প্রবন্ধ

আমার স্বপ্নে শাইখুল হাদীস আল্লামা আজীজুল হক রহ.

লেখক:মুফতী আব্দুল হান্নান হাবীব
১০ জানুয়ারী, ২০২৩
৭৩৭ বার দেখা হয়েছে
মন্তব্য

আমার স্বপ্নে শাইখুল হাদীস আল্লামা আজীজুল হক রহ.

ভীষণ পরিশ্রম করছে সবাই। আমিও করছি। এখন সবকিছু প্রায় প্রস্তুত। অতিথিরাও চলে এসেছেন। সকলেই সাদা পোশাকে আবৃত। সাজানো চেয়ারের ঝালরগুলোও সাদা। ধবধবে সাদা। সবকিছু একাকার হয়ে ঝলমল করছে। সত্যিই সুন্দর, অপূর্ব। 

 আজ আমরা স্বার্থক। সীমাহীন আনন্দে আন্দোলিত। প্রত্যেকের চেহারা থেকেই আনন্দ ঝরছে। কেমন যেন একটা প্রাপ্তি, তৃপ্তিবোধ এবং সার্থকতার ছোঁয়া-সময়ের বিদগ্ধ আলেমগণ আজ আমাদের অতিথি। সত্যিই সৌভাগ্য, মহাসৌভাগ্য আমাদের। 

অতিথিগণ একে একে আসন গ্রহণ করেন। আমরা সাধ্যমত সহযোগিতা করি। সবশেষে সভাপতির আগমন। তার প্রভাব এবং আভিজাত্যে সেমিনার হলে ভিন্ন এক আবহ তৈয়ার হলো। 

পুরো সেমিনার নিরব, অপলক তাকিয়ে আছে তার দিকে। তিনিও আসন গ্রহণ করেন। এক পাশে দেশসেরা মুফতী যামানার অন্যতম প্রাজ্ঞ আলেমে দ্বীন, আল্লামা মুফতী মনসূরুল হক। অপর পাশে অনন্য ব্যক্তিত্ত¡, যুগের সমুজ্জ্বল তারকা আল্লামা হিফজুর রহমান মুমিনপুরী। দু’জনই তার অন্যতম শিষ্য, আস্থাভাজন ও নির্মোহ নির্ভিক আলেমে দ্বীন। উপস্থিত সকলেই তার ইলমী সুধায় আপ্লুত। 

সময়ের সবচেয়ে দামি মানুষ তিনি। দেশের উজ্জ্বল নক্ষত্র সর্বজন শ্রদ্ধেয় শাইখ আল্লামা আজিজুল হক। যার জ্ঞানের আলোয় আলোকিত ইলমী জগৎ। যুগ যুগ ধরে জাতি যার জ্ঞান অবিরত আহরণ করছে। 

তিনি এ সেমিনারে উপস্থিত আলেমগণের করণীয় বলবেন। দীর্ঘ পর্যালোচনায় তুলে ধরবেন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। 

এখন স্বেচ্ছাসেবকদল অপ্রাসঙ্গিক। যেখানে আমরা প্রায় সকলেই ছোট। উচ্চ মাধ্যমিকের তালিবে ইলম মাত্র। এতো বড় সেমিনারে আমাদের উপস্থিতি একেবারেই অশোভন। অবশ্য তেমন একটা প্রয়োজনও নেই। তাই চুপিসারে হল ত্যাগ করছি। কিভাবে যেন এক সাথী শাইখের সঙ্গে মুসাফাহার সুযোগ পেয়ে যায়। সাথে সাথে আমরাও এগিয়ে যাই। সবশেষে আমার পালা। আমিও হাত বাড়িয়ে মুসাফাহা করি। যুগের শ্রেষ্ঠ হাদীসবেত্তার হাতে আমার মতো ক্ষুদে তালিবে ইলমের হাত। এ এক অপার্থিব অনুভূতি। অন্যরকম ভালোলাগা। ভাবতেই কেমন যেন রোমাঞ্চিত হয়ে ওঠি। মুহূর্তটি আমার জীবনের পরম এক মুহূর্ত। 

শাইখ আমার হাত ধরে আছেন আর আমি অনুচ্চ কন্ঠে দু‘আ পড়ছি। শাইখ আমাকে নাম জিজ্ঞেস করেন। আমি মৃদু আন্দোলিত হয়ে উঠি। কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে আমার নামটি বলি। শুনে ফের তিনি আমার নামটি উচ্চারণ করেন। জী বলে সমর্থন জানাই। হাত ধরে রেখেই তিনি বলেন, ‘বেশি বেশি দুরূদ পড়বে’। কথাটি শোনামাত্র ঘুম ভেঙে গেল। 

জেগে দেখি চারপাশ সেই আগের মতোই। সাথীরা দুপুরে সবক শেষে তাকরার করছে। কেউ কেউ আমার দিকে কেমন তাকিয়ে আছে। আর আমি ছোট্ট তেপায়ার উপর মাথা রেখে অবাক চোখে দেখছি। মাথাটা ঝিম ধরে আছে। অলস বসে বিছানাহীন ঘুমালে যা হয়। তবে স্বপ্নের আবেশ এখনো শেষ হয়নি। শাইখের মোলায়েম হাতের স্পর্শ অনুভব করছি। বারবার হাতটি নেড়েচেড়ে দেখছি আর স্বপ্নটি মনে রাখার চেষ্টা করছি।

দুপুর গড়িয়ে বিকেল। আসরের এখনো বাকি। মনমরা হয়ে বসে আছি। সাথীরা যার যার মতো রুমে তাকরার করছে। আমার কেন যেন মনটা ভালো নেই। তাই কুরআন নিয়ে তিলাওয়াত করছি। 

প্রায়ই মন ভালোর জন্য কুরআন পড়ি। আজো তেমনি পড়তে বসি। কখন যে তেপায়ার উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে যাই নিশ্চিত বলতে পারবো না। হঠাৎ এ স্বপ্ন আমাকে অবাক করে তোলে। বিস্ময়ে অভিভ‚ত হয়ে যাই। 

কী করবো বুঝতে পারছি না। আসর শেষে ছুটে যাই শাইখের কাছে। তখন তিনি বেলা শেষে রাহমানিয়ার দোতলায় বসেন। এখন যেখানে পত্রিকা অফিস ঠিক তার পেছনের বারান্দায়। সুযোগটি আমিও হাতছাড়া করিনি। 

প্রতিদিনের ন্যায় আজো বসেছেন। একজন খাদেম শরীর ম্যাসেজ করছে। কয়েকটি বাচ্চা চারদিক ঘিরে কী যেন জিজ্ঞেস করছে। কেউ বা দূর থেকেই এক পলক দেখে নিরবে সরে পড়ছে। 

আমি কিছুটা কম্পিত পায়ে পাশে গিয়ে দাঁড়াই। সালাম শেষে মুসাফাহা করি। সুযোগ বুঝে পরিচয়টাও তুলে ধরি। তিনি বেশ আগ্রহ নিয়ে সব শুনেন। সাহস পেয়ে স্বপ্নটির কথাও বলি। 

তখন তিনি স্বাভাবিক অথচ গম্ভীর কণ্ঠে বলে ওঠেন ‘তোমাকে বেশি বেশি দুরূদ পড়তে বলেছি! হ্যাঁ, আমিও বেশি বেশি দুরূদ পড়ি’। তারপর তিনি নিরব হয়ে যান। একেবারে নিরব। আর কিছুই বলেননি। চাহনিতে একটা উদাস উদাস ভাব। কিছুটা হাহাকার। আমি ক্ষাণিকটা ভয় পেয়ে গেলাম। আর কিছুই বলতে পারিনি। তারপর একেবারেই ক্ষীণ অস্ফুট কন্ঠে একটি সালাম দিয়ে বেরিয়ে আসি। 

তখন থেকে আজ ষোল বছর পেরিয়ে গেল। স্মৃতিটি এখনো জীবন্ত এবং প্রাণবন্ত। বহমান জীবনের অংশ হয়ে জ্বলজ্বল করছে।

মন্তব্য (...)

এ সম্পর্কিত আরও প্রবন্ধ

অসৎ আলেম ও পীর

সূরা আরাফের শেষ ভাগে আল্লাহ পাক উল্লেখ করিয়াছেন যে, সৃষ্টির আদিতেই সমস্ত মানবজাতিকে তিনি সতর্ক করিয়া...

মুজাহিদে আযম, আল্লামা শামসুল হক ফরিদপুরী (রহ.)
১০ নভেম্বর, ২০২৪
৬৭৭৪ বার দেখা হয়েছে

একটি প্রচলিত বর্ণনা : একটি প্রশ্ন ও তার উত্তর

...

মাওলানা আবু হাসসান রাইয়ান
৫ নভেম্বর, ২০২৪
১১৪৭ বার দেখা হয়েছে

লেখকবৃন্দ

সকল লেখক →