প্রবন্ধ
সীরাতুন্নবী-মীলাদুন্নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
দু'টি শব্দের সমন্বয়ে সীরাতুন্নবী শব্দটি গঠিত। একটি হল 'সীরাত' অপরটি 'আননবী'। 'সীরাত' শব্দের আভিধানিক অর্থ অবস্থা। পারিভাষিক অর্থ জীবনেতিহাস'। আর 'নবী' বলতে যে কোন নবীকে বোঝায়। কিন্তু 'আননবী' বলতে একমাত্র আমাদের মহানবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বোঝায়। এখানে 'সীরাত' এবং 'আননবী' শব্দ দু'টির সমন্বয়ে 'সীরাতুন্নবী' শব্দটি গঠিত হয়েছে। আরবী ভাষার পাঠরীতি অনুযায়ী এখানে সন্ধি হয়েছে। এ ধরনের সন্ধি বাংলা ভাষায়ও আছে। উদাহরণত 'বিদ্যা' এবং 'আলয়' শব্দ দু'টিকে একত্রে 'বিদ্যাআলয়' বলা হয় না; বরং 'বিদ্যালয়' বলা হয়। এখানে দ্বিতীয় শব্দ 'আলয়' এর প্রথম অক্ষর 'আ' সন্ধি হয়ে লুপ্ত হয়ে গেছে। ঠিক তেমনিভাবে আরবী পাঠরীতি অনুযায়ী 'সীরাত' এবং 'আননবী' শব্দ দুটি সন্ধিবদ্ধ হয়ে 'সীরাতুন্নবী' হয়েছে। এখন 'সীরাতুন্নবী' কথাটির অর্থ হল 'মহানবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনেতিহাস'। আমাদের নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনেতিহাস হল ৬৩ বছরের পবিত্রতম জীবন।
মীলাদুন্নবীর অর্থ
কারো জীবনেতিহাস তার জন্ম বাদ দিয়ে শুরু হয় না। বরং জন্ম থেকেই শুরু হয়। জন্ম শব্দটিকে আরবীতে বলা হয় 'মীলাদ'। আর 'আননবী' অর্থ হল মহানবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। সুতরাং মীলাদুন্নবী শব্দটির অর্থ হল, মহানবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম।
সীরাতুন্নবী ও মীলাদুন্নবীর পার্থক্য
সীরাতুন্নবী ও মীলাদুন্নবীর শাব্দিক ও পারিভাষিক অর্থ বোঝার পর দু'টির মাঝে আর কি কি পার্থক্য আছে তা বুঝে নেয়া দরকার।
প্রথমত, জন্মের ভেতরে সারা জীবনের ইতিহাস পাওয়া যায় না। কিন্তু সারা জীবনের ইতিহাসের ভেতর জন্মের কথাও আছে। সীরাতুন্নবী বিষয়ে যত গ্রন্থ লেখা হয়েছে সবগুলোর শুরুতেই মীলাদুন্নবীর আলোচনা আছে। কারণ মহানবীর জীবন চরিতের আলোচনা তাঁর জন্মের আলোচনা বাদ দিয়ে হয় না। পক্ষান্তরে মীলাদুন্নবীর অর্থই হল নবী আলাইহিস সালামের জন্ম, তাই মীলাদের বইগুলোতে তাঁর জীবন বৃত্তান্ত ও জীবনাদর্শের আলোচনা পাওয়া যায় না। বোঝা গেল, সীরাতুন্নবীর ভেতরে মীলাদুন্নবী আছে, কিন্তু মীলাদুন্নবীর ভেতরে সীরাতুন্নবী নেই। যেমনিভাবে পাঁচের ভেতরে এক আছে, কিন্তু একের ভেতরে পাঁচ নেই। এক আর পাঁচে যে ব্যবধান মীলাদুন্নবী আর সীরাতুন্নবীতে সেই ব্যবধান।
দ্বিতীয়ত মীলাদুন্নবীর অর্থ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম। আর সীরাতুন্নবীর অর্থ মহানবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনেতিহাস। জন্মে আর জীবনীতে যে ব্যবধান, মীলাদুন্নবী আর সীরাতুন্নবীতে সেই ব্যবধান।
তৃতীয়ত মহানবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম অর্থাৎ মীলাদুন্নবী হল একদিনের ঘটনা, আর সীরাতুন্নবী হল ৬৩ বছরের ঘটনা। এক দিনে আর ৬৩ বছরে যে ব্যবধান, সীরাতুন্নবী আর মীলাদুন্নবীতে সেই ব্যবধান।
চতুর্থত মীলাদুন্নবীর আলোচনা করা নফল, আর সীরাতুন্নবী কায়েম করা ফরয। সুতরাং নফলে আর ফরযে যে ব্যবধান মীলাদুন্নবী ও সীরাতুন্নবীতে সেই ব্যবধান।
পঞ্চমত মহানবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম আলোচনার বিষয়, পালনীয় নয়। আর সীরাতুন্নবী পালনীয়। আর এ কথা সবাই জানি, আলোচনার সম্পর্ক হল কথার সঙ্গে, কাজের সঙ্গে নয়। আর সীরাতুন্নবী যা পালনীয়, তার সম্পর্ক শুধু কথার সঙ্গেই নয়; বরং কথা আর কাজ মিলেই তা সম্পাদিত হয়। সুতরাং কথায় আর কাজে যে ব্যবধান, মীলাদুন্নবী আর সীরাতুন্নবীতে সেই ব্যবধান।
ষষ্ঠত মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম যাকে আরবীতে মীলাদুন্নবী বলা হয় এটা আলোচনা করা যায়, পালন করা যায় না, উদযাপন করা যায় না, প্রতিষ্ঠা করা যায় না। কেউ যদি মীলাদুন্নবী পালনের কথা বলে, উযদাপনের কথা বলে, প্রতিষ্ঠার কথা বলে, তা মিথ্যা হবে। কারণ আমাদের মহানবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মো'জেযাপূর্ণ জন্ম জগতের অন্য কোন মানুষের হতে পারে না। হওয়া সম্ভবও নয়। তাহলে মীলাদুন্নবী কি পালন করা যাবে? প্রতিষ্ঠা করা যাবে? না, যাবে না। সুতরাং যারা মীলাদুন্নবী পালন করার কথা বলে তারা মিথ্যাবাদী। আর সীরাতুন্নবী আলোচনা করলেই শেষ হয়ে যায় না, তা কায়েম করতে হয়, পালন করতে হয়। তাই মীলাদুন্নবী শুধু আলোচনার ব্যাপার আর সীরাতুন্নবী পালন করার ব্যাপার, আমল করার ব্যাপার।
মীলাদুন্নবী পালনীয় নয় আলোচনার বিষয়
মীলাদুন্নবী শুধু আলোচনা করা যাবে, উদযাপন করা যাবে না কেন?
মীলাদুন্নবীর অর্থ মহানবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লমের জন্ম। আর এ কথা সুস্পষ্ট যে, জন্ম কখনোই পালন করা যায় না, শুধু আলোচনা করা যেতে পারে। বিশেষ করে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মের অলৌকিক ঘটনাগুলো অন্য কারো জন্মের বেলায় ঘটা মোটেও সম্ভব নয়। তাহলে জন্ম বা মীলাদুন্নবী কিভাবে পালন করবে, কিভাবে কায়েম করবে? কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করলে বিষয়টি আরো স্পষ্ট হবে।
ক. মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খতনাকৃত এবং নাড়িকাটা অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন। এভাবে জন্মগ্রহণ পৃথিবীতে অন্য কারো বেলায় সম্ভব নয়।
খ. মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভূমিষ্ঠ হওয়ার আলোচনায় মা আমেনা বলেন, 'আমি প্রসবকালে কোন রকমের কষ্ট অনুভব করিনি'। এভাবে মাকে কষ্ট না দিয়ে কি আপনার, আমার জন্ম হতে পারে?
গ. মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভূমিষ্ঠ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহ তা'আলার শুকরিয়া আদায় করে দু'আ পড়েছিলেন। এটা কি অন্য কারো দ্বারা সম্ভব?
ঘ. মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন তখন মক্কার মূর্তি পূজারীরা যেসব মূর্তিকে কা'বা ঘরের ভেতরে দাঁড় করিয়ে রেখেছিল সেগুলো আল্লাহকে সেজদা করেছিল। অন্যের জন্মের সময়ও কি মূর্তিরা কি আল্লাহকে সেজদা করে?
৬. মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে মুহূর্তে ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন তখন পারস্যের অগ্নিপূজারীদের হাজার বছরের প্রজ্জ্বলিত অগ্নিকুণ্ড, যার তারা পূজা করত, নিভে গিয়েছিল। আপনাদের জন্মের সময়ও কি অগ্নিপূজারীদের আগুন নিভে যায়? তাহলে মীলাদুন্নবী কিভাবে করবেন? বোঝা গেল, যারা মীলাদুন্নবী প্রতিষ্ঠার কথা বলে তারা প্রতারক। পক্ষান্তরে সীরাতুন্নবী যা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনেতিহাস তা আলোচনা করে বসে থাকলেই চলবে না, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তা বাস্তবায়ন করা উম্মতের জন্য অপরিহার্য।
সীরাতুন্নবীর ব্যাপারে জঘন্যতম উক্তি
কিছু লোক আজকাল মীলাদুন্নবী যা কি না নফলের পর্যায়ে পড়ে শুধু তারই পক্ষপাতিত্ব করে। তাও হাদীসে যেভাবে আছে সেভাবে নয়; বরং মনগড়াভাবে। আর যে সীরাতুন্নবী পালন করা এবং যার অনুকরণ করা ফরয তার প্রতি অনীহা প্রদর্শন করে। বরং মীলাদুন্নবী নিয়ে আজকাল সীমাহীন বাড়াবাড়ি শুরু হয়েছে। নিম্নোক্ত স্লোগানগুলো থেকে তার কিছুটা আঁচ করা যায়। তারা বলে, 'মীলাদুন্নবী করতে হবে, সীরাতুন্নবী ছাড়তে হবে', 'মীলাদুন্নবী কায়েম করো, সীরাতুন্নবী বন্ধ করো'। কেউ কেউ তো আরো আগ বেড়ে বলে, 'মীলাদুন্নবী কায়েম করো, সীরাতুন্নবীতে লাথি মারো, (নাউযুবিল্লাহ)।
সীরাতুন্নবী তথা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্রতম জীবনেতিহাস বন্ধ করা ও লাথি মারার মতো জঘন্য উক্তি করার দুঃসাহসিকতা কোন সাধারণ পথভ্রষ্টের দ্বারা সম্ভব নয়; বরং সবচেয়ে বড় পাপিষ্ঠের দ্বারাই এমনটি সম্ভব।
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্রতম তেষট্টি বছরের পবিত্রতম জীবনেতিহাস বন্ধ করার এবং লাথি মারার মত জঘন্যতম বাক্য কত বড় পাপিষ্ঠ হলে মানুষ উচ্চারণ করতে পারে?
আবু জাহেল, আবু লাহাবের মত কাফেররাও মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনেতিহাসের ব্যাপারে এমন জঘন্য বাক্য উচ্চারণ করেনি। বরং তারা তাঁর নবুওয়াতপূর্ব চল্লিশ বছরের পবিত্রতম জীবনেতিহাসের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। অতএব তাদের চেয়ে জঘন্যতম পাপিষ্ঠ না হলে কেউ এমন বাক্য উচ্চারণ করতে পারে না। এ জাতীয় জঘন্য উক্তি যা কুরআন ও হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শানে চরমভাবে আঘাত করে তা বোঝার জ্ঞানটুকুও বোধ হয় এদের লোপ পেয়েছে।
সীরাতুন্নবীকে অস্বীকার করার অর্থ কুরআনকে অস্বীকার করা
হাদীসে আছে, হযরত আয়েশা রাযি. কে সাহাবায়ে কেরামের পক্ষ থেকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লামের চরিত্র কেমন ছিল? আয়েশা রাযি. বলেন, ত্রিশ পারা কুরআন পাকে আল্লাহপাক যা অবতীর্ণ করেছেন তাই ছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চরিত্র-বৈশিষ্ট্য। ত্রিশ পারা কুরআনই সীরাতুন্নবী, আর সীরাতুন্নবীই ত্রিশ পারা কুরআন। (তাফসীরে ইবনে কাসীর ৪/৪১)
অতএব সীরাতুন্নবীকে অস্বীকার করা কিংবা এ ব্যাপারে কোন অসংলগ্ন বাক্য উচ্চারণ করা সরাসরি কুরআনে এবং নবীর নবুওয়াতে আঘাত করে (আল্লাহ তা'আলা মুসলমানদেরকে হিফাযত করুন)।
আশ্চর্যের ব্যাপার হল, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্রতম জীবনেতিহাসের ব্যাপারে যারা এত জঘন্যতম বাক্য উচ্চারণ করে এবং যারা এ কাজে সাহস যোগাচ্ছে তারা মুসলমান সমাজে বাস করে কোন অধিকারে? এ ব্যাপারে নবীর উম্মত হিসেবে, ঈমানী দায়িত্বের খাতিরে সকল মুসলমানের সচেতন হওয়া জরুরী।
মোটকথা মীলাদুন্নবী মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম, এটা পালনীয় নয়, আলোচনার বিষয়। ফরয নয়, নফল। আর সীরাতুন্নবী পালন করা ফরয। ফরয বাদ দিয়ে নফল পালন করলে সে বুদ্ধিমান না বোকা? অবশ্যই বোকা।
এখন কেউ যদি নফল পালন করে আর ফরয বন্ধ করতে বলে কিংবা ফরযে লাথি মারতে বলে সে কোন ধরনের মুসলমান? স্পষ্ট করে বোঝার জন্য একটা উদাহরণ দিচ্ছি।
মাথায় টুপি দেয়ার পর তার উপরে পাগড়ী বাঁধা একটি সুন্নাত। বাধ্যতামূলক সুন্নাত নয়, ঐচ্ছিক সুন্নাত। পালন করলে সওয়াব আছে, না করলে গুনাহ নেই। কিন্তু অন্য কাপড় দিয়ে সতর ঢাকা, তা লুঙ্গি, পায়জামা যা দিয়েই হোক-ফরয। কেউ যদি সতরের কাপড় খুলে মাথায় পাগড়ী বাঁধে সে যে ধরনের বুদ্ধিমান এবং যে ধরনের মুসলমান, মীলাদুন্নবী পালন করার দাবি করে সীরাতুন্নবী বন্ধ করতে বললে সেও ঐ ধরনের বুদ্ধিমান, এবং ঐ রকমের মুসলমান। এ প্রসঙ্গে একটি গল্প শুনুন- এক বোকা লোক ওয়াজ শুনতে গিয়েছিল। আলেম ছাহেব সেদিন ওয়াজ করলেন, মাথায় পাগড়ী বেঁধে নামায পড়লে এক রাকাআতে সত্তর রাকাআতের সওয়াব হয়। এ কথা শুনে বোকা লোকটি বাড়ি ফেরার সময় পথিমধ্যে যখন নামাযে দাঁড়াল, সঙ্গে পাগড়ী না থাকায় পরনের লুঙ্গিটা খুলেই পাগড়ী বেঁধে ফেলল। বলুন তো এই আহমক কত রাকাআতের সওয়াব পাবে? না কি ঘোড়ার ডিম পাবে? পাগড়ী কি সে বাঁধেনি? বেঁধেছে এবং হয়তো ইখলাসের সাথেই বেঁধেছে কিন্তু কথা হল, যার সতর ঢাকা নেই তার পাগড়ী বাঁধারও মূল্য নেই। ঠিক তেমনিভাবে যার জীবনে সীরাতুন্নবীর ফরয নেই তার জীবনে মীলাদুন্নবীর নফল কাজের কোন দাম নেই, ঘোড়ার ডিম ছাড়া। বরং লুঙ্গি খুলে পাগড়ী বাঁধলে যেই সওয়াব, সীরাতুন্নবী ছেড়ে দিয়ে মীলাদুন্নবী করলে সেই সওয়াব!
আরেকটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরো স্পষ্ট হবে। এক সংখ্যাটি লিখে ডানে শূন্য দিলে দশ হয়। ডানের শূন্যটির মূল্য আছে কি না? নিশ্চয় আছে। এখন এই শূন্যের মূল্য দেখে বোকা লোকটি শূন্য রেখে বামের 'এক' সংখ্যাটি মুছে ফেলেছে। এখন নয় হয়েছে না জিরো হয়েছে? ঠিক তেমনিভাবে সীরাতুন্নবীর আদর্শে আদর্শবান হয়ে মীলাদুন্নবীর আলোচনা করলে নফল বন্দেগীর সওয়াব পাওয়া যায়। এ কথা শোনে কেউ যদি শুধু মীলাদুন্নবী, মীলাদুন্নবী জপ করে আর সীরাতুন্নবী বন্ধ করার দাবি করে সে শূন্য রেখে এক মুছে ফেলা ব্যক্তির মত ঘোড়ার ডিমের মালিক হয়।
কেবল গুণকীর্তনে নয়, আদর্শ গ্রহণের দ্বারাই নবীকে মানা হয়
নবুওয়াতপূর্ব চল্লিশ বছরে নবী আলাইহিস সালাম কাউকে দাওয়াত দেননি। এজন্য দীর্ঘ চল্লিশ বছরের জীবনেতিহাসে আবু জাহেলের দল নবী আলাইহিস সালামের দুশমন ছিল না; বরং তারা তাঁকে 'আল-আমীন' উপাধিতে ভূষিত করেছিল। জগৎশ্রেষ্ঠ, আমানতদার, সত্যবাদী বলে আখ্যায়িত করেছিল। কিন্তু এরপর তিনি যখন ইসলামের দাওয়াত দিতে লাগলেন যে, আল্লাহকে লা-শারীক মানতে হবে, মুহাম্মাদকে রাসূলুল্লাহ বলে বিশ্বাস করতে হবে, নামায পড়তে হবে, রোযা রাখতে হবে, হজ্জ করতে হবে, যাকাত দিতে হবে, ঘুষ ছাড়তে হবে, সুদ ছাড়তে হবে, মদ ছাড়তে হবে ইত্যাদি, ইত্যাদি। অর্থাৎ যখন কাজে-কর্মে সীরাতুন্নবীর আদর্শ গ্রহণের সময় এল, তখন থেকেই তারা বেঁকে বসল। তাহলে বোঝা গেল, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শুধু মৌখিক গুণ গাইলে, আর সীরাতুন্নবী বা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ গ্রহণ করার কথা শোনে বেঁকে বসলে যদি আশেকে রাসূল হওয়া যেত তাহলে আবু জাহেল, আবু লাহাবের দল এ বিশ্বের সব মানুষের চেয়ে বড় আশেকে রাসূল সাব্যস্ত হতো।
বর্তমান আশেকে রাসূলদের অবস্থা
আমাদের সমাজে কিছু লোক আছে, যারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মে বা মীলাদুন্নবীতে খুব আনন্দ-ফুর্তি করে। আবার কিছু লোক আছে, যারা নবীর মুহাব্বতে জান পর্যন্ত দিতে চায়। আবার কিছু লোক এমনও আছে, যারা শুধু মৌখিকভাবে নবীর গুণ গায়। কিন্তু এরা কেউ সীরাতুন্নবীর আদর্শ গ্রহণ করতে রাজি নয়। এই তিন স্বভাবের লোক নবীর যুগেও বিদ্যমান ছিল এবং এ যুগেও আছে। একটু খুলে বললে বিষয়টি ভালোভাবে বুঝে আসবে।
মীলাদুন্নবীভক্ত আবু লাহাবের পরিণতি
চাচা আবু লাহাব মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মে বড়ই আনন্দ প্রকাশ করেছিল। নবীজী যখন জন্ম গ্রহণ করলেন, আবু লাহাবের দাসী সুওয়াইবা আবু লাহাবকে সুসংবাদ দিল। নবী আলাইহিমুস সালামের জন্মের সংবাদে আনন্দিত হয়ে আবু লাহাব তার মহামূল্যের এ দাসীকে চিরদিনের জন্য মুক্ত করে দিল। হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মে যারপরনাই খুশি হওয়া সেই আবু লাহাবের কাছে যখন হুযুরের জীবনাচার গ্রহণ করার দাওয়াত পৌঁছল তখন সে বেঁকে বসল। সেই ঘটনা শুনুন-রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর এক বিশেষ নির্দেশে তার নিকটাত্মীয়দেরকে পাহাড়ের পাদদেশে সমবেত হওয়ার আহ্বান জানালেন। আবু লাহাবসহ নিকটাত্মীয়রা সমবেত হলে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবাইকে জিজ্ঞেস করলেন, আমি যদি বলি এই পাহাড়ের অপর প্রান্ত থেকে একদল শত্রু অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তোমাদের উপর আক্রমণ করতে উদ্যত, তাহলে তোমরা কি আমার কথা বিশ্বাস করবে? আবু লাহাবসহ সবাই একবাক্যে জবাব দিল, নিশ্চয়ই বিশ্বাস করব। তুমি আল-আমীন। দীর্ঘ চল্লিশ বছরের জীবনে কোন দিনও মিথ্যা বলনি। তুমি বললে আমরা তা অবশ্যই বিশ্বাস করব। তখন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
'আমাকে যদি তোমরা এত বড় সত্যবাদী বলে স্বীকার কর তবে শোন, আমি আজ তোমাদেরকে একটি পরম সত্য কথা শোনাবার জন্য এখানে ডেকেছি। যদি তোমরা পরকালের চিরস্থায়ী জাহান্নাম থেকে নাজাত পেতে চাও, আল্লাহর সঙ্গে শরীক সাব্যস্ত করা ছেড়ে দাও।'
এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে আবু লাহাব একখণ্ড পাথর নিয়ে নবীজীর মাথা মুবারকে আঘাত করতে উদ্যত হল এবং বলল,تبا لك سائر اليوم ألهذا دعوتنا অর্থ: এমন একটি অধর্ম কথা শোনাবার জন্য আমাদের সময় নষ্ট করলে, বিনিময়ে তোমার সারাদিন ধ্বংস হোক। (সীরাতে মুস্তাকীম ১/১৭২)
এর প্রতিবাদে পবিত্র কুরআনে কারীমে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সূরা লাহাব অবতীর্ণ করে বললেন, تَبَّتْ يَدَا أَبِي لَهَبٍ وَتَبَّ.مَا أَغْنَى عَنْهُ مَالُهُ وَمَا كَسَب অর্থ : আমার নবীর সারাদিন ধ্বংস হবে না। আবু লাহাবেরই ইহকাল-পরকাল ধ্বংস হবে। আমার ধ্বংসযজ্ঞ থেকে আবু লাহাবকে তার ধন-সম্পদও রক্ষা করতে পারবে না, তার সন্তান-সন্ততিও রক্ষা করতে পারবে না। (সূরা লাহাব-১, ২)
আবু লাহাব নবীর জন্মে মহামূল্যের দাসীকে চিরকালের জন্য মুক্ত করে খুশি প্রদর্শন করা সত্ত্বেও আল্লাহ তা'আলা সূরা লাহাবে তাকে চিরস্থায়ী জাহান্নামী বলেছেন। নবীর জন্মে আনন্দ প্রকাশ করা সত্ত্বেও আবু লাহাব চিরস্থায়ী জাহান্নামী কেন? এর একমাত্র কারণ, শুধুমাত্র মীলাদুন্নবী দ্বারা জান্নাতে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। জান্নাত পাওয়ার একমাত্র ব্যবস্থা সীরাতুন্নবীর আদর্শ গ্রহণ করা। সীরাতুন্নবী বাদ দিয়ে শুধু মীলাদুন্নবীর দ্বারা যদি আশেকে রাসূল হওয়া যেত এবং জান্নাতে যাওয়া যেত তাহলে আবু লাহাব সবচেয়ে বড় আশেকে রাসূল সাব্যস্ত হতো এবং সর্বাগ্রে জান্নাতে চলে যেত। কিন্তু আবূ লাহাব চিরস্থায়ী জাহান্নামী।
আশেকে রাসূল আবু তালেবও চিরস্থায়ী জাহান্নামী
মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লমের আরেক চাচার নাম ছিল আবু তালেব। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পিতা আব্দুল্লাহ ও দাদা আব্দুল মুত্তালিবের ইন্তেকালের পর আবূ তালেব যখন আমাদের নবীর অভিভাবক হলেন, কুরাইশ বংশের মূর্তি পূজারী সর্দাররা আবু তালেবের কাছে নালিশ জানাল- তোমার ভাতিজা মুহাম্মাদ আমাদের বাপ-দাদার ধর্মের বিরোধিতা করে, আমাদের মাবুদগুলোকে মন্দ বলে। তোমার মত সর্দারের ভাতিজা হওয়ার কারণে এতদিন আমরা বরদাশত করেছি। হয় তুমি তাকে বুঝিয়ে এ কাজ থেকে বিরত রাখো, নতুবা আমাদের কাছে সোপর্দ করে দাও। আবু তালেব নবীজীকে বললেন, ভাতিজা! সর্দাররা আমার কাছে তোমার নামে অভিযোগ দায়ের করেছে। তুমি আমাদের দেবতাদেরকে আর মন্দ বলো না, ইসলামের দাওয়াত নিয়ে তাদের কাছে আর যেও না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চাচা আবু তালেবের কথার জবাব না দিয়ে কাঁদতে লাগলেন। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চক্ষু মুবারক দিয়ে দরদর করে পানি পড়তে লাগল। তখন আবু তালেব বললেন, ভাতিজা! আমার কথার জবাব না দিয়ে কাঁদছ কেন? তোমার চোখের পানি বরদাশত করতে পারি না। বরং তোমার জন্য তো আমি জান দিয়ে দিতে পারি।
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, চাচাজান! মূর্তি পূজার বিরুদ্ধে কথা বলার জন্যই আল্লাহ পাক আমাকে পাঠিয়েছেন। আপনি আমার সহযোগিতায় থাকুন আর না থাকুন, যে কাজের জন্য আল্লাহ পাক আমাকে পাঠিয়েছেন সে কাজ তো আমাকে করতেই হবে। তখন আবু তালেব বললেন, যাও, তুমি তোমার কাজ করতে থাক। যে সব সর্দার তোমাকে শায়েস্তা করার হুমকি দিচ্ছে, কথা দিলাম, আমার শরীরে এক বিন্দু রক্ত থাকা অবস্থায় এদের কাউকে তোমার শরীরে আঘাত করতে দেব না। তোমাকে আঘাত করতে হলে আমাকে হত্যা করতে হবে। এ ঘটনায় পরিষ্কার হয়ে গেল, আবূ তালেব মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিজের প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসতেন। সেই আবু তালেবের জীবনে যখন সীরাতুন্নবীর আদর্শ গ্রহণ করার প্রশ্ন আসল তখন সে বেঁকে বসল।
আবু তালেবের মৃত্যুশয্যায় মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চাচার শিয়রে বসে বললেন, চাচাজান! শুধু একটিবার মুখে স্বীকার করুন যে, আপনি আমার জীবনাচার গ্রহণ করেছেন, আমার দীন গ্রহণ করেছেন। কাল হাশরের মাঠে আমি আল্লাহকে বলব, হে আল্লাহ! আমি আমার চাচা আবু তালেবকে সঙ্গে নিয়ে জান্নাতে যেতে চাই। উত্তরে আবু তালেব বললেন, اخترت النار على العار অর্থ : ভাতিজা মুহাম্মাদ! তোমার দীন- তোমার জীবনাচার গ্রহণ না করলে পরকালে জাহান্নাম থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে না এ কথা আমি ভালোভাবেই জানি, কিন্তু মরণকালে যদি আমি তোমার দীন গ্রহণ করি, তাহলে কুরাইশ বংশের লোকেরা আমার সর্দারীর নামে ধিক্কার দেবে যে, আবু তালেবের মত সর্দার মরণকালে বাপ-দাদার ধর্ম ত্যাগ করে ভাতিজার ধর্ম গ্রহণ করেছে। এ ধিক্কারের পরিবর্তে দুনিয়াতে আমার সুনাম বজায় থাকুক। বিনিময়ে জাহান্নামের আগুনকেই আমি গ্রহণ করে নিলাম। (তাফসীরে জালালাইন ২/৩৩২)
নবী আলাইহিস সালাম অত্যন্ত দুঃখিত ও মর্মাহত হলেন। নবী আলাইহিস সালাম মর্মাহত হওয়ার কারণে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করলেন, إِنَّكَ لَا تَهْدِي مَنْ أَحْبَبْتَ وَلٰكِنَّ اللَّهَ يَهْدِي مَنْ يشاء অর্থ : হে মুহাম্মাদ! আবু তালেব আপনার মুহাব্বতের চাচা। কিন্তু সে আপনার সীরাতের আদর্শ গ্রহণ করতে রাজি নয়, আপনার তরীকা ও দীন গ্রহণ করতে রাজি নয়। সুতরাং এ আবু তালেবকে আপনি ঈমানদার বানাতে পারবেন না, আপনি তাকে জান্নাতেও নিয়ে যেতে পারবেন না। (সূরা কাসাস-৫৬)
হাদীসে বর্ণিত আছে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, পরকালে জাহান্নামে আমার চাচা আবু তালেবের পায়ে আগুনের তৈরি দু'টি জুতা পরিয়ে দেয়া হবে। জুতার আগুনের উত্তাপে তার মাথার মগজ পর্যন্ত বুদ্বুদের মত টগবগ করে উথলাতে থাকবে এবং এ আযাবে সে চিরকাল থাকবে। সুতরাং সীরাতুন্নবীর আদর্শ গ্রহণ না করে নবীজীর মুহাব্বতে জান দিতে রাজি থাকলেও যদি জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়া যেত তাহলে সবার আগে আবূ তালেব নাজাত পেয়ে যেত। কিন্তু আবূ তালেবও চিরস্থায়ী জাহান্নামী।
একটি প্রশ্নের উত্তর
এখানে একটি প্রশ্ন জাগতে পারে, হাদীসে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
لا يؤمن أحدكم حتى أكون أحب إليه من والده وولده والناس أجمعين.
অর্থ : তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত রাসূলকে নিজের পিতা, নিজের পুত্র এবং সমগ্র জগতবাসীর চেয়ে বেশি মুহাব্বত না করবে। (সহীহ বুখারী; হা.নং ১৫)
আবু তালেব তো নিজের প্রাণের চেয়েও বেশি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মুহাব্বত করেছিল, তারপরও ঈমানদার হতে পারল না কেন? কারণ মুহাব্বত দুই প্রকার।
১. নবীর দীন, তরীকা ও আদর্শ নিজের জীবনে নিজে গ্রহণ করার মাধ্যমে নবীকে মুহাব্বত করা।
২. নবীর দীন ও তরীকা বাদ দিয়ে নবীকে মুহাব্বত করা।
আবু তালেবের মধ্যে নবীর মুহাব্বত ছিল, কিন্তু সে নবীর দীন ও আদর্শ গ্রহণ করতে রাজি ছিল না।
অতএব কেউ যদি এমন হয় যে, সীরাতুন্নবীর আদর্শ গ্রহণ করতে রাজি নয়, অথচ নবীর মুহাব্বতে জান দিতে প্রস্তুত- তাদের এ মুহাব্বতের বিনিময়ে পরকালে আবু তালেবের মত ফলাফল ছাড়া কিছুই মিলবে না।
বয়ানের শুরুতে আমি যে হাদীসখানা তিলাওয়াত করেছি সে হাদীসে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
كل أمتي يدخلون الجنة إلا من أبى قالوا يا رسول الله ومن يأبى قال من أطاعني دخل الجنة ومن عصاني فقد أبى
অর্থ : আমার সব উম্মত জান্নাতে যাবে, কিন্তু যারা অস্বীকার করে তারা জান্নাতে যেতে পারবে না। সাহাবায়ে কেরাম রাযি. জিজ্ঞেস করলেন, হে নবী! অস্বীকারকারী কারা? নবী আলাইহিস সালাম বললেন, যারা আমার সীরাত ও আদর্শের অনুকরণ করে, তারা আমাকে মান্য করে, তারাই আমার সঙ্গে জান্নাতে যাবে। আর যারা সীরাতুন্নবীর আদর্শ গ্রহণ করে না, তারা আমাকে অস্বীকার করে, সুতরাং তারা জান্নাতে যাবে না। (সহীহ বুখারী; হা.নং, ২/১০৮১ মিশকাত ২৭)
মীলাদুন্নবী উপলক্ষে নবীজীর আমল
এখন জানার বিষয় হল, যে নবীর ইশক ও মুহাব্বতের নামে এত জাঁকজমকভাবে ঈদে মীলাদুন্নবীসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান করা হচ্ছে, এ মীলাদুন্নবী উপলক্ষে নবী আলাইহিস সালামের কোন আমল ছিল কি না? সহীহ মুসলিম-এর হাদীসে উল্লেখ আছে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি সোমবার নফল রোযা রাখতেন। সাহাবায়ে কেরাম রাযি. জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি প্রতি সপ্তাহের সোমবারে নফল রোযা রাখেন কেন? জবাবে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, দু'টি কারণে আমি সপ্তাহের সোমবারে রোযা রাখি। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, কোন দুটি কারণে আপনি প্রতি সোমবার নফল রোযা রাখেন? জবাবে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, প্রথম কারণ হল, সর্বপ্রথম যেদিন আমার কাছে কুরআন অবতীর্ণ হওয়া শুরু হয়েছিল সে দিনটি ছিল সোমবার। এজন্য প্রতি সোমবার নফল রোযার মাধ্যমে আমি প্রথম কুরআন অবতীর্ণের শুকরিয়া আদায় করি। দ্বিতীয় কারণ হল, আমি যেদিন জন্মগ্রহণ করেছিলাম সে দিনটিও ছিল সোমবার। এজন্য আমি প্রতি সোমবারে নফল রোযা রাখার মাধ্যমে আমার জন্মের শুকরিয়া আদায় করি।
এখানে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমন এ ধরণীর সবচেয়ে বড় ঐতিহাসিক ঘটনা হিসেবে বিবেচিত। বিশ্ববাসীর জন্য এর চেয়ে আনন্দদায়ক ও অবিস্মরণীয় ঘটনা আর কিছুই হতে পারে না। তাই যদি জন্ম দিবস পালনের কোন বৈধতা বা সুযোগ ইসলামে থাকত বা এটা ইশকে রাসূলের মাপকাঠি হত তাহলে অবশ্যই হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা করার জন্য বলতেন বা ইঙ্গিত প্রদান করে যেতেন। কিন্তু নবুওয়াতের দীর্ঘ তেইশ বছরের জীবনে নবীজী নিজে তার জন্মবার্ষিকী পালন করেছেন বা কাউকে পালন করতে বলেছেন মর্মে হাদীসের কিতাব থেকে কেউ একটি প্রমাণও দেখাতে পারবে না।
রবিউল আউয়ালে সাহাবায়ে কেরামের আমল
সাহাবায়ে কেরাম ছিলেন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতিটি ইশারায় নিজেদের জীবন উৎসর্গের বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী পবিত্র জামাআত, যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পূতঃপবিত্র চরিত অনুসরণের এমনকি তাঁর একেকটি অঙ্গভঙ্গির অনুকরণের এত বেশি অনুরাগী ছিলেন যে, স্বীয় জান-মাল, আবেগ-অভিলাষসমূহ কুরবান করতে সদা প্রস্তুত থাকতেন। নিজের প্রতিটি উঠাবসাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুপম আদর্শের ছাঁচে ঢেলে সাজাবার চিন্তায় ব্যাকুল থাকতেন। তাদের অনুসরণের ব্যাকুলতা এত অধিক ছিল যে, একবার হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবার সময় সাহাবাদের উদ্দেশ্য করে বললেন, 'বসে পড়ো'। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি. দরজার কাছে আসতে এই নির্দেশ শুনতেই আর সামনে অগ্রসর হওয়ার চিন্তা করেননি বরং সেখানেই বসে পড়লেন। হযরত খুবায়েব রাযি. ফাঁসির মঞ্চে নিজের জীবনের বিনিময়ে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র পায়ে কাঁটা বিধুক এমন প্রস্তাব শুনতে পর্যন্ত রাজি ছিলেন না। সাহাবায়ে কেরামের একটি দল উহুদের ময়দানে হুযূরকে কাফেরদের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে তীর বৃষ্টির সামনে নিজের শরীরকে ঝাঁঝরা করে দিয়ে আনন্দ চিত্তে শাহাদাত গ্রহণ করেন। আক্রমণের তীব্রতা এমনই ছিল যে, তাদের চেহারা দেখে সনাক্ত করারও উপায় ছিল না। যারা নিজেদের কোলের ছোট্ট শিশুকে জিহাদের জন্য এ বলে হুযূরের সামনে পেশ করেন, যদিও কোলের এ শিশুটি এর উপযুক্ত নয়, কিন্তু নবীজীর দিকে নিক্ষেপিত প্রতিটি তীরের সামনে যেন আমার কলিজার টুকরা ঢাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যারা জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে প্রতিটি বিষয়ে হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ- অনুকরণ করতেন। হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দুনিয়াতে আগমনের উদ্দেশ্য অর্জনে তারা তাদের পুরো জীবন ওয়াকফ করে দিয়েছিলেন। হুযূরের নির্দেশিত পথে আমল করাই ছিল তাদের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য।
সাহাবায়ে কেরামের চেয়েও বড় আশেকে রাসূল!
হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়ে যাওয়ার সময় প্রায় সোয়া লক্ষ খাঁটি আশেকে রাসূল সাহাবী বিদ্যমান ছিলেন। নির্ভরযোগ্য কোন বর্ণনার ভিত্তিতে নবী প্রেমিক এসব সাহাবী থেকে এমন একজনও পাওয়া যাবে না যারা কখনো হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম দিবস পালন করেছেন বা এ দিন উপলক্ষে সভা- সমাবেশ, মিছিল, জশনে জুলুস, আলোকসজ্জা বা কোন প্রকার আনুষ্ঠানিকতা দেখিয়েছেন। কেননা বিদ'আত, কুসংস্কার বা কোন প্রকার প্রদর্শনী সাহাবায়ে কেরামদের জীবনে ছিল না। মীলাদুন্নবী উপলক্ষে তারা কিছু করেছেন বা করার জন্য বলে গিয়েছেন, এমন কোন প্রমাণও পাওয়া যায় না। তাহলে কি সাহাবায়ে কেরমের চেয়েও আমরা বড় আশেকে রাসূল হয়ে গেলাম? অথচ এ কথায় সবাই একমত যে, সাহাবায়ে কেরামদের চেয়ে বড় আশেকে রাসূল এ পৃথিবীতে আর কেউ হতেই পারে না। যদি কেউ এ কথা প্রমাণ করতে চায় তাহলে বুঝতে হবে, সে জঘন্য ধোঁকাবাজ ও মিথ্যুক।
তেমনিভাবে তাবেঈন, তাবে তাবেঈন, মুজতাহিদ ইমামগণের এমন একজনও পাওয়া যাবে না, মীলাদুন্নবী উপলক্ষে যারা কিছু করেছেন বা করার জন্য বলে গেছেন। তাহলে কি তাদের চেয়েও আমরা বড় আশেকে রাসূল হয়ে গেলাম!
যে আমল তিন যুগে প্রমাণিত নয় তা অগ্রহণযোগ্য
ফিকহ শাস্ত্রের মূলনীতির ভিত্তিতে সবাই এ ব্যাপারে একমত যে, হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন, তাবে তাবেঈন এ তিন যুগে যে আমলটির প্রয়োজন ও কারণ বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও সোনালী সেই তিন যুগে তা প্রমাণিত না হয় এমন আমলকে শরীয়তে বিদ'আত বলা হয়। যেহেতু প্রায় ছয়শত বছর পর্যন্ত ১২ রবিউল আউয়াল উপলক্ষে কোন প্রকার মিছিল, মিটিং, জশনে জুলুস ইত্যাদির অস্তিত্বই পাওয়া যায় না, তাই এসব আমল বিদ'আত হিসেবেই গণ্য হয়। এ সম্পর্কে হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি এমন কোন কাজ করল যা আমাদের থেকে প্রমাণিত নয় তা অগ্রহণযোগ্য। (সহীহ বুখারী; ১/১০১২, সহীহ মুসলিম; ২/৭৭,মুসনাদে আহমাদ; ৬/১৪০)
বিদ'আত সম্পর্কে নবী আলাইহিস সালাম কঠোর হুঁশিয়ারী দিয়ে বলেন, প্রত্যেক বিদ'আত পথভ্রষ্টতা, আর প্রত্যেক পথভ্রষ্টতা জাহান্নামে নিয়ে যাবে। (সহীহ মুসলিম; ১/২৮৫, মিশকাত; ১/১২৭)
যে ব্যক্তি নিজে কোন বিদ'আত করল অথবা কোন বিদ'আতিকে আশ্রয় দিল, তার উপর আল্লাহ তা'আলা, ফেরেশতা এবং সব মানুষের লানত পতিত হোক। তার ফরয, নফল কোন ইবাদতই গ্রহণযোগ্য নয়। (সহীহ বুখারী; ১/১৫১, সহীহ মুসলিম; ১/১৪৪)
যে ব্যক্তি কোন বিদ'আতিকে সম্মান করল সে যেন ইসলামকে ধ্বংস করতে সহযোগিতা করল। (মিশকাত; ১/৩)
নিশ্চয়ই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন প্রত্যেক বিদ'আতীর উপর তওবার দরজা বন্ধ করে দিয়েছেন। (মাজমাউয যাওয়াইদ ১০/১৮৯)
কারণ গুনাহকে গুনাহ মনে করে করলেই বান্দার অন্তরে তওবার চিন্তা আসে। কিন্তু বিদ'আতী বিদ'আতকে সওয়াবের নিয়তে করে থাকে।
উল্লিখিত আলোচনা দ্বারা বুঝা গেল, মীলাদুন্নবী উপলক্ষে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনোই মীলাদুন্নবী নামে কোন ঈদ পালন করেননি বা করার কথাও বলেননি। কোন হাদীসে তা পাওয়া যায় না এবং সাহাবায়ে কেরাম থেকেও মীলাদুন্নবী উপলক্ষে কোন ঈদ প্রমাণিত হয়নি। বরং মীলাদুন্নবী উপলক্ষে নবী আলাইহিস সালাম প্রতি সোমবার নফল রোযা রাখতেন।
জন্ম তারিখ উদযাপন নবীজীর আদর্শ নয়
এখানে লক্ষণীয় বিষয় যে, একটি হল মীলাদুন্নবীর দিবস, আরেকটি হল মীলাদুন্নবীর তারিখ। মীলাদুন্নবীর দিবস হলো সোমবার। প্রসিদ্ধ মতানুযায়ী মীলাদুন্নবীর তারিখ হল ১২ রবিউল আউয়াল। প্রতি বছর ১২ রবিউল আউয়াল সোমবারে হয় না। এ কারণে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মীলাদুন্নবীর তারিখ বর্জন করেছেন এবং মীলাদুন্নবীর দিবসে অর্থাৎ সোমবারে নফল রোযা পালন করেছেন।
মীলাদুন্নবী উপলক্ষে নবী আলাইহিস সালাম রোযা রেখেছেন। আর আমরা মীলাদুন্নবী উপলক্ষে ঈদ পালন করি। অথচ ঈদ আর রোযা সম্পূর্ণ বিপরীত আমল। অর্থাৎ রোযা রাখতে হয় না খেয়ে, আর ঈদ পালন করতে হয় খাওয়া-দাওয়া ধুমধামের মধ্য দিয়ে। এভাবে সরাসরি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আমলের বিরোধিতা করার পরও কি কাউকে নবীর আদর্শে আদর্শবান বলা যাবে? কখনোই না।
মূলত হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মদিন, সীনা মুবারক বিদীর্ণ করা, হেরা গুহায় অবস্থান, ঐশী নূরের আত্মপ্রকাশ, নবুওয়াত প্রাপ্তি, মক্কা থেকে হিজরত, সাওর গুহায় তিনদিন অবস্থান, বদরের রজনী, এসবের প্রত্যেকটি দিন এবং মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ৬৩ বছর জীবনের এবং প্রতি বছরের ৩৬০ দিনের কোন্ দিনটি এবং কোন সময়টি এমন রয়েছে যা স্মরণীয় নয়?
কিন্তু কখনো কি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সাফা পর্বতের সেই দিনটি উদযাপন কর, হিজরতের দিনটি উদযাপন কর? তেমনিভাবে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম ও মৃত্যুর দিনও এসব দিনের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু এসবের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে কোন আমল বা বিধান পাওয়া যায় না। ইসলাম তো জাহেলী যুগের সব প্রথা ও কুসংস্কার মূলোৎপাটনের জন্যই এসেছে।
মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মদিন অবশ্যই পবিত্র ও বরকতময়। কিন্তু যেহেতু এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে বিশেষ কোন হুকুম নেই এবং সাহাবায়ে কেরামদের থেকেও কোন প্রকার আমল প্রমাণিত নেই, তাই মনগড়া এসব আনুষ্ঠানিকতা অবশ্যই বিদ'আতের অন্তর্ভুক্ত। এ কারণেই সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন ও তাবে তাবেঈনদের সামনে প্রতি বছর এ দিনটির আগমন সত্ত্বেও কারও থেকে এ ধরনের দিবস উদযাপনের দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় না। এর দ্বারা স্পষ্ট বোঝা যায় যে, দিবস উদযাপন করা ইসলাম বহির্ভূত কাজ।
এরপরও আমরা সুন্নী ও নবীর আশেক! তাহলে নবী কোন পথে আর আমরা কোন পথে? তাই কবি-কণ্ঠ এখানে প্রতিবাদদীপ্ত হয়েছে, تو کجا و سیب احمد کجا # با محمد کے بود نسبت مرا অর্থ : তুমি কোন পথে আর নবী কোন পথে। এভাবে ভিন্ন পথে চললে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে কখনোই তোমার সম্পর্ক স্থাপন হতে পারে না।
সহীহ মুসলিমের হাদীস অনুযায়ী মীলাদুন্নবী উপলক্ষে নবী আলাইহিস সালামের আমল আর ঈদে মীলাদুন্নবীর আমল কি এক হল? বিখ্যাত নাতে রাসূল 'বালাগাল উলা'-এর রচয়িতা কবি শেখ সাদী বলেন, خلاف پیغمبر کے رہ گزید # کہ ہر گز بمنزل نه خواهد رسید নবীর পথ ছেড়ে যারা ভিন্ন পথে চলবে,তারা জাহান্নামে ছাড়া কোথাও যাবে না। নবী আলাইহিস সালামের বিপরীত কাজ করেও আমাদের উপাধি আশেকে রাসূল! এমন আজব আশেকে রাসূল কোথায় পাওয়া যায়! (সংক্ষেপিত)
মন্তব্য (...)
এ সম্পর্কিত আরও প্রবন্ধ
মহিলাদের দীনী শিক্ষার গুরুত্ব ও পদ্ধতি
আল্লাহ তা'আলা মানুষকে ঈমান ও আমলের দায়িত্ব দিয়েছেন। ঈমান ও আমল বিষয়ে জানতে হলে ইলমে দীন হাসিল করা...
থার্টিফাস্ট নাইট উদযাপন: পাশ্চাত্যের নগ্ন অনুকরণ
নববর্ষের সূচনাতে আল্লাহ প্রেমিক মুমিনের অনুভূতি জানুয়ারী-'১ থেকে একটি নতুন সৌরবর্ষের সূচনা হতে যাচ্ছ...
দু'টি ধারা : কিতাবুল্লাহ ও রিজালুল্লাহ
হিদায়াতের মূল উৎস কুরআন সুন্নাহ'র শিক্ষা। এ শিক্ষা অর্জন করতে হবে শিক্ষকের মাধ্যমে। শিক্ষকের মাধ্যম...
সংঘাতময় পরিস্থিতি: উপেক্ষিত নববী আদর্শ
দিনে দিনে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে পৃথিবী। সমতালে এর অধিবাসীরাও 'গরম' হয়ে উঠছে দিনকে দিন। সেই তাপ ও উত্তাপ ব...