আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

নামাজ বর্জনে দুই ধরণের শাস্তি

প্রশ্নঃ ৯৪৬৭. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, জনাব আমি জানতে চাই "নামাজ না পড়লে ইসলামে কি শাস্তির বিধান রয়েছে?" নামাজ না পড়া ব্যক্তিকে কি শাস্তি দেওয়া যাবে?? জানালে উপকৃত হব। ধন্যবাদ

১৪ অক্টোবর, ২০২৩
ঢাকা ১২১২

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


সলাত তথা নামাজ ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের অন্যতম ও শ্রেষ্ঠ শারীরিক ইবাদত। তা বর্জনের শাস্তি দুই ধরনের—
১. ইহলৌকিক শাস্তি ও
২. পারলৌকিক শাস্তি।
ইহলৌকিক শাস্তি : নামাজ বর্জনকারী আল্লাহর নিয়ামত, বরকত ও রহমত থেকে বঞ্চিত হবে। আল্লাহর ফেরেশতারা তার প্রতি অসন্তুষ্ট হন, তার দোয়া কবুল হয় না, তার চেহারার নুর উঠে যায়, তার জীবিকা সংকীর্ণ করা হয়। ফলে সে কোথাও বারাকাহ পায় না।
তাই শিশুদের ১০ বছর বয়স থেকেই নামাজের গুরুত্ব দেওয়া উচিত। এই বয়সে নামাজ ছেড়ে দিলে মা-বাবা তাকে শাস্তি দিতে হবে।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমাদের সন্তানদের বয়স সাত বছর হলে নামাজের আদেশ করো। আর ১০ হলে নামাজ ছাড়ার জন্য শাস্তি প্রদান করো। শরয়ী আইন অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকরা এবং ইসলামী সরকারপ্রধান নামাজ বর্জনের জন্য শাস্তি প্রয়োগ করতে পারেন।
ইমাম আবু হানিফা ও ইমাম মুজানির (রহ.)-এর মতে, কোনো ব্যক্তি অলসতাবশত ইচ্ছাকৃত নামাজ ছেড়ে দিলে তাকে আটক করা হবে।
ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রহ.) ও কোনো কোনো শাফেয়ী আইনবিদের মতে, নামাজ বর্জনকারীকে হত্যা করা হবে। কেননা রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত নামাজ বর্জন করল, সে কুফরি করল।
(সহিহ মুসলিম : ১/১২৪)

হানাফি ইমামরা বলেন, আল্লাহ তাআলা তাওহীদে বিশ্বাসী পাপীকেও মুমিন বলে সম্বোধন করেছেন। আর নামাজ নেক আমলের অন্যতম। যে ব্যক্তি তা বর্জন করল সে পাপী-ফাসেক হলো। ফলে নামাজ বর্জনকারীকে জেলখানায় আটক রাখা হবে, যতক্ষণ না নামাজ পড়ার স্বীকৃতি দান করে।
(বাহরে রায়েক : ৫/৪৯; আল-বাদায়ে ওয়াস সানায়ে : ৭/৬৪; নাইলুল আওতার : ১/৩৪৮০)

পারলৌকিক শাস্তি : নামাজ ছেড়ে দেওয়া মারাত্মক গুনাহ। হাদিস শরিফে নামাজ বর্জনকারীর প্রতি কঠিন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘বান্দা ও কুফরির মধ্যে পার্থক্য হলো নামাজ বর্জন করা।’
(তিরমিজি, মিশকাত, পৃষ্ঠা ৩৩২)

তিনি আরো বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নামাজ আদায় করে না, দ্বিন ইসলামে তার কোনো অংশ নেই।’
(তিরমিজি, ইবনে মাজাহ, মিশকাত, পৃষ্ঠা ৪৫২)

বেনামাজি কিয়ামতের দিন চরমভাবে লাঞ্ছিত ও অপদস্থ হবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘স্মরণ করো সেই চরম সংকটের দিনের কথা, যেদিন তাদেরকে আহ্বান করা হবে সিজদা করার জন্য, কিন্তু তারা করতে সক্ষম হবে না। তাদের দৃষ্টি অবনত, হীনতা তাদেরকে আচ্ছন্ন করবে। অথচ যখন তারা নিরাপদ ছিল তখন তো তাদেরকে আহ্বান করা হয়েছিল
(সুরা : কালাম, আয়াত : ৪২, ৪৩)।

নামাজ বর্জনকারী জাহান্নামের আগুনে জলবে। যেমন—কুরআনে এসেছে, অপরাধীদের সম্পর্কে (আল্লাহ) বলবেন, ‘তোমাদেরকে কিসে জাহান্নামে নীত করেছে? তারা বলবে, আমরা নামাজ পড়তাম না, অভাবগ্রস্তকে আহার্য দিতাম না, আমরা সমালোচকদের সঙ্গে সমালোচনা করতাম এবং প্রতিফল দিবসকে অস্বীকার করতাম।
(সুরা : মুদ্দাসসির, আয়াত : ৪১-৪৬)

والله اعلم بالصواب

ইসহাক মাহমুদ মুফতী ও মুহাদ্দিস, জামিআ মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়া, মোহাম্মদপুর

মন্তব্য (0)

কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন