আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

পরীক্ষায় মানুষ সম্মানিত হয় বা অপমানিত করে”

প্রশ্নঃ ৯৬৫৫. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, ১. সামনে আমার পরীক্ষা এখন কিভাবে প্রস্তুতি নেব পরীক্ষার হলে গেলে আমি সব ভুলে যাই এজন্য কি করবো?২.আমার প্রশ্ন গুলো অনেক বড় এগুলো কিভাবে মুখস্ত করব এজন্য কোনো দোয়া আছে ? কি করলে এগুলো দু'তিনবার পড়লে মুখস্ত হয়ে যাবে? দয়া করে সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েন কোনোটা বাদ দিয়েন না।جزاك الله خير.,

১ অক্টোবর, ২০২৩

ঢাকা

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


সম্মানিত প্রশ্নকারী!
আরবিভাষার একটি প্রসিদ্ধ প্রবাদপ্রবচন হলো,
عند الامتحان يكرم المرء أو يهان
পরীক্ষায় মানুষ সম্মানিত হয় বা অপমানিত করে”
কাজেই,পরীক্ষা মানেই আতঙ্ক। পরীক্ষা এলেই ছাত্র-ছাত্রী ও তাদের অভিভাবকরা চিন্তায় কাবু হয়ে যান। পরীক্ষার ভয়ে অনেকের বুক ধড়পড় করে। চোখে ঝাপসা দেখে। হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যায়। শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হওয়া শুরু হয়। খাওয়া ও ঘুমে অনিয়ম শুরু হয়। শুরু হয় আরো অনেক জটিলতা। ফলে অনেকে জানা জিনিসও ভুলে যায়। এসব পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে ইসলামের কিছু নির্দেশনা মেনে চলা যেতে পারে। তাহলে ইনশাআল্লাহ এমন প্রতিকূল পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে না।
১. আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা রাখা : কোনো ব্যক্তি যদি পরীক্ষার ব্যাপারে আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা রেখে যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করে, তাহলে সে অবশ্যই সফল হবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে, তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। (সুরা তালাক, আয়াত : ৩)
আল্লাহ তাআলার ওপর ভরসা করার মানে এই নয় যে আসবাব ও উপকরণ গ্রহণ না করেই বা পড়ালেখা না করেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য বসে থাকবে। কেননা আল্লাহ তাআলা দুনিয়াকে দারুল আসবাব তথা উপকরণের কেন্দ্রবিন্দু বানিয়েছেন। তাই আসবাব বা উপকরণ গ্রহণ করতে হবে। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, লোকজন হজ করত কিন্তু সঙ্গে পাথেয় নিয়ে আসত না। আবু মাসউদ বলেন, ইয়েমেনের কিছু লোক হজে যেত কিন্তু সঙ্গে পাথেয় আনত না এবং তারা বলত যে আমরা আল্লাহর ওপর ভরসা করেছি। অথচ মক্কায় পৌঁছার পর তারা ভিক্ষা করত। ফলে মহান আল্লাহ অবতীর্ণ করলেন, ‘তোমরা হজের সফরে সঙ্গে পাথেয় নিয়ে যাবে, আর জেনে রেখো তাকওয়াই হলো উত্তম পাথেয়।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১৭৩০)
২.কঠোর পরিশ্রম : তাই পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জনের জন্য আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসার পাশাপাশি অলসতা ত্যাগ করে নিজের সাধ্যানুযায়ী কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। কারণ, আল্লাহ কোনো কোনো ক্ষেত্রে মানুষের পরিশ্রম ও চেষ্টার ওপর ভিত্তি করে তাকে সফলতা দান করেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর সবার জন্যই তাদের কর্ম অনুসারে মর্যাদা রয়েছে। আর আল্লাহ যেন তাদেরকে তাদের কর্মের পূর্ণ প্রতিফল দিতে পারেন। আর তাদের প্রতি কোনো জুলুম করা হবে না।’ (সুরা আল-আহকাফ, আয়াত : ১৯)
৩.সালাতুল হাজত : পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়ার আগে দুই রাকাত ‘সালাতুল হাজত’ পড়ে মহান আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করে পরীক্ষার উদ্দেশ্যে বের হওয়া যেতে পারে। কারণ রাসুল (সা.) যখন কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হতেন, তখন ‘সালাতুল হাজত’ বা প্রয়োজন পূরণের নামাজ পড়তেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৩১৯)। এটি পড়ার জন্য নির্দিষ্ট কোনো সুরা পড়া জরুরি নয়। বরং সাধারণভাবে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে নিজ প্রয়োজনগুলো মহান আল্লাহর কাছে পেশ করা ও তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করা।
৪.স্থিরতা অবলম্বন করা : অনেকে পরীক্ষার সময় অস্থির হয়ে পড়েন। খুব বেশি তাড়াহুড়া করেন। ফলে অনেক ক্ষেত্রে ভুল উত্তরও দিয়ে বসেন। ইসলাম তাড়াহুড়া পছন্দ করে না। কারণ এটি শয়তানের অভ্যাস।
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘ধীরস্থিরে কাজ করা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে আর তাড়াহুড়া করা শয়তানের পক্ষ থেকে।’ (সুনানে বায়হাকি, হাদিস : ২০৭৬৭)। আর তাড়াহুড়ার কারণেই কখনো কখনো বান্দার দোয়া কবুল হয় না। অথচ বান্দা আল্লাহর কাছে বেশি বেশি চাইলেই আল্লাহ খুশি হন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, তোমাদের প্রত্যেক ব্যক্তির দোয়া কবুল হয়ে থাকে। যদি সে তাড়াহুড়া না করে আর বলে যে, আমি দোয়া করলাম কিন্তু আমার দোয়া তো কবুল হলো না। (বুখারি, হাদিস : ৬৩৪০)
৫.বিসমিল্লাহর সহিত শুরু করা : যেকোনো ভালো কাজই বিসমিল্লাহ বলে শুরু করতে হয়। তাই পরীক্ষার্থীরাও প্রশ্নপত্র গ্রহণ করার পর বিসমিল্লাহ বলে তা শুরু করতে পারেন। সঙ্গে দরুদ শরিফও পাঠ করে নিতে পারেন। কারণ কোনো ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর ওপর একবার দরুদ পড়লে মহান আল্লাহ তার ওপর ১০ বার রহমত বর্ষণ করেন। এবং উত্তরপত্রে লেখা শুরু করার সময় বিসমিল্লাহ বলে শুরু করতে পারেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, যেসব কাজ আল্লাহর নাম না নিয়ে শুরু করা হয়, সেগুলো বরকতশূন্য। কোনো বর্ণনায় আল্লাহর প্রশংসার কথাও বলা হয়েছে।
৬.বেশি বেশি দোয়া করা : পরীক্ষায় সঠিক উত্তর প্রদানে মহান আল্লাহর সাহায্যের জন্য মনে মনে তাঁর কাছে দোয়া করা যেতে পারে। যেমন ‘রব্বি জিদনি ইলমা’। মহান আল্লাহ নিজেই তাঁর বন্ধুকে এই দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে। ‘এবং দোয়া করো, হে আমার পরওয়ারদিগার! আমাকে আরো জ্ঞান দাও। (সুরা ত্বহা, আয়াত : ১১৪)
কোনো উত্তর মনে না পড়লে দোয়া : অনেক সময় দেখা যায়, ভালোভাবে মুখস্থ করে যাওয়া জিনিসও মনে পড়ে না। কেউ এ ধরনের পরিস্থিতিতে পড়লে নিম্নোক্ত দোয়া পড়তে পারেন।

رَبِّ اشْرَحْ لِي صَدْرِي* وَيَسِّرْ لِي أَمْرِي* وَاحْلُلْ عُقْدَةً مِّن لِّسَانِي * يَفْقَهُوا قَوْلِي

উচ্চারণ : ‘রব্বিশরহলি সদরি, ওয়া ইয়াসসিরলি আমরি, ওয়াহলুল উকদাতাম মিল্লিসানি, ইয়াফকহু কওলি।’ অর্থ : ‘সে বলল, হে আমার রব, আমার বুক প্রশস্ত করে দিন। এবং আমার কাজ সহজ করে দিন। আর আমার জিহ্বার জড়তা দূর করে দিন—যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে।’ (সুরা ত্বহা, আয়াত : ২৫-২৮)। এই দোয়া মৌখিক পরীক্ষার সময় বেশি বেশি পড়া যেতে পারে।
এ ছাড়া মুরব্বিদের মুখে আরেকটি দোয়া শোনা যায়,

رَبِّ يَسِّرْ وَلَا تُعَسِّرْ وَ تَمِّمْ عَلَيْنَا بِالْخَيْرِ

‘রব্বি ইয়াসসির, ওয়া লা তুআসসির, ওয়া তাম্মিম আলাইনা বিল খাইর’। অর্থ : হে আমার রব, সহজ করো, কঠিন কোরো না, এবং কল্যাণের সঙ্গে শেষ করার তাওফিক দান করো।

এছাড়া এই দোয়টিও পড়া যেতে পারে।

اللّٰهُمَّ ذَكِّرْنِيْ مَا نَسِيْـــتُ ، وَعَلِّمْنِيْ مَا جَهِلْتُ
অর্থ, হে আল্লাহ! আমি যা ভুলে গেছি তা আমাকে স্মরণ করিয়ে দিন এবং আমি যা জানি না তা আমাকে শিখিয়ে দিন।

7.নকল না করা : নকল করে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া প্রতারণার শামিল। মুমিন কখনো প্রতারণার আশ্রয় নিতে পারে না। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে প্রতারণা করে, সে আমার দলভুক্ত নয়। (মুসলিম, হাদিস : ১০২)।
যাকে আল্লাহর রাসুল (সা.) অস্বীকার করবে, সে কী করে সফল হবে? তা ছাড়া নকল করার কারণে পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষার হল থেকে বহিষ্কার করা হতে পারে, যা তার নিজের জীবনে যেমন কালি লেপন করবে, তেমনি পরিবারের সম্মানও নষ্ট করবে।
আল্লাহ আমাদের সব পরীক্ষার্থীকে সফলতা দান করুন। আমিন

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি
বাইতুল কুরআন মাদারাসা , মোহাম্মাদপুর

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৬৯৪২৮

সন্দেহযুক্ত/ হারাম টাকায় নির্মিত মসজিদে নামাযের বিধান কি?


২৪ নভেম্বর, ২০২৪

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

৮৫৭৪৫

ইল্লাল্লাহ জিকির করার বিধান


২০ জানুয়ারী, ২০২৫

কালিয়া

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

৮৮১৬৪

প্রাইভেট মাদরাসায় জুমার জামাত


৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

নারায়ণগঞ্জ

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

৯১৩৮৬

প্রজেক্টর বা ডিজিটাল পর্দার মাধ্যমে বক্তাকে দেখা মহিলাদের কতটুকু শরীয়তসম্মত?


২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

নওগাঁ

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ আল কাউসার

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy