আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

এক রাকাত বিশিষ্ট নামাজ!

প্রশ্নঃ ৯৭৫৯. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, ১ রাকাআত বিশিষ্ট বিতর নামাজ আছে দলিল সহ প্রমাণ দেন

২৯ জানুয়ারী, ২০২৫
রাজশাহী

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


বিতির নামাজ তিন রাকাত; এক রাকাআত কিংবা পাঁচ রাকাআত নয়। কেননা, নবীজী ﷺ বিতির তিন রাকাত পড়তেন এবং এটিই তাঁর অনুসৃত পন্থা।

মুতাওয়াতির হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, বিতির এক রাকাত নয়; তিন রাকাত। যেসব বর্ণনায় তিন রাকাতের অধিক, যথা পাঁচ, সাত বা নয় রাকাত পড়ার কথা বলা হয়েছে সেখানেও মূল বিতর তিন রাকাত। বর্ণনাকারী পূর্বের বা পরের রাকাতসমূহ মিলিয়ে সমষ্টিকে ‘বিতির’ বলে বর্ণনা করেছেন। নিম্নে কিছু প্রমাণ পেশ করা হল-

১. আবু সালামা ইবনে আবদুর রহমান উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রাযি. কে জিজ্ঞাসা করেন, রমযানুল মুবারকে নবী ﷺ -এর নামায কীরূপ হত? উম্মুল মুমিনীন বলেন,

مَا كَانَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ يَزِيدُ فِي رَمَضَانَ وَلاَ فِي غَيْرِهِ عَلَى إِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً يُصَلِّي أَرْبَعًا، فَلاَ تَسَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُولِهِنَّ، ثُمَّ يُصَلِّي أَرْبَعًا، فَلاَ تَسَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُولِهِنَّ، ثُمَّ يُصَلِّي ثَلاَثًا

নবী ﷺ রমযানে ও রমযানের বাইরে এগারো রাকাতের বেশি পড়তেন না। প্রথমে চার রাকাত পড়তেন-এত সুন্দর ও দীর্ঘ সে নামায, যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। অতঃপর চার রাকাত পড়তেন-এরও দীর্ঘতা ও সৌন্দর্য সম্পর্কে জানতে চেয়ো না। এরপর তিন রাকাত পড়তেন। (বুখারী ১১৪৭ মুসলিম ৭৩৮ নাসায়ী ১৬০৭ আবু দাউদ ১৩৪১ তিরমিযী ৪৩৯ মুসনাদে আহমদ ৬/৩৬, ৩৯, ৭৩, ১০৪)

২. আয়েশা রাযি. বলেন,

كَانَ النَّبِيُّ ﷺ لَا يُسَلِّمُ فِي رَكْعَتَيْ الْوِتْرِ

নবী ﷺ বিতরের দুই রাকাতে সালাম ফেরাতেন না। ( নাসায়ী ১৬৯৮; মুয়াত্তা মুহাম্মাদ ১৫১ (বাবুস সালাম ফিল বিতর) মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৬৯১২ সুনানে দারাকুতনী ১৫৬৫ সুনানে কুবরা বাইহাকী ৩/৩১)

এই হাদীসটি ইমাম হাকেম আবু আব্দুল্লাহ রহ.ও ‘মুস্তাদরাক আলাস সহীহাইন’ কিতাবে বর্ণনা করেছেন। তার আরবী পাঠ এই-

كَانَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ لَا يُسَلِّمُ فِي الرَّكْعَتَيْنِ الْأُولَيَيْنِ مِنْ الْوِتْرِ

অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ ﷺ বিতরের প্রথম দুই রাকাতে সালাম ফেরাতেন না।

ইমাম হাকেম রহ. তা বর্ণনা করার পর বলেন- هذا حديث صحيح على شرط الشيخين অর্থাৎ হাদীসটি বুখারী ও মুসলিমের শর্ত মোতাবেক সহীহ। ইমাম শামসুদ্দীন যাহাবী রহ. ‘তালখীসুল মুস্তাদরাক’-এ হাকেম রহ.-এর সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছেন। (মুস্তাদরাক আলাস সহীহাইন ১/৩০৪, হাদীস ১১৮০)

৩. আব্দুল্লাহ ইবনে আবী কাইস বলেন, আমি হযরত আয়েশা রাযি.-এর কাছে জিজ্ঞাসা করলাম যে, নবীজী ﷺ বিতরে কত রাকাত পড়তেন? উত্তরে তিনি বলেন,

كَانَ يُوتِرُ بِأَرْبَعٍ وَثَلَاثٍ وَسِتٍّ وَثَلَاثٍ وَثَمَانٍ وَثَلَاثٍ وَعَشْرَةٍ وَثَلَاثٍ وَلَمْ يَكُنْ يُوتِرُ بِأَكْثَرَ مِنْ ثَلَاثَ عَشْرَةَ وَلَا أَنْقَصَ مِنْ سَبْعٍ

অর্থাৎ চার এবং তিন, ছয় এবং তিন, আট এবং তিন, দশ এবং তিন। তিনি বিতরে তের রাকাতের অধিক এবং সাত রাকাতের কম পড়তেন না। ( আবু দাউদ ১১৯০ তহাবী ১০৬৬ মুসনাদে আহমদ ২৬৬১০ আসসুনানুল কাবীর লিল বাইহাকী ৪৪৭১ মুসনাদে ইসহাক ইবন রাহয়াইহ ১৪৮৫)

লক্ষণীয় বিষয় হল, রাসূলুল্লাহ ﷺ তাহাজ্জুদ নামায কখনো চার রাকাত, কখনো ছয় রাকাত, কখনো আট রাকাত, কখনো দশ রাকাত পড়তেন; কিন্তু মূল বিতর সর্বদা তিন রাকাতই হত।

তিন রাকাআত বিতর নামায পড়ার নিয়ম:
আর তিন রাকাত বিতির পড়ার নিয়ম হল, অন্যান্য ফরজ নামাজের ন্যায় দুই রাকাআত নামাজ পড়ে প্রথম বৈঠকে বসে তাশাহহুদ পড়বেন। সালাম ফেরাবেন না। তারপর তৃতীয় রাকআত পড়ার জন্য উঠে সুরা ফাতিহার সঙ্গে অন্য কোনো সুরা বা আয়াত মিলাবেন। কিরাআত (সুরা বা অন্য আয়াত মিলানোর পর) শেষ করার পর তাকবির বলে দু’হাত কান পর্যন্ত উঠিয়ে তাকবিরে তাহরিমার মতো হাত বাঁধবেন। তারপর নিঃশব্দে দোয়া কুনুত পড়বেন। দোয়া কুনুত পড়ে পূর্বের ন্যায় রুকু, সিজদার পর শেষ তাশাহহুদ, দরূদ, দোয়া মাছুরা পড়ে ছালাম ফিরানোর মাধ্যমে বিতরের নামাজ সমাপ্ত করবেন।

তবে হ্যাঁ, বিতিরের ব্যাপারে শরীয়তের কাম্য এই যে, তা কিছু নফল নামায পড়ার পর আদায় করা। সুতরাং দুই-চার রাকাত নফল নামায পড়ার পর বিতির আদায় করবে। মাগরিবের মত আগে কোন নফল ছাড়া শুধু তিন রাকাত বিতির পড়া পছন্দনীয় নয়। হাদীস শরীফে আছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

لا تُوتِرُوا بِثَلاثٍ تَشَبَّهُوا بِصَلاةِ الْمَغْرِبِ ، وَلَكِنْ أَوْتِرُوا بِخَمْسٍ ، أَوْ بِسَبْعٍ ، أَوْ بِتِسْعٍ ، أَوْ بِإِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً ، أَوْ أَكْثَرَ مِنْ ذَلِكَ

তোমরা শুধু তিন রাকাত বিতির পড়ো না, এতে মাগরিবের সাদৃশ্যপূর্ণ করে ফেলবে; বরং পাঁচ, সাত, নয়, এগার বা এরও অধিক রাকাতে বিতির পড়ো।
(মুস্তাদরাকে হাকেম ১১৭৮ সুনানে কুবরা বাইহাকী ৩/৩১, ৩২)

والله اعلم بالصواب

ইসহাক মাহমুদ মুফতী ও মুহাদ্দিস, জামিআ মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়া, মোহাম্মদপুর
প্রসঙ্গসমূহ:

মন্তব্য (0)

কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর