আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

প্রশ্নঃ ১১৩৯৩. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, বেতের সলাতের যে দোয়া কুনূত পড়া হয় তার ঠিক দোয়া কোনটি??,

১৪ ডিসেম্বর, ২০২১

জীবননগর

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم





আমরা বিতর নামাযে প্রসিদ্ধ যে দুআ কুনূত পড়ে থাকি সেটি সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। এটিকে ভুল বলা ঠিক নয়। বিখ্যাত হাদীসগ্রন্থ মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবায় আবদুর রহমান আসসুলামী রাহ. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন আমরা যেন কুনূতে নিম্নোক্ত দুআটি পড়ি-

اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْتَعِينُكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ، وَنُثْنِي عَلَيْكَ الْخَيْرَ، وَلاَ نَكْفُرُكَ، وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَفْجُرُكَ، اللَّهُمَّ إِيَّاكَ نَعْبُدُ، وَلَكَ نُصَلِّي وَنَسْجُدُ، وَإِلَيْكَ نَسْعَى وَنَحْفِدُ، نَرْجُو رَحْمَتَكَ وَنَخْشَى عَذَابَكَ، إِنَّ عَذَابَكَ الْجِدَّ بِالْكُفَّارِ مُلْحِقٌ.

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৬৯৬৫

শব্দের সামান্য তারতম্যসহ অন্যান্য বর্ণনায়ও এ দুআটি এসেছে। মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবার এক বর্ণনায় وَنُؤْمِنُ بِكَ وَنَتَوَكَّلُ عَلَيْكَ -এ দু’টি বাক্য বর্ধিত এসেছে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৩০৩৩৭) শরহু মাআনিল আসারের একটি বিশুদ্ধ বর্ণনায় وَنَشْكُرُكَ শব্দটিও রয়েছে। (শরহু মাআনিল আসার ১/১৭৭)

এছাড়া হযরত আলী রা. যেভাবে পড়তেন তাতেও وَنَشْكُرُكَ শব্দটি পাওয়া যায়। -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৩/১১৪

আর প্রসিদ্ধ দুআটি উপরোক্ত বর্ণনাসমূহেরই সমন্বিত রূপ। এভাবে পড়ার দ্বারা উপরোক্ত সকল বর্ণনার উপর আমল হয়ে যায়।

অতএব এইসব বর্ণনার আলোকে দুআটি পূর্ণ পাঠ এভাবে হয়-

اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْتَعِينُكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ وَنُؤْمِنُ بِكَ وَنَتَوَكَّلُ عَلَيْكَ وَنُثْنِي عَلَيْكَ الْخَيْرَ وَنَشْكُرُكَ وَلاَ نَكْفُرُكَ، وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَفْجُرُكَ، اللَّهُمَّ إِيَّاكَ نَعْبُدُ، وَلَكَ نُصَلِّي وَنَسْجُدُ، وَإِلَيْكَ نَسْعَى وَنَحْفِدُ، نَرْجُو رَحْمَتَكَ وَنَخْشَى عَذَابَكَ، إِنَّ عَذَابَكَ الْجِدَّ بِالْكُفَّارِ مُلْحِقٌ.

(আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতাঈনুকা ,ওয়ানাসতাগ্‌ফিরুকা,ওয়া নু’মিনুবিকা, ওয়া নাতাওয়াক্কালু আলাইক, ওয়ানুসনি আলাইকাল খাইর, ওয়া নাশকুরুকা , ওয়ালানাকফুরুকা, ওয়া নাখলাউ ওয়া নাতরুকু, মাই ইয়াফ জুরুকা, আল্লাহুম্মা ইয়্যাকানা’বুদু , ওয়া লাকানুছল্লি, ওয়া নাসজুদু, ওয়া ইলাইকা নাসআ, ওয়া নাহফিদু, ওয়া নারজু রহমাতাকা, ওয়া নাখশা আযাবাকা, ইন্না আযাবাকা বিলকুফ্‌ফারি মুলহিক।)

অর্থঃ হে আল্লাহ আমরা আপনার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করছি। আপনার কাছে হেদায়েত কামনা করছি। আপনার কাছে ক্ষমার আবেদন করছি। আপনার কাছে তওবা করছি। আপনার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করছি। আপনার উপর ভরসা করছি। আপনার সকল কল্যাণের প্রশংসা করছি। আমরা আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমরা আপনার অনুগ্রহ অস্বীকার করি না। আমরা পৃথক চলি। এবং পরিত্যাগ করি এমন লোকদের, যারা আপনার বিরুদ্ধাচারণ করে। হে আল্লাহ! আমরা আপনারই ইবাদত করি। এবং আপনারই সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে আমরা নামাজ পড়ি ও সিজদা করি। আপনার প্রতিই আমরা ধাবিত হই এবং আমরা আপনার আযাবকে ভয় করি। নিশ্চাই আপনার প্রকৃত আযাব কাফেরদের উপর পতিত হবে।
(আরো দেখুন : আলআওসাত, ইবনুল মুনযির ৫/২১৮; আসসুনানুল কুবরা, বায়হাকী ২/২১০;আলমুদাওওয়ানাতুল কুবরা ১/১১০)

সুনানে বাইহাকীর এক বর্ণনায় এসেছে যে, হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কুনূত শিক্ষা দিয়েছেন। এরপর শব্দের সামান্য তারতম্যসহ উপরোক্ত দুআটিই উল্লেখিত হয়েছে। (আসসুনানুল কুবরা, বাইহাকী ২/২১০, আলমুদাওওয়ানাতুল কুবরা ১/১০১)

উল্লেখ্য, কুনূতের জন্য হাদীস শরীফে যেমন উপরোক্ত দুআটি শিক্ষা দেওয়া হয়েছে তেমনি আরেকটি দুআও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। হাসান ইবনে আলী রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বিতিরে পড়ার জন্য কয়েকটি বাক্য শিক্ষা দিয়েছেন, তাহল-

اللَّهُمَّ اهْدِنِي فِيمَنْ هَدَيْتَ، وَعَافِنِي فِيمَنْ عَافَيْتَ، وَتَوَلَّنِي فِيمَنْ تَوَلَّيْتَ، وَبَارِكْ لِي فِيمَا أَعْطَيْتَ، وَقِنِي شَرَّ مَا قَضَيْتَ، فَإِنَّكَ تَقْضِي وَلَا يُقْضَى عَلَيْكَ، وَإِنَّهُ لَا يَذِلُّ مَنْ وَالَيْتَ، تَبَارَكْتَ رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَ.

-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৪২৫

ইমাম নববী রাহ. বলেন, আমাদের অনেকেই বলেন, উভয় দুআ একত্রে পড়াটাই উত্তম। (শরহুল মুহাযযাব ৩/৪৭৫-৭৮) শামসুল আইম্মা সারাখসী রাহ. ইমাম কাসানী রাহ. প্রমূখ ফকীহগণও বিতিরের নামাযে উভয় দুআ একত্রে পড়াকে পছন্দ করতেন। (আলমাবসূত, সারাখসী ১/১৬৫; বাদায়েউস সনায়ে ২/২৩২)

তবে কেউ যদি একটি দুআই পড়তে চায় তাহলে প্রথম দুআটি পড়াই উত্তম হবে। কেননা বিখ্যাত তাবেয়ী ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. নিজে বিতিরের কুনূতে এ দুআ পড়াকে পছন্দ করতেন এবং অন্যকে পড়তে আদেশ করতেন। -মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীস ৪৯৯৭; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৬৯৬৪

তাবেয়ী হাসান বাসরী রাহ.ও কুনূতে এ দুআটিই পড়তেন। -মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীস ৪৯৮২

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ইফতা বিভাগ

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

১১৯৪৩

দুয়া কুনুত মুখস্ত না থাকলে করণীয়


২০ জানুয়ারী, ২০২৫

ঢাকা ১২০৬

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

১১৫৬৬

আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমি গতকাল এশার নামাজের আগে বিতিরের নামাজ পরে ফেলি এখন আমার বিতিরের কি হুকুম

১৫ ডিসেম্বর, ২০২১

তজুমদ্দিন

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ফাতওয়া বিভাগ

৩৭৪৮১

বিতিরের অতিরিক্ত তাকবিরের বিধান


৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

ঢাকা ১২৩০

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

১১৫১৩

আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আসসালামু আলাইকুম,তিন রাকাত বিতরএর নামাজ বিসয়ে জানতে চাই

১৪ ডিসেম্বর, ২০২১

Riyadh, Saudi Arabia

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ফাতওয়া বিভাগ

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy