প্রবন্ধ
পরীক্ষায় সফলতা লাভের উপায়
ইলমে দীন শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যর্থতা বলতে কিছু নেই। ইলমে দীন অর্জনে চেষ্টা করতে পারাই অনেক বড় সফলতা। এ ইলমের সামান্য অংশ অর্জন করে যে নিজ জীবনে বাস্তবায়ন করতে পেরেছে সেও এ দুনিয়ার সকল পণ্ডিত ও সকল সার্টিফিকেটধারীর চেয়ে অধিক সাফল্য অর্জন করেছে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, (অর্থ:) 'যে কুরআন শিখে ও অন্যকে শেখায় সে তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম। (সহীহ বুখারী; হা. ৪৭৩৯) এতদসত্ত্বেও যেহেতু মহান রাব্বুল আলামীন কল্যাণকাজে প্রতিযোগী হতে নির্দেশ দিয়েছেন। সেজন্য ইলমে দীন শিক্ষার্থীরাও ইলম অর্জনে প্রতিযোগী হয় এবং প্রতিযোগিতায় কেউ অগ্রণী হয়, আর কেউ পেছনে পড়ে যায়। বরকতময় এ প্রতিযোগিতায় সহপাঠিদের মধ্যে সফলতা ও ব্যর্থতা জীবনঘনিষ্ট দু'টি শব্দ। প্রথমটি কাম্য ও প্রিয়। দ্বিতীয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রিয়। সাফল্য জীবনকে উজ্জীবিত করে। ব্যর্থতা জীবনকে গতিহীন করে দেয়। একটি সাফল্য অনেক সাফল্যের দ্বার খুলে দেয়। একটি ব্যর্থতা সুগম পথকেও দুর্গম করে তোলে। সঠিক পথ, সঠিক পদক্ষেপ, আত্মবিশ্বাস ও নিরন্তর সাধনা সাফল্যের চাবিকাঠি। আল্লাহ তা'আলা বলেন, (তরজমা) 'আর যারা আমার পথে চেষ্টা-সাধনা করে অতিঅবশ্যই আমি তাদেরকে আমার পথ দেখিয়ে দেবো।' (সূরা আনকাবূত- ৬৯)
সাফল্যের পথে যারা নিয়ম মেনে চলে, মেধা, পরিবেশ, অর্থ প্রভৃতি প্রতিকূল হলেও আল্লাহ তা'আলা তাদের ভাগ্যে সাফল্য লিখে দেন। ইরশাদ হচ্ছে, 'নিশ্চয়ই তোমাদের চেষ্টা- প্রচেষ্টা বিভিন্ন ধরনের।' 'আমি কঠিনতম বিষয়কে তার জন্য সহজ করে দেবো।'...
সফলতা লাভের উপায়: জীবনে সফল হতে হলে যা প্রয়োজন তা হচ্ছে ১. আত্মবিশ্বাস ২. লক্ষ্য নির্ধারণ ৩. নিরন্তর সাধনা ৪. সঠিক কর্মপন্থা।
আত্মবিশ্বাস: নিজের ব্যাপারে আশাবাদী হওয়া এবং সৎসাহসী হওয়া। 'ইনশাআল্লাহ আমি পারব' এই বিশ্বাস পোষণকারী পারেও বটে। 'আমি পারব' এটা সফল ব্যক্তির সফলতার সর্বপ্রথম পদক্ষেপ। তাই জীবনে সফল হওয়ার জন্য প্রতিটি ছাত্রকেই প্রথমে এ বিষয়টি আত্মস্থ করা জরুরী যে, 'আমি একজন মানুষ। সভ্যতার সবকিছু আল্লাহ তা'আলা মানুষকে দিয়ে করিয়েছেন। সুতরাং তিনি আমাকেও কাজে লাগাবেন।' বলা যায় সৎসাহস সকল সাফল্যের ভিত্তি। যারা পারবে বলে সাহস করে কুদরতে ইলাহী তাদের সহায় হয়। এভাবে সৎসাহস যুগে যুগে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। ইতিহাসের গতিধারা পাল্টে দিয়েছে। পক্ষান্তরে হীনমন্যতা, নিজের প্রতি আস্থাহীনতা আত্মবিকাশের পথে সবচে' বড় অন্তরায়। সম্ভাবনার পথে সবচে' বড় বাধা। মনোজাগতিক দাসত্বের সবচে' বড় শৃঙ্খল। সাফল্যের পথে দুর্ভেদ্য প্রতিবন্ধক।
সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য: সফলতার দ্বিতীয় শর্ত হল, জীবনের জন্য সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করা। একজন ছাত্র যদি প্রথম হওয়াকে তার লক্ষ্য স্থির করে, তাহলে তার চেষ্টা-সাধনা, প্রস্তুতি সবকিছুই হবে সে পর্যায়ের। আর যে ছাত্র লক্ষ্যই স্থির করল, কোন রকমে পাশ করবো; তার পড়াশোনা, মেহনত-মুজাহাদা হবে তথৈবচ। কোন রকমে পড়া হয়ে গেলে সেটাকে সুন্দর থেকে সুন্দরতম করার ফিকির তার মধ্যে থাকে না। তাই লক্ষ্য বড় ও সুদূর প্রসারী হলে কোন কারণে বড়দের স্তরে সম্ভব না হলেও একটা নির্দিষ্ট স্তরে অবশ্যই তার পৌঁছা সম্ভব হয়।
লক্ষ্য অর্জনের জন্য মনের তীব্র তাড়না, প্রয়োজনীয় গুণ, অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা অর্জনের প্রতিটি সুযোগকে উস্তাদের তত্ত্বাবধানে কাজে লাগানো এবং রুটিন মাফিক চেষ্টা করারও বিরাট প্রভাব রয়েছে জীবনে সফল হওয়ার উপর।
নিরন্তর সাধনা : সফলতার তৃতীয় শর্ত হলো নিরন্তর চেষ্টা-সাধনা এবং মেহনত-মুজাহাদা। কোন ছাত্র যদি লক্ষ্যবস্তু নির্দিষ্ট ও স্পষ্ট করে নিজের প্রতি আস্থাশীল ও বিশ্বাসী হয়ে যথার্থ মেহনত করে, তাহলে সে পরীক্ষায় অবশ্যই সফল হবে।
بقدر الكد تكتسب المعالي+ ومن طلب العلى سهر الليالي
'চেষ্টা যেমন, মর্যাদা তেমন। যে উঁচু মর্যাদার প্রত্যাশা করে, সে (কষ্টকর হলেও) রাত্রি জাগরণ করে।'
العطايا على متن البلايا
'সাধনার বাহনে সফলতার আসন।'
আসলে জন্মসূত্রে প্রাপ্ত মেধা দ্বারা কেউ জীবনে বড় হতে পারেনি। ইতিহাস সাক্ষী, পৃথিবীতে যারা বড় হয়েছেন তারা পরিশ্রম ও সাধনার গুণেই বড় হয়েছেন।
ড. আহমদ আমীন তার اصنع حياتك শীর্ষক প্রবন্ধে লিখেছেন, 'অনেক তরুণের ভাবনা হলো, পৃথিবীতে এমন কিছু লোক রয়েছে যাদেরকে চেষ্টা ছাড়াই শ্রেষ্ঠত্বের স্বাক্ষর রাখার, কষ্ট ছাড়াই আশ্চর্যজনক অবদান রাখার এবং যাদু দণ্ড দ্বারা মাটিকে স্বর্ণে পরিণত করার ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। এগুলো মূলত কাজ ও সাফল্যের সম্ভাবনা নষ্ট করার চিন্তা।'
সঠিক কর্মপন্থা : সুনিদিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ এবং নিরন্তর সাধনা সত্ত্বেও যদি কর্মপন্থা সঠিক না হয়, তবে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছা কখনই সম্ভব নয়। তাই লক্ষ্য নির্ধারণের পাশাপাশি সফলতা লাভে একজন শিক্ষার্থীর জন্য সঠিক কর্মপন্থা অবলম্বন অপরিহার্য।
পরীক্ষা : যোগ্য ও অযোগ্যের মাঝে পার্থক্য করা, খাটি ও ভেজালের মাঝে তারতম্য করা, সত্য ও অসত্যের মাঝে বিভাজন সৃষ্টি করা এবং ভাল-মন্দের যাচাই বাছাই করার হল পরীক্ষা। সফলতার পথে তুমি কতটা আত্মবিশ্বাসী? লক্ষ্য উদ্দেশ্য অর্জনে তুমি কতটা অগ্রগামী? কর্মপন্থা এবং চিন্তা-চেতনা কতটুকু ইতিবাচক ও ফলদায়ক পরীক্ষা তা নির্ধারণ করে দিবে। এ জন্যই বলা হয়, عند الامتحان يكرم الرجل او يهان পরীক্ষা সম্মান ও অপমানের মানদণ্ড'।
পরীক্ষার ধারা যুগযুগ ধরে প্রচলিত। স্বয়ং আল্লাহ তা'আলা তার খাছ বান্দাদের পরীক্ষা নিয়েছেন। ইরশাদ হচ্ছে, 'তারা ঐ সকল লোক, যাদের অন্তরকে আল্লাহ তা'আলা পরীক্ষা ও যাচাই করে নিয়েছেন তাকওয়ার জন্য। তাদের জন্য রয়েছে মাগফিরাত ও মহাপ্রতিদান।' (সূরা হুজুরাত-৩) নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও সাহাবায়ে কেরামের পরীক্ষা নিয়েছেন। সহীহ বুখারীতে বর্ণিত আছে, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে জিজ্ঞেস করলেন, কোন সে বৃক্ষ যার সাথে মানুষের সাদৃশ্য আছে? সকলেই চুপ রইলেন। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, তা হল খেজুর গাছ (সহীহ বুখারী; হা. ৭২)
পরীক্ষা ছাত্রদের যোগ্যতা বৃদ্ধি ও প্রতিভা বিকাশের একটি স্বার্থক মাধ্যম। পরীক্ষা না থাকলে যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে উন্নতি সাধনের পথ পাওয়া যেতো না।
পরীক্ষা লক্ষ্য না উপলক্ষ? পরীক্ষাকে পড়া আয়ত্ত করার একটি বিশেষ উপলক্ষ মনে করতে হবে। পরীক্ষাকে পড়া-লেখার মূল লক্ষ্য মনে করা যাবে না। অন্যথায় সাময়িক মেহনত করে কোন রকমে পরীক্ষা দেয়া হবে। আগেও পড়া-শোনার সাথে কোন সম্পর্ক থাকবে না এবং পরেও আয়ত্তকৃত পড়াগুলো ধরে রাখবার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে না। সুতরাং একজন আদর্শ ছাত্রের জন্য পরীক্ষাকে উপলক্ষ বানানো এবং সার্বক্ষণিক ও সাময়িক সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া অপরিহার্য।
পরীক্ষায় সফলতা লাভের উপায় সার্বক্ষণিক প্রস্তুতি: একজন আদর্শ ছাত্রকে তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে হলে এবং শ্রেষ্ঠত্বের স্বাক্ষর রাখতে হলে যেসব বিষয়ে যত্নবান হওয়া আবশ্যক।
এক. আদর্শ ছাত্রের সর্বপ্রথম কাজ হল এমন একজন তত্ত্বাবধায়ক উস্তাদ ঠিক করে নেয়া, যার সাথে তার আন্তরিক মিল রয়েছে এবং যার পরামর্শ সে নির্দ্বিধায় মেনে চলতে সক্ষম। সঠিক পথে অবিচল থাকার জন্য এর কোন বিকল্প নেই।
দুই. মুতালাআ (দরসপূর্ব অধ্যয়ন), দরসে মনযোগ দিয়ে উস্তাদের তাকরীর শ্রবণ, তাকরার (দরস পরবর্তী পুনঃপাঠ) এবং সবক ইয়াদের ব্যাপারে যথাযথ ইহতিমাম করা।
তিন. নিয়মিত দরসে উপস্থিত থাকা। এর মধ্যে ভিন্ন ধরনের বরকত রয়েছে। নিয়মিত দরসে উপস্থিত থাকলে পরীক্ষার প্রস্তুতিকালীন সময়ের অভাবে অথবা ভুলে কোন একটি বিষয় ছুটে গেলে সে বিষয়টি যদি পরীক্ষায় আসে, তাহলে দরসে শিক্ষক থেকে শোনা বক্তবের আলোকে মোটামুটিভাবে তার উত্তর দেয়া সম্ভব হয়। অনুরূপভাবে প্রতি শুক্রবার সাপ্তাহিক পড়া আয়ত্ত করা। এক্ষেত্রে সপ্তাহের মাঝের কোন পড়া কাচা থাকলে সেটাও শুক্রবারে পাকা করে নেয়া।
চার. রুটিন মাফিক পড়াশোনা করা। রুটিন মাফিক পড়াশোনা করলে পড়ালেখায় বরকত হয়; সময়ের হেফাযত হয়। বাজে কাজ, বাজে কথা থেকে বেঁচে থাকা যায়। সর্বোপরি জীবন একটি শৃঙ্খলার মধ্যে চলে আসে। যা ভবিষ্যত উজ্জ্বল হওয়ার লক্ষণ। তবে রুটিন অবশ্যই তত্ত্বাবধায়ক উস্তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী হতে হবে।
পাঁচ. কোন পড়া বুঝে না আসলে অনতিবিলম্বে তা কোন সাথী অথবা উস্তাদের নিকট থেকে বুঝে নেয়া। অন্যথায় পরীক্ষার প্রস্তুতিকালীন এ নিয়ে অনেক সময় নষ্ট হবে।
ছয়. নিজের কাছে সর্বদা একটি নোটবুক রাখা। যাতে কিতাবের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সংক্ষেপে লিখে রাখবে। বিশেষ করে পরিভাষার সংজ্ঞা, নুসূস ও প্রমাণাদি। এক্ষেত্রে কিতাবের সংখ্যা অনুযায়ী নোটবুক ভাগ করে নেয়াই শ্রেয়। এতে পরবর্তীতে খুঁজে পাওয়া সহজ হয়। নোট করার পর সময় সুযোগে মাঝে মধ্যে তাতে নজর বুলাবে।
সাত. আরবী, বাংলা, উর্দু তিনও ভাষায় হাতের লেখা মশক করা এবং আগে থেকেই এ বিষয়ে লক্ষ্য রাখা। সর্বাধিক নম্বর পেতে হলে সুন্দর হস্তাক্ষরের বিকল্প নেই। তাছাড়া হাতের লেখার জন্য ৩/৪ নম্বর নির্ধারিত থাকলেও কোন পরীক্ষকই সম্ভবত এ চারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে পারেন না।
আট. প্রত্যেক বিষয়ের পর্যাপ্ত পরিমাণ পুরনো প্রশ্ন সংগ্রহ করে নিয়মিত তার উত্তর অনুশীলন করা। অর্থাৎ কোন একটি প্রশ্ন নির্বাচন করে কিতাব সামনে রেখে তার উত্তর কী হতে পারে তা সাজিয়ে গুছিয়ে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা। এরপর ভাল ছাত্র বা কোন শিক্ষককে দেখিয়ে ভুল-ভ্রান্তিগুলো সংশোধন করা। এক্ষেত্রে যেসব বিষয় কঠিন বা কিতাবে যেগুলোর উত্তর অগোছালো-এলোমেলো দেয়া আছে সেসব প্রশ্নের উত্তর লেখাকে প্রাধান্য দেয়া। কারণ একাজ এখন না করা হলে পরীক্ষাকালীন বহু সময় নষ্ট হবে।
নয়. কাফিয়া থেকে উপরের জামা'আতের ছাত্রদের আগে থেকেই আরবীতে উত্তর লেখার অনুশীলন করা। এক্ষেত্রে সহজ বিষয়গুলো আগে লেখা। যেন অন্তরে আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি হয় যে, 'আমি পারি'।
মনে রাখতে হবে, ভালো ফলাফলের ক্ষেত্রে বিশুদ্ধ আরবীতে উত্তর দেয়ার অনেক ভূমিকা থাকে। কারণ একজন ছাত্র যখন আরবীতে উত্তর লেখে তখন খাতা খোলার সাথে সাথেই পরীক্ষকের দৃষ্টিতে সে একজন ভালো ছাত্র বিবেচিত হয়। তখন নম্বরও তিনি ভালো ছাত্র হিসেবে বেশী বেশী দিয়ে থাকেন। আরবী কিতাবের হাশিয়া ও বাইনাস সতরাইনে সংক্ষিপ্ত কিন্তু অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিশ্লেষণ থাকে। নিয়মিত সেগুলো মুতালা'আ করলে বোঝার যোগ্যতা অর্জনের সাথে সাথে শরাহ-শুরুহাতের দীর্ঘ ব্যাখ্যায় সময় নষ্ট করতে হয় না।
দশ. বছরের শেষ দরসগুলো এমনভাবে আয়ত্ত করা যে, সময়ের অভাবে যদি ঐ পড়াগুলো প্রস্তুতিকালীন সময়ে নাও পড়া যায়, তাহলে অন্তত পরীক্ষায় আসলে যেন আগের পড়ার উপর নির্ভর করে উত্তর দেয়া সম্ভব হয়।
সাময়িক প্রস্তুতি: সার্বক্ষণিক মেহনতের সাথে সাথে পরীক্ষা উপলক্ষে বিশেষভাবে মেহনত করতে হবে। পরীক্ষা উপলক্ষে বিশেষ মেহনতের দু'টি স্তর।
১. খেয়ারের (পরীক্ষার প্রস্তুতিকালীন দরস বিরতী) সময়ের মেহনত।
২. পরীক্ষা চলাকালীন মেহনত।
খেয়ারের সময়ের মেহনত
(১) একজন আদর্শ, দূরদর্শী ও বিচক্ষণ ছাত্র কখনোই খেয়ারের অপেক্ষায় থাকে না; বরং বহুদিন পূর্ব থেকেই পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়া শুরু করে দেয়। সুতরাং সেমাহী পরীক্ষার প্রস্তুতি, কুরবানীর পর থেকে; শশমাহীর প্রস্তুতি রবিউল আউয়াল থেকে এবং বার্ষিক পরীক্ষার প্রস্তুতি শশমাহীর পর থেকেই নেয়া উচিৎ।
(২) খেয়ারের পূর্বে সহজ ও তাকরারের উপযোগী কিতাবগুলো পড়া। যেহেতু তখন মস্তিষ্ক এলোমেলো থাকে, তাই এগুলো সে সময়ের জন্যই উপযোগী।
(৩) খেয়ার শুরু হওয়ার ২/১ দিন পূর্বেই বোর্ড বা প্রতিষ্ঠান কতৃক প্রদত্ত পরীক্ষার রুটিনকে সামনে রেখে নির্ধারিত তত্ত্বাবধায়ক উস্তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী এবং কিতাবের দাবী অনুযায়ী একটি রুটিন তৈরি করবে। যাতে কোন কিতাব কতদিন এবং কোন কোন দিন পড়বে, তা নির্ধারিত থাকবে। রুটিন দু'ভাবে করা যায়।
ক. কিতাবের সংখ্যা অনুযায়ী প্রতি দিনের সময়কে ভাগ করা। এতে প্রতি দিনই সব কিতাব পড়া হবে।
খ. খেয়ারের পুরো সময়কে কিতাবের সংখ্যা অনুযায়ী ভাগ করা। এতে এক কিতাব শেষ করে অন্য কিতাব পড়া হবে। এক্ষেত্রে বড় বা গুরুত্বপূর্ণ কিতাবের জন্য কিছু সময় বেশী রাখা।
যার যে পদ্ধতি ভালো লাগে, সে তা-ই গ্রহণ করবে। তবে অভিজ্ঞতার আলোকে দেখা গেছে, দ্বিতীয় পদ্ধতিতে বরকত বেশী হয় এবং কিতাব শেষ করার তাড়নায় পড়া লেখায় এক ধরনের ঝোক সৃষ্টি হয় যা একাগ্রতার জন্য বড় সহায়ক। যে পদ্ধতিই গ্রহণ করা হোক পরীক্ষা শুরু হওয়ার একদিন আগে যেন সব কিতাব শেষ হয়ে যায়, সে দিকটায় খুব খেয়াল রাখবে।
(৪) সবগুলো কিতাবকে সমান গুরুত্ব দিয়ে যথার্থ মেহনত করা। কারণ নম্বরের দিক দিয়ে তো সব কিতাব সমান। সুতরাং কোন কিতাবকে হালকা মনে করা যাবে না।
(৫) কোন কিতাব শুরু করার আগে পৃষ্ঠা উল্টে উল্টে পুরো কিতাবের বিষয় সম্পর্কে ধারণা নেয়া। অনুরূপভাবে কোন বিষয় বা আলোচনা শুরু করার আগে দ্রুত চোখ বুলিয়ে সে সম্পর্কে ধারণা নিয়ে নেয়া। এ পদ্ধতি কোন বিষয় আয়ত্ত করার জন্য বড় উপকারী।
(৬) কোন বিষয় পড়ার সময় প্রথমে শিরোনাম বা উপ-শিরোনাম পাঠ করবে। এরপর এ বিষয়ে অতীতে যত কিতাব পড়া হয়েছে, সেগুলো থেকে অতীত মা'লুমাত যেহেনে নিয়ে আসবে। এরপর আলোচ্য কিতাবের পড়া পাঠ করবে। এতে দেখবে যে, বিষয়টি এমনিতেই অনেকটা আয়ত্তে চলে এসেছে। এখন অল্প পড়লেই বাকিটা মুখস্থ হয়ে যাবে।
(৭) কোন কিতাব শুরু করার আগে সম্ভব হলে অতীতের কয়েক বছরের প্রশ্ন গভীরভাবে মুতালা'আ করবে। এরপর কিতাব শুরু করবে। এর ফলে কিতাব পড়ার সময় যেসব বিষয় বিগত দিনে পরীক্ষায় এসেছে, সেগুলোর ব্যাপারে স্বভাবতই মনোযোগ বেশী হবে। তাই মুখস্থও বেশী হবে। সুতরাং যত বেশী প্রশ্ন মুতালা'আ করা সম্ভব হবে, তত বেশী ফায়দা হবে। আর যেসব কিতাবের প্রশ্ন না পাওয়া যায়, সেগুলোতে চিন্তা-ভাবনা করবে যে, এই অধ্যায় ও পরিচ্ছদে কী কী প্রশ্ন হতে পারে এবং তার উত্তর কী হবে। প্রশ্নের উত্তরসমূহ নিজ কিতাব থেকে উদ্ধার করতে চেষ্টা করবে। প্রয়োজনে উস্তাদের সাহায্য নিবে। পারতপক্ষে ব্যাখ্যা গ্রন্থের সাহায্য নিবে না। ছাত্র যামানায় ব্যাখ্যা গ্রন্থ ও অনুবাদ দেখা যোগ্যতা তৈরিতে প্রতিবন্ধক হয়। বরং যোগ্যতা নষ্ট করে দেয়।
(৮) মুখস্থ রাখার জন্য কয়েকটি পন্থা অবলম্বন করবে।
ক. বিষয়টির গুরুত্ব উপলব্ধি করে তীব্র তাড়না, পূর্ণ আগ্রহ এবং এই আত্মবিশ্বাসের সাথে অধ্যয়ন করবে যে, আমার এ বিষয় অবশ্যই মুখস্থ হবে।
খ. কোন বিষয় মুখস্থ করে সম্ভব হলে নিজ ভাষায় সুন্দর উপস্থাপনার সাথে খাতায় লিখে ফেলবে। একবার লেখা দশবার পড়ার সমান। আর লেখা সম্ভব না হলে অন্তত কোন সাথীকে তা শুনিয়ে দেবে এবং নিজের প্রস্তুতি পরীক্ষা করবে। তাহলে ইনশাআল্লাহ তা সংরক্ষিত হয়ে যাবে।
গ. আল্লাহ প্রদত্ত সব ধরনের বিবেক-বুদ্ধি প্রয়োগ করবে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষ তার বুদ্ধিমত্তার সর্বোচ্চ ১৫% ব্যবহার করতে পারে। বাকিটা সঞ্চিত থাকে।
ঘ. 'কান টানলে মাথা আসে' সিস্টেম অবলম্বন করবে। যেমন, মোঘল সম্রাটদের ধারাবাহিক নাম মুখস্থ করা প্রয়োজন, তাহলে এভাবে মুখস্থ করবে যে, বাবার (বাবর) হইল (হুমায়ূন) একবার (আকবর) জ্বর (জাহাঙ্গীর) সারিল (শাহজাহান) ঔষধে (আওরঙ্গজেব)। অনুরূপভাবে মি'রাজে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন আসমানে কার সাথে সাক্ষাৎ করেছেন, বিষয়টি মুখস্থ করতে হবে, তাহলে এটা মুখস্থ করবে أعياهم إبراهيم অনুরূপভাবে তাশরীহ (ব্যাখ্যা) মনে রাখার জন্য মতন এবং فوائد قیود মনে রাখার জন্য تعريف মুখস্থ করে নিবে। ফায়দা হবে ইনশাআল্লাহ।
(৯) পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য গাইডের আশ্রয় নেয়া ঠিক নয়। এতে কমপক্ষে দু'টি ক্ষতি হয়। (ক) এখান থেকে পড়লে কিতাবের মতন মনে থাকে না; ভুলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। অনুরূপভাবে বরকতও পাওয়া যায় না। (খ) এর দ্বারা ইজতেহাদী (সৃজনশীল) মনোভাবের পরিবর্তে তাকলীদী (দেখাদেখি কাজ করার) মনোভাব তৈরি হয়, যা নিজের সুপ্ত প্রতিভাকে বলি দেয়ারই নামান্তর।
(১০) সর্বদা আবুল হাল থাকবে; ইবনুল হাল হবে না। অর্থাৎ পরিবেশ, পরিস্থিতি, হালত ইত্যাদিকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখবে। কখনো হালতের অনুগত হবে না বা পরিবেশ পরিস্থিতি দ্বারা প্রভাবিত হবে না। অনেক সময় খেয়ারের মুহূর্তে মাদরাসার বিভিন্ন প্রোগ্রাম, মাহফিল বা অনুষ্ঠান থাকে। তো এগুলোর নাম শুনেই প্রভাবিত হওয়া যাবে না। লেখাপড়ায় কোন ঘাটতি আসতে দেয়া যাবে না। খেদমতের প্রয়োজন দেখা দিলে তা গনীমত মনে করে সানন্দে আঞ্জাম দিবে এবং নির্ধারিত সময়েই তা শেষ করবে। মনে রাখবে নিষ্ঠার সাথে মাদরাসার বা উস্তাদের খেদমত করলে কোন দিন ফলাফল খারাপ হয় না; বরং দু 'টি কারণে ফলাফল আরো ভালো হয়। (ক) ওযরবশত তখন মেহনত কম হওয়ায় আল্লাহ তা'আলার উপর তাওয়াক্কুল বৃদ্ধি পায়। (খ) দীনের সাহায্য করায় তার সাথে খোদায়ী নুসরত থাকে।
পরীক্ষা চলাকালীন মেহনত
(১) খেয়ারের সময়ের পড়াশোনা শেষ করে সামান্য বিশ্রাম নিবে। তারপর পরীক্ষার আগের দিন থেকে নতুন উদ্যমে নতুন তৎপরতায় পড়াশোনা শুরু করবে। যে কিতাব যেদিন পরীক্ষা, সে কিতাব সেদিন শেষ করে ঘুমাবে। পরের দিন ভোরে উঠে পুরো কিতাব আবার দ্রুত নযর বুলাবে। এতে বিষয়গুলো যেহেনে উপস্থিত থাকবে।
(২) পরীক্ষা চলা অবস্থায় একা একা পড়বে। কয়েকজন মিলে পড়বে না বা তাকরার করবে না। এতে আলাপ- আলোচনা ইত্যাদির কারণে সময় নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি মস্তিষ্কও এলোমেলো হয়ে যায়। একাগ্রতা বিনষ্ট হয়।
(৩) পরীক্ষার আগের দিনই প্রয়োজনীয় সব আসবাব যেমন, কলম, বোর্ড ইত্যাদি প্রস্তুত করে রাখবে। অন্যথায় পরীক্ষার সময় পেরেশানীর শিকার হতে হবে।
(৪) পরীক্ষার সময় অবশ্যই দাত পরিষ্কার করার ব্যাপারে গুরুত্ব দেবে। অন্যথায় প্রশ্ন বোঝার জন্য হলের দায়িত্বশীলকে জিজ্ঞেস করলে মুখ থেকে দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকবে। এতে তার কষ্ট হতে থাকবে। অবহেলা ও তাড়াহুড়ার কারণে সেদিন অনেকেই দাত পরিষ্কার করে না।
(৫) পরীক্ষার আধা ঘন্টা আগে পড়াশোনা বন্ধ করে দিবে। এ মুহূর্তে কোন জটিল বিষয় নিয়ে কারো সাথে কোন আলোচনা করবে না বা কিতাবের পৃষ্ঠাও উল্টাবে না। এতে গোলমাল ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।
(৬) পরীক্ষার পূর্বমুহূর্তে এমন সাথীদের সাথে কথা বলবে না, যাদের প্রস্তুতি খারাব বা যারা আতংকিত। কারণ এর দ্বারা আতঙ্ক সংক্রমিত হতে থাকবে।
(৭) পরীক্ষা শুরু হওয়ার ১০মি. পূর্বে নাস্তা-ইস্তিঞ্জা থেকে ফারেগ হয়ে দুই রাকাআত সালাতুল হাজত পড়বে। অতঃপর ধীরে-সুস্থে এবং পূর্ণ প্রশান্তির সাথে হলে প্রবেশ করবে। একদম কাটায় কাটায় সময় হিসাব করে হলে যাবে না, যার ফলে তাড়াহুড়া করতে হয়। কারণ এর দ্বারা মস্তিষ্কে চাপ পড়ে। ফলে হলের সকল কার্যক্রমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।
পরীক্ষার হলে করণীয়
(১) হলে প্রবেশ করে প্রথমে নির্ধারিত আসন গ্রহণ করবে। তারপর খাতাপত্র পাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত দুরূদ শরীফ পড়তে থাকবে।
(২) খাতা হাতে আসার পর সাথে সাথে প্রথম পৃষ্ঠার শূণ্যস্থান পূরণ করবে। রোল নং অংকে/কথায় এবং জামা'আত/ মারহালা লিখতে কখনো ভুল করবে না এবং অস্পষ্টতাও রাখবে না।
(৩) প্রশ্নপত্র হাতে পেয়ে সাথে সাথে পড়া শুরু করবে না; বরং প্রথমে ১১বার দুরূদ শরীফ পড়বে। তারপর আল্লাহ অভিমুখী হয়ে প্রশ্নপত্র শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরোটা গভীরভাবে পাঠ করবে। কোন প্রশ্নে কী চাওয়া হয়েছে নিজে নিজে বুঝে নিবে। নির্বাচনের স্বাধীনতা থাকলে কোন কোন প্রশ্নের উত্তর প্রদান করবে সেগুলোকে চিহ্নিত করে নিবে। কোন প্রশ্ন লাযিম আছে কি না তাও দেখে নিবে।
(৪) প্রশ্নপত্রের যে যে শব্দ বা অংশ বুঝে আসেনি সেগুলোকে চিহ্নিত করবে। এরপর নেগরান থেকে বুঝে নেয়ার অনুমতি থাকলে একসাথে সবগুলো বুঝে নিবে। অন্যথায় দুরূদ শরীফ পড়তে থাকবে।
উত্তর লেখার নিয়ম
(১) প্রথমে যে ক'টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে, মনে মনে প্রত্যেকটির সময় ভাগ করে নিবে। প্রতিটি উত্তর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করবে। এমন যেন না হয় যে, একটি প্রশ্নের উত্তরে দুই ঘন্টা সময় লাগালে। আর দু'টির জন্য এক ঘন্টা বা দেড় ঘন্টা। কারণ একটি প্রশ্ন যতই ভাল করে লেখা হোক ৩১/৩২ থেকে বেশী নম্বর পাওয়া যাবে না। অথচ বাকি দু'টিতে ৬২/৬৪ নম্বর বরাদ্ধ আছে।
(২) লেখা শুরু হবে সহজ এবং ভালভাবে জানা উত্তরটি দিয়ে। এমন যাতে না হয়, কঠিন প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে সহজটি হারিয়ে বসেছ। প্রবাদ আছে عصفور في اليد خير من عشرة في الشجرة 'আয়ত্তাধীন একটি চড়ুই গাছের ডালে দশটির চেয়ে উত্তম'।
(৩) উত্তরে শিরোনাম (যেমন, ১নং প্রশ্নের উত্তর) লিখবে ঠিক মাঝে আর উপ-শিরোনাম (যেমন, الف. باء / ক, খ) লিখবে আরবী বা উর্দুতে হলে ডান দিকে আর বাংলায় হলে বাম দিকে এবং এটাকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করবে। যেন পরীক্ষকের দৃষ্টি এটা দেখার ব্যাপারে ভুল না করে। অতঃপর উপ- শিরোনামকে নীচের লাইনে ছোট শিরোনাম বানিয়ে মূল উত্তর লেখা শুরু করবে। হাতের লেখা খুব বড় বড় বা ফাকা ফাকা যেন না হয়। আবার তাবিজের মত খুব ছোট অক্ষরে যেন না হয়; বরং মধ্যম ও স্পষ্ট অক্ষরে লিখবে।
(৪) হাতের লেখা সুন্দর ঝরঝরে এবং উপস্থাপনা চমৎকার হয় সেদিকে খেয়াল রাখবে।
(৫) পরীক্ষা একটি আমানত। এ বিষয়টি সব সময় মনে রাখবে। সুতরাং খেয়ানতের কোন পদ্ধতি অবলম্বন করবে না। কেননা খেয়ানত করে কোন দিন সফল হওয়া যায় না। মুহিউস
সুন্নাহ শাহ আবরারুল হক রহ. বলেন, যদি কোন ছাত্র আমানতদারীর সাথে পরীক্ষা দিয়ে ফেল করে তবুও সে জান্নাতের রাস্তায় আছে। পক্ষান্তরে যদি কেউ খেয়ানতের সাথে পরীক্ষা দিয়ে প্রথম স্থানও অধিকার করে তবুও সে জাহান্নামের রাস্তায় আছে।
(৬) পরীক্ষার হলে কোন কিছু মনে না আসলে বেশী বেশী দুরূদ শরীফ পাঠ করবে। অস্থির লাগলে কয়েকবার দীর্ঘশ্বাস নিবে। এটা খুব ফলপ্রসু আমল।
(৭) উত্তর লেখার ক্ষেত্রে একটি প্রশ্নের মধ্যে যে কয়টি অংশ থাকে কোনটি যেন বাদ না পড়ে; বরং প্রত্যেকটি লিখবে এবং একসাথে লিখবে। এক প্রশ্নের অংশ বিশেষকে অন্য প্রশ্নের সাথে মেশাবে না। তাছাড়া একটি বিষয়ের পরীক্ষায় কয়েক ভাষার সমাহার ঘটাবে না। সকল প্রশ্নের জবাব এক ভাষায় দিবে। অবশ্য অনুবাদ চাইলে ভিন্ন কথা। মূল ও অনুবাদ যেন একই ভাষায় না হয় সে বিষয়ে খুব খেয়াল রাখবে। যেমন, আরবী ইবারতের তরজমা যেন আরবীতে না হয়। অন্যথায় সর্বনাশ হয়ে যাবে।
(৮) উত্তর লেখার ক্ষেত্রে এত তাড়াহুড়া করবে না যে নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই শেষ হয়ে যায়। আবার এত ধীর গতিতে লিখবে না যে, সময় শেষ হওয়ার পরও লেখা শেষ হয় না; বরং কমপক্ষে ১৫মি. পূর্বে লেখা শেষ করে ফেলবে এবং অবশ্যই লিখিত বিষয় পুনর্বার দেখবে এবং ঠাণ্ডা মাথায় দেখবে। অন্যথায় সঠিকটাকে ভুল বানিয়ে ফেলবে। মনে রাখবে, তুমি যেকোন লেখাই লেখ না কেন, কখনো সে লেখাটা দ্বিতীয় বার না দেখে অন্যের হাতে দিবে না। এটা জীবনের মূলনীতি বানিয়ে নিবে। তাহলে অনেক ভুল থেকে বেঁচে যাবে। কারণ লেখায় ভুল থেকে যাওয়া স্বাভাবিক। আর এ ভুলের জন্য অনেক খেসারত দিতে হয়।
(৯) দ্বিতীয় বার দেখা শেষ হলে সম্ভব হলে তৃতীয় বার দেখবে। অন্যথায় নির্ধারিত সময়ে খাতা জমা দিয়ে দস্তখতের খাতায় অবশ্যই দস্তখত করবে। তা না হলে তোমার পরীক্ষা দেয়ার কোন প্রমাণ থাকবে না। মোটকথা, অধিক নম্বর পাওয়ার জন্য তোমার কাছে যত কলা-কৌশল আছে সবগুলোকে প্রয়োগ করবে।
(১০) খাতা জমা দেয়ার সময় মনে করবে যে, আমার যতটুকু করার ছিল আমি করলাম। বাকিটা আল্লাহ তা'আলার হাওলায়। السعي مني والإتمام من الله চেষ্টা করা আমার কাজ পূর্ণতা দান করা আল্লাহর কাজ'।
পরীক্ষা-পরবর্তী কাজ
(১) পরীক্ষা শেষ হওয়ার সাথে সাথে কোন বেহুদা কাজে সময় নষ্ট না করে সময় থাকলে ঘুমিয়ে নিবে। এতে শরীর চাঙ্গা হয়ে উঠে এবং সামনের পরীক্ষার জন্য নতুন উদ্যম সৃষ্টি করে।
(২) পরীক্ষা দেয়ার পরপরই কক্ষে এসে কিতাবের সাথে মিলিয়ে দেখবে না। কিংবা অন্যের সাথে আলোচনা করবে না। কারণ যদি ভুল হয়ে থাকে তাহলে মন খারাপ হবে এবং পরবর্তী পরীক্ষায় এর বিরূপ প্রভাব পড়বে। হ্যা, সব পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলে প্রশ্নগুলো নিয়ে কিতাবের সাথে মিলাবে। এতে ভুল সংশোধনের পথ খুলবে।
(৩) নিজের জন্য এবং সাথীদের জন্য বেশী বেশী দু 'আ করবে। শুধু নিজের জন্য দু 'আ করবে না। কারণ অন্যের জন্য দু'আ করলে তখন ফেরেশতারা তোমার জন্য দু'আ করবে। ফলে আল্লাহ তা'আলার কাছে তা অতি তাড়াতাড়ি কবুল হবে।
পরীক্ষায় সফলতা লাভের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি আমল
(১) আচার-ব্যবহার, আমল-আখলাক সুন্দর কর এবং নিজেকে মানুষের সামনে নম্র-ভদ্র হিসেবে পেশ কর। যেন মানুষ বিশেষ করে আসাতেযায়ে কেরামের অন্তর থেকে তোমার জন্য দু'আ আসতে থাকে।
(২) প্রত্যেক নামাযের পর يا ناصر (ইয়া না-সিরু) ২১ বার পাঠ করবে। ভাল ফলাফলের জন্য এই আমল অত্যন্ত ফলপ্রসু।(মাজালিসে আবরার- ৪৬৭)
(৩) নযরের হেফাযত করবে এবং সব ধরনের তা'আলুক এর রোগ থেকে মুক্ত থাকবে। কারণ তা'আলুক তথা বন্ধু ত্বের রোগ থাকলে ছাত্র যতই ভালো হোক এবং যতই মেহনত করুক সফল্য অর্জিত হবে না।
(৪) অনেকে পরীক্ষার আগে বা পরীক্ষা চলাকালীন গভীর রাত পর্যন্ত পড়াশোনা করে। ফলে অসুস্থ হয়ে বাড়ী চলে যেতে হয়। পরীক্ষা হতে মাহরূম হতে হয়। একজন সফল পরীক্ষার্থী সে, যে সাধ্য অনুযায়ী মেহনত করে সব পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারল। এজন্য খেয়ারের দিনগুলোতে রাত ১০.৩০ টায় ঘুমিয়ে যাবে। আর পরীক্ষার সময় ১১.০০ টা ঊর্ধ্বে ১২.০০ টা পর্যন্ত পড়বে। (অবশ্য সেটাও যার সামর্থ্য আছে তার জন্য
(৫) পরীক্ষার দিনগুলোতে স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রাখবে। বেশী বেশী পানি পান করবে। পুষ্টিকর খানা খাবে। যেমন, দুধ, কলা, ফলমূল ইত্যাদি। এসব খাদ্য মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। পড়া আয়ত্ত করা সহজ হয়। অবশ্য যেসব খাদ্য শরীরে উষ্ণতা সৃষ্টি করে সেগুলো সকালে বা দুপুরে খাবে, রাত্রে খাবে না। যাতে হিতে বিপরীত না হয়।
আল্লাহ তা'আলা আমাদের সকলকে ইহ ও পরকালীন সকল পরীক্ষায় কামিয়াব করুন। আমীন।
মন্তব্য (...)
এ সম্পর্কিত আরও প্রবন্ধ
সময়ের হেফাযত ও রুটিন মাফিক অধ্যয়নের গুরুত্ব
মানব জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ হল সময়। সময় রহস্যের অতলে লুকিয়ে আছে মানুষের ভাঙ্গা-গড়ার অনেক ইতিহাস, মুহূর...