه كلام نذكره قريبا إن شاء الله ولا فرق في هذا كله بين ماله ظل وما لا ظل له هذا تلخيص مذهبنا في المسألة 

প্রাণীর ছবি অঙ্কন করা সর্বাবস্থায় হারাম। চাই অপদস্থ ছবি হোক বা সম্মানজনক ব্যবহারের জন্য ছবি আঁকা হোক, ছোট হোক কিংবা বড় হোক। এটা হলো ছবি অঙ্কনের হুকুম। আর ব্যবহার বা সংরক্ষণের ক্ষেত্রে হুকুম হল, যদি তা হীন বা তুচ্ছ কোন কাজে ব্যবহার করা হয় তবে তা হারাম হবে না, অন্যথায় হারাম। এরপর ইমাম নববী রহ. বলেন,

وبمعناه قال جماهير العلماء من الصحابة والتابعين ومن بعدهم وهو مذهب الثورى ومالك وأبي حنيفة وغيرهم 

সাহাবা, তাবেঈ এবং পরবর্তী অধিকাংশ উলামায়ে কেরামের মত এটাই। ইমাম ছাওরী, ইমাম মালেক, 

ইমাম আবূ হানীফা রহ. এবং অন্যান্যদের মতও এটাই। (শরহে মুসলিম ১৪/৭৬)

উপরোক্ত উদ্ধৃতি থেকে বোঝা গেল, প্রাণীর ছবি অঙ্কন করা, প্রতিকৃতি তৈরি করা চার ইমামের মতে সর্বাবস্থায় হারাম। তবে ব্যবহার কিংবা নিজের কাছে রাখার ক্ষেত্রে কোনও কোনও সূরত হারামের অন্তর্ভুক্ত হবে না। সুতরাং অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহার হারাম না হলেও চিত্রাঙ্কন ও প্রতিকৃতি তৈরি সর্বক্ষেত্রেই হারাম।

আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রহ. (মৃত- ৬৬২হি.) আত-তাওযীহ থেকে ইমাম নববী রহ. এর অনুরূপ মাসআলা বর্ণনা করার পর বলেন,

وبمعناه قال جماعة العلماء مالك والثوري وأبو حنيفة وغيرهم وقال القاضي إلا ما ورد في لعب البنات وكان مالك يكره شراء ذلك 

উলামায়ে কেরামের জামা'আত তথা ইমাম মালেক, ইমাম সুফিয়ান সাওরী, ইমাম আবূ হানীফা রহ. এবং অন্যান্যদের মাযহাব এটাই। আল্লামা কাযী ইয়ায বলেন, বাচ্চাদের জন্য তৈরি করা ছবি সদৃশ খেলনা এই হুকুমের আওতাধীন নয়। তবে ইমাম মালেক রহ. ছবি বিশিষ্ট খেলনা ক্রয় করাকেও অপছন্দ করতেন।

(উমদাতুল কারী ১৫/১২৫) 

পূর্বোক্ত আলোচনা থেকে এ বিষয়টি স্পষ্ট যে, চারও ইমামের মতে ছবি আঁকা, প্রতিকৃতি তৈরি করা সর্বাবস্থায় হারাম এবং জমহুর উম্মতের মাযহাবও এটাই। কিছু সংখ্যক আহলে ইলম থেকে 'শুধু ছায়া বিশিষ্ট ছবিই হারাম' বলে যে মত বর্ণিত আছে এবং যেটা ইবনে আব্দুল বার রহ. ও উল্লেখ করেছেন- ইমাম নববী রহ. তা বাতিল মাযহাব বলে গণ্য করেছেন এবং বিচ্ছিন্ন মত আখ্যায়িত করেছেন। এ মতের প্রবক্তাদের দলীল এবং তার জবাব ছবি সংরক্ষণ ও ব্যবহারের হুকুম বর্ণনা করার সময় আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ। নিম্নে প্রত্যেক মাযাহাবের স্ব-স্ব কিতাবের বরাত পেশ করা হচ্ছে- আল্লামা ইবনে আবেদীন হানাফী রহ. বলেন,

لأن علة حرمة التصوير المضاهاة لخلق الله تعالى وهي موجودة في كل ما ذكر 

ছবি আঁকা হারাম। ছবি আঁকা হারাম হওয়ার কারণ, 'স্রষ্টার সৃষ্টি- বৈশিষ্ট্যের সাদৃশ্য গ্রহণ করা' সব ধরণের ছবিতেই পাওয়া যায়। (রদ্দুল মুহতার ১/৬৪৭) 

আল্লামা কাশ্মীরী রহ. বলেন,

واعلم ان فعل التصوير حرام مطلقا ای تصوير الحيوان سواء كانت صغيرة او كبيرة مجسمة أو مسطحة ممتهنة أو مؤقرة

প্রাণীর ছবি আঁকা সর্বাবস্থায় হারাম, ছোট হোক কিংবা বড়, আকার আয়তন বিশিষ্ট হোক কিংবা না হোক, অপদস্ত ছবি হোক কিংবা সম্মানজনক স্থানের জন্য তৈরি ছবি হোক। (ফয়যুল বারী ৭/৩৩৫)

শাফেইয়্যাদের মতেও সব ধরণের ছবি আঁকা, প্রতিকৃতি তৈরি করা হারাম। এ ব্যাপারে ইমাম নববী রহ. থেকে উদ্ধৃতি আমরা পূর্বে উল্লেখ করেছি। শাফেয়ী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য ফতোয়ার কিতাব নিহায়াতুল মুহতাজ (৬/৫৬৩) -এ হুবহু ইমাম নববী রহ. এর বক্তব্য উল্লেখ করা হয়েছে। হাম্বলীদের মাযহাবের ব্যাপারে আল্লামা ইবনে কুদামা বলেন, وصنعة التصاوير محرمة على فاعلها প্রাণীর ছবি তৈরি করা হারাম। (আল-মুগনী ১০/২০২)

আল্লামা আলাউদ্দীন মারদাবী রহ. (মৃত-৮৮৫হি.) ফিকহে হাম্বলীর নির্ভরযোগ্য কিতাব আল-ইনসাফ-এ লেখেন,

يحرم تصوير ما فيه روح ولا يحرم تصوير الشجر ونحوه

প্রাণীর ছবি আঁকা হারাম। গাছ- গাছালি এবং এ জাতীয় ছবি আঁকা হারাম নয়। (আল-ইনসাফ ফী মা'রিফাতির রাজেহ মিনাল খিলাফ ১/৪৭৪)

সৌদি আরবের ইফতা বোর্ড 'আল-লাজনাতুত দাইমা লিল বুহুসিল ইলমিয়্যাহ' (১/৪৫৭) এর ফতওয়া,

 فدل عموم هذه الأحاديث على تحريم تصوير كل ما فيه روح مطلقا، أما ما لا روح فيه من الشجر والبحار والجبال ونحوها فيجوز تصويرها. 

ছবির ব্যাপারে বর্ণিত হাদীসসমূহ এ কথার প্রমাণ বহন করে যে প্রত্যেক প্রাণীর ছবি অঙ্কনই হারাম। তবে প্রাণহীন বস্তু যেমন গাছপালা, পাহাড়- সাগর ইত্যাদির ছবি আঁকা জায়েয। এতে সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেম বিন বা'য, আব্দুর রায্যাক আফীফীসহ মুফতী বোর্ডের অন্যান্য সদস্যরা স্বাক্ষর করেন। মুফতী শফী রহ. বলেন,

لیکن اصل مسئلہ تصویر کی حرمت کا سب کے نزدیک متفق عایہ ہے 

ছবি অঙ্কন হারাম হওয়ার ব্যাপারে সবাই একমত। (তাসবীর কে শরঈ আহকাম; পৃষ্ঠা ৫৫) 

হামূদ বিন আব্দুল্লাহ আত-তুয়াইজিরী বলেন,

وقد تواترت الأدلة على تحريم التصوير

মুতাওয়াতির বর্ণনা দ্বারা ছবি অঙ্কন হারাম হওয়া প্রমাণিত। (ই'লানুন নাকীর আলাল মাফতুনীনা বিত-তাসবীর; পৃষ্ঠা ১৬) 

যে সকল কারণে প্রাণীর প্রতিকৃতি তৈরি করা ও সংরক্ষণ করা হারাম 

১. مضاهاة بخلق الله আল্লাহ তা'আলার সৃষ্টিবৈশিষ্ট্যের সাদৃশ্য অবলম্বন করা। (আহকামুল কুরআন লি ইবনিল আরাবী ৪/৮) ছবি হারাম হওয়ার বড় কারণ এটাই। পূর্বে বর্ণিত অধিকাংশ হাদীসে এই কারণটি স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। তবে পাহাড়-পর্বত, গাছ- গাছালি এগুলো যদিও আল্লাহ তা'আলার সৃষ্টি। কিন্তু এগুলো অঙ্কন বা চিত্র তৈরি করা আল্লাহ তা'আলার সৃষ্টিবৈশিষ্ট্যের সাদৃশ্য অবলম্বনের নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়ে না। কারণ এ ধরণের ছবি আঁকা হাদীস দ্বারা অনুমোদিত। তাছাড়া ছবি দ্বারা প্রাণীর ছবিই যে উদ্দেশ্য তা আমরা স্বতন্ত্র শিরোনামে আলোচনা করেছি।

২. كون التصوير وسيلة إلى الغلو في غير الله تعالى بتعظيمه ছবি হলো গাইরুল্লাহর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে বাড়াবাড়ির প্রথম পদক্ষেপ। যার শেষ ফলাফল হল, তা পূজনীয় বস্তুতে পরিণত হওয়া। নূহ সম্প্রদায় এবং তার পূর্ববর্তী কওমে যেমনটি ঘটেছিল। এ কারণেই শরীয়তে মুহাম্মাদীতে প্রাণীর চিত্রাঙ্কন, প্রতিকৃতি তৈরি করা সর্বাবস্থায় হারাম ঘোষণা করা হয়েছে।

৩. ان هذه الصور تمنع من دخول الملائكة في المكان الموجود فيه অসংখ্য হাদীসে এসেছে, যে ঘরে প্রাণীর ছবি থাকে সেখানে ফেরেশতারা প্রবেশ করেন না। তাই উলামায়ে কেরাম এটিকেও ছবি হারাম হওয়ার একটি কারণ হিসেবে গণ্য করেছেন।

৪. إن التصوير فيه نوع من التشبه باليهود والنصارى وقد نهينا عن التشبه بهم চিত্রাঙ্কন এবং প্রতিকৃতি তৈরি ইয়াহুদী-নাসারাদের স্বভাব। হযরত আয়েশা রাযি. বলেন,

لما اشتكى النبي صلى الله عليه وسلم ذكرت بعض نسائه كنيسة رأينها بأرض الحبشة يقال لها مارية وكانت أم سلمة وأم حبيبة رضي الله عنهما أتتا أرض الحبشة فذكرتا من حسنها وتصاوير فيها

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অসুস্থতার সময় তাঁর জনৈকা স্ত্রী একটি গির্জার কথা উল্লেখ করলেন। গির্জাটির নাম ছিল মারিয়া। উম্মে সালামা ও উম্মে হাবীবা ইতোপূর্বে হাবশায় গিয়েছিলেন। তারা গির্জাটির কারুকাজ ও তাতে বিদ্যমান প্রতিকৃতিসমূহের কথা আলোচনা করলেন... (সহীহ বুখারী; হা.নং ১৩৪১)

এ হাদীস দ্বারা বোঝা যায়, গির্জায়, ইবাদতখানায় প্রতিকৃতি তৈরি করা ইয়াহুদী-খ্রিস্টানদের স্বভাব ছিল। হাদীসে তাদের সাদৃশ্য অবলম্বন করতে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে।


ছায়াবিহীন ছবি আঁকাও হারাম 

ছবি আঁকা হারাম হওয়ার ব্যাপারে মালেকী মাযহাবের কেউ কেউ দ্বিমত পোষণ করেছেন, যা সঠিক নয়। আল্লামা ইবনে আব্দুল বার আত তাসহীফে উল্লেখ করেছেন,

ذهب بعض أهل العلم إلى أنه لا يكره من الصور إلا ما له ظل مما له روح من تمثال النحاس والجواهر كلها والطين وكل ما إذا صور كان له ظل 

কিছু সংখ্যক আহলে ইলমের অভিমত হল, ছায়াবিশিষ্ট ছবি অঙ্কন করা নিষিদ্ধ।

وذهب غيرهم من أهل العلم إلى أن المكروه من الصور ما كان له روح من كل حيوان من أي شيء صنع كان له ظل أو لم يكن 

অন্য সকলের মত হল, সব ধরণের প্রাণীর ছবিই নিষিদ্ধ, চাই তা যেভাবেই বানানো হোক; ছায়াবিশিষ্ট হোক বা না হোক। (আল- ইসতিযকার ৮/৪৮৮) 

আত-তামহীদে এই দ্বিতীয় মাযহাবের বর্ণনা এসেছে এভাবে,

 وذهب جماعة من أهل العلم إلى أن الصورة المكروهة في صنعتها واتخاذها ما كان له روح

আহলে ইলমের এক জামা'আতের অভিমত হল, প্রাণীর ছবি আঁকা, প্রতিকৃতি তৈরি করা এবং তা নিজের কাছে রাখা সবই হারাম। (আত-তামহীদ ৮/৫২৮ 'আবুন-নযর মাওলা উমর ইবনে উবাইদুল্লাহ' অধ্যায়) স্বয়ং ইমাম মালেক রহ. থেকে বর্ণিত, ফিকহী মাসাইলের সংকলন আল-মুদাওওয়ানাতুল কুবরা (১/১৮২)-তে আছে,

قال ابن القاسم: وسألت مالكا عن التماثيل وتكون في الأسرة والقباب والمنار وما أشبهها؟ قال: هذا مكروه وقال لأن هذه خلقت خلقا

ইবনে কাসেম বলেন, আমি মালেক রহ. কে গম্বুজ, মিনার বা উচু স্থানে আঁকা ছবি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি বললেন, এটা নিষিদ্ধ কাজ। কারণ এ ধরণের কর্মকে ছবি তৈরি বলা হয়।

হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী রহ. ফাতহুল বারীতে (১০/৪৭০) এবং আল্লামা যাকারিয়া কান্ধলবী রহ. আল-কানযুল মুতাওয়ারীতে (২০/১৭৫) উক্ত মতটি নকল করেছেন। ইবনে নুজাইম রহ. (মৃত-৯৭০হি.) বলেন,

وظاهر كلام النووي في شرح مسلم الإجماع على تحريم تصويره صورة الحيوان وأنه قال قال أصحابنا وغيرهم من العلماء تصوير صور الحيوان

মুসলিম শরীফ'র ভাষ্যগ্রন্থে ইমাম নববী রহ. এর বক্তব্য থেকে বুঝে আসে, প্রাণীর ছবি আঁকা হারাম হওয়ার ব্যাপারে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে... (আল-বাহরুর রায়েক ২/৪৮)

ইমাম নববী রহ. বলেন,

 وقال بعض السلف انما ينهى عما كان له ظل ولا بأس بالصور التي ليس لها ظل وهذا مذهب باطل فإن الستر الذي أنكر النبي صلى الله عليه وسلم الصورة فيه لا يشك أحد أنه مذموم وليس لصورته ظل مع باقي الأحاديث المطلقة في كل صورة 

কিছু সংখ্যক সালাফের মত হল, ছায়াবিশিষ্ট ছবি নিষিদ্ধ। আর যে ছবির ছায়া হয় না, তা অঙ্কন করায় শরঈ দৃষ্টিকোণ থেকে কোন সমস্যা নেই। (ইমাম নববী রহ. বলেন,) এটা একটা বাতিল মাযহাব। কারণ ছবিযুক্ত পর্দা বিষয়ক হাদীসে হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। এটা এ কথার প্রমাণ বহন করে যে, ছায়াবিহীন ছবিও নিন্দনীয়। তাছাড়া অন্যান্য মুতলাক (শর্তবিহীন সাধারণ) হাদীসগুলো এর স্বপক্ষে প্রমাণ। (শরহে মুসলিম ১৪/৭৬)

ইবনে হাজার রহ. বলেন, এ মাযহাবকে বাতিল বলার ক্ষেত্রে আরও চিন্তা-ফিকির প্রয়োজন। কারণ এটা মদীনার ফুকাহায়ে সাব'আর মধ্যে কাসেম ইবনে মুহাম্মাদের মত। তবে এ বিষয়ে বর্ণিত হাদীস এ মাযহাবটি মারজুহ হওয়ার প্রমাণ বহন করে। (ফাতহুল বারী ১০/৪৭৫)

মালেকী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য আলেম ইমাম ইবনুল আরাবী রহ. (মৃত-৫৪৩হি.) বলেন, ছায়াবিহীন ছবিও হারাম এবং ছবির ক্ষেত্রে এ মতটি অধিক সহীহ। (আরেযাতুল আহওয়াযী ৭/২৫২) 

সারকথা, উম্মতের প্রথম যামানা থেকে আজ পর্যন্ত (বিচ্ছিন্ন কিছু মত বাদ দিলে) সমস্ত উলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে একমত যে, সব ধরণের ছবি আঁকা হারাম। বর্তমানে আরব এবং হিন্দের সমস্ত মুফতী বোর্ডের ফতোয়া এমনই। শাইখ বিন বা'য, শাইখ মুহাম্মদ ইবনে সালেহ আল- উসাইমিন, মুফতী মুহাম্মদ বুখাইত, শাইখ ইউসুফ কারযাভীসহ আরবের উলামায়ে কেরাম নিজ নিজ ফতোয়ায় ছবি আঁকা হারাম হওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। উপমহাদেশের আলেমদের মাঝে এ ব্যাপারে কোন যুগেই মতভেদ ছিল না।


আলোকচিত্র (ফটো) এর শরঈ বিধান 

ANALOG CAMERA যাকে আরবীতে  الآلة فوتوغرافية الفلمية বলে। এ ধরণের ক্যামেরা দ্বারা ছবি তোলা প্রায় একশ বছর আগ থেকেই চলে আসছে এবং শতাব্দিকাল ধরেই এ বিষয়ে আলোচনা পর্যালোচনা চলে আসছে। এ ধরণের ক্যামেরা দ্বারা ছবি তোলা শরীয়তের দৃষ্টিতে হাতে অঙ্কন করা ছবির মতই হারাম। কারণ প্রাণীর চিত্রাঙ্কন এবং প্রতিকৃতি তৈরি হারাম হওয়ার যে কারণ হাদীসের ভাণ্ডার থেকে উলামায়ে কেরাম চিহ্নিত করেছেন তা এ ক্ষেত্রেও পাওয়া যায়। উদাহরণত একটি কারণ ছিল, স্রষ্টার সৃষ্টিবৈশিষ্ট্যের সাদৃশ্য গ্রহণ করা। এ ধরণের ক্যামেরা দ্বারা তোলা ছবিতে সুস্পষ্টতই এ কারণ বিদ্যমান। এছাড়া ছবি হারাম হওয়ার যে সকল কারণ পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে তাও এতে পাওয়া যায়। এ ধরণের ছবি হারাম হওয়ার ব্যাপারে উলামায়ে দেওবন্দ তথা উলামায়ে হিন্দের কারো দ্বিমত নেই। আল্লামা সাইয়েদ সুলাইমান নদবী এবং কংগ্রেসের মাওলানা আবুল কালাম আযাদ রহ. থেকে এ ব্যাপারে জায়েয হওয়ার বক্তব্য পাওয়া গেলেও পরবর্তীতে তারা এ মত থেকে ফিরে আসেন। মুফতী শফী রহ. তাসবীর কে শরঈ আহকাম এ তাদের পূর্বের মত ও তা থেকে ফিরে আসার ঘটনা বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। 


ক্যামেরার মাধ্যমে তোলা ছবির ব্যাপারে উলামায়ে কেরামের উক্তি

মুফতী শফী রহ. বলেন,

 حقیقت تو یہ ہے کہ فوٹو گرافی فین تصویرسازی کی ایک ترقی یافتہ صورت ہے اور تصویر کشی کے گناه اس نے آسان اور سستا کر کے ایک وبائی مرض بنا دیا ہے

প্রকৃতপক্ষে ফটোগ্রাফীর মাধ্যমে ছবি তৌলা ছবি আঁকারই আধুনিক পদ্ধতি। এ ধরণের ক্যামেরার আবিষ্কার ছবি আঁকার গুনাহকে আরো সহজ এবং ব্যাপক করে দিয়েছে। (তাসবীর কে শরঈ আহকাম; পৃষ্ঠা ৫৯)

کیا فرماتے ہیں علمائے دین اس مسئلہ میں کہ زید عالم ہے وہ کہتا ہے کہ تصویر دستی یعنی فلم کی بنی ہوئی کا بنوانا یا مکان میں رکھنا حرام ہے لیکن فوٹو کا لیا جانا اور مکان میں رکھنا حرام نہیں ہے، بدیں دلیل کہ فوٹو آئینہ کا عکس ہے، عام لوگ آئینہ دیکھتے ہیں ؟

 الجواب: زید کا قول بالکل غلط ہے ، اور یہ قیاس مع الفارق ہے، آئینہ کے اندر کوئی انتقاش باقی نہیں رہتا، زوال محاذاة کے بعد وہ عکس بھی زائل ہو جاتا ہے، بخلاف فوٹو کے، اور یہ بالکل ظاہر ہے، اور پھر صنعت کے واسطہ سے ہے اسلئے بالکل مثل دستی تصویر کے ہے۔ 

হযরত থানবী রহ. এর কাছে ফতোয়া চাওয়া হয়েছিল যে, অনেকে ক্যামেরার ছবিকে আয়নার প্রতিবিম্বের সাথে তুলনা করে থাকেন। তিনি বললেন, এটা একেবারে ভুল কথা। قياس مع الفارق (ভুল তুলনা)। কেননা আয়নায় কোন চিত্রই বাকী থাকে না। ব্যক্তির সমান্তরাল অবস্থানের অবসান ঘটলে ছায়ারও বিলোপ ঘটে। অথচ ফটোর ব্যাপারটা এমন নয়। তাছাড়া ছবি কারিগরির মাধ্যমেই প্রস্তুত হয়। এ জন্য অবিকল হাতে বানানো ছবির মতই এর হুকুম। (ইমদাদুল ফাতাওয়া ৪/২৫৩) 

সৌদির ইফতা বোর্ড 'আল-লাজনাতুদ দায়েমা' এর ফতোয়া,

 لا يجوز تصوير ذوات الأرواح بالكاميرا وغيرها من آلات التصوير. وفي موضع تصوير ذوات الأرواح حرام سواء كان تصويرا بحسما او شمسيا او نقشا بيد او آلة لعموم أدلة تحريم التصوير". وفي موضع آخر "التصوير الفوتوغرافي الشمسي من انواع التصوير المحرم" 

প্রাণীর ছবি তৈরি করা সর্বাবস্থায়ই হারাম, চাই ক্যামেরার মাধ্যমে করুক কিংবা হাতের মাধ্যমে অথবা অন্য কোন মেশিনের মাধ্যমে। (আল- লাজনাতুদ দায়েমা ১/৪৫৮, ৪৫৯, ৪৬০)

শাইখ আলী সাবুনী বলেন,

 التصوير الشمسي الفوتوغرافي لا يخرج عن كونه نوعا من أنواع التصوير فما يخرج بالآلة يسمى صورة فهو وإن كان لا يشمله عن نص الصريح لأنه ليس تصويرا باليد وليس فيه مضاهاة لخلق الله إلا أنه لا يخرج عن كونه ضربا من ضروب التصوير فينبغي أن يقتصر في الاباحة على حد الضرورة وما يتحقق به من المصلحة.

ক্যামেরায় তোলা ছবি চিত্রাঙ্কনের প্রকার বহির্ভূত ছবি নয়। সুতরাং যন্ত্রের সাহায্যে যা তৈরি হয় তাকে ছবিই বলা হয়। যদিও হাদীসের সুস্পষ্ট বর্ণনাগুলো এ ধরণের ছবির ক্ষেত্রে বর্ণিত হয়নি (তখন এমন ছবি তৈরি হত না) কারণ এ ধরণের ছবি হাতে আঁকা নয়। আর এতে সৃষ্টি বৈশিষ্ট্যের সাদৃশ্য অবলম্বন করা হয় না। এতদসত্ত্বেও তা চিত্রাঙ্কনেরই একটি প্রকার। এই ধরণের ছবির বৈধতা সত্যিকার প্রয়োজন এবং বিশেষ মাসলেহাত ছাড়া অনুমোদন হয় না। (রাওয়াইউল বায়ান ২/২৯৯) 

শাইখ নাসিরুদ্দীন আলবানী রহ. বলেন,

وقريب من هذا تفريق بعضهم بين الرسم باليد وبين التصوير الشمسي بزعم أنه ليس من عمل الإنسان وليس من عمله فيه إلا إمساك الظل فقط ! كذا زعموا أما ذلك الجهد الجبار ....

কিছু লোককে হাতে বানানো ছবি আর ক্যামেরা দ্বারা তোলা ছবির মধ্যে পার্থক্য করতে দেখা যায়। তাদের ধারণা মতে ক্যামেরায় তোলা ছবিতে মানুষের কর্ম অনুপস্থিত। সে সূরতে ছায়া গ্রহণের কাজটিই শুধু মানুষ দ্বারা সংঘটিত হয়। তাদের দৃষ্টিতে এ যন্ত্রের আবিষ্কারকের কঠোর পরিশ্রম -যার ফলেই কয়েক ঘণ্টার কাজ এ যন্ত্রের মাধ্যমেই এক মুহূর্তে করা যায়- কোন কাজই নয়। তদ্রূপ চিত্রকর কর্তৃক ক্যামেরা তাক করা, উদ্দিষ্ট লক্ষ্য ঠিক করা এবং এর পূর্বে রিবন ফিট করা পরে ফটো পরিশোধন করা এগুলো তাদের দৃষ্টিতে মানুষের কর্ম নয়। এ পার্থক্যের ফলাফল এই দাঁড়ালো যে, তাদের নিকট ক্যামেরায় তোলা ছবি ঘরে টানানো বৈধ। আর হাতে আঁকা ছবি বৈধ নয়। পুরনো যামানার কিছু আহলে যাহের ছাড়া এ ধরণের পার্থক্য কেউ করেছে বলে আমার জানা নেই। আলবানী রহ. আরো বলেন,... مع أنها تصوير لغة وشرعا وأثرا وضررا অথচ আভিধানিক, পারিভাষিক, পরিণতি, ক্ষতি এই সব দিক বিচারে ক্যামেরায় তোলা চিত্র ছবির অন্তর্ভুক্ত। (আদাবুয যিফাফ; পৃষ্ঠা ১৯১-১৯৪)

শাইখ মুহাম্মদ আহমদ বলেন,

 وما التصوير الفوتوغرافي إلا تطورلمهنة التصوير كما تطورت جميع المهن والصناعات، فالسيارة في الماضي كانت تصنع جميع أجزائها باليد أما الآن فقد حلت المكائن والآلات محل الأيدي

ফটোগ্রাফী চিত্রাঙ্কনেরই একটি বিবর্তিত আধুনিক পদ্ধতি। সব শিল্পেই উন্নতির ছোঁয়া লেগেছে। এক যামানায় গাড়ী তৈরির জন্য সবকিছুই হাতে করা হত। কিন্তু বর্তমান যামানায় যন্ত্র, মেশিন হস্তকর্মের বিকল্প হিসেবে কাজ করছে। ক্যামেরার ব্যাপারটাও তাই। কাজেই বলা যায় চিত্র তৈরি-পেশার এসব পদ্ধতি চিত্র তৈরির উন্নত পদ্ধতি ভিন্ন কিছু নয়। সুতরাং হাত দ্বারা হোক আর যন্ত্রের মাধ্যমে হোক চিত্র তৈরি সর্বাবস্থায় হারাম। (সানা'আতুস সূরাহ বিল ইয়াদ ১/৩৯, শামেলা সংস্করণ) 

হামূদ বিন আব্দুল্লাহ তুওয়াইজিরী বলেন,

أن علة تحريم التصوير هي المضاهاة بخلق الله تعالى۔۔۔۔ وكلما كان التصوير أقرب إلى مشابهة الحيوانات فهو أشد تحريما لما فيه من مزيد المضاهاة بخلق الله تعالى ....

চিত্রাঙ্কন হারাম হওয়ার কারণ হল, আল্লাহ তা'আলার সৃষ্টি বৈশিষ্ট্যের সাদৃশ্য অবলম্বন করা। যে ছবি যত নিখুঁত এবং প্রাণীর আকৃতির কাছাকাছি হবে তা ততো শক্ত হারাম। কারণ এতে সাদৃশ্য অবলম্বন বেশী পাওয়া যায়। কারো কাছেই এ বিষয়টি অস্পষ্ট নয় যে, আলোকচিত্র প্রাণীর হুবহু আকৃতির হয়। হাত দ্বারা খচিত ও চিত্রিত ছবি তো কখনও পুরোপুরি মিলে না। (ই'লানুন নাকীর ১/৬৩)

আরব উলামায়ে কেরামের অধিকাংশের মতে ক্যামেরায় ছবি তোলা হারাম এবং সৌদি আরবের জাতীয় মুফতী বোর্ডের সিদ্ধান্তও তাই। 

শাইখ ওয়ালিদ ইবনে রাশেদ সাঈদান বলেন,

فمنهم من منعهم وهم الأكثر۔۔۔  وهذا القول هو الذي عليه الفتاوى في هذه الديار السعودية. 

যারা এমন ছবিকে হারাম মনে করেন তাদের সংখ্যাই বেশি। এ মতের উপর সৌদির উলামায়ে কেরামের ফতওয়া। 


ক্যামেরায় তোলা ছবিকে যারা নাজায়েয বলেন তাদের মৌলিক যুক্তিগুলো তুলে ধরা হল

এক. ক্যামেরায় তোলা ছবি যদিও প্রাচীন চিত্রাঙ্কন পদ্ধতি থেকে ভিন্ন। কিন্তু সামাজিক প্রচলন এবং শরীয়তের পরিভাষায় তা হারাম ছবিরই অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ عرفا এবং شرعا এগুলো তাসবীর।   

দুই. চিত্রাঙ্কন হারাম হওয়ার যে কারণ مضاهاة بخلق الله (স্রষ্টার সৃষ্টি-বৈশিষ্ট্যের সাদৃশ্য অবলম্বন করা) তা ক্যামেরায় তোলা ছবিতে পাওয়া যায়। বরং ছবির এ প্রকারে কারণটি হাতে বানানো ছবি থেকেও প্রকটভাবে পাওয়া যায়। সুতরাং এ ধরণের ছবি হাতে বানানো ছবি থেকে কঠিনতর হারাম।

তিন. ক্যামেরায় ছবি তোলা মূলত চিত্রাঙ্কনের আধুনিক পদ্ধতি। সব পেশা এবং শিল্পে উন্নতির ছোঁয়া লেগেছে। (তাই বলে হুকুমে হেরফের হবে না)। কারণ চিত্র তৈরির প্রক্রিয়ায় ভিন্নতা আসা হুকুমে ভিন্নতা আসার কারণ হতে পারে না, যদি সে সূরতেও হারাম বা হালাল হওয়ার মূল কারণটি পাওয়া যায়।

চার. এ প্রকারের ছবিকে হারাম বলার মধ্যেই অধিক সতর্কতা রয়েছে। শরীয়তের মূলনীতি হল, বৈধ-অবৈধ মর্মে মতভেদ দেখা দিলে অবৈধ হওয়াকে প্রাধান্য দেয়া। 


যারা ক্যামেরায় ছবি তোলা জায়েয বলেন

মিশরের মুফতী মুহাম্মদ বুখাইত তার গ্রন্থ আল-জাওয়াবুশ শাফী ফী ইবাহাতিত তাসবীরিল ফটোগ্রাফীতে লিখেন,

ان اخذ الصورة بالفوتوغرافيا الذي هو عبارة عن حبس الظل بالوسائط المعلومة الأرباب هذه الصناعة ليس من التصوير المنهي عنه في شيء لان التصوير المنهي عنه هي إيجاد صورة وصنع صورة لم تكن موجودة ولا مصنوعة من قبل 

ক্যামেরার মাধ্যমে ছবি তোলা যা মূলত নির্দিষ্ট মাধ্যম দ্বারা ছায়া গ্রহণ করাকে বুঝায়; কোনওভাবেই নিষিদ্ধ চিত্রাঙ্কনের আওতাভুক্ত নয়। কারণ নিষিদ্ধ হল, অস্তিত্বহীন অপ্রস্তুত ছবি অস্তিত্বে আনয়ন করা এবং সূরত প্রস্তুত করা, যার দ্বারা আল্লাহ তা'আলার সৃষ্টি-বৈশিষ্টের সাদৃশ্য অবলম্বন করা হয়। ক্যামেরা ইত্যাদি দ্বারা ছবি তোলায় এ কারণ পাওয়া যায় না। (আল-হালাল ওয়াল হারাম; কারযাবী, পৃষ্ঠা ১০৪) আল্লামা ইউসুফ কারযাবী রহ. আল- হালাল ওয়াল-হারাম গ্রন্থে এটাই তার মত বলে উল্লেখ করেছেন।

শাইখ মুহাম্মদ ইবনে সালেহ উসাইমিন বলেন, 

وأما التقاط التصوير بالآلة الفوتوغرافية الفورية التي لا تحتاج إلى عمل بيد فإن هذا لا بأس به لأنه لا يدخل في التصوير

ক্যামেরার মাধ্যমে ছবি আহরণ করা যে ক্ষেত্রে হাতের কারসাজির প্রয়োজন পড়ে না কোন সমস্যা নেই। কারণ তা তাসবীরের অন্তর্ভুক্ত নয়।

(ফাতাওয়া আরকানিল ইসলাম; পৃষ্ঠা ১৭০)

তিনি আরো বলেন,

إن هذا ليس من باب التصوير وإنما هو من باب نقل صورة صورها الله عز وجل بواسطة هذه الآية فهي انطباع لا فعل للعبد فيه من حيث التصوير والأحاديث الواردة إنما هي في التصوير الذي يكون بفعل العبد ويضاهي به خلق الله. 

এ ধরণের ছবি চিত্রাঙ্কনের মধ্যে পড়ে না, বলা যায়, মাধ্যম ব্যবহার করে আল্লাহ তা'আলার সৃষ্ট সূরত স্থানান্তর করা হয়েছে। সুতরাং এ ধরণের কাজ মুদ্রণের সমার্থক, বান্দার চিত্রাঙ্কনের সমার্থক নয়। এ ব্যাপারে বর্ণিত হাদীস ঐ সকল তাসবীরের ব্যাপারে যা বান্দার কর্মের মাধ্যমে তৈরি হয় এবং যার দ্বারা আল্লাহ তা'আলার সৃষ্টি-বৈশিষ্টের সাদৃশ্য অবলম্বন করা হয়। (ফাতাওয়া শায়খ মুহাম্মদ সালেহ উসাইমিন ১/১৫২)

শায়খ আব্দুর রহমান আব্দুল খালেক বলেন, 

لا يزعم الزاعم أن صورة آلة التصوير مضاهاة لخلق الله بل هي انعكاس على الورق أو أى سطح أخر ولا تتدخل القدرة الفنية هنا بكثير أو قليل إلا من حيث إتقان الفنان و وضع الآلة أو توضيحها

ক্যামেরায় তোলা ছবিতে স্রষ্টার সৃষ্টি-বৈশিষ্টের সাদৃশ্য অবলম্বন করা হয় এ ধারণা ঠিক নয়, বরং এ ধরণের ছবি কাগজ বা প্লেটের উপরে প্রতিবিম্ব ফেলার সমার্থক, এ সূরতে চিত্রাঙ্কনের কোন কিছুই করা হচ্ছে না। হ্যাঁ এতটুকু হচ্ছে যে, নিখুঁতভাবে ক্যামেরা স্থাপনের কাজটি চিত্রকর সম্পন্ন করছে, আর ছবি তোলার কাজ হচ্ছে কাঁচ, লেন্স এবং কিরণের মাধ্যমে। বলা বাহুল্য, এতে মানুষের কোন দখল নেই। (হুকমুত তাসবীর ফিল ইসলাম; পৃষ্ঠা ১৭)

যারা অ্যানালগ ক্যামেরা দ্বারা ফটো তোলা জায়েয বলেন, তাদের যুক্তির সারকথা হল, 

এক. ক্যামেরায় তোলা ছবি হাদীসে নিষিদ্ধ ছবির মধ্যে পড়ে না, কারণ এতে না আকৃতি প্রদান করা হয়, না নকশার কাজ করা হয়, আর না চিত্রকর কর্তৃক কোন কাটছাট করা হয়, বরং এতে আকৃতি স্থানান্তর করা হয়। আর ইবাদাত ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে মূল বিধান হল, হালাল হওয়া। তবে হারাম হওয়ার ব্যাপারে কোন দলীল থাকলে ভিন্ন কথা।

দুই. এ ধরণের ছবিতে হারাম হওয়ার কারন  مضاهاة لخلق الله  পাওয়া যায় না।


যুক্তি খণ্ডন

এক. উলামায়ে কেরাম বলেন, শরাব হাতে বানানো হোক কিংবা মেশিনে উভয় ক্ষেত্রেই হুকুমের মধ্যে কোন পরিবর্তন হবে না। কারণ 'হাতে বানানো' কর্মটি শরাব হারাম হওয়ার কারণ নয়, মূল কারণ হল, নেশা সৃষ্টি হওয়া। সুতরাং যে শরাবে যত বেশি নেশা সৃষ্টি হবে তা ততো কঠিন হারাম। তদ্রূপ ছবি হাতে বানানো হোক কিংবা যন্ত্রের মাধ্যমে যার আকৃতি বানানো হচ্ছে তার সাথে যত সাদৃশ্যপূর্ণ হবে, হারাম হওয়ার ব্যাপারটা ততো কঠিন হবে। কারণ হারাম হওয়ার কার্যকারণ হল, স্রষ্টার সৃষ্টি-বৈশিষ্টের সাদৃশ্য গ্রহণ করা। 'হাতে বানানো' ছবি হারাম হওয়ার কার্যকারণ নয়। সুতরাং ছবি হাতে বানাক কিংবা যন্ত্রের মাধ্যমে ছবি প্রস্তুতকারী ছবি বানানোর গুনাহে গুনাহগার হবে।

দুই. যারা ক্যামেরায় ছবি তোলা জায়েয হওয়ার মত পোষণ করেন তাদের একটা যুক্তি ছিল পরিকল্পনা প্রণয়ন, আকৃতি গঠন ইত্যাদি কোন কর্ম চিত্রকর কর্তৃক পাওয়া যায় না। গবেষকদের মত হল, চিত্রকরের কোন কর্ম পাওয়া যায় না, এ কথাটি নিতান্তই ভুল, বরং ক্যামেরায় ছবি তোলার ক্ষেত্রে হাতে ছবি অঙ্কনকারীর চেয়েও অধিক কর্ম পাওয়া যায়। (যদিও ছবি হারাম হওয়ার কারণ 'আমল বিল ইয়াদ' নয়)। ক্যামেরা তাক করা, বাটনে চাপ দেয়া, ছবি বের করা, ছবি-শোধন পদার্থে তা সমর্পণ করা ইত্যাদি কাজগুলো চিত্রকর নিজ হাতেই করে। এ সকল কাজ ছাড়া ক্যামেরার মাধ্যমে ছবি অস্তিত্বে আসতে পারে না। সুতরাং এ ধরণের অসার যুক্তিতে হারামকে হালাল করার সুযোগ নেই।

তিন. অনেকে ক্যামেরায় তোলা ছবিকে আয়না বা পানিতে প্রকাশ পাওয়া ছায়ার সাথে তুলনা করেন। এ ব্যাপারে ডিজিটাল ফটোর আলোচনায় বিস্তারিত দলীল পেশ করা হবে ইনশাআল্লাহ। এখানে শুধু মুফতী শফী রহ. এর আলোচনা তুলে ধরা হল।

 آئینہ ، پانی وغیرہ کے اندر آئے ہوئے عکس اورفوٹو سے حاصل کی ہوئی تصویر میں زمین و آسمان کا فرق ہے، ایک کو دوسرے پر قیاس کرنا حض ایک فریب ہے۔۔ 

এটা খুব বেশি চিন্তা-ফিকিরের বিষয় নয় যে, আয়না ও পানিতে প্রকাশিত প্রতিবিম্ব আর ক্যামেরায় ধারণ করা ছবির মধ্যে আসমান-যমীনের পার্থক্য। একটিকে অপরটির উপর তুলনা করা ধোঁকা ছাড়া কিছুই নয়। কথা হল, আয়নায় ছায়া স্থিত হয় না, বরং যার ছায়া তার অনুগামী হয়...

ক্যামেরার আয়নায় যে প্রতিচিত্র আসে তাকে ছায়া ততক্ষণ বলা যাবে, যতক্ষণ তা পদার্থ এবং রং দ্বারা স্থিত না করা হবে। কিন্তু যখনই তা কায়েম এবং স্থিত হয়ে গেল তা ছবি হয়ে গেল। (তাসবীর কে শরঈ আহকাম; পৃষ্ঠা ৫৯, ৬০)

মুফতি তাকী উসমানী বলেন,

 والواقع أن التفريق بين الصور المرسومة والصور الشمسية لا ينبني على أصل قوى ومن المقرر شرعا أن ما كان حراما أو غير مشروع في أصله لا يتغير حكمه بتغير الآلة ....

বাস্তব কথা হল, অঙ্কিত ছবি আর ক্যামেরায় তোলা ছবির মাঝে পার্থক্য করার ভিত্তি মযবুত কোন দলীলের উপর নয়, শরীয়তসিদ্ধ নীতি হলো, যা প্রকৃতপক্ষে হারাম এবং নিষিদ্ধ, তার হুকুম মাধ্যম পরিবর্তনের দ্বারা পরিবর্তিত হয় না। (তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম ৪/৯৭)

মুফতি রফি উসমানী ক্যামেরায় তোলা ছবির ব্যাপারে উলামায়ে কেরামের মতের সারমর্ম এভাবে তুলে ধরেছেন,

ولكن كثير من علماء البلاد العربية منهم: العلامة الشيخ الألباني والشيخ مصطفى الحمامي والشيخ الصابوني والشيخ محمد بن أحمد الواصل وغيرهم وجل العماء أو كلهم في بلاد باكستان والهند والبنغله ديش قد أفتوا بأنه لا فرق بين الصور المرسومة يدويا والصور الشمسية الفوتوغرافية في عدم الجواز أي لا يجوز. 

আরবের অসংখ্য আলেম যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন, শায়খ আলবানী, শায়খ মুস্তফা আল হাম্মামী, শায়খ সাবুনী, শায়খ মুহাম্মদ ইবনে আহমাদ আল ওয়াসেল এবং অন্যান্যরা, তদ্রূপ পাকিস্তান, হিন্দুস্তান, বাংলাদেশের উলামায়ে কেরামের বৃহদাংশ, বরং বলা যায় সকলেই ফতওয়া দিয়েছেন যে, হাতে আঁকা ছবি আর ক্যামেরায় তোলা ছবির মাঝে কোন পার্থক্য নেই, উভয় ধরণের ছবিই নাজায়েয।

(আল মাকালাতুল ফিকহিয়্যাহ; পৃষ্ঠা ১৬১)

মন্তব্য (...)

এ সম্পর্কিত আরও প্রবন্ধ

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত হানাফী

...

মুনাজিরে ইসলাম আল্লামা আমীন সফদর রহঃ
১০ নভেম্বর, ২০২৪
৫১৯০ বার দেখা হয়েছে

“আহলে কুরআন” নামের ভ্রান্ত দল সম্পর্কে সতর্কতা!

...

শাঈখুল ইসলাম হযরত আব্দুল মালেক
৮ নভেম্বর, ২০২৪
৪২১৭ বার দেখা হয়েছে