প্রশ্নঃ ৯৭৬২. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ১.আমার বোনের এক ছেলে আছে , যে প্রতিবন্ধী । তাকে সুস্থ করার কোনো উপায় বা আমল আছে?উল্লেখ্য যে, তাকে অনেক কবিরাজ ও ডাক্তার দেখানো হয়েছে।২.আল্লাহ তায়ালার ৯৯টি নামের কোনটা কোন সময় কতবার পড়লে কি হয়? ৩. বুদ্ধিমান হওয়ার আমল আছে?,
২৯ অক্টোবর, ২০২১
ঢাকা
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
ওয়ালাইকুম আসসালাম।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
(১) আমরা দোয়া করি আল্লাহ তায়ালা তাকে সুস্থ-সুন্দর এবং স্বাভাবিক জীবন দান করুন। আল্লাহ তায়ালার হুকুম হলে সব কিছুই সম্ভব। যিনি অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে আনতে পারেন, তিনি অসুস্থ মানুষকেও সুস্থ করতে পারেন।
প্রতিবন্ধী মানুষ আমাদের বোঝা নয় বরং তারা আমাদের সমাজেরই অংশ।
মুমিনের জন্য এই দুনিয়াটা পরীক্ষাগার। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করেন। যিনি ধৈর্যের সাথে এই পরীক্ষাগুলোয় উত্তীর্ণ হয় তিনিই সফল ও সার্থক।
সুনির্দিষ্টভাবে এমন কোনো আমল আছে কি না আামাদের জানা নাই। তবে তার চিকিৎসা এবং তৎসম্পর্কীয় বিষয়াদির জন্য জাতীয় প্রতীবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনে যোগাযোগ করতে পারেন। http://www.jpuf.gov.bd/
আর প্রতিবন্ধীদের ব্যাপারে ইসলামের নীতিমালা সম্পর্কে নিচের লেখাটুকু পড়তে পারেন।
প্রতিবন্ধীদের অধিকার ও ইসলাম
সমাজ ও পরিবারের অন্য সদস্যদের মত প্রতিবন্ধীদের অধিকার ও ন্যায্য পাওনা সম্পর্কে ইসলাম গুরুত্ব প্রদান করেছে। তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ, স্বাভাবিক ও সম্মানজনক জীবন যাপনের অধিকার রয়েছে। ইসলাম প্রতিবন্ধীদের অধিকার বিষয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ইসলাম প্রতিবন্ধীদের মানবিক মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় অত্যন্ত বলিষ্ঠভাবে মানুষকে কর্তব্য সচেতন হওয়ার ব্যাপারে গুরুত্ব প্রদান করেছে। কারণ প্রতিবন্ধীরা শারীরিক, মানসিক কিংবা আর্থসামাজিক অক্ষমতা বা অসুবিধার কারণে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে সক্ষম হয় না।
প্রতিবন্ধীর প্রতি দয়া-মায়া, সেবা-যতœ, সুযোগ-সুবিধা ও সাহায্য-সহযোগিতার হাত সম্প্রসারণ করা মুসলমানদের উপর একান্ত কর্তব্য। মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার ন্যূনতম মৌলিক অধিকারগুলো তাদেরও ন্যায্য প্রাপ্য। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَفِي أَمْوَالِهِمْ حَقٌّ لِلسَّائِلِ وَالْمَحْرُومِ.
অর্থ : তাদের (বিত্তবানদের) সম্পদে বঞ্চিত ও অভাবীদের অধিকার রয়েছে। (‘সূরা জারিয়াহ’- ১৯)
তাফসীরে তবারীতে বলা হয়েছে, এক যুদ্ধে মুসলমানরা বিজয়ী হয় এবং গনীমতের সম্পদ লাভ করে। তখন উক্ত আয়াত অবতীর্ণ হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গনীমতের সম্পদের একটি অংশ অসহায়, দরিদ্র, প্রতিবন্ধীদের নামে বিলিয়ে দিতে বলেন। (তাফসীরে তবারী ২৬/১৫৮)
হযরত আবু মূসা আশআরী রাযি. হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
أطعموا الجائع وعودوا المريض وفكوا العاني.
অর্থ : তোমরা ক্ষুধার্থকে খাদ্য দাও, অসুস্থ ব্যক্তির খোঁজ-খবর নাও এবং বন্দি মুক্ত করে দাও। (সহীহ বুখারী; হা.নং ৫০৫৮, ৫৩২৫)
প্রতিবন্ধী যেমনই হোক সে আল্লাহর সৃষ্টি, আল্লাহর বান্দা। ইসলামের দিক নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের সঙ্গে সাদাচরণ করা, সাহায্য-সহযোগিতা এবং তাদেরকে অগ্রাধিকার দেয়া অবশ্য কর্তব্য। বিপদাপদে প্রতিবন্ধীর পাশে দাঁড়ানো মানবতার দাবী এবং ঈমানী দায়িত্ব। ইসলামের দৃষ্টিতে প্রতিবন্ধী, অসহায়দের সাথে অসদাচরণ বা তাদের সাথে উপহাস, ব্যঙ্গ-বিদ্রƒপ বা ঠাট্টা-মশকারা করা হারাম। এতে আল্লাহর সৃষ্টিকে অপমান করা হয়। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
وَيْلٌ لِكُلِّ هُمَزَةٍ لُمَزَةٍ.
অর্থ : পশ্চাতে এবং সম্মুখে নিন্দাকারীর জন্য দুর্ভোগ। (‘সূরা হুমাযাহ’- ১)
আল্লাহ তা‘আলা আরো ইরশাদ করেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا يَسْخَرْ قَوْمٌ مِنْ قَوْمٍ عَسَى أَنْ يَكُونُوا خَيْرًا مِنْهُمْ.
অর্থ : হে মুমিন সকল! কেউ যেন অন্য কাউকে উপহাস না করে। কেননা সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে। (‘সূরা হুজুরাত’- ১১)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাউকে উপহাস, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতে নিষেধ করেছেন। হযরত আবু হুরাইরা রাযি. হতে বর্ণিত,
بحسب امرئ من الشر أن يحقر أخاه المسلم.
অর্থ : কোন ব্যক্তির নিকট নিকৃষ্ট হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে তার মুসলিম ভাইকে তুচ্ছ দৃষ্টিতে দেখবে। (সহীহ মুসলিম; হা.নং ২৫৬৪)
প্রতিবন্ধীদের সীমাহীন দুঃখ-দুর্দশা উপলব্ধি করতে পারে সেই সকল ধর্মপ্রাণ মানুষ, যারা অপরের দুঃখ-বেদনা সহমর্মিতার হাত বাড়ায়।
আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ তা‘আলা ভর্ৎসনা করেছেন শুধু অন্ধ সাহাবীর প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করার কারণে। হযরত ইবনে আব্বাস ও হযরত আয়েশা রাযি. হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উতবা ইবনে রবীআহ, আবু জাহল, নবীজীর চাচা আব্বাস রাযি.সহ প্রমুখ কুরাইশ নেতাদের সাথে আলোচনারত ছিলেন এবং নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আশা ছিলো তারা ইসলাম গ্রহণ করবে। এমন সময় হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম রাযি. (অন্ধ সাহাবী) এসে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দীন শিক্ষা দেয়ার জন্য অনুরোধ করলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। এর প্রেক্ষিতে আল্লাহ তা‘আলা আয়াত অবতীর্ণ করলেন,عَبَسَ وَتَوَلَّى. أَنْ جَاءَهُ الْأَعْمَى. وَمَا يُدْرِيكَ لَعَلَّهُ يَزَّكَّى. (অর্থ) তিনি ভ্রুকুঞ্চিত করলেন এবং মুখ ফিরিয়ে নিলেন। কারণ তার কাছে এক অন্ধ আগমন করেছে। আপনি কি জানেন? সে হয়তো পরিশুদ্ধ হতো। -‘সূরা আবাসা’- ১-৩। (সহীহ ইবনে হিব্বান; হা.নং ৫৩৫, সুনানে তিরমিযী; হা.নং ৩৩৮৬, তাফসীরে ইবনে কাসীর ৮/৩১৯, তাফসীরে তবারী ২৪/২১৭)
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিবন্ধীদের সর্বদাই অত্যন্ত ভালোবাসতেন এবং বিশেষ গুরুত্ব দিতেন। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম রাযি. কে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপার ¯েœহে ধন্য করেছেন। যখনই তাকে দেখতেন, বলতেন, স্বাগতম জানাই তাকে যার সম্পর্কে আমার প্রতিপালক আমাকে ভর্ৎসনা করেছেন। হযরত আনাস রাযি. হতে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সাহাবীকে দু’বার মদীনার অস্থায়ী শাসক নিযুক্ত করেন। (মুসনাদে আহমাদ; হা.নং ১৩০০০) যা পৃথিবীর ইতিহাসে এক দুর্লভ ঘটনা। এজন্য প্রতিবন্ধীকে ভালোবাসা, তাদের সাথে সদাচরণ করা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুপম সুন্নাত বটে।
ঘটনাক্রমে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি প্রতিবন্ধীদের অগ্রাধিকার না দেয়ার কারণে সতর্কীকরণের মুখে পড়তে পারেন তাহলে অবশ্যই মুমিনগণের জন্য প্রতিবন্ধীদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া আবশ্যক। এ সহানুভূতির ফলে সে সওয়াবের অধিকারীও হবে।
প্রতিবন্ধীদের অধিকার রক্ষায় রাষ্ট্রনীতি ও ইসলামী
আন্তর্জাতিক পরিসরে শতাব্দীর উন্নয়ন লক্ষমাত্রা অর্জনের জন্য প্রতিবন্ধীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার উপর জোর দিয়েছে বিশ্ব। বাংলাদেশ এ লক্ষমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করেছে। প্রতিবন্ধীরা যেন সমাজে তাদের সুযোগ-সুবিধা পূর্ণাঙ্গভাবে ভোগ করতে পারে, তাদের প্রাপ্য অধিকার হতে তারা যেন বঞ্চিত না হয় সে লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে প্রতিবন্ধীদের অধিকার ও সুরক্ষা আইন করে।
আইনানুযায়ী প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের শারীরিক, মানসিক, বুদ্ধিগত, বিকাশগত, ইন্দ্রিয়গত, ক্ষতিগ্রস্থতা এবং প্রতিকূলতার ভিন্নতা বিবেচনায় প্রতিবন্ধিতারধরন নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব বিবেচনায় প্রতিবন্ধীদের সাধারণভাবে অটিজম বা অটিজমস্পেকট্রামডিজঅর্ডারস, শারীরিক প্রতিবন্ধিতা, মানসিক অসুস্থতা জনিত প্রতিবন্ধিতা,দৃষ্টিপ্রতিবন্ধিতা, বাকপ্রতিবন্ধিতা, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধিতা, শ্রবণপ্রতিবন্ধিতা, শ্রবণ ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধিতা, সেরিব্রাল, পালসি,ডাউনসিনড্রোম, বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধিতা এবং অন্যান্য প্রতিবন্ধিতা শ্রেণীভূক্ত করা হয়েছে।
এ আইনের ১৬ ধারায় প্রতিবন্ধীদের অধিকার সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। একজন প্রতিবন্ধীর যেসব অধিকার রয়েছে-
১) প্রত্যেক প্রতিবন্ধীর পূর্ণমাত্রায় বেঁচে থাকা ও বিকশিত হওয়ার।
২) সর্বক্ষেত্রে সমান আইনী স্বীকৃতি এবং বিচার গম্যতার।
৩) উত্তরাধিকার প্রাপ্তি।
৪) স্বাধীন অভিব্যক্তি, মতপ্রকাশ এবং তথ্য প্রাপ্তি।
৫) মাতা-পিতা বৈধ বা আইনগত অভিভাবক, সন্তান বা পরিবারের সাথে সমাজে বসবাস, বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন ও পরিবার গঠন।
৬) প্রবেশ গম্যতা।
৭) সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধিতার ধরন অনুযায়ী পূর্ণ ও কার্যকরভাবে অংশগ্রহণ।
৮) শিক্ষার সকল স্তরে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপযুক্ত সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তি সাপেক্ষে একীভূত বা সমন্বিত শিক্ষায় অংশগ্রহণ।
৯) সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মে নিযুক্তি।
১০) কর্মজীবনে প্রতিবন্ধিতার শিকার ব্যক্তি কর্মে নিয়োজিত থাকা। অন্যথায় যথাযথ পূনর্বাসন বা ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তি।
১১) নিপীড়ন থেকে সুরক্ষা এবং নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশের সুবিধা প্রাপ্তি।
১২) প্রাপ্যতা সাপেক্ষে সর্বাধিক মানের স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি।
১৩) শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রসহ প্রযোজ্য সকল ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় স্বাচ্ছ্বন্দের জন্য উপযোগী পরিবেশ ও ন্যায্য সুযোগ সুবিধা প্রাপ্তি।
১৪) শারীরিক, মানসিক ও কারিগরী সক্ষমতা অর্জন করে সমাজ জীবনের সকল ক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে একীভূত হওয়ার লক্ষ্যে সহায়ক সেবা ও পুনর্বাসন সুবিধা প্রাপ্তি।
১৫) মাতা-পিতা বা পরিবারের উপর নির্ভরশীল প্রতিবন্ধী ব্যক্তি মাতা-পিতা বা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হলে বা তার আবাসন ও ভরণপোষণের যথাযথ সংস্থান না হলে যথাসম্ভব নিরাপদ আবাসন ও পুনর্বাসন।
১৬) সংস্কৃতি, বিনোদন, পর্যটন, অবকাশ ও ক্রীড়া কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ। শ্রবণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও বাকপ্রতিবন্ধী ব্যক্তির নিজ ইচ্ছানুযায়ী যথাসম্ভব বাংলা ইশারা ভাষাকে প্রথম ভাষা হিসেবে গ্রহণ।
১৭) ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা।
১৮) স্ব-সহায়ক সংগঠন ও কল্যাণমূলক সংঘ বা সমিতির গঠন ও পরিচালনা।
১৯) জাতীয় পরিচয় প্রাপ্তি। ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি, ভোট প্রদান এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণ।
২০) সরকার কর্তৃক সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপণ দ্বারা নির্ধারিত অন্য যে কোন অধিকার রয়েছে।
ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিবন্ধীর অধিকার ও সুরক্ষা আইন
১) ইসলাম প্রতিবন্ধীকে এ অধিকার দিয়েছে। কেননা আল্লাহ তা‘আলা জন্মগতভাবেই প্রত্যেক মানুষকে পূর্ণমাত্রায় বেঁচে থাকা এবং বিকশিত হওয়ার অধিকার দিয়েছেন। (আলফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহ ৬/৮২৭)
২) ইসলাম সর্বক্ষেত্রে প্রতিবন্ধীকে সমান আইনী স্বীকৃতি এবং ক্ষেত্রবিশেষে অগ্রাধিকার দিয়েছে। প্রতিবন্ধীকে বিচার গম্যতার ক্ষেত্রে সমান অধিকার দিয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُونُوا قَوَّامِينَ لِلَّهِ شُهَدَاءَ بِالْقِسْطِ وَلَا يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَآنُ قَوْمٍ عَلَى أَلَّا تَعْدِلُوا.
অর্থ : হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে ন্যায় সাক্ষ দানের ব্যাপারে অবিচল থাকবে এবং কোন সম্প্রদায়ের শত্রুতার কারণে কখনো ন্যায় বিচার পরিত্যাগ করবে না। সুবিচার কর। (‘সূরা মায়িদা’- ৮)
৩) ইসলাম প্রতিবন্ধীর উত্তরাধিকার প্রাপ্তি নিশ্চিত করেছে এবং অপ্রতিবন্ধীর মতোই সমান উত্তরাধিকার দিয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা ‘সূরা নিসা’র ১১ ও ১২ নং আয়াতে এ অধিকার নিশ্চিত করেছেন।
৪) ইসলাম প্রত্যেককেই স্বাধীন অভিমত ব্যক্ত করা বা মত প্রকাশের সুযোগ দিয়েছে। তবে এক্ষেত্রে সীমালঙ্ঘন করতে বারণ করেছে। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ.
অর্থ : তোমরা সৎকাজে আদেশ কর, অসৎকাজে বাধা প্রদান কর। (‘সূরা আলে ইমরান’- ১১০)
৫) ইসলাম প্রতিবন্ধীকে তার অভিভাবক ও সমাজের সাথে বসবাসের অধিকার নিশ্চিত করেছে। বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন ও পরিবার গঠনের অধিকার দিয়েছে। (আলফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহ ৬/৮২৮, ৮২৯)
৬) ইসলাম প্রতিবন্ধীকে অন্যদের মতো প্রবেশগম্যতার অধিকার দিয়েছে।
৭) ইসলাম প্রতিবন্ধীর এ অধিকার বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অনন্য ভূমিকা রেখেছে। এ সকল কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়েছে।
৮) ইসলাম প্রতিবন্ধীকে জ্ঞান অর্জনের সর্বোচ্চ অধিকার ও সুযোগ দিয়েছে এবং এক্ষেত্রে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছে। (আলফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহ ৬/৮২৯)
৯) ইসলাম প্রতিবন্ধীর এ অধিকার বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে এবং এ অধিকার বাস্তবায়ন করে বিশ্বে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্ধ সাহাবী ইবনে উম্মে মাকতুম রাযি. কে মদীনার অস্থায়ী শাসক নিযুক্ত করেছিলেন। (মুসনাদে আহমাদ; হা.নং ১৩০০০)
১০) কর্মজীবনে প্রতিবন্ধীতার শিকার হলে, যদি সে কাজ করতে সক্ষম হয় তাহলে ইসলাম তাকে কর্মে নিয়োজিত থাকবার অধিকার দিয়েছে। অন্যথায় রাষ্ট্র বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ক্ষতিপূরণ বা পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে।
১১) ইসলাম প্রত্যেক নাগরিকের জন্য নিপীড়ন হতে সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্যসম্মত উপযোগী পরিবেশ পাওয়ার অধিকার দিয়েছে। (আলফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহ ৬/৮৩১)
১২) ইসলাম প্রতিবন্ধীর স্বাস্থ্যসেবার অধিকার নিশ্চিত করেছে।
১৩) ইসলাম সকল ক্ষেত্রেই প্রতিবন্ধীর জন্য উপযোগী পরিবেশ এবং ন্যায্য সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তি নিশ্চিত করেছে।
১৪) ইসলাম প্রতিবন্ধীর এ অধিকার নিশ্চিত করেছে।
১৫) ইসলাম প্রতিবন্ধীর এ অধিকারও নিশ্চিত করেছে। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
وَفِي أَمْوَالِهِمْ حَقٌّ لِلسَّائِلِ وَالْمَحْرُومِ.
অর্থ : এবং তাদের ধন-স¤পদে প্রার্থী ও বঞ্চিতের হক ছিল। (‘সুরা যারিয়াত’- ১৯)
১৬) ইসলাম প্রতিবন্ধীকে সংস্কৃতি, বিনোদন, পর্যটন, অবকাশ ও ক্রীড়া কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের অধিকার দিয়েছে। তবে অবশ্যই তা শরীয়ত সম্মত হতে হবে।
১৭) ব্যক্তিগত তথ্য গোপনীয়তার অধিকার ইসলাম প্রত্যেককে দিয়েছে। তবে মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ করতে বারণ করেছে।
১৮) সমাজ, রাষ্ট্র ও ধর্মের কল্যাণে এ ধরনের সংগঠন করা ও পরিচালনার অধিকার ইসলাম দিয়েছে।
১৯) ইসলাম প্রতিবন্ধীর এ অধিকার সমর্থন করে।
ইসলাম শুধু প্রতিবন্ধীকে অধিকার দিয়ে ক্ষান্ত হয়নি; বরং তা বাস্তবায়ন করেছে। পৃথিবীর ইতিহাসে ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিবন্ধীর অধিকার বাস্তবায়নে যতটুকু সাফল্য অর্জন করেছে, অন্য কোন রাষ্ট্রব্যবস্থা তা করতে সক্ষম হয়নি। তাই রাষ্ট্রের উচিৎ প্রতিবন্ধীর অধিকার বাস্তবায়নে সর্বদা সজাগ দৃষ্টি রাখা।
(মা'হাদুল বুহুস আলইসলামিয়ার সাইড থেকে সংগৃহীত)
(২) আব্দুল্লাহ ফারুক অনুদিত, মাকতাবাতুল হাসান থেকে আল্লাহ নিরানব্বই নামের ওপর সুন্দর একটি বই
বেরিয়েছে। সংগ্রহ করে দেখে নিতে পারেন।
(৩) মাওলানা মুজিবুর রহমান কর্তৃক লিখিত, "স্মৃতিশক্তি কেন বাড়ে কেন কমে" বইটি সংগ্রহ করে দেখে নিতে পারেন।
والله اعلم بالصواب
বাইতুল কুরআন মাদারাসা , মোহাম্মাদপুর
মন্তব্য (০)
কোনো মন্তব্য নেই।
এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর
১৭৫০০
২৬ এপ্রিল, ২০২২
মীরসরাই

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি
১২৮১৭
১৭ জানুয়ারী, ২০২২
নারায়ণগঞ্জ

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি
৩০২৪৯
আল্লাহর নামে মানুষের নামকরণ করার হুকুম
১৮ মার্চ, ২০২৩
রংপুর

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি
সাম্প্রতিক প্রশ্নোত্তর
মাসায়েল-এর বিষয়াদি
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে