আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

আল্লাহর নামে মানুষের নামকরণ করার হুকুম

প্রশ্নঃ ৩০২৪৯. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, কারো নাম যদি আল্লাহর গুনবাচক নামে হয়, সেই নামে দিয়ে সরাসরি তাকে ডাকলে কি গুনাহ হবে? উদাহরণ হিসেবে আমার এক বড় ভাইয়ের নাম মালেক, তাকে কি আব্দুল মালেক বলতে হবে না মালেক বলে ডাকলেও হবে?,

১৮ মার্চ, ২০২৩

রংপুর

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


আল্লাহ তা’আলার সত্ত্বাগত নাম একটি। তা হল, “আল্লাহ্”। এই নামে কারো নাম রাখা না জায়েয ও হারাম। এছাড়া আল্লাহ তা’আলার গুণবাচক আরো অনেক নাম রয়েছে। এক হাদীসে বর্ণিত আছে,

حدثنا إبراهيم بن يعقوب قال: حدثني صفوان بن صالح، قال: حدثنا الوليد بن مسلم، قال: حدثنا شعيب بن أبي حمزة، عن أبي الزناد، عن الأعرج، عن أبي هريرة، قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: إن لله تعالى تسعة وتسعين اسما، مئة غير واحدة، من أحصاها دخل الجنة.

অর্থাৎ, হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তা’আলার গুণবাচক নিরানব্বইটি নাম রয়েছে। যে ব্যক্তি এই নামগুলো গণনা করে এবং উচ্চারণ করে, আল্লাহ তা’আলা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দিবেন। (সুনানে তিরমিযী: ৫/৪১১, হাদীস নং-৩৫০৭)

তবে এই নামগুলো কোন একটি নামে কোন ব্যক্তির নামকরণ করা যাবে কিনা, এ ব্যাপারে কুরআন-হাদীস ও তাফসীর এবং ফিকহের কিতাব থেকে কয়েকটি নীতিমালা পেশ করা হল-

১. আল্লাহ তা’আলার যে সমস্ত গুণবাচক নাম একমাত্র আল্লাহ তা’আলার সাথেই খাস, ঐ সমস্ত নাম অন্য কারো জন্য ব্যবহার করা, কারো নাম রাখা বা এ নামে ডাকা জায়েয নেই। এ ধরণের কয়েকটি গুণবাচক নাম হল, আর রহমান, আল কুদ্দুসু, আর জাব্বারু, আল মুতাকাব্বিরু, আল খালিকু, আর বারিউ, আল মুসাওয়িরু, আর রাযযাকু, আর গাফফারু, আল কাহহারু, আত তাওয়াবু, আল ওয়াহহাবু, আল খাল্লাকু, আল ফাত্তাহু, আল কাইয়্যূমু, আর রাব্বু, আল মুহীতু, আল মালকিু, আল গাফূুুরু, আল আহাদু, আস সামাদু, আল হাক্কু, আল কাদিরু, আল মুহয়ী।

২. আল্লাহ তা’আলার ঐ সমস্ত গুণবাচক নাম যা আল্লাহ তা’আলার সাথে খাস নয়, বরং অন্য অর্থেও ব্যবহার হয়। সুতরাং এ ধরণের নামগুলো অন্য অর্থের দিকে লক্ষ্য করে আল্লাহ ছাড়া অন্যের ক্ষেত্রে ব্যবহার করার অনুমতি রয়েছে। এ কথার বিশ্লেষণ এই যে, যদি কোরআন ও হাদীস, তা’আমুলে উম্মাত তথা যুগে যুগের মুসলমানের প্রচলন অথবা বর্তমানে সামাজিকভাবে ঐ নামগুলো অন্যের জন্যও ব্যবহার হয়ে থাকে তাহলে এই ধরণের নাম রাখাতে কোন অসুবিধা নেই। যেমন, আযীয, করীম, রহীম, আযীম,, রশীদ, কবীর, বদী’, কাফীল, হাদী, ওয়াসে’, হাকীম ইত্যাদি।

পক্ষান্তরে যদি কোরআন ও হাদীস, তা’আমুলে উম্মাত তথা যুগে যুগের মুসলমানের প্রচলন অথবা বর্তমানে সামাজিকভাবে ঐ নামগুলো অন্যের জন্য ব্যবহার না হয়ে থাকে তাহলে এই ধরণের নাম রাখা থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক।

৩. এমনিভাবে কোরআন ও হাদীসে নেই, তা’আমুলে উম্মাত তথা যুগে যুগের মুসলমানদের মাঝেও প্রচলন নেই অথবা বর্তমানে সামাজিকভাবে ঐ নামগুলো অন্যের জন্য ব্যবহারও হয় না, তাহলে এই ধরণের নাম রাখা থেকেও বেঁচে থাকা উচিৎ। কেননা আল্লাহ তা’আলার নামের ক্ষেত্রে মূলনীতি তো হল এই যে, তা একমাত্র আল্লাহ তা’আলার জন্যই ব্যবহৃত হবে।

শুধুমাত্র দলীল থাকার কারণে যুগে যুগের মুসলমানদের মধ্যকার প্রচলনের ফলে বর্তমানে সামাজিকভাবে ঐ নামগুলো অন্যের জন্য ব্যবহার করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। কেননা কোন কিছু জায়েয হবার জন্য শরীয়তের সমর্থন ও দলীলের প্রয়োজন রয়েছে। (রূহুল মাআনী: ৯/১২৩, ফাতওয়া শামী: ৫/২৬৮, ফাতাওয়া আলমগীরী: ৩৬২- ফাতাওয়ায়ে উসমানী সূত্রে)
এই তিন নীতিমালার আলোকে যেসব গুণবাচক নাম অন্যের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা জায়েয নাই- সেসব নামগুলোর শুরুতে “আবদ” শব্দ যোগ করে “আব্দুন যোগে” গুণবাচক নামগুলোর ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে, এভাবে নাম ডাকাও জায়েয। ( যেমন, রহমান- আব্দুন যোগে আব্দুর রহমান নাম রাখা জায়েয)

আর যেসব গুণবাচক নাম অন্যের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা জায়েয সেসব নামগুলোর শুরুতেও “আব্দুন” শব্দ যোগ করা উত্তম। কেননা যিনি এ বিশ্বজগৎ সৃষ্টি করলেন তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শনপূর্বক তাঁর নামের সদ্ব্যবহার করা ও বাহ্যিকভাবে তাঁর সাথে কাউকে শরীক না করা প্রতিটি মানুষের অবশ্য পালনীয় দায়িত্য ও কর্তব্য। (ফাতওয়া শামী: ৯/৬৮৮, ফাতাওয়া সিরাজিয়া: ৩১৯, ফাতাওয়া হিনদিয়া: ৫/৪১৮)

বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, যদি বান্দার মধ্য থেকে কাউকে তা’জীমস্বরূপ-সম্মান প্রদর্শনপূর্বক কাউকে আল্লাহর সমপর্যায়ের ধরে নিয়ে তুলনা করার উদ্দেশ্যে রহীম, রহমান ইত্যাদি বলে ডাকে, তাহলে সে কাফের হয়ে যাবে। তবে এহেন উদ্দেশ্য না থাকলে কাফের হবে না। (ফাতাওয়া মাহমুদিয়া: ২৯/২৩২) www.jamiatulasad.com/?p=5077

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি
শিক্ষক, জামিয়া ইসলামিয়া ইবরাহিমিয়া দারুল উলুম মেরাজনগর, কদমতলী, ঢাকা।

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

১৪০৪৭

আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, মোঃ রুম্মান নাম এর অর্থ কি? এটা আমার সন্তান এর জন্য কতটুকু উপযোগী হবে?

২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

SouthTalbag

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মোহাম্মদ আমীর হোসাইন, মুফতি ও মুহাদ্দীস,

৪০৫০৭

নাম মানুষের ব্যক্তিত্বের দর্পণ


১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

ফরিদগঞ্জ

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy