প্রবন্ধ
শরয়ী বিধানে প্রাণীর ছবি (পর্ব চার)
ছবির ব্যবহার এবং সংরক্ষণের বিধান
পূর্বের আলোচনায় দলীল প্রমাণের আলোকে এ কথা সাব্যস্ত হয়েছে যে, সব ধরনের ছবি অঙ্কন করা এবং তৈরি করা হারাম। ঠিক একই হুকুম ছবি রাখার ক্ষেত্রে। শরীয়তের দৃষ্টিতে ঘরে বা নিজের কাছে ছবি রাখা নাজায়েয। তবে দুই ধরনের ছবির ব্যাপারে উলামায়ে কেরামের মতবিরোধ রয়েছে যে, কেউ রাখলে কি হারাম ছবি রাখার গুনাহ হবে?
এক. যে ছবি অপদস্ত অবস্থায় থাকে অথবা সেটার ব্যবহার পদ্ধতিই হলো অযত্ন এবং অবহেলাকর।
দুই. যে ছবি এত ছোট যে, নিচে থাকাবস্থায় দাঁড়ানো ব্যক্তি পরিষ্কারভাবে ছবির অঙ্গ-প্রতঙ্গ দেখতে সক্ষম হয় না।
অপদস্ত ছবির বিষয়ে দলীলভিত্তিক আলোচনা
ইমাম তহাবী রহ. এ ব্যাপারে দু'টি মাযহাব বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন,
فذهب ذاهبون إلى كراهية إتخاذ ما فيه الصور من الثياب وما كان يوطأ من ذلك ويمتهن وما كان ملبوساً وكرهوا كونه في البيوت.
অর্থ: অনেক উলামায়ে কেরাম এই মত ব্যক্ত করেছেন যে, যে কাপড়ে ছবি থাকে এবং যে ছবি পদদলিত বা অপদস্ত অবস্থায় ব্যবহার হয় কিংবা ছবিবিশিষ্ট কাপড়টি পরিধেয় বস্ত্র এ সব সূরতে ছবির ব্যবহার হারাম। এমন কাপড় ঘরে রাখাও নাজায়েয।
এ মতের প্রবক্তাদের দলীল হল,
لا تدخل الملائكة بيتا فيه صورة.
(ফেরেশতাগণ সে ঘরে প্রবেশ করে না যেখানে প্রাণীর ছবি থাকে) এবং এ অর্থের অন্যান্য হাদীসসমূহ।
ইমাম তহাবী অপর যে মাযহাব বর্ণনা করেছেন তা হল,
ما كان من ذلك يوطاً ويمتهن فلا بأس به و كرهوا ما سوى ذلك.
অর্থ: যে ছবি পদদলিত কিংবা অপদস্ত অবস্থায় ব্যবহার হয় তা কারো কাছে থাকলে ছবি রাখার গুনাহ হবে না। এছাড়া অন্যান্য ছবি রাখা হারাম। (শরহু মা'আনিল আসার; হা.নং ৬৭৮৫)
এ মতের প্রবক্তাদের কয়েকটি দলীল এখানে তুলে ধরা হল-
عن عائشة أنه كان لها ثوب فيه تصاوير ممدود إلى سهوة فكان النبي صلى الله عليه وسلم يصلي إليه فقال أخريه عني قالت فاخرته فجعلته وسائد.
অর্থ: হযরত আয়েশা রাযি. বলেন, ছবি বিশিষ্ট একটি কাপড় ছোট তাকের উপর প্রসারিত ছিল। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেদিকে ফিরে নামায পড়তেন। তিনি বললেন, এটা সামনে থেকে সরাও। আমি সেটা সরিয়ে নিলাম এবং বালিশ বানিয়ে নিলাম। (সহীহ মুসলিম; হা.নং ২১০৭, শরহু মা'আনিল আসার; হা.নং ৬৭৯১)
عن عبيد الله بن عبد الله بن عتبة بن مسعود أنه دخل على أبي طلحة الأنصاري يعوده قال فوجد عنده سهل بن حنيف فدعا أبو طلحة إنسانا فنزع نمطا من تحته فقال له سهل بن حنيف لم تنزعه قال لأن فيه تصاوير وقد قال فيها رسول الله صلى الله عليه وسلم ما قد علمت فقال سهل الم يقل رسول الله صلى الله عليه وسلم إلا ما كان رقما في ثوب قال بلى ولكنه أطيب لنفسي
অর্থ : হযরত উবাইদুল্লাহ ইবনে আব্দুল্লাহ আবু তালহা আনসারী রাযি. (অসুস্থ থাকায়) তাকে দেখতে গেলেন। উবাইদুল্লাহ বলেন, তিনি আবু তলহার কাছে সাহল ইবনে হানীফকে দেখতে পেলেন। আবু তালহা রাযি. যে স্থানে উপবিষ্ট ছিলেন এক ব্যক্তিকে ডেকে সেখান থেকে বিছানা সরাতে বললেন। অবস্থাদৃষ্টে সাহল ইবনে হানীফ বললেন, বিছানা অপসারণ করা হচ্ছে কেন? আবু তালহা রাযি. বললেন, এতে ছবি রয়েছে। আর এ ব্যাপারে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছেন তাতো আপনার জানাই আছে। সাহল রাযি. বললেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ছবির নিষিদ্ধতার ব্যাপারে) কি এ কথা বলেননি 'তবে কাপড়ে যে নকশা করা হয় তা এ হুকুম বহির্ভূত'। আবু তালহা বললেন, (আপনার কথা সঠিক) কিন্তু সব ধরনের ছবি ব্যবহার পরিহার করা আমার কাছে বেশি পছন্দনীয়। (মুআত্তা ইমাম মালেক; হা.নং ৭৮৫)
ইমাম বাজী রহ. বলেন,
أمر أبي طلحة بإزالة النمط لأجل التصاوير دليل على كراهيته له .
অর্থ: আবু তালহা রাযি. এর ছবিবিশিষ্ট কাপড় সরাতে বলা এ কথার প্রমাণ যে, তার নিকট অপদস্ত ছবি রাখাও অপছন্দনীয়। (আল মুনতাকা ৯/৪৩৬)
ইমাম মুহাম্মাদ এই হাদীস উল্লেখ করে বলেন,
وهذا نأخذ ما كان فيه من تصاوير من بساط يبسط أو فراش يفرش أو وسادة فلا بأس بذلك.
إنما يكره من ذلك في الستر وما ينصب نصبا. وهو قول أبي حنيفة والعامة من فقهائنا .
অর্থ : এই হাদীসের ভিত্তিতে আমরা এ মত গ্রহণ করেছি যে, ছবিবিশিষ্ট বিছানা কিংবা ফরাশ অথবা বালিশ ব্যবহারে কোন অসুবিধা নেই। ব্যবহার হারাম হল ছবিবিশিষ্ট পর্দা এবং যে ছবি কোথাও সাঁটানো হয়। এটা আবু হানীফা এবং আমাদের অধিকাংশ ফকীহর মত। (মুআত্তা ইমাম মুহাম্মাদ)
ইমাম তহাবী রহ. বলেন,
فأما ما كان يوطاً ويمتهن ويفرش فهو خارج من ذلك وهذا مذهب أبي حنيفة وأبي يوسف و محمد رحمهم الله تعالى .
অর্থ: যে ছবি পদপিষ্ট হয়, তুচ্ছ- তাচ্ছিল্যের সাথে ব্যবহৃত হয় এবং বিছানো হয় তা নিষিদ্ধতার হুকুম বহির্ভূত। এটি আবু হানীফা, আবু ইউসুফ এবং মুহাম্মাদ রহ. এর মাযহাব।
(শরহু মা'আনিল আসার; হা.নং ৬৭৯৪, ফাতহু বাবিল ইনায়া ১/৩১১, মুখতাসারু ইখতিলাফিল উলামা ৪/৩৭৯)
হযরত লাইস বিন সাদ এর বর্ণনা থেকে বোঝা যায়, হযরত সালেম রহ. এর মাযহাবও অবৈধ না হওয়ার পক্ষে। তিনি বলেন,
رأيت سالم بن عبد الله متكئا على وسادة حمراء فيها تماثيل فقلت له فقال إنما يكره هذا لمن ينصبه ويصنعه.
অর্থ: সালেম ইবনে আব্দুল্লাহকে ছবি বিশিষ্ট বালিশে টেক লাগানো অবস্থায় দেখে আমি তার দৃষ্টি আকর্ষণ করলাম। তিনি বললেন, নিষেধ হল যা টানানো হয় এবং যা তৈরি করা হয়। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা; হা.নং ২৫৭৯৬)
ইমাম আবু বকর ইবনে আবী শাইবা হযরত উরওয়া, ইকরামা, সাঈদ ইবনে যুবাইর, আতা, যুহরী, কাসেম ইবনে মুহাম্মাদ থেকে অনুরূপ কর্ম এবং মত উল্লেখ করেছেন। বিস্তারিত দেখতে উক্ত কিতাবের ২৫৭৯৪ থেকে ২৫৮১১ পর্যন্ত হাদীসগুলো দেখা যেতে পারে।
হযরত আবু হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত একটি বর্ণনায় রয়েছে, হযরত জিবরাইল আ. বলেন,
كيف أدخل وفي بيتك ستر فيه تصاوير فإما أن تقطع رؤوسها أو تجعل بساطا يوطاً.
অর্থ: এমন ঘরে কিভাবে প্রবেশ করব যেখানে ছবিবিশিষ্ট পর্দা রয়েছে! হয় তুমি ছবির মাথা কেটে দাও অথবা বিছানা বানিয়ে নাও যা পদদলিত করা হবে। (সুনানে নাসায়ী; হা.নং ৫৩৬৫)
ছোট ছবি যা নিচে পড়ে থাকাবস্থায় দাঁড়ানো ব্যক্তি স্পষ্টভাবে দেখতে সক্ষম হয় না তার হুকুম
ছোট ছবি যা নিচে পড়ে থাকাবস্থায় দাঁড়ানো ব্যক্তি ছবির অঙ্গ-প্রতঙ্গ পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারে না তা ঘরে থাকলে বা রাখলে অধিকাংশ উলামায়ে কেরামের মতে ছবি সংরক্ষণের গুনাহ হবে না। আল্লামা হাসকাফী রহ. বলেন,
أو كانت صغيرة لا تتبين تفاصيل أعضائها للناظر قائما وهي على الأرض.
অর্থ: যমীনে রাখা এমন ছোট ছবি দাঁড়ানো অবস্থায় যার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পরিষ্কার বোঝা যায় না। (এমন ক্ষেত্রে ছবি রাখার গুনাহ হবে না)। (আদদুররুল মুখতার ১/৬৪৮)
আল্লামা শামী এ ব্যাপারে আরেকটু বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। পূর্বে আদদুররুল মুখতার-এর যে পাঠ উল্লেখ করা হয়েছে তার টিকায় বিস্তারিত দেখা যেতে পারে।
উল্লিখিত মাসআলার স্বপক্ষে বেশ কিছু দৃষ্টান্ত হাদীস এবং আসার গ্রন্থে পাওয়া যায়। হযরত নুমান ইবনে মুকরিন সম্পর্কে বর্ণিত,
كان نقش خاتم النعمان بن مقرن إبلا قابضا إحدى يديه باسطا الأخرى.
অর্থ: হযরত নুমান বিন মুকরিনের আংটিতে উটের (ছোট) চিত্র ছিল। (শরহু মা' আনিল আসার; হা.নং ৬৬৪৭)
হযরত কাসেম থেকে বর্ণিত,
كان نقش خاتم عبد الله ذيابان.
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহর আংটিতে মাছির আকৃতি অঙ্কিত ছিল। (শরহু মা'আনিল আসার; হা.নং ৬৬৪৮) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ইয়াযিদ বর্ণনা করেন,
كان نقش خاتم حذيفة كركيان.
অর্থ: হযরত হুযাইফার আংটিতে সারস জাতীয় পাখির (ক্ষুদ্র) আকৃতি ছিল। (শরহু মা' আনিল আসার; হা.নং ৬৬৪৯)
এ সকল বর্ণনার ভিত্তিতে একেবারে ক্ষুদ্র আকৃতির ছবি ঘরে থাকলে ফুকাহায়ে কেরাম তা হারাম না হওয়ার কথা বলেছেন।
তবে ইচ্ছাকৃতভাবে এমন ছবিও ঘরে রাখা ঠিক নয়।
হযরত হাসান রহ. থেকে বর্ণিত,
كان يكره أن ينقش الرجل على خاتمه صورة.
অর্থ: তিনি ছবিবিশিষ্ট আংটি নিষিদ্ধ মনে করতেন।
যে কারণে ছবির ব্যবহার এবং সংরক্ষণ হারাম
পূর্বের আলোচনায় বলা হয়েছে যে, যেমনিভাবে ছবি তৈরি করা হারাম, তেমনি তা সংরক্ষণ করাও হারাম। তবে এর মধ্য থেকে দুই ধরনের ছবি উক্ত হুকুম বহির্ভূত। এর কারণ হল, ফুকাহায়ে কেরাম যে কারণে ছবির ব্যবহার হারাম বলেছেন এক্ষেত্রে তা পাওয়া যায় না। ফুকাহায়ে কেরাম ছবি ব্যবহার বা সংরক্ষণ হারাম হওয়ার ইল্লত (Cause) বলেছেন, যদি ব্যবহারিক জীবনে ছবির সম্মানজনক ব্যবহার কিংবা সম্মানজনক সংরক্ষণ হয় অথবা ব্যবহারটি تشبه بمن يعبد الصور ছবি পূজারিদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হয় তাহলে সে ব্যবহার হারাম। এ ব্যাপারে বিশিষ্ট ফকীহদের উদ্ধৃতি তুলে ধরা হল- আল্লামা ইবনে কুদামা (মৃত ৬২০হি.) বলেন,
لأنها إذا كانت تداس وتبتذل لم تكن معززة ولا معظمة فلا تشبه الأصنام التي تعبد وتتخذ آلهة فلا تكرم.
অর্থ: ছবি যখন মাড়ানো হয়, অপদস্ত করা হয়, তার সম্মান এবং প্রশংসাসূচক ব্যবহার না হয়, তখন সেটা সেই প্রতিমার মত (হারাম) হবে না যার উপাসনা করা হয় এবং যাকে উপাসনার বস্তু বানানো হয়। (আল মুগনী ১০/২০০)
ইমাম সারাখসী রহ. (মৃত ৪৯০হি.) বলেন,
إذا كانت الصورة على الحائط الذي هو خلف المصلى فالكراهة فيه أيسر لأن معنى التعظيم والتشبيه بمن يعبد الصور تنعدم هنا وكذلك ان كانت الصورة على الأرض والأزر والستور وأما على البساط فنقول اتخاذ الصورة على البساط مكروه ولكن لا بأس بالنوم والجلوس عليه لأن البساط يوطاً فلا يحصل فيه معنى التعظيم
অর্থ ছবি যদি নামাযীর পেছনের দেয়ালে সাঁটানো থাকে সেক্ষেত্রে নিষিদ্ধ হওয়ার কঠিন হুকুম প্রযোজ্য হবে না। নিষিদ্ধের মাত্রা হালকা হয়ে যাবে। কারণ এক্ষেত্রে প্রতিমাপূজারীদের মত ছবির প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও তাদের সাদৃশ্য অবলম্বন পাওয়া যায় না...। বিছানায় যদি ছবি থাকে তবে ছবি রাখার গুনাহ হবে। কিন্তু ছবির উপর ঘুমানো ও বসাতে কোন অসুবিধা নেই। কারণ বিছানা দলিত করা হয়, তাই এক্ষেত্রে সম্মান প্রদর্শন পাওয়া যায় না। (আল মাবসূত ১/৩৭৪)
ইমাম শাফেয়ী রহ. (মৃত ২০৪হি.) বলেন,
إن رأي صورا في الموضع الذي يدعى فيه ذوات أرواح لم يدخل المنزل الذي تلك الصور فيه إن كانت تلك منصوبة لا توطأ فإن كانت توطاً فلا بأس أن يدخله.
অর্থ: আহুত স্থানে যদি প্রাণীর ছবি থাকে এবং তা সেখানে টানানো থাকে তাহলে সে স্থানে প্রবেশ করবে না। আর যদি ছবিটি সেখানে মাড়ানো অবস্থায় হয় তবে প্রবেশ করতে কোন শরয়ী বাধা নেই। (কিতাবুল উম ৭/৪৫২)
অতএব যে সকল সূরতে ছবির ব্যবহার বা সংরক্ষণে ছবির প্রতি সম্মানবোধ বুঝে আসে সে সব সূরতে ছবি সংরক্ষণ করলে হারাম ছবি ব্যবহারের গুনাহ হবে।
আমাদের সমাজে ঘরে বা অফিসে ছবি টাঙানো কিংবা আলমারী বা অ্যালবামে সংরক্ষণের যে প্রচলন রয়েছে তা নিশ্চিতভাবে হারামের অন্তর্ভুক্ত।
ইমাম তহাবী রহ. বলেন,
ثبت أن المنهي عنه الصور التي هي نظير ما يفعله النصارى في كنائسهم من الصور في جدرانها ومن تعليق الثياب المصورة فيها.
অর্থ: নিষিদ্ধ ছবি হল, খ্রিস্টানরা তাদের উপাসনালয়ে যেভাবে ছবি ব্যবহার করে সেভাবে ছবির ব্যবহার বা সংরক্ষণ করা। যেমন দেয়ালে আঁকা ছবি এবং ছবিযুক্ত পর্দা টানানো। (শরহু মা'আনিল আসার; হা.নং ৬৭৯৪)
ছবিযুক্ত মুদ্রা রাখার বিধান
মুসলিম অমুসলিম প্রায় সকল দেশে মুদ্রায় নিজ দেশের কোন বিশেষ ব্যক্তির ছবি ছাপানোর প্রচলন রয়েছে। এক্ষেত্রে শরয়ী বিশ্লেষণ হল, প্রচলিত পয়সাতে যে ছবি ছাপা হয় সাধারণত তা স্পষ্ট ছবি হয় না, ভালো করে লক্ষ্য না করলে বোঝা যায় না। তাই এ জাতীয় পয়সা সাথে রাখতে শরয়ী কোন বাধা নেই। কিন্তু টাকার মধ্যে যে আকারের ছবি ছাপা হয় তা স্পষ্ট বোঝা যায়। তা সত্ত্বেও এ ধরনের কারেন্সি সাথে রাখা যাবে। আর ছবি সাথে রাখার দায়ভার মুদ্রায় ছবি যুক্ত করার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের ওপর বর্তাবে। সৌদি আরবের ইফতা বোর্ডের ফতওয়া এখানে তুলে ধরা হল,
س: هناك أمور تقلقني كثيرا ومنها مسألة الصور التي على النقود فقد ابتلينا بها ودخلت المساجد في جيوبنا فهل دخولها إلى المساجد مما يسبب هرب الملائكة عنها فيحرم إدخالها ؟ وهل تعتبر من الأشياء الممتهنة؟ ولا تمنع الصور الممتهنة دخول الملائكة إلى البيوت
ج : صور النقود لست متسببا فيها وأنت مضطر إلى تملكها وحفظها في بيتك أو حملها معك للانتفاع بها بيعا وشراء وهبة وصدقة وتسديد دين ونحو ذلك من المصالح المشروعة فلا حرج عليك، وليست ممتهنة، بل مصونة تبعا لصيانة ما هي فيه من النقد، وإنما ارتفع الحرج عنك من أجل الضرورة.
অর্থ : মুদ্রায় যে ছবি থাকে তা ফেরেশতাদের চলে যাওয়ার কারণ হবে না। কারণ তোমার জন্য (প্রশ্নকর্তা উদ্দেশ্যে) এ মুদ্রার মালিক হওয়ার কোন বিকল্প নেই এবং তুমি তা ঘরে সংরক্ষণ করতে বাধ্য অথবা বেচাকেনা, দান- সদকা, ঋণ পরিশোধ এবং শরীয়ত অনুমোদিত উপকার লাভের জন্য তোমাকে তা বহন করতে হবেই। তাই এতে তোমার কোন অসুবিধা নেই। তবে এই বিধান মুদ্রায় ছাপা ছবিটি পদদলিত ছবির হুকুমে হওয়ার কারণে নয়। কেননা (মুদ্রাসংশ্লিষ্ট হওয়ায়) মুদ্রার মত ছবিটিকেও যত্নের সাথে সংরক্ষণ করা হয়। এক্ষেত্রে ছাড়ের কারণ হল, প্রয়োজনীয়তা। (ফাতাওয়াল লাজনাতুদ দায়িমা লিলবুহুসিল ইলমিয়্যাহ ওয়ালইফতা ১/৪৮৫)
উল্লেখ্য, ছবি ছোট হলে যদিও তা রাখা হারাম নয়, কিন্তু এ ধরনের ছবি বানানো নিঃসন্দেহে হারাম।
স্মৃতি ধরে রাখার জন্য এ্যালবামে ছবি রাখা জায়েয নেই।
আল্লামা বিন বায বলেন,
لا يجوز لأي مسلم ذكرا كان أم أنثى جمع الصور للذكرى أعني صور ذوات الأرواح من بني آدم وغيرهم بل يجب إتلافها.
অর্থ: কোন মুসলমানের জন্য স্মৃতি ধরে রাখার উদ্দেশ্যে ছবি সংরক্ষণ করা বৈধ নয়; বরং তা নষ্ট করে ফেলতে হবে। (মাজমূউ ফাতাওয়া বিন বায ১/২২৫)
ছবিযুক্ত কামরায় নামায পড়ার বিধান
পায়ের নিচে ছাড়া কামরার (রুমের) যেদিকেই ছবি থাকুক সে ঘরে নামায পড়া মাকরূহ। তবে ছবি সামনে থাকলে নিষিদ্ধের মাত্রা যে পরিমাণ থাকবে পিছনে থাকলে সে মাত্রা আরো কমে যাবে। রুমে ছবিযুক্ত পত্র-পত্রিকা থাকলে তা কিছু দিয়ে ঢেকে নামায আদায় করতে হবে। (আদ দুররুল মুখতার ১/৬৪৮) এ সম্পর্কে হাদীসের উদ্ধৃতি পেশ করা হল,
عن أنس رضي الله عنه قال: كان قرام لعائشة سترت به جانب بيتها فقال لها النبي صلى الله عليه وسلم أميطي عني فإنه لا تزال تصاويره تعرض لي في صلاتي.
অর্থ: হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, হযরত আয়েশা রাযি. এর ঘরে একটি পর্দা টানানো ছিল। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার সামনে থেকে এটা সরাও। কারণ এর ছবিগুলো আমার নামাযে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। (সহীহ বুখারী; হা.নং ৫৯৫৯)
বাচ্চাদের জন্য প্রাণীর আকৃতিতে তৈরি খেলনার বিধান
ছবি তৈরি করা এবং আঁকা যদিও হারাম। কিন্তু বাচ্চাদের জন্য প্রাণীর আকৃতিতে যে খেলনা পুতুল তৈরি করা হয় তা বাচ্চাদের খেলার জন্য রাখা বৈধ কি না এ ব্যাপারে উলামায়ে কেরাম থেকে একাধিক মত বর্ণিত আছে।
এক. এ ধরনের খেলনার হুকুম ছবির বিধানের ব্যতিক্রম। অর্থাৎ, এ ধরনের ছবি হারাম নয়। কাযী ইয়ায এ মতটি গ্রহণ করেছেন। তিনি এ মতটিকে জমহুর উলামায়ে কেরামের মত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আল্লামা হাসকাফী ইমাম আবু ইউসুফের মত বর্ণনা করেছেন যে, বাচ্চাদের জন্য এর দ্বারা খেলাধূলা বৈধ। ইবনে বাত্তালও এ মত পোষণ করেছেন।
দুই. অধিকাংশ মুহাদ্দিসীনদের মত হল, বাচ্চাদের জন্য প্রাণীর আকৃতিতে তৈরি খেলনা দ্বারা এক সময় খেলার অনুমতি ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে তা রহিত হয়ে গেছে। সুতরাং তা অন্যান্য ছবির মতই হারাম। দাউদী, বায়হাকী, ইবনুল জাওযী সহ অনেকেই এ মতের প্রবক্তা।
তিন. কারো মতে প্রাণীর আকৃতিতে তৈরি খেলনা কোন সময়ই জায়েয ছিল না। যে হাদীসে বাচ্চাদের পুতুল জাতীয় খেলনার কথা বলা হয়েছে তার দ্বারা উদ্দেশ্য হল, এমন খেলনা যা বাস্তবে ছবির আকৃতি নয়। বরং বাচ্চারা খেলাচ্ছলে যে পুতুলের আকৃতি তৈরি করে এখানে তা উদ্দেশ্য। ইমাম মুনযিরী, ইমাম হালীমীসহ কারো কারো মত এটি। এ ব্যাপারে হাদীসের বর্ণনাগুলো হল,
عن عائشة رضي الله عنها قالت قدم رسول الله صلى الله عليه وسلم غزوة تبوك أو خيبر وفي سهوتها ستر فهبت ريح فکشفت ناحية الستر عن بنات لعائشة لعب فقال ما هذا يا عائشة؟ قالت بناتي ورأى بينهن فرسا له جناحان من رقاع فقال ما هذا الذي أرى في وسطهن؟ قالت فرس قال وما هذا الذي عليه ؟ قالت جناحان قال فرس له جناحان؟ قالت أما سمعت أن لسليمان خيلا لها أجنحة؟ قالت فضحك رسول الله صلى الله عليه وسلم حتى رأيت نواجذه.
অর্থ: হযরত আয়েশা রাযি. বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবুক বা খায়বর যুদ্ধ থেকে ফিরলেন। ঘরে ছোট তাকে একটি পর্দা লাগানো ছিল। বাতাসে পর্দার একপাশ সরে আয়েশা রাযি. এর (পুতুলের মত) খেলনাগুলো বেরিয়ে পড়ল। তিনি বললেন, আয়েশা! এগুলো কী? হযরত আয়েশা বললেন, আমার খেলনা। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেগুলোর মাঝে ডানা লাগানো একটি ঘোড়া দেখে বললেন, এগুলোর মাঝখানে এটা কী? আয়েশা রাযি. বললেন, ঘোড়া। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এর উপর আবার ওটা কী? আয়েশা বললেন, ডানা। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ঘোড়ার আবার ডানা হয় না কি! আয়েশা রাযি. বললেন, আপনি শোনেননি, সুলাইমান আ. এর ডানা বিশিষ্ট ঘোড়া ছিল! নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে দিলেন। (এবং এত হাসলেন যে, তার) মাড়ির দাঁতও প্রকাশ হয়ে গেল। (সুনানে আবু দাউদ; হা.নং ৪৯৩২, সুনানে বাইহাকী; হা.নং ২০৯৮২, সুনানে নাসায়ী; হা.নং ৪৭৬৪)
অপর বর্ণনায় এসেছে,
عن عائشة رضي الله عنها قالت : كنت ألعب بالبنات عند النبي صلى الله عليه وسلم وكان لي صواحب يلعبن معي فكان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا دخل يتقمعن منه فيسربهن إلي فيلعبن معي.
অর্থ : হযরত আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলের নিকটে থাকাকালীন (পুতুলের মত) খেলনা দিয়ে খেলা করতাম। আমার বান্ধবীরাও আমার সাথে খেলতো। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাশরীফ রাখতেন তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের (দৃষ্টির) আড়ালে চলে যেত। এরপর (নবীজী চলে গেলে) আবার আসত এবং আমার সাথে খেলা করতো। (সহীহ বুখারী; হা.নং ৬১৩০, সহীহ মুসলিম; হা.নং ২৪৪০)
ইমাম আহমাদ বিন উমর কুরতুবী রহ. (মৃত ৬৫৬হি.) বর্ণিত হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন,
وفى فائدته، وأنه مستثنى من الصور الممنوعة؛ لأن ذلك من باب تدرب النساء من صغرهن على النظر لأنفسهن وبيوتهن، وقد أجاز العلماء بيعهن وشراءهن هي غير مالك فإنه كره ذلك، وحمله بعض أصحابه على كراهية الاكتساب بذلك.
অর্থ: এই হাদীস থেকে বোঝা গেল, এ ধরনের খেলনা নিষিদ্ধ ছবির হুকুম বহির্ভূত। এর কারণ হল, এগুলো বাচ্চা মেয়েদের নিজের এবং ঘরের কাজকর্ম বিষয়ে অনুশীলনের জন্য। উলামায়ে কেরাম এ সবের বেচাকেনা জায়েয বলেছেন। তবে ইমাম মালেক রহ. মাকরূহ মনে করতেন। মালেকী মাযহাবের কেউ কেউ মালেক রহ. এর কথার উদ্দেশ্য বর্ণনা করেছেন যে, তিনি এর মাধ্যমে কামাই-রোজগারকে অপছন্দ করতেন। (অর্থাৎ, খেলতে নিষেধ নেই)।
(আল মুফহিম ৬/৩২৩)
ইমাম নববী রহ. উল্লেখ করেন,
قال القاضي فيه جواز اللعب بهن... وروي عن مالك كراهة شرائهن وهذا محمول على كراهة الاكتساب بها وتنزيه ذوي المروات عن تولي بيع ذلك لا كراهة اللعب قال ومذهب جمهور العلماء جواز اللعب بهن وقالت طائفة هو منسوخ بالنهي عن الصور هذا كلام القاضي.
অর্থ: কাযী ইয়ায বলেন, এই বর্ণনা এ কথার প্রমাণ বহন করে যে, পুতুল দ্বারা খেলা করা জায়েয। ইমাম মালেক রহ. খেলনা পুতুল ক্রয় করা শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে নাজায়েয মনে করতেন। মালেক রহ. এর এ বক্তব্যের ব্যাখ্যা হল, তার দৃষ্টিতে পুতুল বিক্রি করে কামাই করা নাজায়েয এবং মর্যাদাশীল ব্যক্তিদের এমন কাজ থেকে বিরত থাকার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা উদ্দেশ্য। কাযী ইয়ায বলেন, জুমহুর উলামায়ে কেরামের মাযহাবও তাই। উলামায়ে কেরামের এক জামাআত বলেন, ছবি হারাম হওয়ার মাধ্যমে এ ধরনের খেলনা দ্বারা খেলার বৈধতা রহিত হয়ে গেছে। (শরহে মুসলিম ৮/১৫/১৮৮)
আল্লামা ইবনে হাজার উল্লেখ করেন,
واستدل بهذا الحديث على جواز اتخاذ صور البنات واللعب من أجل لعب البنات بهن وخص ذلك من عموم النهي عن اتخاذ الصور وبه جزم عياض ونقله عن الجمهور وأنهم من أجازوا بيع اللعب للبنات لتدريبهن. من صغرهن على أمر بيوتهن وأولادهن قال وذهب بعضهم إلى أنه منسوخ وإليه مال بن بطال وحكى عن بن أبي زيد عن مالك أنه كره أن يشتري الرجل لابنته الصور ومن ثم رجح الداودي أنه منسوخ ... وقال المنذري إن كانت اللعب كالصورة فهو قبل التحريم وإلا فقد يسمى ليس بصورة لعبة وهذا جزم الحليمي فقال إن كانت صورة كالوثن لم يجز وإلا جاز
অর্থ: বর্ণিত হাদীসের ভিত্তিতে খেলনা পুতুলকে ছবি রাখার নিষিদ্ধতার ব্যাপকতা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। কাযী ইয়ায (হাদীসের এ ব্যাখ্যাকে) সঠিক মনে করেন এবং জমহুর উলামা থেকে এ কথা নকল করেছেন যে, বাচ্চাদের ঘরোয়া কাজের অনুশীলন উদ্দেশ্য হলে তারা এ ধরনের খেলনা বিক্রিকেও জায়েয বলেছেন। কাযী ইয়ায বলেন, কোন কোন উলামায়ে কেরাম বলেছেন, ছবি নিষিদ্ধের হাদীস দ্বারা এ ধরনের খেলনা তৈরির বৈধতাও রহিত হয়ে গেছে।
(আল্লামা ইবনে হাজার বলেন,) ইবনে বাত্তালের মতামত কাযী ইয়াযের দিকে ধাবিত। ইবনে আবী যায়েদ ইমাম মালেক রহ. থেকে বর্ণনা করেন. তিনি কোন ব্যক্তির তার কন্যার জন্য (ছবি জাতীয়) খেলনা ক্রয় করা মাকরূহ মনে করতেন। এর ভিত্তিতে দাউদী রহিত হওয়ার মতকে প্রাধান্য দিয়েছেন...
ইমাম বাইহাকী রহ. এ সংক্রান্ত হাদীস বর্ণনার পর বলেন, এর দ্বারা ছবি রাখা নিষেধ হওয়া প্রমাণিত। সুতরাং হযরত আয়েশা রাযি. এর ক্ষেত্রে এ সবের ছাড় হারাম হওয়ার পূর্বে ঘটিত বলে ধরা হবে। ইবনুল জাওযী এ মতটিকে সুনিশ্চিতভাবে প্রমাণিত মত মনে করেছেন।
ইমাম মুনযিরী বলেন, যদি (হাদীসে উল্লিখিত) খেলনা দ্বারা ছবি আকৃতির খেলনা উদ্দেশ্য হয়ে থাকে তবে (এর ব্যাখ্যা হল, এ ঘটনা হারাম হওয়ার পূর্বের। আর যদি ছবি আকৃতির খেলনা উদ্দেশ্য না হয় তাহলে এ হাদীসের ব্যাখ্যা হল,) যে খেলনা ছবির আকৃতির নয় তাকে لعبة বলা হয়েছে।
আল্লামা হালীমী এ মতটি সঠিক মনে করেন। তিনি বলেন, যদি খেলনার আকৃতি মূর্তির আকৃতির হয় তাহলে তা জায়েয নেই, অন্যথায় জায়েয। (ফাতহুল বারী ১০/৬৪৬, উমদাতুল কারী ১৫/২৬৪, শরহুত ত্বীবী ৮/২৯৪, ফাতহুল ওয়াদূদ ৪/৫৯৩)
আল্লামা ইউসুফ ইবনে মুহাম্মাদ কিরমানী (মৃত ৭৮৬হি.) বলেন,
قال ابن بطال: المقصود من الحديث الرخصة لى التماثيل واللعب التي يلعب بها الجواري.
ইমাম বায়হাকী রহ. (মৃত ৪৫৮হি.) বলেন,
في الحديث من غزوة تبوك أو خيبر وقد ثبت عن رسول الله صلى الله عليه وسلم النهي عن التصاوير والتماثيل من أوجه كثيرة عنه فيحتمل أن يكون المحفوظ في رواية أبي سلمة عن عائشة قدومه من غزوة خيبر وأن ذلك كان قبل تحريم الصور والتماثيل ثم كان تحريمها بعد ذلك.
অর্থ: (আয়েশা রাযি. এর খেলনা সম্পর্কে সুনানে আবু দাউদে যে বর্ণনাটি এসেছে) সেই বর্ণনায় আয়েশা রাযি. এর ঘটনাটি তাবুক যুদ্ধের পরে হয়েছিল না খায়বার যুদ্ধের পরে? এ ব্যাপারে হাদীসের বর্ণনাকারী সংশয় প্রকাশ করেছে। অপর দিকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অসংখ্য সূত্রে মূর্তি এবং ছবি নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত। সে হিসেবে বলা যায় যে, (আবু দাউদের হাদীসে বর্ণিত ঘটনাটি) গাযওয়ায়ে খায়বার থেকে ফেরার পর হয়েছে। এ মতটিই সংরক্ষিত এবং সঠিক। সুতরাং পুতুল দ্বারা খেলার ঘটনাটি ছবি এবং মূর্তি হারাম হওয়ার পূর্বের ঘটনা। এরপর সব ধরনের ছবি হারাম হয়ে গেছে। (আস-সুনানুল কুবরা লিলবাইহাকী ১০/৩৭১)
আল্লামা হাসকাফী নকল করেন,
وفي آخر حظر المجتبى عن أبي يوسف: يجوز بيع اللعبة وأن يلعب بها الصبيان
অর্থ: হযরত আবু ইউসুফ থেকে বর্ণিত, বাচ্চাদের ছবি আকৃতির খেলনা বিক্রি করা জায়েয এবং তা দ্বারা বাচ্চারা খেলতেও পারে। (আদদুররুল মুখতার ৫/২২৬)
মালেকী মাযহাবের মানহুল জালীল শরহে মুখতাসারুল খলীল (৩/৫২৯)-এ বলা হয়েছে,
واستثني من المحرم لعبة بهيئة بنت صغيرة لتلعب بها البنات الصغار فيجوز تصويرها وبيعها وشراؤها لتدريبهن على تربية الأولاد.
খেলনা পুতুলের ব্যাপারে অধিক গ্রহণযোগ্য মত
বর্ণিত হাদীসের ব্যাখ্যায় উলামায়ে কেরাম যা কিছু বলেছেন তার মধ্যে আমাদের দৃষ্টিতে এ ব্যাখ্যা সঠিক মনে হয় যে, আয়েশা রাযি. যে পুতুলের কথা বলেছেন, তা দ্বারা হুবহু প্রাণীর আকৃতিতে তৈরি পুতুল উদ্দেশ্য নয় (বিশেষত বর্তমান বাজারে যে খেলনা পুতুল পাওয়া যায় তা তো অবশ্যই নয়)। এর দ্বারা উদ্দেশ্য এমন খেলনা পুতুল যা বাচ্চারা নিজেরা তৈরি করে, সেটাকে কাপড় পরায় এবং 'বাবু' মনে করে খেলাধূলা করে।
আল্লামা কুরতুবী রহ. পূর্বে বর্ণিত সহীহ বুখারী শরীফের হাদীসের শব্দ كنت العب بالبنات এর ব্যাখ্যায় বলেন,
وهن اللعب جمع لعبة وهو ما يلعب به والبنات جمع بنت وهن الجواري وأضيفت اللعب للبنات لأنهن هن اللواتي يصنعنها ويلعبن بها
অর্থ : . لعبة বলা হয় যার দ্বারা খেলা হয়। খেলনা পুতুলকে بنات বলার কারণ হল, বাচ্চা মেয়েরা নিজ হাতে এ ধরনের খেলনা পুতুল তৈরি করত তাই بنات (কন্যা) এর দিকে لعب সম্বন্ধযুক্ত করে খেলনা পুতুলের নাম لعب البنات রাখা হয়েছে। (আলমুফহিম; হা.নং ৩২৩)
হযরত আয়েশা রাযি. এর বর্ণনায় স্পষ্টভাবে এ কথার উল্লেখ নেই যে, সেই খেলনাগুলো ছবি আকৃতির ছিল। আরবদেশে বাচ্চাদের খেলনা কেমন হয় তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে শাইখ হামুদ বিন আব্দুল্লাহ তায়ীজারী বলেন,
بل والظاهر والله أعلم أنها كانت على نحو لعب بنات العرب في زماننا فإنهن يأخذن عوداً أو قصبة أو خرقة ملفوفة أو نحو ذلك فيضعن قريبا من أعلاه عودا معترضا ثم يلبسنه ثيابا ويضعن على أعلاه نحو خمار المرأة وربما جعلته على هيئة الصبي في المهد ثم يلعبن بهذه اللعب ويسمينهن بنات لهن على وفق ما هو مروي عن عائشة وصواحباتها رضي الله عنهن. وقد رأينا البنات يتوارثن اللعب بهذه اللعب اللاتي وصفنا زمانا بعد زمان ولا يبعد أن يكون هذا التوارث قديما ومستمرا في بنات العرب من زمن الجاهلية إلى زماننا هذا والله أعلم.
অর্থ: বাস্তবতা তো আল্লাহ তা'আলাই ভালো জানেন। তবে বাহ্যিকভাবে মনে হয়, এই খেলনা দ্বারা আমাদের বর্তমান সময়ের মেয়েদের খেলনার মত খেলনা উদ্দেশ্য। বর্তমানের মেয়ে শিশুরা প্রথমে একটি (লম্বা) চটি, একটি (ছোট) কাঠি, গোল করে মোড়ানো একটি কাপড়ের পুটলি ও কিছু টুকরো কাপড় বা এ জাতীয় জিনিস সংগ্রহ করে। তারপর লম্বা চটিটির উপরের অংশের কাছাকাছি কাঠিটি আড়াআড়ি বাঁধে। এরপর এটার গায়ে কাপড় জড়িয়ে লম্বা চটির একেবারে মাথায় কাপড়ের পুটলিটি বেঁধে মেয়েদের ওড়না পরার মত আঁচল পড়িয়ে দেয়। আবার কখনো দেখা যায়, দোলনায় বাচ্চার মত কিছু একটা বানিয়ে সেটা দিয়ে খেলা করে। তো এই জিনিসটিকে তারা بنات (কন্যা) মনে করে খেলে, ঠিক যেমনটা আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত। আমরা আমাদের অঞ্চলের মেয়েদের দেখেছি যে, পূর্বে যে ধরনের খেলনার কথা বললাম তা যুগ যুগ ধরে পরম্পরায় চলে আসছে। এ কথা বললে বাড়াবাড়ি হবে না যে, এই পরম্পরার ব্যাপারটি আরবকন্যাদের ইসলামের শুরু যুগ মাঝে থেকে ধারাবাহিকভাবে চলে আসছে।
এরপর তিনি একটি বিষয় পরিষ্কার করেছেন যে, আরবের অনেক শিশু প্রাণীর আকৃতির পুতুল দ্বারা খেলে। তাহলে পূর্বোক্ত বক্তব্যের কী বাস্তবতা রইল? এর জবাবে তিনি বলেন,
وأما السالمات من أدناس المدنية الإفرنجية ومن مخالطة نساء الأعاجم وأشباه الأعاجم فهؤلاء لم يزلن على طريقة بنات العرب. ولعبهن على ما وصفنا من قبل.
অর্থ: যারা ইউরোপিয়ান কালচারের কলুষমুক্ত এবং অনারবীয়দের সংশ্রব ও সাদৃশ্যমুক্ত তারা পুতুল খেলায় (প্রকৃত) আরব কন্যাদের মত। আর তাদের পুতুল খেলনা কেমন তার বিবরণ আমি আগেই দিয়েছি। (ই'লানুন নাকীর আলাল মাফতুনীন বিততাসবীর ১/৬৭)
উল্লেখ্য, শাইখ বিন বায এবং শাইখ আব্দুর রাজ্জাক আফিফী উক্ত গ্রন্থের উপর প্রশংসাপত্র লিখেছেন।
আল্লামা কাশ্মীরী রহ. বলেন,
أن البنات جائزة، وكانت حقيقتها في القديم أنهم كانوا يأخذون ثوباً، ويشدونه في الوسط، فكانت لا تحي عن صورة وشكل، ولم تكن كبناتنا اليوم، فإنها تماثيل كالأصنام، فلا تجوز قطعا.
অর্থ: খেলনা পুতুল জায়েয। অতীতে এগুলো দ্বারা খেলার ধরন এই ছিল যে, তারা কাপড় সংগ্রহ করে এর মাঝখানে গিঠ দিতো। এ ধরনের খেলনা পুতুল (ছবির) আকার-আকৃতি বুঝায় না এবং তা আজকালের খেলনা পুতুলের মতও ছিল না। বর্তমানের খেলনা পুতুল তো প্রতিমা-মূর্তির মত। নিশ্চিতভাবে তা জায়েয নেই। (ফয়যুল বারী ৭/৩৮৮)
সম্ভবত সহীহ বুখারীর এ হাদীসটি শেষোক্ত বক্তব্যের সমর্থন করে। হযরত রবী বিনতে মুআওয়ায থেকে বর্ণিত,
.... ونصوم صبياننا ونجعل لهم اللعبة من العهن فإذا بكى أحدهم على الطعام أعطيناه ذاك حتى يكون عند الإفطار
অর্থ : আমাদের ছোট বাচ্চারা রোযা রাখতো। আমরা তাদের জন্য তুলার টুকরা দিয়ে খেলনা বানাতাম। তাদের কেউ যখন খাওয়ার জন্য কান্নাকাটি করতো, আমরা এই ধরনের পুতুল দিয়ে তাকে সান্তনা দিতাম। ইফতার পর্যন্ত এভাবে কেটে যেতো। (সহীহ বুখারী; হা.নং ১৯৬০)
আর আবু দাউদের হাদীসে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক খেলনার ডানা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা প্রমাণ করে যে, এটা প্রকৃত অর্থে ছবি ছিল না। কারণ নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করেছেন, ওটা কি জিনিস? এটা বলেননি, ডানা কোত্থেকে এলো?
সারকথা
বাচ্চাদের খেলনা হিসেবে তৈরি প্রচলিত খেলনা পুতুল রাখা হারাম। কারণ,
১. যে সকল হাদীসে খেলনা পুতুলের কথা বলা হয়েছে সেগুলোতে প্রাণীর আকৃতির কথা স্পষ্ট বুঝে আসে না। অথচ হারাম হওয়ার পক্ষের হাদীসগুলো স্পষ্ট।
২. আরবে ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী ঐতিহ্যবাহী পরিবারের বাচ্চাদের জন্য যে খেলনা পুতুলের প্রচলন আছে তা বাস্তবে প্রাণীর আকৃতির নয়; বরং তা বাচ্চাদের কাল্পনিক পুতুল হয়ে থাকে। এ কথা ঠিক যে, এ সংক্রান্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় উলামায়ে কেরামের মতবিরোধ থাকায় এর নিষিদ্ধতা অন্যান্য ছবির তুলনায় হালকা হবে।
কার্টুনের শরয়ী বিধান
বর্তমানে ভিডিও কার্টুনের খুব প্রচলন। বাচ্চারা এ ধরনের কার্টুন খুব পছন্দ করে। এ ধরনের কার্টুনের ব্যাপারে উলামায়ে কেরামের বিভিন্ন মত পাওয়া যায়।
এক. এ ধরনের কার্টুন হারাম। কারণ কার্টুনের আকৃতি যদি হাতে আঁকা হয় তবে তাকে সকলে ছবি আঁকাই বলবে। সুতরাং ভিডিও কার্টুনের বিধানও তাই হবে।
দুই. যে কার্টুন কাল্পনিক হয় তা জায়েয। যেমন গাড়ীর মধ্যে চোখ কান লাগিয়ে আকৃতি দেয়া কার্টুন ইত্যাদি। এসব জায়েয। কারণ আল্লাহর সৃষ্টি এমন নয়, তাই সৃষ্টি বৈশিষ্ট্যের সাদৃশ্য অবলম্বন করা হয় না।
তিন. ভিডিও কার্টুন মুবাহ। এ মতের প্রবক্তারা বলেন, যে ছবিতে অপদস্ত অবস্থা বুঝা যায় তা ছবির নিষিদ্ধতা বহির্ভূত। আর কার্টুনও এমন। কার্টুনের শাব্দিক অর্থই হল ব্যঙ্গ করা। শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালেহ এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে বলেন,
أما صور الكرتون التي ذكرتم أنها تخرج في التلفزيون فإن كانت على شكل آدمي فحكم النظر فيها محل تردد هل يلحق بالصور الحقيقية أو لا؟ والأقرب أنه لا يلحق بها.
সৌদি আরবের ইফতা বোর্ডের ফতওয়া এখানে তুলে ধরা হল-
س : ما حكم مشاهدة وشراء أفلام الكارتون الإسلامية؟
ج : لا يجوز بيع ولا شراء واستعمال أفلام الكرتون، لما تشتمل عليه من الصورة المحرمة
কার্টুনের ফিল্ম বেচাকেনা এবং রাখা জায়েয নেই। কারণ এ ধরনের ফিল্ম হারাম ছবি সম্বলিত হয়ে থাকে। (ফাতাওয়া উলামাইল বালাদিল হারাম-৪৩৪)
প্রাণীর আকৃতিতে খাদ্যদ্রব্য তৈরির হুকুম
যে সকল আকৃতি স্বাভাবিক প্রচলনে সংরক্ষণ ও রেখে দেয়া উদ্দেশ্য হয় না এমন আকৃতির ব্যাপারে শরীয়তে দুই ধরনের বক্তব্য পাওয়া যায়। কিন্তু আল্লামা কুরতুবী রহ. বলেন, নাজায়েয হওয়াটা বেশি যুক্তিযুক্ত। তিনি বলেন,
وفيما لا يبقى من الصور كصور الفخار، ففي كل ذلك منهما قولان غير أن المشهور فيما لا يبقى المنع.
অর্থ: যে ছবি বাকী থাকে না যেমন মৃৎকর্মকারের তৈরি আকৃতি। এ ধরনের ছবির ব্যাপারে দুই ধরনের মত পাওয়া যায়। তবে এ ধরনের ছবির ক্ষেত্রে প্রসিদ্ধ মত নিষেধ হওয়ার মতটিই। (আল-মুতকিন ৫/৪২৬)
আল্লামা ইবনে হাজার রহ. বর্ণিত মত উল্লেখ করার পর বলেন,
وهل يلتحق ما يصنع من الحلوى بالفخار أو بلعب البنات محل تأمل
অর্থ: প্রাণীর আকৃতিতে যে মিষ্টি দ্রব্য তৈরি করা হয় তা মৃৎকর্মকারের তৈরি আকৃতির মত হারাম হবে নাকি لعب البنات তথা বাচ্চাদের খেলনার মত বৈধ হবে? বিষয়টি আরো চিন্তা গবেষণার দাবী রাখে। (ফাতহুল বারী ১০/৪৭৫)
ইবনে হাজার রহ. যদিও খাবার প্রাণীর আকৃতিতে তৈরি করলে হারাম হবে কি না এ বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। কিন্তু এর থেকে বেঁচে থাকা যে অধিক সতর্কতা এতে কোন সন্দেহ নেই। কারণ আল্লামা কুরতুবীর মূলনীতির আলোকে তা হারামই সাব্যস্ত হয়।
মালেকী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ আশ শরহুস সগীর (২/৫০১) বলা হয়েছে,
وفيما لا يطول استمراره خلاف والصحيح حرمته
মূর্তি ও ভাস্কর্য তৈরির বিধান
ইসলামের দৃষ্টিতে মূর্তি ও ভাস্কর্য দুটিই তৈরি করা হারাম। কারণ ইসলামের দৃষ্টিতে প্রাণীর প্রতিকৃতি তৈরি করা হারাম, চাই তাতে পূজার উদ্দেশ্য থাকুক বা না থাকুক। এক্ষেত্রে প্রাণীর প্রতিকৃতি হওয়াই হারাম হওয়ার কারণ। আর যদি সেই প্রতিকৃতি পূজার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়ে থাকে আর তা কোন মুসলমান করে তাহলে তো কুফরী পর্যন্ত পৌছার আশঙ্কা রয়েছে। আল্লাহ তা'আলা বলেন,
فَاجْتَنِبُوا الرِّجْسَ مِنَ الْأَوْثَانِ وَاجْتَنِبُوا قَوْلَ الزور.
অর্থ : তোমরা পরিহার করো অপবিত্র বস্তু অর্থাৎ মূর্তিসমূহ এবং পরিহার কর মিথ্যাকথন। (সূরা হজ্জ-৩০)
আবুল হাইয়ায আসাদী রহ. বলেন, হযরত আলী ইবনে আবি তালেব আমাকে বললেন,
ألا أبعثك على ما بعثني عليه رسول الله صلى الله عليه وسلم؟ أن لا تدع تمثالا إلا طمسته ولا قبرا مشرفا إلا سويته.
অর্থ: আমি কি তোমাকে এমন কাজের দায়িত্ব দিয়ে প্রেরণ করবো না, যে কাজের জন্য নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে প্রেরণ করেছিলেন? (তা এই যে,) তুমি সকল প্রাণীর মূর্তি বিলুপ্ত করবে এবং সকল সমাধিসৌধ ভূমিস্যাৎ করে দিবে। (সহীহ মুসলিম; হা.নং ৯৬৯)
আলী ইবনে আবী তালেব বলেন, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি জানাযায় উপস্থিত ছিলেন। তখন তিনি বললেন,
أيكم ينطلق إلى المدينة فلا يدع بها وثنا إلا کسره ولا قبرا إلا سواه ولا صورة إلا لطخها.
তোমাদের মধ্যে কে আছে যে মদীনায় যাবে এবং যেখানেই কোন মূর্তি পাবে তা ভেঙ্গে ফেলবে, যেখানেই কোন সমাধিসৌধ পাবে তা ভূমিস্যাৎ করে দিবে এবং যেখানেই কোন চিত্র পাবে তা মুছে দিবে? অতঃপর আলী রাযি. এই দায়িত্ব পালন করলেন। ফিরে আসার পর নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
من عاد لصنعة شيء من هذا فقد كفر بما أنزل على محمد.
যে কেউ পুনরায় ঐসব বস্তু তৈরি করবে সে মুহাম্মাদের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রতি নাযিলকৃত দীনকে অস্বীকারকারী। (মুসনাদে আহমাদ; হা.নং ৬৫৭)
উমর রাযি. যখন শামে গেলেন তখন খ্রিস্টানদের কতিপয় ব্যক্তি উপস্থিত হয়ে তাকে তাদের গীর্জায় নিমন্ত্রণ করলেন। হযরত উমর রাযি. এ কথা বলে অপারগতা প্রকাশ করলেন যে,
انا لا ندخل كنائسكم من أجل الصور التي فيها يعني التماثيل.
তোমাদের গির্জাগুলোতে বিভিন্ন মূর্তি রয়েছে। এজন্য আমরা তাতে প্রবেশ করব না। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক; হা.নং ১৯৪৮৬)
এছাড়া মূর্তি ও ভাস্কর্য তৈরি করার দ্বারা প্রাণীর আকৃতি তৈরি করা হয় বলে তা ছবির হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। এ সংক্রান্ত বিস্তারিত আলোচনা এ প্রবন্ধের প্রথম কিস্তিতে এসেছে।
স্কাইপির ভিডিও কল এবং সরাসরি সম্প্রচারিত ছবির বিধান
আমরা পূর্বেই বলেছি ছবি বলা হয় যা মূলের অনুগামী হয় না, বরং মূলের অনুপস্থিতিতেই তা সংরক্ষিত এবং স্বতন্ত্র হয়ে থাকে। সুতরাং যদি অন্য কোন শরয়ী নিষিদ্ধতা না থাকে তবে ভিডিও কল করা জায়েয। কারণ এ ক্ষেত্রে যে ছবি ভেসে আসে তা মূলের অনুগামী। অপর প্রান্ত থেকে যদি (যার ছবি) সে
সটকে পড়ে তাহলে ছবি দৃষ্টিতে আসবে না। একই বিধান 'লাইভ শো' অর্থাৎ, সরাসরি সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তবে শরীয়তে নিষিদ্ধ অন্য কোন কিছু এতে অন্তর্ভুক্ত হলে তা দেখা বা রাখা সেই নিষিদ্ধতার কারণে নাজায়েয হবে।
ছবি দেখার ব্যাপারে শরীয়ত কী বলে
ছবি দেখা বিভিন্ন কারণে হারাম হতে পারে। যেমন কেউ কোন অপরিচিত সুন্দরীর ছবি দেখলো, এতে তার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের কল্পনা জল্পনা সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে এবং খারাপ পরিণতির দিকে ধাবিত হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। তাই ছবি দেখা হারাম। শরীয়তের একটি নীতি হল,
المفضى إلى الحرام حرام.
আরো নানাবিধ কারণে ছবি দেখা হারাম হতে পারে। কিন্তু এই শিরোনামের আলোচ্য বিষয় হল, 'ছবি' ছবি বলেই দেখা হারাম হবে কি না?
এক. আশশরহুস সগীর (২/৫০১) গ্রন্থে ছবি দেখার হুকুম বর্ণনা করতে গিয়ে বলা হয়েছে,
النظر إلى الحرام حرام.
অর্থ: হারামের প্রতি দৃষ্টি দেয়াও হারাম। সুতরাং ছবি দেখা হারাম।
মুফতী শফী রহ. তাসবীর কে শরয়ী আহকাম (পৃষ্ঠা ৮৯)-এ বলেন,
جن تصاویر کا بنانا اور گھر میں رکھنا ناجائز ہے ،ان کا ارادہ اور قصد کے ساتھ دیکھنا بھی نا جائز ہے البتہ تبعا بلا قصد نظر پڑ جائے تو مضائقہ نہیں، جیسے کوئی اخبار یا کتاب مصور ہے مقصود اسکا مضمون دیکھنا ہے ، بلا ارادہ تصویر بھی سامنے آجاتی ہے، اس کا مضائقہ نہیں۔
অর্থ: যে ছবি তৈরি করা এবং ঘরে রাখা নাজায়েয সেগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে দেখাও নাজায়েয। তবে অনিচ্ছায় অন্য কিছুর অনুগমে দৃষ্টি পড়ে গেলে কোন গুনাহ নেই। যেমন ছবিবিশিষ্ট কোন বই বা পত্রিকার আলোচ্য পাঠ দেখতে গিয়ে ছবির প্রতিও দৃষ্টি পড়ে গেল এতে অসুবিধা নেই।
উক্ত বক্তব্য থেকে এ কথাই বুঝে আসে যে, ছবি যদি নাজায়েয পর্যায়ের হয় তাহলে ছবি হওয়ার কারণেই তা দেখা হারাম। মুফতী শফী রহ. এক্ষেত্রে মালেকী মাযহাবের সেই প্রসিদ্ধ মূলনীতি النظر إلى الحرام حرام উল্লেখ করেছেন। মুফতী শফী রহ. এর উক্ত মতের কারণেই হয়তোবা আমাদের অঞ্চলে মাসআলাটি হারাম হিসেবে বদ্ধমূল হয়ে আছে।
দুই. মালেক মাযহাবে ছবি দেখা হারাম হওয়ার সুস্পষ্ট বক্তব্য মিলে। আমরা যতদূর যাচাইয়ের প্রয়াস পেয়েছি তাতে মালেকী মাযহাব ব্যতীত অন্য কোন মাযহাবে 'ছবি' ছবি হওয়ার কারণে দেখা হারাম এমন কোন স্পষ্ট কথা খুঁজে পাইনি।
শাফিয়ী মাযহাবের ব্যাপারে আল-মউসূআতুল ফিকহিয়্যাহ আল-কুওয়াইতিয়্যাহ (১২/১২৩) -এ উল্লেখ করা হয়েছে,
قال الشيخ الباجوري يجوز التفرج على صور حيوان غير مرفوعة أو على هيئة لا تعيش معها كأن كانت مقطوعة الرأس أو الوسط أو مخرقة البطون.
অর্থ: শাইখ বাজুরী রহ. বলেন, দেয়ালে সাটানো নয় এমন প্রাণীর ছবি দেখা অথবা এমন অঙ্গবিহীন ছবি যে অঙ্গ ছাড়া প্রাণী বাঁচতে পারে না যেমন মুণ্ডুবিহীন, পেট ফাঁড়া ছবি এসব দেখা জায়েয।
এ বক্তব্যের কাছাকাছি আরেকটি বক্তব্য পাওয়া যায় নূরুদ্দীন আলী ইবনে আলী সংকলিত নিহায়াতুল মুহতাজ এর টিকায় (২/৫৭১) তিনি বলেন,
التفرج على الزينة المحرمة لكونها بنحو الحرير حرام
অর্থ: হারাম পদ্ধতিতে যে সৌন্দর্য সৃষ্টি করা হয় যেমন রেশমের কাপড়ের মাধ্যমে সৌন্দর্য গ্রহণ; এমন সৌন্দর্য দেখাও হারাম।
শাফিয়ী মাযহাবের প্রাচীন ফিকহী গ্রন্থ থেকেও 'হারাম ছবি' ছবি হওয়ার কারণে দেখা হারাম এ কথা বুঝা যায় না। ইমাম শাফিয়ী রহ. বলেন,
إن رأى صورا في الموضع الذي يدعى فيه ذوات أرواح لم يدخل المنزل الذي تلك الصور فيه إن كانت تلك منصوبة لا توطأ فإن كانت توطاً فلا بأس أن يدخله.
অর্থ: আহুত স্থানে যদি প্রাণীর ছবি থাকে এবং তা সেখানে টানানো থাকে তাহলে সে স্থানে প্রবেশ করবে না। আর যদি ছবিটা সেখানে মাড়ানো অবস্থায় হয় তবে প্রবেশ করতে কোন শরয়ী বাধা নেই। (কিতাবুল উম্ম ৭/৪৫২)
এছাড়া আবুল হাসান মাওয়ারদী (৪৫০হি.) আল হাবীল আল কাবীর (১২/১৪৫)-এ ইমাম গাযালী রহ. (৫০৫হি.) আলওয়াসিত ফিল মাযহাব (৫/২৭৭)-এ একই বক্তব্য উল্লেখ করেছেন।
এসব বক্তব্য থেকে এ কথা বুঝে আসে যে, যে সূরতে ছবির প্রতি কোনোভাবে সম্মান বুঝে আসে সেক্ষেত্রে ছবিবিশিষ্ট ঘরে প্রবেশ নিষেধ। কিন্তু যখন ছবির প্রতি সম্মানবোধ বুঝে আসে না তখন ছবিবিশিষ্ট ঘরে প্রবেশ নিষেধ নয় এবং এমন ছবি দেখাও নিষেধ নয়। কারণ দ্বিতীয় সূরতে ইচ্ছাকৃতভাবে ছবিবিশিষ্ট ঘরে প্রবেশের মাধ্যমে সে ইচ্ছা করেই ছবি দেখলো, এই কাজ তো ইমাম শাফিয়ী রহ. এর বক্তব্য অনুযায়ী নিষেধ হল না। অথচ অপদস্ত ছবি তৈরি করা হারাম তাই ছবি হওয়ার কারণে দেখা হারাম হলে এমন ছবি দেখাও হারাম হতো। অতএব বুঝা যাচ্ছে যে, শাফিয়ী মাযহাবে মূলত হারাম ছবি’ ছবি হওয়ার কারণে দেখা হারাম নয়; বরং তা'যীম বা সম্মান প্রদর্শন প্রকাশ পেলেই কেবল হারাম হয়।
হাম্বলী মাযহাবে ছবি দেখা নাজায়েয নয়। ইমাম ইবনে কুদামা (৬২০হি.) বলেন,
ولا يجب على من رآه في منزل الداعي الخروج في ظاهر كلام أحمد.
অর্থ: দাওয়াত দাতার ঘরে ছবি দেখলে দর্শনকারীর জন্য সেখান থেকে বের হওয়া আবশ্যক নয়। (আলমুগনী ১০/২০২)
হানাফীদের ব্যাপারে আল্লামা শামী রহ. বলেন,
هل يحرم النظر بشهوة إلى الصورة المنقوشة محل تردد و لم أره.
অর্থ: অঙ্কিত ছবির প্রতি কামভাব নিয়ে দৃষ্টি দেয়া হারাম কি না এ ব্যাপারে সংশয় রয়েছে। এ ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত আমাদের জানা নেই। (রদ্দুল মুহতার ৬/৩৭৩)
এখানে যে ছবিতে কামভাব হয় সে ছবির হুকুমের ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে। তাহলে কামভাব সৃষ্টি হয় না এমন ছবির বিষয়ে ছবি হওয়ার কারণে দেখতে নিষেধ হওয়া বুঝা যায় না। কারণ কামভাবের কারণে হারাম হবে কি না এটা তখনই গবেষণার বিষয় হতে পারে যখন স্বয়ং দেখা জায়েয হবে।
তিন. ছবি দেখা সংশ্লিষ্ট কিছু হাদীস এখানে উল্লেখ করা হল,
عن عائشة رضي الله عنها قالت قال لي رسول الله صلى الله عليه وسلم رأيتك في المنام يجيء بك الملك في سرقة من حرير فقال لي هذه امرأتك فكشف عن وجهك الثوب فإذا هي أنت .
অর্থ: হযরত আয়েশা রাযি. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,আমি তোমাকে স্বপ্নে দেখেছি যে, একজন ফেরেশতা রেশমের কাপড়ে পেঁচিয়ে (তোমার আকৃতি) নিয়ে এসেছে। তিনি বললেন, ইনি আপনার স্ত্রী। অতঃপর তোমার চেহারা থেকে কাপড় সরানো হল, দেখি তুমিই সে! (সহীহ বুখারী; হা.নং ৫১২৫)
ইবনে হাজার রহ. ফাতহুল বারীতে আরেকটা সূত্রে বর্ণনা করেন,
لقد نزل جبريل بصورتي في راحته.
অর্থ: জিবরাঈল আ. তার তালুতে আমার ছবি নিয়ে এলেন।
أن النبي صلى الله عليه وسلم لما قدم مكة أبى أن يدخل البيت وفيه الآلهة فأمر بها فأخرجت قال فأخرج صورة إبراهيم وإسماعيل وفي أيديهما الأزلام.
অর্থ: নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাবা ঘরে প্রবেশ করলেন। সেখানে ইবরাহীম আ. এবং ইসমাঈল আ. এর ছবি দেখলেন যে, তারা সর দ্বারা ভাগ্য পরীক্ষা করছে। (সুনানে আবু দাউদ; হা.নং ২০২৭)
إن النصارى صنعوا عمر رض حين قدم الشام طعاما فدعوه فقال: اين هو؟ قالوا: في الكنيسة فأبى أن يذهب. وقال لعلى امض بالناس فليتغدوا فذهب علي رض بالناس فدخل الكنيسة، وتغدى هو والمسلمون وجعل على ينظر إلى الصور.
অর্থ: হযরত উমর রাযি. যখন শামে গেলেন খ্রিস্টানরা তাঁর সম্মানে খাবারের আয়োজন করে দাওয়াত করল। তিনি বললেন, দাওয়াত খেতে কোথায় যেতে হবে? তারা বললো, আমাদের গির্জায়। উমর রাযি. এ কথা শুনে সেখানে যেতে অস্বিকৃতী জানালেন এবং আলী রাযি. কে বললেন, আপনি লোকদের নিয়ে গিয়ে খাবার খেয়ে আসেন। সুতরাং আলী রাযি. লোকদেরকে সাথে নিয়ে গির্জায় দাওয়াত খেলেন। আলী রাযি. সেখানে গিয়ে ছবিগুলো দেখছিলেন। (আলমুগনী ১০/২০৩)
আলোচনার সারসংক্ষেপ
১. ছবি দেখার ক্ষেত্রে যদি বিশেষ কারণে শরয়ী নিষেধাজ্ঞা থাকে যেমন, গাইরে মাহরামের ছবি বা অশ্লিল নির্লজ্জ ছবি হয় কিংবা ছবির অবস্থান দৃষ্টে অনুরাগ বা সম্মানবোধ বুঝে আসে তাহলে ছবি দেখা নাজায়েয। শরীয়তের মূলনীতি হল,
المفضى إلى الحرام حرام.
২. মালেকী মাযহাবে হারাম ছবি দেখা ছবি হওয়ার কারণে হারাম।
৩. অন্যান্য মাযহাবে ছবি শুধু এ কারণে দেখা হারাম হবে না যে, এটা শরীয়তে নিষিদ্ধ ছবি। ফিকহী পাঠ, হাদীসসমূহ এ মতকে সমর্থন করে।
উল্লেখ্য, এ ব্যাপারে আরো চিন্তা গবেষণার অবকাশ রয়েছে। সুতরাং উলামায়ে কেরাম সমীপে এ বিষয়ে আরো চিন্তা গবেষণার অনুরোধ রইল। তবে বাহ্যিক দৃষ্টিতে কোন জিনিস হারাম হলে তা দেখা হারাম হওয়ার বিষয়টি বোধগম্য নয়। যে হারামটা দেখার সাথে সম্পর্কযুক্ত সেটা তো দেখা হারাম হতে পারে, যেমন সতর দেখা হারাম। তাই বলে কি শুকর খাওয়া, রেশমী কাপড় পরিধান করা হারাম বলে দেখাও কি হারাম হয়ে যাচ্ছে!?
উলামায়ে কেরামের ভিডিও বয়ান
বর্তমানে অনেক উলামায়ে কেরাম তাদের বয়ান ভিডিও করে ইন্টারনেটে লোড করছেন। জনসাধারণের কেউ কেউ এ বিষয়টি নিয়ে খুব পেরেশান থাকে। আমাদের কাছে এমন অনেক প্রশ্ন এসেছে যে, ডিজিটাল ছবি যদি হারাম হয়ে থাকে তাহলে আলেমগণ তাদের বয়ান ভিডিও করছেন কেন?
এ বিষয় নিয়ে চিন্তা-ফিকির করা তো উলামায়ে কেরামেরই কাজ। সাধারণ জনগণের এ ব্যাপারে খুব বেশি ভাবার প্রয়োজন নেই। তাছাড়া একজন বিজ্ঞ আলেম কখনো এ কাজ বিশেষ অপারগতার কারণেও করতে পারেন। যে কারণটি সর্বসাধরণের বোধগম্যের বাইরে। এর উপর ভিত্তি করে সাধারণের জন্য অযথাই ছবি তোলা কিংবা ছবি সংরক্ষণ কোনটিই বৈধ হয়ে যাবে না।
নিরাপত্তার জন্য সার্কিট ক্যামেরা ব্যবহার করা কিংবা পাসপোর্টের জন্য ছবি তোলা জায়েয বলে যেমন এনালগ ছবি এবং ডিজিটাল ছবি জায়েয হয়ে যায় না তদ্রূপ বিশেষ কোন ফেরকার প্রতিরোধ কল্পে কিংবা শরয়ী জরুরত পর্যায়ের কোন কারণে বয়ান ভিডিও করলে ছবি জায়েয হয়ে যায় না। সমাজের শাহরগে যাদের হাত এমন আলেমগণ কখনো বিশেষ কারণে কোন আলেমকে বয়ান ভিডিও করার হুকুম করেন এটাকে দলীল বানিয়ে সাধারণ জনগণের সুযোগ গ্রহণের অবকাশ নেই। এতে তারা হারাম কাজের গুনাহে গুনাহগার হবে।
এ কথা সত্য যে, নামধারী কিছু আলেমও শরয়ী প্রয়োজন ছাড়াই তাদের বয়ান ভিডিও করছে। এর থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। আল্লাহ তা'আলা তাওফীক দান করুন, আমীন।
প্রয়োজনে ছবি তোলা
কখনো কখনো অপারগতার কারণে মানুষ ছবি তুলতে বাধ্য হয়। কেউ যদি বাস্তবেই অপারগ হয় তাহলে ইসলামী শরীয়ত তার জন্য ছবি তুলতে ছাড় দিয়েছে। এক্ষেত্রে জনসাধারণের জন্য আবশ্যক হল কোন বিজ্ঞ আলেমের কাছে অপারগতার বিষয়টি উল্লেখ করে জেনে নিবে, শরীয়তে এক্ষেত্রে ছাড় রয়েছে কি না?
والله أعلم وعلمه أتم وأحكم
মন্তব্য (...)
এ সম্পর্কিত আরও প্রবন্ধ
শরয়ী বিধানে প্রাণীর ছবি (পর্ব এক)
প্রথমদিকে মানুষ তাদের সমাজের নেক ও সৎ লোকদের ভাস্কর্য বানাতো, চিত্র তৈরি করতো। কালক্রমে সেটাই তাদের ...
بصائر وعبر کے چند اوراق
...
গান ও বাদ্যযন্ত্র : ইসলামী দৃষ্টিকোণ
আমার এক ছাত্র এসে বলল, উস্তাদ! গান শোনা তো জায়েয হয়ে গিয়েছে। এই বলে সে একটি মাসিক পত্রিকার রেফারেন্স...
حرمتِ تصویر کی نوعیت
...