প্রবন্ধ

শরয়ী বিধানে প্রাণীর ছবি (পর্ব তিন)

লেখক:মাওলানা মাকসুদুর রহমান
১৫ মার্চ, ২০১৫
৪২৪১ বার দেখা হয়েছে
মন্তব্য

ডিজিটাল ফটোর শরয়ী বিধান


অ্যানালগ ক্যামেরায় তোলা ছবি ফিতা বা রিবনের মধ্যে চিত্রায়িত হয়, এ ধরনের ছবি কোন سطح বা নেগেটিভে চিত্রায়িত এবং স্থিত হওয়ার ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই। অনেক ক্ষেত্রে ফিতায় চিত্রিত ছবিটি খোলা চোখে দেখা যায় না ঠিক তাই বলে এ ধরনের ছবি শরীয়তে নিষিদ্ধ ছবির হুকুম থেকে বের হবে না। অধিকাংশ উলামায়ে কেরাম এ মতই পোষণ করেন। এ ধরনের ছবির ক্ষেত্রে মূল মতভেদের বিষয় ছিল; ছবি তোলায় কারো ফে'ল বা কর্ম পাওয়া গেছে কি না? এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা পূর্বে চলে গেছে। ডিজিটাল ক্যামেরা আবিষ্কারের পর মূল প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে; এ ধরনের ক্যামেরায় তোলা ছবি শরীয়তে নিষিদ্ধ হারাম ছবি কি না? এ বিষয়ে খোলাখুলি আলোচনার জন্য ডিজিটাল ক্যামেরায় ছবি তোলার, তা সংরক্ষণের এবং পরবর্তীতে স্ক্রিনে প্রকাশের পদ্ধতি সম্পর্কে সুস্পষ্ট তথ্য সামনে রাখা প্রয়োজন।

এক. ছবি তোলা থেকে সংরক্ষিত হওয়া পর্যন্ত কার্যধারা সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা বলেন,

After the photo is then the image the process by which the image is converted info image data is known as scanning the image. At first is scanned totally by the moving image sensor aftar scanning the linear scanner apply the image into three byers of different colours (red, blue and green) which perfectly adgust the colours with the scanned image to turn a perfect image data.

অর্থাৎ ছবিটি তোলার পর লেন্সের সাহায্যে ছবিটি ক্যামেরার মধ্যে প্রবেশ করে। সেই ছবিটি ইমেজ সেন্সরের মাধ্যমে স্ক্যানিং পদ্ধতিতে হুবহু আরেকটি ছবি তৈরি করে। সেই ছবিটিকে Linear sensor তার তিন স্তরের (লাল, নিল এবং সবুজ) রংয়ের সাহায্যে হুবহু আসল ছবিটির সাথে এ্যাডজাস্ট করে ইমেজ ডাটায় পরিণত করে।

উল্লেখ্য, যে সেন্সরের সাহায্যে ছবিটি ইমেজ ডাটায় পরিণত হয় সে সেন্সরকে ইমেজ সেন্সর বলে।

দুই. ডিজিটাল ক্যামেরায় তোলা ছবি ইমেজ ডাটার সাহায্যে সংরক্ষণ করা হয়। সংরক্ষিত অবস্থায় ছবির আকৃতি সংরক্ষিত থাকে না; বরং যখন স্ক্রিনে প্রকাশ করা হয় তখন শুরুতে যেই আকৃতিতে সংরক্ষণ করা হয়েছে সেই আকৃতিতে প্রকাশ পায়। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের (UK) ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড ফিজিক্স-এর প্রফেসর Ordwell Smith বলেন, All types of digital cameras store photos with the help of image data সব ধরনের ডিজিটাল ক্যামেরা তাদের তোলা ছবি ইমেজ ডাটার সাহায্যে মেমোরি ডিস্ক ইত্যাদির মধ্যে জমা রাখে।

ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ কম্পিউটার লাহোরের জনাব তাফসীর আহমদ বলেন,

 ویڈیو کیمرے یاڈیجیٹل کیمرے میں محفوظ کی گئی شبیہ مطبیعی یا ظاہری اعتبار سے شبیہ نہیں ہوتی۔

অর্থ: ভিডিও ক্যামেরা বা ডিজিটাল ক্যামেরায় সংরক্ষিত ছবি বাহ্যিক এবং প্রকৃতিগতভাবে চিত্র না। (ডিজিটাল তাসবীর আওর সিডি কে শরয়ী আহকাম; পৃষ্ঠা ১০৮)

তিন. ডিজিটাল ক্যামেরায় তোলা সংরক্ষিত ছবিটি যখন টিভি স্ক্রিন কিংবা কম্পিউটার মনিটরে ছবির আকৃতিতে প্রকাশ পায় তখন ছবিটি Dots/Pixols এর সমষ্টি দ্বারা ছবির রূপ ধারণ করে। ম্যাগনেটের সাহায্যে ইলেকট্রিক সিগন্যালের মাধ্যমে অসংখ্য রশ্মিফোটার ইলেকট্রিক খণ্ডাংশের সমষ্টিই হল এ ছবি। এ আলোকরশ্মি প্রতি মুহূর্তে নিঃশেষ হয়ে নতুন অসংখ্য আলোকরশ্মির উদ্ভব ঘটে। এভাবে ছবিটি জীবন্ত হয়ে দৃষ্টিতে আসে।


ডিজিটাল ক্যামেরায় তোলা ছবি নিষিদ্ধ ছবি হওয়ার ব্যাপারে উলামায়ে কেরামের মতামত

অ্যানালগ ক্যামেরার ছবি আর ডিজিটাল ক্যামেরার ছবির মধ্যে গঠনমূলক দিক থেকে মূলত বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির Pr. John Philip বলেন, Huge changes have took place from the first to now a days digital cameras.

'অ্যানালগ ক্যামেরা থেকে শুরু করে ডিজিটাল ক্যামেরা পর্যন্ত বিশাল পরিবর্তন এসেছে।' 

এ পরিবর্তনের কারণেই অ্যানালগ ক্যামেরায় ছবি তোলা হারাম হওয়ার ব্যাপারে মতভেদ সামান্য হলেও ডিজিটাল ক্যামেরার ক্ষেত্রে মতের বিভিন্নতা আরো বেশি দেখা গেছে। নিম্নে আমরা উভয় মতের বিশ্লেষণ তুলে ধরার প্রয়াস পাবো ইনশাআল্লাহ।

ডিজিটাল ছবি হারাম হওয়া না হওয়ার ব্যাপারে মতের বিভিন্নতা হারাম হওয়ার কার্যকারণ নির্ধারণে মতপার্থক্যের কারণে হয়েছে। যারা ডিজিটাল ক্যামেরায় ছবি তোলা এবং এ ছবি হারাম না হওয়ার কথা বলেন; তাদের দৃষ্টিতে ডিজিটাল ক্যামেরায় তোলা ছবি শরয়ী পরিভাষায় যাকে তাসবীর বলা হয়েছে তার সংজ্ঞায় পড়ে না এবং এতে পারিভাষিক ছবি হওয়ার মৌলিক তিনটি বৈশিষ্ট্য অনুপস্থিত,

(এক) ليس لها ثبات واستقرار এধরনের ক্যামেরায় তোলা ছবির কোন স্থিরতা এবং স্থিতিশীলতা নেই।

(দুই)  ليست منقوشة على شيء بصفة دائمة স্থায়ীভাবে কোন কিছুতে অঙ্কিত এবং চিত্রিত হয় না।

(তিন) فان الصور لا تنقش على الشريط وإنما تحفظ فيها الأجزاء الكهربائية التي ليس فيها صورة ডিজিটাল চিত্র ফিতায় চিত্রিত হয় না; বরং তাতে ইলেক্ট্রিক খণ্ডাংশ সংরক্ষিত হয় যাতে কোন সূরত থাকে না।

ডিজিটাল ছবির ব্যাপারে মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উসমানী দা.বা. বলেন,

فان لهذا العبد الضعيف عفا الله عنه، فيه وقفة، وذلك لأن الصورة المحرمة ما كانت منقوشة او منحوتة بحيث يصح لها صفة الاستقرار على شيء بصفة دائمة فإنها بالظل أشبه منها بالصورة، ويبدو أن الصورة التلفزيون والفيديو لا تستقر على شيء في مرحلة من المراحل إلا إذا كان فى صورة فيلم فان كانت صورة الإنسان حية بحيث تبدو على الشاشة في نفس الوقت الذي يظهر فيه الإنسان أمام الكاميرا فإن الصورة لا تستقر على الكاميرا ولا على الشاشة وإنما هي أجزاء كهربائية تنتقل من الكاميرا الى الشاشة ... ثم تفتى وتزول .... اما اذا احتفظ بالصورة في شريطة الفيديو، فإن الصور لا تنقش على الشريط وإنما تحفظ فيها الأجزاء الكهربائية التي ليس فيها صورة ... الخ 

অর্থ : আমার (এ ধরনের ছবি হারাম হওয়ার ব্যাপারে) সংশয় রয়েছে। তার কারণ, হারাম ছবি হল যা চিত্রিত কিংবা খোদাইকৃত হয়। স্থায়িত্বের গুণে গুণান্বিত হয়। বরং এ ধরনের ছবি তো শরীয়তে নিষিদ্ধ ছবির চেয়ে ছায়ার সাথে অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ মনে হয়...। কারণ এ ছবি ক্যামেরাতেও স্থিত না পর্দায়ও না। এটাতো কেবল ইলেক্ট্রিক খণ্ডাংশ ক্যামেরা থেকে স্ক্রিনে আসে...। নিঃশেষ হয় আবার অস্তিত্বে আসে। আর যখন ভিডিও ক্যামেরায় সংরক্ষণ করা হয় তখন ছবিটি কোন ফিতায় চিত্রিত হয় না। চিত্রিত হয় হল ইলেক্ট্রিক খণ্ডাংশে যা চিত্র নয়। (তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম ৪/৯৮)

মুফতী রফী উসমানী বলেন, ছবি না হওয়ার কারণ হল, প্রকৃত ছবি তখনই বলা যায় যদি তা চিত্রিত বা খোদিত কিংবা অঙ্কিত হয় এবং তার মধ্যে استقرار বা স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া পাওয়া যায়। (আল মাকালাতুল ফিকহিয়্যাহ; পৃষ্ঠা ২/১৬২) 

শাইখ আব্দুর রহমান বিন আব্দুল খালেক বলেন,

وهذه الصورة تنقل الى ذبذبات كهربية مغناطيسية تطبع على شرطة التسجيل ليس بشكل صورة وإنما بشكل إشارات ضوئية كهربية 

এই ছবি ইলেক্ট্রিক তরঙ্গে রূপান্তরিত হয়, সংরক্ষণের স্থানে সংরক্ষিত হয়। কিন্তু ছবির আকৃতিতে নয়; বরং ইলেক্ট্রিক আলোক সিগন্যালের আকৃতিতে। (হুকমুত তাসবীর; পৃষ্ঠা ১৫ শামেলা সংস্করণ])

মুফতী রফী উসমানী বলেন,

ان هذه الاشكال والمشاهد ليست بعكس بعينه إلا أنها تشارك العكس في كون كل واحد منهما مشتملا على الأجزاء الشعاعية، فبناء على ذلك رجحنا القول يكون هذه الاشكال اشبه بالعكس من كونه اشبه بصور الحقيقة المحرمة. 

অর্থ: এ সকল চিত্র এবং দৃশ্য হুবহু ছায়া নয়। তবে রশ্মি-খণ্ডাংশপূর্ণ হওয়ার দিক থেকে ছায়ার সাথে মিল আছে। এই ভিত্তিতে এই চিত্র প্রকৃত হারাম ছবি থেকে ছায়ার সাথে অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ। (আলমাকালাতুল ফিকহিয়‍্যাহ ২/১৬৪) 

১৪০৬ হি. সনে জারীকৃত দারুল উলূম করাচির একটি ফতওয়া এখানে তুলে ধরা হল, যাতে মুফতী তাকী উসমানী দা.বা. এর স্বাক্ষর রয়েছে।

البتہ اگر ٹیلی ویژن کا کوئی پروگرام بفرض محال مذکوره بالا محرمات اور دیگر تمام مفاسد و مسکرات سے خالی ہو اور نہایت پاکیزہ ہو تو ان کے جواز میں درج ذیل تفصیل ہے۔ تحقیق کرنے سے معلوم ہوا ہے کہ ٹی وی کے پروگرام تین قسم کے ہوتے ہیں۔ (1) واقعات کی مصور فلم ٹی وی پر دکھلائی جائے۔ (۲) واقعات آور پروگرام براہ راسیت نشر ہوتے ہیں (۳) واقعات کی غیر مصور فلم رکارڈ کی طرح پہلے تیارکر لیتے ہیں جس میں آواز کے ساتھ کچھ غیر مرتی نقوش بھی ٹیپ ہو جا رہے ہیں۔ ۔ 

پھر حسب موقع اس کو لگاتے ہیں جس میں سے آواز کی طرح تصاویر بھی آجاتی ہیں۔

ان میں سے پہلی صورت میں جو کچھ دکھلایا جاتا ہے خواہ کتناہی پاکیزہ، مذہبی اور تعلیمی نوعیت کا پروگرام وہ بلا شبہ تصویر ہے، جاندار کی تصویر دیکھنا دکھلا با حرام ہے اس میں متحرک اور غیر متحرک تصاویر کے حکم میں کوئی فرق نہیں۔ کیونکہ جس طرح جاندار کی تصاویر بنانا حرام ہے اسی طرح بلا عذر بالقصد آور بالارادہ انکو دیکھنا بھی حرام ہے جیسا کہ عبارت ذیل سے واضح ہے۔ البتہ دو سری اور تیسری صورت میں جو کچھ دکھلایا جانا ہے اسکو قطعی طور پر تصویر کہنے میں کامل ہے۔

অর্থ : যদি অসম্ভবকে সম্ভব ধরে টেলিভিশনের কোন প্রোগ্রাম পূর্বোক্ত হারাম এবং নিষিদ্ধ জিনিস থেকে মুক্ত ধরেও নেয়া (যদিও তা অসম্ভব) হয়, সম্পূর্ণ গুনাহমুক্ত হয়, তবে এর বৈধতার ব্যাপারে সামনের বিশ্লেষণ দেখা হবে। তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে দেখা গেছে টিভির প্রোগ্রাম তিন ধরনের,

(১) চিত্রিত ফিল্ম টিভিতে দেখানো হয়। 

(২) কোন অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

(৩) কোন প্রোগ্রাম চিত্রিত করা ছাড়া ফিল্মে ধারণ করা হয় যার মধ্যে আওয়াজের সাথে কিছু  غیرمرئی (দৃশ্যমান নয় এমন) নুকুশও ধারণ হয়। এরপর সময়মত তা চালু করা হয়। এতে আওয়াজের সাথে সাথে ছবিও দৃশ্যমান হয়।

এর মধ্য থেকে প্রথম সূরতে যা দেখানো হয় তা যতই নিষিদ্ধ কাজমুক্ত হোক, ধর্মীয় কিংবা শিক্ষা বিষয়ক প্রোগ্রাম হলেও সেটা নিঃসন্দেহে শরীয়তে নিষিদ্ধ ছবি। প্রাণীর ছবি দেখা এবং দেখানো উভয়টিই হারাম। এতে চলমান কিংবা স্থির হওয়ার ভিত্তিতে কোন পার্থক্য হয় না। কারণ যেমনিভাবে প্রাণীর ছবি বানানো হারাম তদ্রূপ প্রয়োজন ছাড়া ইচ্ছাকৃত তা দেখাও হারাম।

তবে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় প্রকারে যা দেখানো হয় তাকে দ্ব্যর্থহীনভাবে তাসবীর বলতে দ্বিধা হয়। (ডিজিটাল তাসবীর আওর সিডি কে শরয়ী আহকাম; পৃষ্ঠা ১২৪)

দরসে তিরমিযীতে আল্লামা তাকী উসমানী দা.বা. লিখেছেন,

تیسری قسم وہ ہے جو ویڈ یو کیسٹ کے ذریعہ دکھائی جاتی ہے ... میرے مرد یک اسکو بھی تصویر کہنا مشکل ہے۔ 

অর্থ: তৃতীয় প্রকার হল, যা ভিডিও ক্যাসেটে সংরক্ষণ করে স্ক্রিনে প্রকাশ করা হয় আমার দৃষ্টিতে এ ছবিকে নিষিদ্ধ ছবি বলা মুশকিল। (দরসে তিরমিযী ৫/৩৫২)


যারা ডিজিটাল ছবি হারাম মনে করেন তাদের দৃষ্টিতে এ ধরনের ছবি হারাম হওয়ার কারণ

যে সকল উলামায়ে কেরাম ডিজিটাল ছবি হারাম মনে করেন তাদের দৃষ্টিতে ছবি হারাম হওয়ার ভিত্তি হল, সেটি স্বতন্ত্র হওয়া, যার ছবি তার অনুগামী না হওয়া। চাই তা কোন পৃষ্ঠে বা হার্ড কপিতে চিত্রিত হোক বা সফ্ট কপিতে সংরক্ষিত হোক। অ্যানালগ পদ্ধতিতে সংরক্ষিত হোক কিংবা ডিজিটাল পদ্ধতিতে (সংখ্যা নির্ভর পদ্ধতিতে)। ছবিটি যার তার আকৃতিতেই যদি পুনর্বার প্রকাশ করার সক্ষমতা সম্পন্ন হয় তবে এমন ছবিকে হারাম ছবিই বলা হবে। যেভাবেই সংরক্ষণ করা হোক, যেভাবেই প্রকাশ পাক। ছবির استقرار এবং স্থিরতা ও স্বাতন্ত্র্যের অর্থ এতটুকুই। পূর্বসূরী উলামায়ে কেরামের কারো ফাতাওয়ায় কেমিক্যাল লাগিয়ে استقرار করার যে কথা বলা হয়েছে তা احترازی :قید اتفاقی না। মাযাহেরে উলূম-এর ফাতওয়া যার উপর দেওবন্দের মুফতীয়ানে কেরামও স্বাক্ষর করেছেন, তাতে বলা হয়েছে,

چونکہ اس وقت بغیر سطح آور مسالہ کے عکس تو محفوظ کرنے اور باقی رکھنے کی شکل پیدا نہیں ہوتی تھی ، اس لیے سطح اور مسالہ کے ذریعہ بقاء کی قید تھی، یہ قید قید واقعی ہے ، قید احترازی نہیں۔

সুতরাং যে ছবি সংশ্লিষ্ট সত্তার অনুগামী; স্বতন্ত্র নয়, তা হারাম হবে না। যেমন আয়না বা পানিতে প্রকাশ পাওয়া ছবি। আলোর কারণে যে ছায়া হয় তা। এসব যেহেতু সংশ্লিষ্ট সত্তার অনুগামী তাই তা হারাম না। ছবি হারাম হওয়ার বর্ণিত কারণের স্বপক্ষে উলামায়ে কেরামের বক্তব্য উদ্ধৃত করা হল,

(এক) মাওলানা যফর আহমাদ উসমানী عکس এবং ফটোর মাঝে পার্থক্য বর্ণনা করেছেন এভাবে,

سب سے بڑا فرق دونوں میں یہی ہے کہ آئینہ وغیرہ کا عکس پائیدار نہیں ہو نا، اور فوٹو کا عکس مسالہ لگا کر قائم کر لیا جاتا ہے، پس وہ اسی وقت عکس ہے، جب تک مسالہ سے اسے قائم نہ کیا جائے اور جب اسکو کسی طریقہ سے قائم اور پائیدار کر لیا جائے وہی تصویر بن جاتا  ۔

সবচেয়ে বড় পার্থক্য হল, আয়না বা এ জাতীয় জিনিসের প্রতিবিম্ব সংরক্ষিত এবং স্থায়িত্বের বৈশিষ্ট্যে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ হয় না। কিন্তু ফটোর ছায়া কেমিক্যাল লাগিয়ে স্থায়ী এবং স্বতন্ত্র করা হয়। সুতরাং তা ততক্ষণ عکس যতক্ষণ কেমিক্যাল লাগিয়ে স্থায়ী করা না হয়। আর যখন তা কোনভাবে স্থায়িত্ব এবং অনুগমন-মুক্ত হয়ে যায় তা ছবি হয়ে যায়। (ইমদাদুল আহকাম ৪/৩৮৪)

মুফতী শফী রহ. আলাতে জাদীদাহ কে আহকাম পৃষ্ঠা ১৪২-এ লেখেন,

حاصل یہ ہے کہ عکس جب تک مسالہ وغیرہ کے ذریعہ سے پائیدارنہ کر لیا جائے ، اس وقت تک عکس ہے ، اور جب کسی  طریقہ سے قائم و پائیدار کر لیا جائے تو وہ تصویر بن جاتا ہے ، اور عکس جب تک عکس ہے ، نہ شرعا اس میں کوئی حرمت ہے اور نہ کسی قسم کی کراہت ، خواہ آئینہ پانی یا کسی شفاف چیز پر ہو یا فوٹو کے شیشہ پر، اور جب وہ اپنی حد سے گذر کر تصویر کی صورت اختیار کریگا، خواہ وہ مسالہ کے ذریعہ سے ہو یا خطوط و نقوش کے ذریعہ سے ، اور خواہ یہ فوٹو کے شیشہ پر ہو یا آئینہ وغیرہ شفاف چیزوں پر، اس کے سارے احکام وہی ہوں گے جو تصویر کے متعلق ہیں۔

সারকথা হল, প্রতিচিত্র বা ছায়া যতক্ষণ কেমিক্যাল ইত্যাদি দ্বারা স্থিরতা লাভ না করে ততক্ষণ পর্যন্ত তা ছায়া। আর যখন কোনভাবে স্থির এবং স্বতন্ত্র হয়ে যায় তখন তাসবীর হয়ে যায় (ছায়া থাকে না)। আর ছায়া যতক্ষণ ছায়া, না শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে তাতে কোন হুরমত থাকে, না কোন কারাহাত। চাই আয়না, পানি বা পরিচ্ছন্ন কিছুতে হোক। কিংবা ক্যামেরার শিশায় হোক। আর ছায়া যখন

নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ছেড়ে তাসবীরের বৈশিষ্ট্যে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত হয়ে পড়ে চাই তা কেমিক্যালের মাধ্যমে তাসবীরের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ হোক বা নকশার মাধ্যমে অথবা তা ফটোর শিশায় হোক বা আয়না ইত্যাদি পরিচ্ছন্ন জিনিসের মধ্যে। তো তাসবীরের যত বিধান রয়েছে সব এ ছবির সাথে সম্পর্কিত হবে।

মুফতী রশীদ আহমদ লুধিয়ানবী এ সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে বলেন,

 اسکو عکس کہنا بھی صحیح نہیں، اس لئے کہ عکس اصل کے تابع ہوتا ہے اور یہاں اصل کی موت کے بعد بھی اسکی تصویر باقی رہتی ہے۔

অর্থ: এ ধরনের ছবিকে عکس বলা অনুচিত। কারণ ছায়া তো মূলের অনুগামী হয়। এক্ষেত্রে যার ছবি তার মৃত্যুর পরও তার ছবি বাকী থাকে।

(আহসানুল ফাতাওয়া ৯/৮৯) 

অপর স্থানে বলেন, তাসবীর এবং عکس এ দু'টি সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী জিনিস। তাসবীর হল কোন জিনিসের স্থিত এবং সংরক্ষিত নকশা। عکس অস্থির এবং সাময়িক নকশা হয়, যার ছায়া সে সটকে পড়লে তার সেই ছায়াও অদৃশ্য হয়ে যায়। ভিডিও এর ফিতায় তাসবীর হয় যখন চায় যতবার চায় টিভি স্ক্রিনে তা প্রত্যক্ষ করা যায়। এ ছবি মূলের অনুগামী না বরং তার থেকে সম্পর্কমুক্ত এবং স্বতন্ত্র হয়ে থাকে।

কত লোক এখন দুনিয়ায় যার নাম-নিশানা পর্যন্ত নেই। কিন্তু তার দিব্যি চলমান ছবি ভিডিও ক্যাসেটে সংরক্ষিত, এমন ছবিকে কোন পাগলও عکس বলবে না। শুধু এইটুকু বিষয়কে কেন্দ্র করে যে, ভিডিওর ফিতায় কোন ছবি দেখা যায় না, তাসবীরের অস্তিত্ব অস্বিকার করা ভুল।

মুফতী সাঈদ আহমাদ পালনপুরী দা.বা. শরহে তিরমিযীতে বলেন,

اسی طرح یہ دلیل کہ کیمرہ کا فوٹو ایک ظل سایہ ہے اور خود اسکا سایہ نہیں ہے، جیسا کہ پانی میں سایہ پڑتا ہے، بس اس کو کیمرہ سے بر قرار کر لیا، پس اس میں کیا حرج ہے ؟ اس کا جواب یہ ہے کہ ہر ظل بر قرار کرنے ہی سے تو صورت بنتا ہے ، اور صورت کا سایہ ہونا ضروری نہیں ، اور مطلق صورت سے فساد پھیلتا ہے، پس جب یک وہ ظل ہے اس کے احکام ہیں، اور جب اس کو بر قرار کر لیا جائے تو وہ تصویربن جاتا ہے آور حرام ہوجاتا ہے (تحفۃ الالمعی ۸۰/۵) 

উপরোক্ত উদ্ধৃতিতে এ বিষয় পরিস্কারভাবে সামনে এসে গেছে যে, প্রাণীর ছবি যদি স্বাতন্ত্রতা লাভ করে এবং যে প্রাণীর ছায়া তার অনুগামী মুক্ত হয়ে যায়, মূলের অনুপস্থিতিতে তা দেখা সম্ভবপর হয় তবে এমন ছবি হারাম ছবিই হবে। চাই তা কোন নেগেটিভে সংরক্ষিত হোক কিংবা ইলেক্ট্রিক সিগন্যাল/ইমেজ ডাটার আকৃতিতে সংরক্ষিত হোক।

নিকট অতীতের সকল উলামায়ে কেরাম ডিজিটাল ক্যামেরার ছবিকে হারাম বলেছেন। তাদের কয়েক জনের উদ্ধৃতি- মুফতী রশীদ আহমাদ লুধিয়ানবী বলেন,

ویڈیوکیمرہ سے کسی بھی تقریب کی منظر کشی کا عمل تصویر سازی کی ایک ترقی یافتہ صورت ہے ، جیسے قدیم زمانہ میں تصویر ہاتھ سے بنائی جاتی تھی، پھر کیمرہ کی ایجاد نے اس قدیم طریقہ میں ترقی کی اور تصویر ہاتھ کے بجائے مشین سے بنے لگی، جو زیادہ سہل اور دیر پا ہوتی ہے، اب اس عمل میں نئی نئی سائنسی ایجادات نے مزید ترقی جدت پیدا کی، اور جامد و ساکن تصویر کی طرح آب چلتی پھرتی دوڑتی بھاگتی صورت کو بھی محفوظ کیا جانے لگا، یہ کہنا صحیح نہیں کہ اس کو قرار و بقاء نہیں۔ 



অর্থ: ভিডিও ক্যামেরা দ্বারা যে কোন অনুষ্ঠান ধারণ করার কাজ ছবি তৈরির অত্যাধুনিক পদ্ধতি। যেমন অতীতে এক সময় ছবি হাতে বানানো হতো। পরে ক্যামেরা আবিষ্কারের মাধ্যমে সেই পদ্ধতির আধুনিকায়ন হয়েছে। ফলে ছবি হাতের পরিবর্তে মেশিনে তৈরি হতে লাগল, যা বেশি সহজ; বহুদিন ভালো থাকে। এখন বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কার এই কাজে আরো উন্নতি করেছে এবং নতুনত্ব সৃষ্টি করেছে। স্থীর, নিষ্প্রাণ ছবির মত এখন চলমান, ধাবমান ছবিও সংরক্ষণ করা যায়। এ ধরনের ছবির ক্ষেত্রে এ কথা বলা সঠিক নয় যে, এর কোন স্থিরতা এবং স্বাতন্ত্র্য নেই। (আহসানুল ফাতাওয়া ৯/৮৮) 

মুফতী ইউসুফ লুধিয়ানবী এর ফাতওয়া,

ٹی وی اور ویڈیو فلم کا کیمرہ جو تصویر میں لیتا ہے وہ اگرچہ غیر مرئی ہیں لیکن تصویر بہر حال محفوظ ہے، اور اس کو ٹی وی پر دیکھا اور دکهایا جا تا ہے، اس کو تصویر کے حکم سے خارج نہیں کیا جا سکتا، زیادہ سے زیادہ یہ کہا جا سکتا ہے کہ ہاتھ سے تصویر بنانے کے فرسودہ نظام کی بجائے سائنسی ترقی نے تصویرسازی کا ایک دقیق طریقہ ایجاد کرلیا ہے۔ جب شارع نے تصویر کو حرام قراردیا ہے۔تو تصویرسازی کا طریقہ خواہ کیسا ہی ایجاد کرلیا جائے تصویر تو حرام ہی رہے گی۔ 

অর্থ: টিভি এবং ভিডিও ফিল্মের ক্যামেরায় যে ছবি তোলা হয় তা যদিও দৃশ্যমান না, কিন্তু ছবি সর্বাবস্থায় সংরক্ষিত (দেখা যাক বা না যাক)। এই সংরক্ষিত ছবি টিভিতে দেখা সম্ভব। এ ধরনের ছবিকে হারাম ছবি বহির্ভূত বলা যায় না। বেশির থেকে বেশি বলা যায় যে, হাতে ছবি বানানোর পুরাতন নিয়মের পরিবর্তে বিজ্ঞানের অগ্রগতি ছবি বানানোর এক সূক্ষ্ম পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে। কিন্তু শরীয়ত প্রণেতা যখন প্রাণীর ছবি হারাম বলেছেন, তো ছবি বানানোর যেমন পদ্ধতিই আবিষ্কার হোক ছবি বানানো হারামই হবে। (ডিজিটাল তাসবীর আওর সিডি কে শরয়ী আহকাম; পৃষ্ঠা ১২৬) 

মুফতী সাঈদ আহমাদ পালনপুরী দা.বা. বলেন,

اسی طرح ایک دلیل لوگ یہ بھی دیتے ہیں کہ ڈیجیٹل میں اور فلم میں غیر واضح ذرات کی شکل میں تصویر آتی ہے، پس اس پر تصویر کا اطلاق درست نہیں، مگر سوچنے کی بات یہ ہے کہ وہ غیر واضح نکتے کیا کام آئیں گے ؟ آن کو بہرحال یہ صفحۂ فرطاس (اسکرین) واضح کر کے منتقل کیا جائے گا، پس مالا وہ تصویر بنیں گے ، اس لئے ابتداہی سے وہ حرام ہوں گے۔

অর্থ: এক দলীল এই দেয়া হয় যে, ডিজিটাল এবং ফিল্মে Dots এর আকৃতিতে ছবি আসে। সুতরাং এমন ছবিকে হারাম ছবি বলা ঠিক না। কিন্তু ভাবার বিষয় হল, এই غیرواضح (অদৃশ্য) Dots এর কী স্বার্থকতা! এই ছবি তো Dots স্ক্রিনে প্রকাশ করাই মূল উদ্দেশ্য। এটাতো শেষ পর্যন্ত তাসবীরই (হারাম ছবি) হবে। এজন্য শুরু থেকেই তা হারাম ধরা হবে। (তুহফাতুল আলমাঈ ৫/৮০)

মিশরী আলেম শাইখ আবু যর কালমুনী তার লিখিত  فتنة تصوير العلماء والظهور في القنوات الغضائية এর ৪৬ পৃষ্ঠায় লেখেন,

 إن التفريق بين الصور التي ورد تحريمها في النصوص وبين هذه الصور بأن هذه "موجات الكترونية" تفريق بوصف ملغى لا اعتبار لها في الشرع لأن الشرع علق الحكم على وصف المضاهاة، فهو الوصف المؤثر في الحكم، أما طريقة مضاهاة الصورة فهو وصف طردي لم يتعرض له الشارع .. 

অর্থ : কুরআন-হাদীসে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হারাম ছবি আর বর্তমানের ছবির মাঝে এ কথার ভিত্তিতে পার্থক্য বর্ণনা করা যে, এ ছবি হলো 'ইলেক্ট্রিক তরঙ্গ' অনর্থক ভিত্তির উপর নির্ভর করে পার্থক্য করা। এর কোন গ্রহণযোগ্যতা শরীয়তে নেই। (নাফাইসুল ফিকহ ৪/৩২০)

মুফতী খালেদ সাইফুল্লাহ রাহমানী এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে বলেন,

ویڈیو گرافی اور فوٹو گرافی کو عکس قرار دینا صحیح نہیں، عکس وہ صورت ہے جس میں ٹھہراؤ اور جماؤ نہ ہو ، جیسا کہ پانی یا آئینہ میں ہوتا ہے۔ ویڈیو گرافی اور فوٹو گرافی میں یہ صورت نہیں ہوتی، بلکہ صاحب تصویر کی صورت ریل میں محفوظ ہو جاتی ہے اور جماؤ کی کیفیت پیدا ہو جاتی ہے۔ 

অর্থ : ভিডিওগ্রাফি এবং ফটোগ্রাফিকে ছায়া বলা ঠিক নয়। কারণ عکس বা ছায়া বলা হয়, যে ছবির স্থিরতা এবং স্বতন্ত্রতা না হয়, যেমনটি পানি বা আয়নায় হয়। ভিডিওগ্রাফি কিংবা ফটোগ্রাফিতে এই অবস্থা হয় না; বরং যার ছবি তার আকৃতি Reel এ সংরক্ষিত হয়। স্বতন্ত্র এবং স্থিরকৃত হয়ে যায়।

(কিতাবুল ফাতাওয়া ৬/১৮০) 


সায়েন্সি গবেষণার ভিত্তিতে ডিজিটাল ছবিকে তাসবীর না বলা প্রসঙ্গে 

সায়েন্সি গবেষণার উপর ভিত্তি করে ডিজিটাল ফটোকে তাসবীর না বলা ঠিক না। বরং তাসবীরের শরয়ী হুকুমের ভিত্তি জনসাধারণের ধারণা এবং তার বাহ্যিক অবস্থার উপর হওয়া উচিত। 

মাযাহিরে উলুমের ফতওয়ায় উল্লেখ করা হয়েছে,

کسی بھی مسئلہ کی سائنسی تحقیق کر نا برانہیں ڈیجیٹل چپ کیسے کام کرتی ہے ؟ اس کی اہل فن سے تحقیق کی جا سکتی ہے ، لیکن اس تحقیق پر فتوی کا مدار رکھنا مناسب نہیں، فتوی کا مدار اس شۓ کے عوامی تصور اور اس کی ظاہری حیثیت پر ہی ہو نا چا ہے۔ 

অর্থ: কোন জিনিসের সায়েন্সি গবেষণা অন্যায় নয়। ডিজিটাল মেমোরি কীভাবে কাজ করে? তা বিশেষজ্ঞ থেকে যাচাই করা যেতে পারে। কিন্তু ফতওয়ার ভিত্তি এর উপর রাখা ঠিক নয়। ফতওয়ার ভিত্তি সাধারণের ধারণা এবং সে জিনিসের বাহ্যিক অবস্থার উপর হওয়া উচিত। (চান্দ আহাম আসরী মাসায়িল;পৃষ্ঠা ৩৫২) মুফতী শফী রহ. মাইক ব্যবহারের আলোচনায় সায়েন্সি গবেষণার শরয়ী অবস্থান সম্পর্কে বলেন,

احکام اسلامیہ کے ملاحظہ سے یہ امیر مدیقیں ہے کہ جن مسائل کا تعلق فلسفیانہ تحقیق و تدقیق یار یاضی کی باریکیوں یا اسطرلاب وغیرہ آلات سے ہے، شریعت مصطفویہ علی صاحبہ ما الصلاة والسلام إن سب میں حقائق کی تحقیق و تدقیق سے اغماض کر کے محض ظواہر پر احکام دابر فرمائے ہیں، جن کو ہر خاص و عام عالم و جاہل شہری اور جنگلی آسانی کے ساتھ بدون اسعایت آلات و حسابات معلوم کر کے خدا تعالی کی طرف سے عائد شده فرئضہ سے سبکدوش ہو سکے۔

অর্থ: ইসলামী বিধি-বিধানের গবেষণা থেকে এ বিষয়টি সুস্পষ্টরূপে সামনে এসে গেছে যে, যে সকল মাসায়িলের সম্পর্ক দার্শনিক চিন্তা-ভাবনার সূক্ষ্মতা সংশ্লিষ্ট কোন মাধ্যমের সাথে, ইসলামী শরীয়ত এক্ষেত্রে সূক্ষ্ম গবেষণা পরিহার করে শুধু বাহ্যিক অবস্থার উপর হুকুম প্রয়োগ করেছে। যেটা বিশেষ, সাধারণ আলেম, অজ্ঞ এবং শহরবাসী-গ্রামবাসী সকলেই সহজে বুঝতে পারে। কোন প্রকার যন্ত্র, মাধ্যম কিংবা হিসাব বিজ্ঞানের প্রয়োজন না পড়ে। 

এরপর বলেন,

مذکور الصدر اصول کے مطابق آلہ مکہ بر الصوت کے ذریعہ سنائی دینے والی آواز کو ظاہر و متعارف عوام کے موافق متکلم کی اصل آواز ہی کہا جائیگا، گوفتی تدقیقات بالفرض یہی پانت کریں کہ وہ اصل آواز نہیں، بلکہ اس کا عکس ہے، کیوں کہ اس صورت میں اصل آواز اور اس آلہ کی آواز کا فرق اس قدر دقیق ہو گا کہ اس کو عوام تو کیا خود ماہرین سائنس کو واضح نہ ہوا۔

অর্থ: বর্ণিত নীতির আলোকে মাইকের আওয়াজের ক্ষেত্রে সাধারণের নিকট যেই ভাবনা পরিচিত সে অনুযায়ী মাইকের আওয়াজকে বক্তার আওয়াজই বলা হবে। যদিও বিশেষজ্ঞদের গবেষণা এটা প্রমাণ করে যে, এই আওয়াজ প্রতিধ্বনি। কারণ এক্ষেত্রে মূল আওয়াজ আর প্রতিধ্বনির পার্থক্য এতই সূক্ষ্ম যে, এ বিষয়ের বিশেষজ্ঞরা এ দুয়ের মাঝে পার্থক্য করতে অক্ষম। (আলাতে জাদীদা কে আহকাম; পৃষ্ঠা ৬০)

তাছাড়া কতক গবেষকের দৃষ্টিতে এ ধরনের ছবি সায়েন্সি দৃষ্টিকোণ থেকে ছবিই। ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব কম্পিউটার লাহোরের জনাব তাফসীর আহমদ বলেন,

ویڈیو کیمرہ یا ڈیجیٹل کیمرے میں محفوظ کی گئی شبیہ طبعی یا ظاہری اعتبار سے شبیہ نہیں ہوتی لیکن معنوی اعتبار سے وہ شبیہ ہی ہوتی ہے، مطلب یہ ہے کہ جب شبیہ کے اظہار کا مرحلہ ائے گا تو وه اسی شبیہ کی شان میں ظاہر ہو گی کہ جیسے ابتداء میں محفوظ کیا گیا تھا، نہ کہ کسی اور صورت میں، لهذا مخصوص سائنسی اصطلاح عام میں بھی رموز (Codes) میں پوشیدہ اس شبیہ کو " شبیہ " ہی کہا جائیگا۔

অর্থ: ভিডিও ক্যামেরা অথবা ডিজিটাল ক্যামেরাতে সংরক্ষিত চিত্র বাহ্যিক এবং প্রকৃতিগতভাবে চিত্র হয় না। তবে ফলাফলের দিক থেকে তা ছবিই। অর্থাৎ যখন চিত্র প্রকাশের পর্ব আসে তো এই ছবি ঐ চিত্রের আকৃতিতে প্রকাশ পাবে, যেভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছিল; অন্য কোন আকৃতিতে নয়। সুতরাং একান্ত সায়েন্সি পরিভাষায়ও Codes এর আকারে ধারণকৃত এই চিত্রকে ছবিই বলা হবে। (ডিজিটাল তাসবীর আওর সিডি কে শরয়ী আহকাম; পৃষ্ঠা ১০৭-১০৮)


স্ক্রিনে ডিজিটাল ছবি প্রতি মুহূর্তে অস্তিত্বমান এবং নিঃশেষ হওয়া প্রসঙ্গ 

এ ব্যাপারে আমরা শুধু মুফতী রশীদ আহমদ রহ. এর ফতওয়া তুলে ধরছি। তিনি বলেন,

اگر یہی تسلیم کر لیا جائے کہ وہ (ٹی وی اسکرین پر ظاہر ہونے والی تصویر) مٹ جاتی ہے اور پھر بنتی ہے یہی عمل ہر لحظہ جاری رہتا ہے تو اس میں اور زیادہ قباحت ہے کہ بار بار تصویر بنانے کا گناہ ہوتا ہے۔ 

অর্থ: যদি এ কথাই বলা হয় যে, টিভি স্ক্রিনে প্রকাশ হওয়া তাসবীর মিটে যায় এরপর আবার অস্তিত্বমান হয়। এভাবে প্রতি মুহূর্তে অস্তিত্বমান এবং অস্তিত্বহীন হতে থাকে তবে তো এতে আরো বেশি মন্দত্ব প্রকাশ পায় যে, বারবার ছবি বানানোর গুনাহ হতে থাকে। (আহসানুল ফাতাওয়া ৯/৯৮)


দারুল উলুম দেওবন্দ এবং মাযাহিরে উলুমের ফতওয়া

মাযাহিরে উলূম থেকে জারীকৃত এবং দারুল উলূম দেওবন্দের মুফতিয়ানে কেরাম কর্তৃক সত্যায়িত দীর্ঘ ফতওয়ায় এক পর্যায়ে উল্লেখ করা হয়েছে,

الغرض مذکورہ معروضات کی روشنی میں ڈیجیٹل نظام کے ذریعہ محفوظ کردہ عکس اور ٹی وی اسکرین پر ظاہر ہونے والی صور تیں بھی تصویر محرم میں داخل ہیں اور مجسم تصویر سازی اور فوٹو گرافی کی طرح ناجائز اور حرام ہیں۔

অর্থ: ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষিত ছবি এবং টিভি স্ক্রিনে প্রকাশ পাওয়া চিত্রও হারাম ছবির অন্তর্ভুক্ত; প্রতিকৃতি তৈরি এবং ফটোগ্রাফির মত নাজায়েয এবং হারাম। (চান্দ আহাম আসরী মাসায়িল; পৃষ্ঠা ৩৫৭)

এতে মুফতী সাঈদ আহমদ পালনপুরীসহ দেওবন্দ এবং মাযাহিরে উলূমের ছয়জন মুফতী স্বাক্ষর করেন। এছাড়া উপমহাদেশের অধিকাংশ উলামায়ে কেরামের ফতওয়া এমনই। 


উপরোক্ত আলোচনার সারসংক্ষেপ

১. অধিকাংশ বিজ্ঞ উলামায়ে কেরামের দৃষ্টিতে প্রাণীর ডিজিটাল ছবি শরীয়তে নিষিদ্ধ ছবির অন্তর্ভুক্ত এবং শরীয়ত স্বীকৃত প্রয়োজন ছাড়া তা ধারণ করা ও ব্যবহার করা হারাম। এ মর্মে তাদের বক্তব্য সুস্পষ্ট এবং অধিক প্রামাণ্য। 

২. শরীয়তের স্বীকৃত নীতি হল, হালাল- হারাম কিংবা বৈধ-অবৈধের মধ্যে বিরোধ হলে হারাম হওয়াটাই অগ্রাধিকার পায়। কারণ এতে অধিক সতর্কতা।

৩. যারা প্রাণীর ডিজিটাল ছবিকে নিষিদ্ধ ছবি বলেননি তারা হারাম ছবি না হওয়ার কথা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তমূলক ও দ্ব্যর্থহীন শব্দে বলেননি। এ ব্যাপারে তাদের শব্দ প্রয়োগ সংশয়ের দিকটি পরিস্কার ফুটিয়ে তোলে। যেমন, শাইখুল ইসলাম আল্লামা মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উসমানী দা.বা. এক স্থানে বলেছেন, فيه وقفة  (এ ব্যাপারে দ্বিধা রয়েছে। তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম ৪/৯৮) দারুল উলুম করাচীর ফতওয়ায় বলা হয়েছে, اسکو قطعی طور پر تصویر کہنے میں مائل ہے  (অর্থ) প্রাণীর ডিজিটাল ছবিকে অকাট্যভাবে হারাম ছবি বলতে দ্বিধা আছে।

অপরদিকে যারা ডিজিটাল ছবিকে শরীয়তে নিষিদ্ধ ছবি বলেছেন তারা এ কথা সিদ্ধান্তমূলক দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেছেন।

উল্লিখিত কারণসমূহের ভিত্তিতে আমাদের দৃষ্টিতে ডিজিটাল ছবি হারাম ছবির অন্তর্ভুক্ত। বিনা প্রয়োজনে এ ধরনের ছবি তোলা বা ভিডিও করা এবং তার দর্শন-প্রদর্শন হারাম। হ্যাঁ, যে ধরনের প্রয়োজনে মুদ্রিত ছবি ধারণ ও ব্যবহার বৈধ হয় ডিজিটাল ছবির ক্ষেত্রেও সে ধরনের প্রয়োজন স্বীকৃত হলে প্রয়োজন অনুপাতে তার অবকাশ থাকতে পারে।

মন্তব্য (...)

এ সম্পর্কিত আরও প্রবন্ধ

লেখকবৃন্দ

সকল লেখক →

আল্লামা শাব্বীর আহমাদ উসমানী রহঃ

শাহ আব্দুল আযীয দেহলভী রহঃ

শাইখুল ইসলাম আল্লামা কাসেম নানুতুবী রহঃ

মাওঃ উবাইদুল্লাহ সিন্ধী রহঃ

সায়্যিদ সাবেক রহঃ

আল্লামা আব্দুল মজীদ নাদীম রহঃ

মাওলানা আসলাম শাইখুপুরী

শাইখুল ইসলাম হুসাইন আহমাদ মাদানী রহঃ

মাওঃ আবু আম্মার যাহেদ রাশেদী

মাওঃ নুরুল হাসান রাশেদ কান্ধলভী

মুফতী হাবীবুর রহমান খাইরাবাদী

আল্লামা আবুল কালাম আযাদ রহঃ

মাওলানা সাঈদ আহমদ

মাওলানা মুহাম্মদ হেমায়েত উদ্দীন দাঃ

হযরত মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী রহঃ

মাওলানা হাবীবুর রহমান খান

মাওলানা সাঈদ আহমাদ বিন গিয়াসুদ্দীন

মাওঃ আবু বকর সিরাজী

শায়েখ আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ ইবনে উমার [রহ.]

মাওঃ এনামুল হাসান