আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

প্রশ্নঃ ৮৬৭১. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, ১নংপ্রশ্নঃ-মুহতারাম আমার প্রশ্নটি হলো ইমাম সাহেবের বাম পাশ থেকে ইক্বামত দিলে কোন সমস্যা আছে কিনা??অনেক জায়গায় দেখছি বাম পাশ থেকে ইক্বামত দিলে ওরা বলে সমস্যা আছে। কি সমস্যা সেটা আর বলেনা!!! এ সম্পর্কে সঠিক মতামত আশা করছি।২নং প্রশ্ন ঃ-মুহতারাম আমার ২য় প্রশ্নটি হলো আমি জানি নামাজ না পড়লে গোনাহ হবে।কিন্তু এরপরও না পড়ে পরে মাফ নেওয়ার আশায় বসে আছি। এমতাবস্থায় আমি পরে মাফ পাব কিনা??,

৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১

ঢাকা

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


১নং উত্তরঃ ইমাম সাহেবের বাম পাশ থেকে ইক্বামত দিলে কোন সমস্যার কথা হাদীসে কোথাও বর্ণিত হয়নি।
অতএব, ইমাম সাহেবের বাম পাশ থেকে ইক্বামত দিলে সমস্যার কিছু নেই।

২নং উত্তরঃ মুহতারাম, আপনাকে পেয়ে বসেছে অলসতা ও উদ্যমহীনতা। এটি একটি মনোরোগ। এর বেশ কিছু কারণ রয়েছে। কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে- আল্লাহর সাথে সম্পর্কের দুর্বলতা, তাকওয়ার ঘাটতি, ইবাদতে অলস ও দুর্বল ব্যক্তিদের সাথে চলাফেরা, দুনিয়া ও দুনিয়ার ভোগ নিয়ে মেতে থাকা, দুনিয়ার শেষ পরিণতি নিয়ে না ভাবা এবং যার ফলে আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের প্রস্তুতির মধ্যেও দুর্বলতা এসে পড়ে।

এ রোগ প্রতিরোধ করার বেশ কিছু পন্থা রয়েছে-

১. যখন আপনার মাঝে রোগটি দেখা দিবে, ঠিক ওই মুহূর্তে ভাবুন, এটা তো মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়; বরং এটা তো মুনাফিকের বৈশিষ্ট্য। হ্যাঁ, আল্লাহ তাআলা কোরআন মজিদে এমনটাই বলেছেন। তিনি বলেন,

إِنَّ الْمُنَافِقِينَ يُخَادِعُونَ اللّهَ وَهُوَ خَادِعُهُمْ وَإِذَا قَامُواْ إِلَى الصَّلاَةِ قَامُواْ كُسَالَى يُرَآؤُونَ النَّاسَ وَلاَ يَذْكُرُونَ اللّهَ إِلاَّ قَلِيلاً
অবশ্যই মুনাফেকরা প্রতারণা করছে আল্লাহর সাথে, অথচ তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতারিত করে। বস্তুতঃ তারা যখন নামাযে দাঁড়ায় তখন দাঁড়ায়, একান্ত শীথিলভাবে লোক দেখানোর জন্য। আর তারা আল্লাহকে অল্পই স্মরণ করে। (সুরা নিসা ১৪২)
অন্যত্র তিনি বলেন,
وَلاَ يَأْتُونَ الصَّلاَةَ إِلاَّ وَهُمْ كُسَالَى
তারা নামাযে আসে অলসতার সাথে ব্যয় করে সঙ্কুচিত মনে। (সুরা তাওবা ৫৪)
২.পরিমাণে অল্প হলেও প্রতিদিন কিছু যিকর করুন ও কোরআন মজিদ তেলাওয়াত করুন। এর মাধ্যমে আপনার রবের সাথে সম্পর্ক মজবুত হবে। ইবাদতের প্রতি আগ্রহ এবং ইবাদতের ভেতরে মজা খুঁজে পাবেন।
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ إِذَا ذُكِرَ اللّهُ وَجِلَتْ قُلُوبُهُمْ وَإِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ آيَاتُهُ زَادَتْهُمْ إِيمَانًا وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ
যারা ঈমানদার, তারা এমন যে, যখন আল্লাহর নাম নেয়া হয় তখন ভীত হয়ে পড়ে তাদের অন্তর। আর যখন তাদের সামনে পাঠ করা হয় কালাম, তখন তাদের ঈমান বেড়ে যায় এবং তারা স্বীয় পরওয়ার দেগারের প্রতি ভরসা পোষণ করে। (সুরা আনফাল ২)
৩. তাহাজ্জুদ, ইশরাক, চাশত, আওয়াবিনের মধ্য থেকে যেকোনো একটি নফল নামাজ নিয়মিত পড়ুন। উদ্যমহীনতায় আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম কারণ হলো, আবেগ তাড়িত হয়ে প্রথম ধাপে অতি বেশি নেক আমল করা। এটি রাসূলুল্লাহ্‌ ﷺ-এর আদর্শ নয় এবং উম্মতের প্রতি তাঁর ওসিয়ত নয়। আয়েশা রাযি. রাসূলুল্লাহ্‌ ﷺ-এর আমলকে বিশেষিত করতে গিয়ে বলেন, ( ديمة) তাঁর আমল ছিল নিয়মিত। রাসূলুল্লাহ্‌ ﷺ নিজে আমাদেরকে জানিয়েছেন যে,

أحب الأعمال إِلَى اللَّهِ تَعَالَى أدْوَمُهَا وَإِنْ قَلَّ

আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় আমল হল- নিয়মিত আমল; যদিও সেটা পরিমাণে কম হোক না কেন। (মুসনাদে আহমাদ ৬/১৬৫)

অতএব, উদ্যমহীনতা থেকে নিষ্কৃতি পেতে হলে ধরেই বেশি আমল নয়; বরং নিয়মিতভাবে অল্প অল্প আমল করার চেষ্টা করুন। কেননা, অনিয়মিত বেশি আমলের চেয়ে নিয়মিত কম আমল ভাল।

৪. জীবনে যারা নেককার, উদ্যমী, আমলকারী ও আল্লাহওয়ালা ছিলেন এমন ব্যক্তিবর্গের লেখা ও জীবনী পড়ুন। যাতে আল্লাহর রাস্তায় চলার ক্ষেত্রে আপনার সামনে কিছু উত্তম আদর্শ থাকে। এ বিষয়ে আরও জানার জন্য পড়ুন, জিজ্ঞাসা নং–৫২১।

৫. আমরা আপনাকে দোয়া করার পরামর্শ দিচ্ছি। কেননা, যে ব্যক্তি সঠিকভাবে নেক আমল করতে পারার জন্য তাঁর রবের আশ্রয় ও সাহায্য প্রার্থনা করে সে বিফল হয় না। যেমনটি রাসূলুল্লাহ্‌ ﷺ করতেন।

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَالْبُخْلِ وَالْجُبْنِ، وَضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ

উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘উযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিনাল-‘আজযি ওয়াল-কাসালি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিনাল-বুখলি ওয়াল-জুবনি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিন দ্বালা‘য়িদ্দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজা-ল।

অর্থ: হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে। (বুখারী ২৮৯৩)

(উল্লেখ্য, বাংলা উচ্চারণ পাঠকের সুবিধার্থে দেয়া হয়েছে। মূলতঃ বিশুদ্ধ উচ্চারণ এভাবে লেখার মাঝে আসে না। সুতরাং একজন আলেমের কাছ থেকে বিশুদ্ধ উচ্চারণে দোয়াগুলো শিখে নিতে হবে। তারপর আমল করতে হবে।)

আমরা দোয়া করছি- আল্লাহ আপনাকে তাঁর সন্তোষজনক আমল করতে পারার তাওফিক দিন। আপনাকে উত্তম কথা, কাজ ও আচরণের তাওফিক দিন।

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ইফতা বিভাগ

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৬৬৬২৪

প্রথম রাকাতে সূরা নাস পড়ে ফেললে করণীয়


৭ জুলাই, ২০২৪

লৌহজং

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী সিরাজুল ইসলাম

৬৬৪৩৯

কয় বছর বয়সে নামাজ ফরজ হয়?


৪ জুলাই, ২০২৪

WFFJ+৭৬৯

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি জাওয়াদ তাহের

৮৮৯৯২

ভুলে প্রথম বৈঠকে সালাম


১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

আড়াইহাজার

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

৯০৩৩৬

ভালোভাবে ধৌত করার পরও নাপাকির দাগ কাপড়ে লেগে থাকলে সে কাপড়ে নামায হবে কি?


২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

Kaliganj

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy