একজন পুরুষের স্বাক্ষ্য কেন দুই নারীর সাক্ষ্যের সমান গণ্য করা হয়?
প্রশ্নঃ ৯৭৬১৪. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, হুজুর আমাদের দেশের কিছু সুশীলরা বলে থাকে যে,ইসলাম নাকি এক দিক দিয়ে নারীদেরকে বঞ্চিত করেছে।তা হলোঃ (ইসলামে ২ জন মহিলা স্বাক্ষী ১ পুরুষ স্বাক্ষী সমান.) এই বিষয়টি তাদের নিকট প্রশ্নবিদ্ধ। এখন আমাদেরকে ইসলামের এই বিধানটির কারণ জানিয়ে বাধিত করবেন। দোয়া রাখবেন।সালাম।,
৫ এপ্রিল, ২০২৫
চট্টগ্রাম
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
স্বাক্ষ্যের উদ্দেশ্য হলো, এর মাধ্যমে যে বিষয়ের সাক্ষ্য দেওয়া হচ্ছে, তা প্রমাণিত হয় এবং এটি যে সত্য ও সঠিক– তা জানা যায়। কারণ, সাক্ষ্য মূলত একটি খবর বা তথ্য। আর, নারী দু’জনের সাক্ষ্যকে একজন পুরুষের সাক্ষ্যের সমতুল্য গণ্য করার পেছনে আল্লাহ্ তা'আলা যে হিকমত (জ্ঞানে ভরপুর কারণ) উল্লেখ করেছেন, তা হলো, নারী কখনও স্বক্ষ্য ভুলে যেতে পারে বা বিভ্রান্ত হতে পারে, তখন অপর নারী তাকে তা স্মরণ করিয়ে দিতে পারে।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
"فَإِن لَّمْ يَكُونَا رَجُلَيْنِ فَرَجُلٌ وَٱمْرَأَتَانِ مِمَّن تَرْضَوْنَ مِنَ ٱلشُّهَدَآءِ أَن تَضِلَّ إِحْدَىٰهُمَا فَتُذَكِّرَ إِحْدَىٰهُمَا ٱلأُخْرَىٰ"
অর্থ: আর নিজেদের পুরুষদের মধ্য হতে দু’জনকে সাক্ষী বানাবে। যদি দু’জন পুরুষ উপস্থিত না থাকে, তবে একজন পুরুষ ও দু’জন স্ত্রীলোক সেই সকল সাক্ষীদের মধ্য হতে, যাদেরকে তোমরা পছন্দ কর, যাতে স্ত্রীলোকদের মধ্য হতে একজন ভুলে গেলে অন্যজন তাকে স্মরণ করিয়ে দিতে পারে। (সূরা আল-বাকারা, আয়াত ২৮২)
আয়াতে “أن تضل إحداهما” (তাদের একজন ভুল করে) – এর অর্থ হল, যদি দুই নারীর একজন সাক্ষ্য ভুলে যায়, তাহলে অপরজন তাকে স্মরণ করিয়ে দেবে। অর্থাৎ, যেটার উপর সাক্ষ্য দেওয়া হয়েছিল, সেটার স্মৃতি তার মনে ফিরে আসবে। (তাফসীর ইবন কাসীর, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৭২৪)
আর আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা দুজন নারীর সাক্ষ্য নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন, যেন স্মরণশক্তির দিক থেকে নিশ্চয়তা পাওয়া যায়। কারণ, দুই নারীর বোধশক্তি ও স্মরণশক্তি মিলে একজন পুরুষের বোধশক্তি ও স্মরণশক্তির সমতুল্য হয়ে যায়। (দেখুন: ই‘লামুল মুআক্কি‘ঈন, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৭৫)
এ কথার মানে এই নয় যে, নারী কিছু বোঝে না বা কিছু স্মরণ রাখতে পারে না। বরং সাধারণভাবে সে এই দিক থেকে পুরুষের তুলনায় দুর্বল। আধুনিক গবেষণা ও বিশেষায়িত অধ্যয়নে প্রমাণিত হয়েছে যে, পুরুষদের বুদ্ধি ও মানসিক পরিপক্বতা নারীদের তুলনায় অধিক সম্পূর্ণ। বাস্তবতা, অনুভব এবং অভিজ্ঞতাও এই কথার সাক্ষ্য দেয়। জ্ঞান-বিজ্ঞানের গ্রন্থসমূহই এর উৎকৃষ্ট প্রমাণ, কেননা পুরুষদের মাধ্যমেই অধিক পরিমাণ জ্ঞান ও হাদীস সংরক্ষিত হয়েছে—নারীদের তুলনায়।
এখানে কথা হচ্ছে "গোত্র" বা "জাতিগত" দৃষ্টিকোণ থেকে। অর্থাৎ, সাধারণভাবে পুরুষদের জাত নারীদের জাতের তুলনায় পরিপূর্ণ ও শ্রেষ্ঠতর। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন,
الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاءِ بِمَا فَضَّلَ اللَّهُ بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ وَبِمَا أَنفَقُوا مِنْ أَمْوَالِهِمْ
‘পুরুষগণ নারীদের উপর দায়িত্বশীল, কারণ আল্লাহ একের উপর অপরকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং পুরুষরা নিজেদের সম্পদ ব্যয় করে থাকে।’ (সূরা আন-নিসা, আয়াত : ৩৪)
তবে এর মানে এই নয় যে সব নারী পুরুষদের চেয়ে কম; বরং অনেক নারী এমনও আছেন যাঁরা বুদ্ধি ও সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনার দিক থেকে বহু পুরুষের চেয়ে উত্তম, কিন্তু এরা সংখ্যা কম। শরীয়তের বিধান মূলত সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে হয়।
নারীরা চেষ্টা-সাধনার মাধ্যমে এই ঘাটতি পূরণ করতে পারে এবং যখন কোনো পুরুষ অবহেলা করে, তখন নারী অগ্রগামী হয়। এজন্যই দেখা যায়, অনেক কলেজে ছাত্রীদের মধ্যে এমনও রয়েছেন যারা ছাত্রদের থেকে ভালো ফল করেন, কারণ তারা পড়ালেখায় বেশি মনোযোগী ও আগ্রহী থাকে, আর অনেক ছাত্রই পড়াশোনায় উদাসীন থাকে।
এদিকে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে যা নারীর নিজস্ব ক্ষেত্র হিসেবে ধরা হয়—সেই ক্ষেত্রেও পুরুষ এগিয়ে যেতে পারে। যেমন: রান্না, পোশাক ডিজাইন, বিউটি ও কসমেটিকস, এমনকি স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিদ্যার মতো নারী বিষয়ক ক্ষেত্রেও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সবচেয়ে দক্ষ ও খ্যাতিমান ব্যক্তিরা অনেক সময় পুরুষই হয়ে থাকেন।
সুতরাং, মূল্যায়ন করা হয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে। আর আজকের দিনে কোনো বুদ্ধিমান ব্যক্তি এতে দ্বিমত করে না যে, দ্বীনের জ্ঞান যেমন—ফিকহ, হাদীস, তাফসীর, আকীদাহ, ওয়াজ ইত্যাদি—এসব ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখছেন পুরুষরাই।তেমনি জাগতিক জ্ঞান যেমন চিকিৎসা, জ্যোতির্বিজ্ঞান, প্রকৌশল, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রধানত পুরুষেরাই অগ্রগামী।
মোটকথা, পুরুষ ও নারী উভয়ের সম্মানিত অবস্থান আছে, তবে গোত্রগত দিক থেকে সাধারণভাবে পুরুষদের বুদ্ধিমত্তা ও স্মরণশক্তি অধিক শক্তিশালী হয়। কিন্তু এককভাবে কেউ চেষ্টা করলে নারীও অনেক পুরুষকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। শরীয়ত সাধারণ নিয়মের ভিত্তিতে বিধান দেয়, আর এটাই মানুষের ফিতরাতের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
যদি আমরা পাশ্চাত্য সমাজগুলোর দিকে তাকাই, যারা নারী-পুরুষের মাঝে সবদিক থেকে সমতা আনার চেষ্টা করেছে, তবুও আমরা দেখতে পাই—আল্লাহ তাআলা নারীদেরকে কিছু ভিন্ন ক্ষেত্রেও বিশেষ গুণে ভূষিত করেছেন ও পুরুষদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। যেমন—সন্তানদের যত্ন নেওয়া, ধৈর্য, মমতা ও দয়া, গৃহস্থালির সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা। এজন্য শরিয়ত সন্তানের লালন-পালনের অধিকার মাকে দিয়েছে। মা-ই হচ্ছে প্রথম বিদ্যালয়, যে ভবিষ্যতের পুরুষদের, বিশ্বের নেতা ও উম্মতের আলেমদের গড়ে তোলে। তাহলে কি এই মর্যাদার পর আর কোনো মর্যাদা থাকতে পারে?
ইসলাম মায়ের গুরুত্ব ও মর্যাদাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে এবং সন্তানদের উপর তার সাথে সদ্ব্যবহার ও উপকার করার দায়িত্ব দিয়েছে। এমনকি মায়ের মর্যাদা পিতার চেয়েও আগে।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ مَنْ أَحَقُّ النَّاسِ بِحُسْنِ صَحَابَتِي قَالَ " أُمُّكَ " . قَالَ ثُمَّ مَنْ قَالَ " ثُمَّ أُمُّكَ " . قَالَ ثُمَّ مَنْ قَالَ " ثُمَّ أُمُّكَ " . قَالَ ثُمَّ مَنْ قَالَ " ثُمَّ أَبُوكَ " .
আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কছে এলো এবং সে প্রশ্ন করল,ইয়া রাসুলাল্লাহ! মানুষের মধ্যে আমার সদ্ব্যবহারের সর্বাধিক ব্যক্তি কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সে বলল, এরপর কে? তিনি বললেন, এরপরও তোমার মা। সে বললঃ এরপর কে? তিনি বললেন, এরপরও তোমার মা। সে বলল, এরপর কে? তিনি বললেন, তোমার পিতা। আর কুতায়বা বর্ণিত হাদীসে “আমার সদ্ব্যবহার পাওয়ার সর্বাপেক্ষা যোগ্য কে” এর উল্লেখ আছে।
আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ (সহীহ মুসলিম) হাদীস নং: ৬২৬৯
হাদীসের লিংকঃ https://muslimbangla.com/hadith/13318
তাহলে এই মর্যাদার পর আর কোনো মর্যাদা কি থাকতে পারে?
অতএব, প্রত্যেকেই যেন নিজের নিজস্ব দায়িত্ব ও কাজের ক্ষেত্রেই নিয়োজিত থাকে। পুরুষ যেন গর্ভধারণ ও দুগ্ধপান করানোর দায়িত্বে না যায়, তেমনি নারীও যেন জিহাদ, শত্রুর সাথে যুদ্ধ, খেলাফত বা শাসনকার্যে না প্রবেশ করে। আর যে সব কাজ নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য বৈধ, সেগুলোও শরয়ী শর্ত অনুযায়ী হতে হবে—যেমন, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা না হওয়া এবং অন্য দায়িত্ব অবহেলা না করা, যেমন: স্বামী বা স্ত্রীর অধিকার আদায় করা।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন
والله اعلم بالصواب
মুহাদ্দিস, জামিয়া বাবুস সালাম, বিমানবন্দর ঢাকা
মন্তব্য (০)
কোনো মন্তব্য নেই।
এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর
৯০৪৯৪
হারাম টাকায় পোষাক বানিয়ে তা পরে ইবাদত করলে ইবাদত কবুল হবে?
২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
G৯FW+M৫W

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী
৯০৪৯৮
ইমামের সাথে একজন /দুইজন মুকতাদী কিভাবে দাড়াবে?
২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
Bethua

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী
৭৭১৪৪
নবীর কাছে উম্মতের গুনাহ পেশ করা হয়?
২৪ নভেম্বর, ২০২৪
HHMC+F৪৭ - Old Umm Al Quwain - Umm Al Quawain - সংযুক্ত আরব আমিরাত (AE)

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী
৯০৫১৯
মেসেঞ্জারে বিবাহ করলে কি তা হয়
২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
Gazirchat

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী
সাম্প্রতিক প্রশ্নোত্তর
মাসায়েল-এর বিষয়াদি
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে