আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

‘‘এক বলেই আউট হয়ে যাবে’’ ‘‘নিশ্চিত আজকে ওরা হারবে’’ এধরণের বাক্য বলার দ্বারা কি শিরক হয়?

প্রশ্নঃ ৯০৩৪৪. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, ক্রিকেট খেলার সময় আমরা যে বলি আমি সিওর এই প্লেয়ারটা ১ বলে আউট যাবে এ কথা বলা কি শিরিক আবার ২ টা দলের ভিতরে ১ টা দল নিম হলে আমরা বলি ওই দলেই নিশ্চিত হারবে এটা কি বলা কি শিরিক,

২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

CG৩X+VQ

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


প্রিয়প্রশ্নকারী ভাই! এটি নিয়তের উপরই নির্ভর করবে যে, এধরণের কথা কোন দৃষ্টিকোণ থেকে বলা হয়েছে। যদি এটি ইতিপূর্বের অভিজ্ঞতার আলোকে বলা হয়ে থাকে, তাহলে এতে শিরকের কোন বিষয় নেই। সাধারণত মানুষ এসব কথা অভিজ্ঞতার আলোকেই বলে থাকে।
হ্যাঁ যদি ভবিষ্যতবাণী মনে করে বলা হয়? তাহলে এর বিশ্বাসকারী এবং প্রবক্তা উভয়ে গুনাহগার হবে। এবং প্রবক্তার ঈমাণ নবায়ন ব্যতিরেকে মারা গেলে কঠিন শাস্তি (জাহান্নাম) ভোগ করতে হবে।


عَلْقَمَة بْنَ وَقَّاصٍ اللَّيْثِيَّ، يَقُولُ سَمِعْتُ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ ـ رضى الله عنه ـ عَلَى الْمِنْبَرِ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى، فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلَى دُنْيَا يُصِيبُهَا أَوْ إِلَى امْرَأَةٍ يَنْكِحُهَا فَهِجْرَتُهُ إِلَى مَا هَاجَرَ إِلَيْهِ

আলকামা ইবনে ওয়াক্কাস লায়সী (রাহঃ) থেকে বর্ণিত, আমি উমর ইবনুল খাত্তাব (রাযি.) কে মিম্বরের ওপর দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছিঃ আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে ইরশাদ করতে শুনেছিঃ প্রত্যেক কাজ নিয়তের সাথে সম্পর্কিত। আর মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী ফল পাবে। তাই যার হিজরত হবে দুনিয়া লাভের অথবা কোন নারীকে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে, সেই উদ্দেশ্যই হবে তার হিজরতের প্রাপ্য। (সহীহুল বুখারী, হাদীস নং ১)

হাদীসের ব্যাখ্যাঃ
পবিত্র এ হাদীছে চারটি বাক্য আছে। প্রথম বাক্য إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّات (সমস্ত আমল নিয়তের সাথে সম্পর্কযুক্ত)। এ বাক্যটি একটি মূলনীতিস্বরূপ। এতে বলা হয়েছে- প্রতিটি আমলের ভালোমন্দ নিয়তের উপর নির্ভরশীল। নিয়ত ভালো হলে আমলটি ভালো আর নিয়ত মন্দ হলে আমলটি মন্দরূপে গণ্য হবে। কেবল বাহ্যিক রূপ ভালো হওয়াই আমল ভালো হওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। বাহ্যিক রূপ ভালো হওয়া সত্ত্বেও নিয়ত যদি মন্দ হয়, তবে সে আমল ভালো বলে গণ্য হবে না। বরং নিয়ত মন্দ হওয়ার কারণে সেই বাহ্যিক ভালো আমলটিও মন্দ সাব্যস্ত হবে। কথাটি এভাবেও বলা যায় যে, আল্লাহর কাছে কোনও কাজ গ্রহণযোগ্য হওয়া বা না হওয়া ইখলাস ও নিয়তের উপর নির্ভরশীল। কাজটি যদি ইখলাসের সাথে অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে হয়, তবে তা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয়। পক্ষান্তরে উদ্দেশ্য যদি আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভ না হয়ে অন্যকিছু হয়, তবে সে আমল আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না। সুতরাং প্রত্যেকের কর্তব্য সমস্ত আমলেই বিশুদ্ধ নিয়ত ও ইখলাসের প্রতি যত্নবান থাকা।

দ্বিতীয় বাক্য وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى (প্রত্যেক ব্যক্তি তাই পাবে, যা সে নিয়ত করে) এ বাক্যটি ওই মূলনীতির ফলাফল। বলা হয়েছে- প্রত্যেকে তাই পাবে, যা সে নিয়ত করে। অর্থাৎ কোনও আমল দ্বারা যদি আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি কামনা করে, তবে সেই আমল দ্বারা সে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভ করবে। পক্ষান্তরে যদি উদ্দেশ্য থাকে সুনাম-সুখ্যাতি লাভ করা বা মানুষের সন্তুষ্টি অর্জন করা কিংবা টাকা-পয়সা ও ধন-দৌলত হাসিল করা, তবে ওই আমল দ্বারা সে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করবে না। বাহ্যদৃষ্টিতে সে আমল যতই সুন্দর হোক না কেন, তাতে সে কোনও ছওয়াব পাবে না। এবং আখিরাতে তার বিনিময়ে তার কিছুই অর্জিত হবে না।
অতঃপর হিজরত দ্বারা ভালোমন্দ নিয়তের দৃষ্টান্ত দেওয়া হয়েছে। হিজরত মানে পরিত্যাগ করা। পরিভাষায় দীন ও ঈমান হেফাজতের উদ্দেশ্যে কুফরের দেশ পরিত্যাগ করে ইসলামী দেশে গমন করাকে হিজরত বলা হয়। যে-কোনও মন্দ কাজ পরিত্যাগকেও হিজরত বলে। যে ব্যক্তি হিজরত করে, তাকে বলা হয় মুহাজির। এক হাদীছে আছে- প্রকৃত মুহাজির সেই; যে আল্লাহর নিষিদ্ধ বিষয়াবলী পরিত্যাগ করে চলে। এর মধ্যে শরীআতের সমস্ত আদেশ-নিষেধ এসে যায়। কেননা শরীআতের আদিষ্ট বিষয়াবলী পালন করতে হলে মনের খেয়াল-খুশি পরিত্যাগ করতে হয়। অনুরূপ নিষিদ্ধ বিষয়াবলী থেকে দূরে থাকার জন্যও মনের বিরোধিতা করা অপরিহার্য হয়। সুতরাং ব্যাপক অর্থে হিজরত এমন এক আমল, গোটা শরীআতই যার অন্তর্ভুক্ত। তবে এ হাদীছে হিজরত দ্বারা বিশেষভাবে দেশত্যাগকেই বোঝানো হয়েছে।
তো এই হিজরত এমন এক আমল, নিয়তের ভালোমন্দ দ্বারা যার ভালোমন্দ সাব্যস্ত হয়। উভয় অবস্থায় এর বাহ্যিক রূপ একই থাকে। ফলে বাহ্যিক রূপ দ্বারা এর ভালোমন্দ ও শুদ্ধাশুদ্ধ নির্ণয় করা যায় না।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
قُلۡ لَّاۤ اَمۡلِکُ لِنَفۡسِیۡ نَفۡعًا وَّلَا ضَرًّا اِلَّا مَا شَآءَ اللّٰہُ ؕ  وَلَوۡ کُنۡتُ اَعۡلَمُ الۡغَیۡبَ لَاسۡتَکۡثَرۡتُ مِنَ الۡخَیۡرِ ۚۖۛ  وَمَا مَسَّنِیَ السُّوۡٓءُ ۚۛ  اِنۡ اَنَا اِلَّا نَذِیۡرٌ وَّبَشِیۡرٌ لِّقَوۡمٍ یُّؤۡمِنُوۡنَ
বল, ‘আল্লাহ্ যা ইচ্ছা করেন তা ব্যতীত আমার নিজের ভাল-মন্দের ওপরও আমার কোন অধিকার নেই। আমি যদি অদৃশ্যের খবর জানতাম তবে তো আমি প্রভূত কল্যাণই লাভ করতাম আর কোন অকল্যাণই আমাকে স্পর্শ করত না। আমি তো শুধু মু’মিন সম্প্রদায়ের জন্যে সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা বৈ আর কিছুই নই।’
—আল আরাফ - ১৮৮

অন্য আয়াতে বর্ণিত হয়েছে:
وَعِنۡدَہٗ مَفَاتِحُ الۡغَیۡبِ لَا یَعۡلَمُہَاۤ اِلَّا ہُوَ ؕ وَیَعۡلَمُ مَا فِی الۡبَرِّ وَالۡبَحۡرِ ؕ وَمَا تَسۡقُطُ مِنۡ وَّرَقَۃٍ اِلَّا یَعۡلَمُہَا وَلَا حَبَّۃٍ فِیۡ ظُلُمٰتِ الۡاَرۡضِ وَلَا رَطۡبٍ وَّلَا یَابِسٍ اِلَّا فِیۡ کِتٰبٍ مُّبِیۡنٍ
অদৃশ্যের কুঞ্জি তাঁরই নিকট আছে, তিনি ব্যতীত অন্য কেউ তা জানে না। জলে ও স্থলে যা কিছু আছে তা তিনিই অবগত, তাঁর অজ্ঞাতসারে একটি পাতাও পড়ে না। মৃত্তিকার অন্ধকারে এমন কোন শস্যকণাও অংকুরিত হয় না বা রসযুক্ত কিংবা শুষ্ক এমন কোন বস্তু নেই যা সুস্পষ্ট কিতাবে নেই।
—আল আনআম - ৫৯

الشِّرْكُ الأَْصْغَرُ وَهُوَ الشِّرْكُ الْخَفِيُّ: وَهُوَ مُرَاعَاةُ غَيْرِ اللَّهِ فِي الْعِبَادَةِ. مِثْل الرِّيَاءِ وَالنِّفَاقِ، لِقَوْلِهِ تَعَالَى: {وَلاَ يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا} قَال ابْنُ حَجَرٍ: نَزَلَتْ فِيمَنْ يَطْلُبُ الْحَمْدَ وَالأَْجْرَ بِعِبَادَاتِهِ وَأَعْمَالِهِ. وَقَوْل رَسُول اللَّهِ: إِنَّ أَدْنَى الرِّيَاءِ شِرْكٌ، وَأَحَبُّ الْعَبِيدِ إِلَى اللَّهِ الأَْتْقِيَاءُ الأَْسْخِيَاءُ الأَْخْفِيَاءُ وَقَوْلُهُ عَلَيْهِ السَّلَامُ : إِنَّ أَخْوَفَ مَا أَتَخَوَّفُ عَلَى أُمَّتِي الإِْشْرَاكُ بِاَللَّهِ، أَمَا أَنِّي لَسْتُ أَقُول يَعْبُدُونَ شَمْسًا وَلاَ قَمَرًا وَلاَ وَثَنًا، وَلَكِنْ أَعْمَالاً لِغَيْرِ اللَّهِ وَشَهْوَةً خَفِيَّةً (الموسوعة الفقهية الكويته-5/6/7)

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী
খতীব, রৌশন আলী মুন্সীবাড়ী জামে মসজিদ, ফেনী

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৮৮৫৩৫

মুসলিম বাংলা অ্যাপে আরবি তারিখ কেন দুইটি দেখায়?


১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

১৮২২

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

৯০৫১৯

মেসেঞ্জারে বিবাহ করলে‌ কি তা হয়


২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

Gazirchat

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

৭৭১৪৪

নবীর কাছে উম্মতের গুনাহ পেশ করা হয়?


২৪ নভেম্বর, ২০২৪

HHMC+F৪৭ - Old Umm Al Quwain - Umm Al Quawain - সংযুক্ত আরব আমিরাত (AE)

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

৮১৭৯৯

অমুসলিমের সাথে বর্গা চুক্তি করলে উশর নাকি খারাজ দিবে?


২০ ডিসেম্বর, ২০২৪

নামবিহীন রাস্তা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy