মুনকার নাকীরের প্রশ্নোত্তর
প্রশ্নঃ ৮৩১৫. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমার প্রশ্নটি হচ্ছে, মুনকার ও নাকীর এর প্রশ্নোত্তরের ব্যাপারে কুর'আন কোথাও বিস্তারিত বলা আছে কি? আমরা জামে'আত তিরমিজি হতে যে হাদিস খানা পেয়েছি তা হাসান হাদিস বলে বর্ণীত দেখেছি। তাহলে আদতেই, কবরের প্রশ্নোত্তরের ব্যাপারে কোন শক্ত যুক্তি বা রেফারেন্স আছে কিনা? আমাকে জনৈক একজন, এই বলে দাবী করেছেন যে কবরের এই প্রশ্ন করার অংশ খানি নাকি জরাথ্রস্টবাদ ও মেসোপোটেমিয়ান ধর্মীয় বিশ্বাস হতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে? (নাউজুবিল্লাহ) এর বিপরীতে কোন উপযুক্ত উত্তর দিতে ব্যর্থ হওয়ায় আপনাদের নিকট স্মরনাপন্ন হচ্ছি।,
২৮ জানুয়ারী, ২০২৫
Kalapara, Bangladesh
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
কবরে মুনকার ও নাকীর এর প্রশ্নোত্তরের ব্যাপারে আপনি সহিহ বুখারীতে কেন দেখেন নি؟ মুনকার - নাকীর এর প্রশ্নোত্তরের ব্যাপারে হাদীসের কিতাবাদিতে অনেক বিশুদ্ধ হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
তিরমিযীর হাদীস হাসান হলে কী সমস্যা, হাসান হাদীস কি দলীলযোগ্য নয় ?? হাসান হাদীস দ্বারা রেফারেন্স শুদ্ধ ও গ্রহনযোগ্য হবার ব্যপারে হাদীস শাস্ত্রের উলামাদের মাঝে কোন দ্বিমত নেই। সহীহ ও হাসান উভয়েই দলিলযোগ্য।
বারা ইবনে আযিবের হাদীছে এসেছে, মৃত ব্যক্তির রূহ তার দেহে ফেরত দেয়া হয় এবং তার নিকট দু’জন ফেরেশতা আগমন করে। সহীহ বুখারী ও মুসলিমের কাতাদার সূত্রে আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
«إن الميت إِذَا وُضِعَ فِي قَبْرِهِ وَتُوُلِّيَ عنه أَصْحَابُهُ إِنَّهُ لَيَسْمَعُ خفق نِعَالِهِمْ، أَتَاهُ مَلَكَانِ فَيقْعَدَانه، فَيَقُولانِ لَهُ: مَا كُنْتَ تَقُولُ فِي هَذَا الرَّجُلِ مُحَمَّدٍ ؟ فأما المؤمن فَيَقُولُ: أَشْهَدُ أَنَّهُ عَبْدُ اللَّهِ وَرَسُولُهُ، قال فَيقول انْظُرْ إِلَى مَقْعَدِكَ مِنَ النَّارِ قد أَبْدَلَكَ اللَّهُ بِهِ مَقْعَدًا مِنَ الْجَنَّةِ» قَالَ رسول الله صلى الله عليه وسلم: «فَيَرَاهُمَا جَمِيعًا، وَأَمَّا الْكَافِرُ و الْمُنَافِقُ، فَيَقُولان له ما كنت تقول في هذا الرجل فيقول لا أدري: كُنْتُ أَقُولُ مَا يَقُولُ النَّاسُ. فَيَقولان له: لا دَرَيْتَ وَلا تَلَيْتَ، ثمَّ يُضْرَبُ بِمِطارق مِنْ حَدِيدٍ بَيْنَ أُذُنَيْهِ، فَيَصِيحُ صَيْحَةً يَسْمَعُهَا مَنْ عليها إِلا الثقَلَيْنِ» (بخارى:1338)
‘‘মৃত ব্যক্তিকে যখন কবরে রাখা হয় এবং তার সাথীগণ দাফনের কাজ শেষ করে যখন সেখান থেকে চলে যায় তখন মৃত ব্যক্তি তাদের জুতার আওয়াজ শুনতে পায়। এ সময় তার নিকট দু’জন ফেরেশতা আগমন করেন এবং তাকে বসিয়ে প্রশ্ন করেন, এ ব্যক্তি অর্থাৎ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে তোমার ধারণা কী? মুমিন ব্যক্তি বলে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি আল্লাহর বান্দা ও তার রসূল। তখন তাকে বলা হয় তুমি তোমার জাহান্নামের ঠিকানা দেখো। আল্লাহ তা‘আলা তা পরিবর্তন করে জান্নাতে তোমার ঠিকানা নির্ধারণ করেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, সে জান্নাত ও জাহান্নাম উভয় স্থানকেই দেখতে পায়।
আর মৃত ব্যক্তি যদি কাফের বা মুনাফেক হয়ে থাকে তাহলে তাকেও ফেরেশতাদ্বয় জিজ্ঞাসা করবেন, এ ব্যক্তি সম্পর্কে তোমার ধারণা কী? সে উত্তর দিবে আমি কিছুই জানি না। মানুষেরা যা বলত আমিও তাই বলতাম। অতঃপর তাকে বলা হবে, তুমি জান নাই এবং শিখো নাই। অতঃপর লোহার একটি মুগুর দিয়ে তার উভয় কানের মাঝখানে এমন জোরে আঘাত করা হয়, যাতে সে ভয়ানকভাবে চিৎকার করতে থাকে। জিন এবং মানুষ ব্যতীত পৃথিবীর অন্যান্য সকল বস্তুই সে চিৎকারের আওয়াজ শুনতে পায়’’।
আবু হাতিমের সহীহ গ্রন্থে অন্য একটি হাদীছে এসেছে, নীল চোখ বিশিষ্ট দু’জন কালো আকৃতির ফেরেশতা আগমন করে। তাদের একজনের নাম নাকীর এবং অন্যজনের নাম মুনকার।
মুসনাদে আহমাদ এবং আবু হাতিমের সহীহ গ্রন্থে আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত অন্য একটি হাদীছে এসেছে, ‘‘মৃত ব্যক্তিকে যখন কবরে রাখা হয় এবং তার সাথীগণ দাফনের কাজ শেষ করে যখন সেখান থেকে চলে যায় তখন মৃত ব্যক্তি তাদের জুতার আওয়াজ শুনতে পায়। সে মুমিন হয়ে থাকলে তার মাথার নিকট সালাত এসে হাজির হয়, রোযা এসে উপস্থিত হয় ডান দিকে, যাকাত এসে উপস্থিত হয় বাম দিকে এবং সাদকা, সিলায়ে রেহেমী বা আত্মীয়তার সম্পর্ক ঠিক রাখার নেকী, সৎকাজ, সৃষ্টির প্রতি দয়া-অনুগ্রহ ইত্যাদি এসে উপস্থিত হয় তার দু পায়ের নিকট। এ সময় তার মাথার দিক থেকে কবরের ফেরেশতা আগমন করতে চাইলে সালাত বলে আমার দিক থেকে আসার কোনো রাস্তা নেই, ডান দিক থেকে আসতে চাইলে রোযা আমার দিক থেকে আসার কোনো সুযোগ নেই, বাম দিক থেকে আসতে চাইলে যাকাত বলে আমার দিক থেকে আসার কোনো পথ নেই, অতঃপর তার দুই পায়ের দিক থেকে আসতে চাইলে দান-খয়রাত, সিলায়ে রেহেমী, সৎকাজ, মানুষের প্রতি সুন্দর আচার-আচরণ, দয়া-অনুগ্রহ ইত্যাদি বলে আমার দিক থেকে আসার কোনো রাস্তা নেই। অতঃপর তাকে বলা হয়, তুমি বসো। মৃত ব্যক্তি তখন উঠে বসে। এ সময় তার সামনে সূর্যাস্তের ছবি উপস্থিত করা হয়। অতঃপর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দিকে ইঙ্গিত করে বলা হয়, তোমাদের নিকট এই যে ব্যক্তিকে পাঠানো হয়েছিল, তার সম্পর্কে তুমি কী বলতে? তার সম্পর্কে তুমি কী সাক্ষ্য প্রদান করতে? মৃত ব্যক্তি তখন বলে, আমাকে ছাড়ো, আমি সালাত পড়বো। ফেরেশতা তখন বলেন, অচিরেই তোমাকে সালাত পড়তে দেয়া হবে। তবে তোমাকে এখন যে প্রশ্ন করা হচ্ছে, তার জবাব দাও। তোমাদের নিকট যে ব্যক্তিকে পাঠানো হয়েছিল, তার ব্যাপারে তুমি কী বলতে? তার ব্যাপারে তুমি কী সাক্ষ্য দিতে? মুমিন ব্যক্তি তখন বলে তিনি হলেন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি হলেন আল্লাহর রসূল, আল্লাহর পক্ষ হতে তিনি সত্য দীন নিয়ে এসেছেন। তাকে তখন বলা হয়, এ আকীদা-বিশ্বাসের উপর তুমি জীবিত ছিলে, এর উপরই তুমি মৃত্যু বরণ করেছো এবং এর উপরই তোমাকে পুনরুত্থিত করা হবে ইনশা-আল্লাহ। অতঃপর তার জন্য জান্নাতের একটি দরজা খোলা হবে এবং বলা হবে, এ হলো তোমার ঠিকানা। এসব নেয়ামত তোমার জন্য আল্লাহ তা‘আলা তাতে তৈরি করে রেখেছেন। এতে তার আনন্দ, খুশি ও সুখ-শান্তি আরো বৃদ্ধি পায়।
অতঃপর তার সামনে জাহান্নামের একটি দরজা খুলে দেয়া হয় এবং তুমি আল্লাহর নাফরমানী করতে তাহলে এটি হতো তোমার ঠিকানা। এতে তার আনন্দ ও খুশি আরো বৃদ্ধি পাবে। অতঃপর তার কবরকে সত্তর হাত প্রশস্ত করা হবে এবং তাকে আলোকিত করা হবে। পরিশেষে যা দিয়ে তার দেহ সৃষ্টি করা হয়েছে, তা দিয়ে পুনরায় তাকে সৃষ্টি করা হবে এবং তার রূহকে পবিত্র রূহসমূহের মধ্যে স্থান দেয়া হবে। ফলে সে পাখির আকৃতিতে জান্নাতের বৃক্ষসমূহের মধ্যে বিচরণ করতে থাকবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يُثَبِّتُ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا بِالْقَوْلِ الثَّابِتِ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآخِرَةِ وَيُضِلُّ اللَّهُ الظَّالِمِينَ وَيَفْعَلُ اللَّهُ مَا يَشَاءُ﴾
‘‘আল্লাহ তা‘আলা ঈমানদারদেরকে ইহকাল ও পরকালে মজবুত কথার উপর প্রতিষ্ঠিত রাখবেন এবং যালেমদেরকে করবেন পথভ্রষ্ট। আর আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করেন’’। (সূরা ইবরাহীম: ২৭)
আর কাফেরের ব্যাপারে কথা হলো, ফেরেশতা যখন তার মাথার নিকট থেকে আসবে, তখন কোনো প্রতিবন্ধকতা পাবেনা, ডান দিক থেকে আসলেও কোনো বাধা থাকবে না, বাম দিক থেকে আসলেও না এবং তার দুই পায়ের দিক থেকে আসলেও কোনো বাধা থাকবে না। অতঃপর বলা হবে, বসো। সে তখন ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে উঠে বসবে। অতঃপর বলা হবে যেই ব্যক্তিকে তোমাদের নিকট পাঠানো হয়েছিল, তার ব্যাপারে তুমি কী বলতে? কাফের তখন বলে, কোন্ ব্যক্তি? ফেরেশতা বলবে, যিনি তোমাদের মধ্যে ছিলেন। সে তার নাম বলতে পারবেনা। অতঃপর তাকে বলা হবে, তিনি তো ছিলেন মুহাম্মাদ। কাফের তখন বলবে, জানিনা, লোকদেরকে কিছু একটা বলতে শুনেছি। আমিও মানুষের মত বলেছি। অতঃপর তাকে বলা হবে, এ অবস্থাতেই তুমি জীবিত ছিলে, এ অবস্থাতেই তুমি মৃত্যু বরণ করেছো এবং এর উপরই তোমাকে পুনরুত্থিত করা হবে, ইনশা-আল্লাহ।
অতঃপর তার জন্য জাহান্নামের একটি দরজা খোলা হবে। বলা হবে, এটি তোমার ঠিকানা এবং এ শাস্তিগুলো আল্লাহ তোমার জন্য তাতে প্রস্ত্তত করে রেখেছেন। এতে তার দুঃখ-দুর্দশা আরো বৃদ্ধি পাবে। অতঃপর জান্নাতের একটি দরজা খুলে দেয়া হবে এবং তাতে যেসব নিয়ামত প্রস্তত করা হয়েছে, তা দেখিয়ে তাকে বলা হবে, তুমি যদি আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য করতে তাহলে এ হতো তোমার ঠিকানা। এতে তার দুঃখ-কষ্ট ও দুর্দশা আরো বেড়ে যাবে। অতঃপর তার কবরকে এমন সংকীর্ণ করে দেয়া হবে যে, কবরের চাপে তার এক পার্শ্বের পাজরের হাড্ডী অন্যপার্শ্বের পাজরের হাড্ডীর মধ্যে ঢুকে যাবে। এটিই হবে তার সংকীর্ণ জীবন, যে সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿وَمَنْ أَعْرَضَ عَن ذِكْرِي فَإِنَّ لَهُ مَعِيشَةً ضَنكًا وَنَحْشُرُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَعْمَىٰ قَالَ رَبِّ لِمَ حَشَرْتَنِي أَعْمَى وَقَدْ كُنْتُ بَصِيرًا قَالَ كَذَٰلِكَ أَتَتْكَ آيَاتُنَا فَنَسِيتَهَا وَكَذَٰلِكَ الْيَوْمَ تُنسَىٰ﴾
‘‘আমার পক্ষ হতে তোমাদের কাছে সৎ পথের নির্দেশ আসলে যে ব্যক্তি আমার সেই নির্দেশ মেনে চলবে সে বিভ্রান্ত হবে না এবং দুঃখ-কষ্ট পাবে না। আর যে ব্যক্তি আমার যিকির থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে তার জন্য হবে দুনিয়ায় সংকীর্ণ জীবন এবং কিয়ামতের দিন আমি তাকে উঠাবো অন্ধ অবস্থায়। সে বলবে, হে আমার রব! কেন আমাকে অন্ধ অবস্থায় উঠালেন? দুনিয়ায় আমি তো ছিলাম দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন। তিনি বলবেন, এভাবেই তো আমার আয়াত তোমার কাছে এসেছিল। কিন্তু তুমি তা ভুলে গিয়েছিলে। এভাবেই আজ তোমাকেও ভুলে যাওয়া হচ্ছে’’। (সূরা তোহা: ১২৩)
এ পর্যায়ে মুনকার নাকীরের প্রশ্নোত্তরের ব্যাপারে কিছু বিশুদ্ধ হাদীস উল্লেখ করছিঃ
১- حَدَّثَنَا عَيَّاشُ بْنُ الْوَلِيدِ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الأَعْلَى، حَدَّثَنَا سَعِيدٌ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ـ رضى الله عنه ـ أَنَّهُ حَدَّثَهُمْ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " إِنَّ الْعَبْدَ إِذَا وُضِعَ فِي قَبْرِهِ، وَتَوَلَّى عَنْهُ أَصْحَابُهُ، وَإِنَّهُ لَيَسْمَعُ قَرْعَ نِعَالِهِمْ، أَتَاهُ مَلَكَانِ فَيُقْعِدَانِهِ فَيَقُولاَنِ مَا كُنْتَ تَقُولُ فِي الرَّجُلِ لِمُحَمَّدٍ صلى الله عليه وسلم. فَأَمَّا الْمُؤْمِنُ فَيَقُولُ أَشْهَدُ أَنَّهُ عَبْدُ اللَّهِ وَرَسُولُهُ. فَيُقَالُ لَهُ انْظُرْ إِلَى مَقْعَدِكَ مِنَ النَّارِ، قَدْ أَبْدَلَكَ اللَّهُ بِهِ مَقْعَدًا مِنَ الْجَنَّةِ، فَيَرَاهُمَا جَمِيعًا ". قَالَ قَتَادَةُ وَذُكِرَ لَنَا أَنَّهُ يُفْسَحُ فِي قَبْرِهِ. ثُمَّ رَجَعَ إِلَى حَدِيثِ أَنَسٍ قَالَ " وَأَمَّا الْمُنَافِقُ وَالْكَافِرُ فَيُقَالُ لَهُ مَا كُنْتَ تَقُولُ فِي هَذَا الرَّجُلِ فَيَقُولُ لاَ أَدْرِي، كُنْتُ أَقُولُ مَا يَقُولُ النَّاسُ. فَيُقَالُ لاَ دَرَيْتَ وَلاَ تَلَيْتَ. وَيُضْرَبُ بِمَطَارِقَ مِنْ حَدِيدٍ ضَرْبَةً، فَيَصِيحُ صَيْحَةً يَسْمَعُهَا مَنْ يَلِيهِ، غَيْرَ الثَّقَلَيْنِ ".
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (মৃত) বান্দাকে যখন তার কবরে রাখা হয় এবং তার সাথী এতটুকু মাত্র দূরে যায় যে সে (মৃত ব্যাক্তি) তখনও তাদের জুতার আওয়াজ শুনতে পায়। এ সময় দু’জন ফিরিশতা তার কাছে এসে তাকে বসান এবং তাঁরা বলেন, এ ব্যাক্তি অর্থাৎ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে তুমি কি বলতে? তখন মু’মিন ব্যাক্তি বলবে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসূল। তখন তাঁকে বলা হবে, জাহান্নামে তোমার অবস্থানস্থলটির দিকে নযজ কর, আল্লাহ তোমাকে তার বদলে জান্নাতের একটি অবস্থানস্থল দান করেছেন। তখন সে দু’টি স্থলের দিকেই দৃষ্টি করে ফেলবে।
কাতাদা (রহঃ) বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করা হয়েছে যে, সে ব্যাক্তির জন্য তাঁর কবর প্রশস্ত করে দেওয়া হবে। এরপর তিনি (কাতাদ) পুনরায় আনাস (রাঃ) এর হাদীসের বর্ণনায় ফিরে আসেন। তিনি [আনাস (রাঃ)] বলেন, আর মুনাফিক বা কাফির ব্যাক্তিকেও প্রশ্ন করা হবে তুমি এ ব্যাক্তি (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্পর্কে কি বলতে? সে উত্তরে বলবে, আমি জানিনা। লোকেরা যা বলত আমি তা-ই বলতাম। তখন তাকে বলা হবে, তুমি না নিজে জেনেছ, না তিলাওয়াত করে শিখেছ। আর তাকে লোহার মুগুর দ্বারা এমনভাবে আঘাত করা হবে, যার ফলে সে এমন বিকট চিৎকার করে উঠবে যে, দু’ জাতি (মানব ও জ্বীন) ব্যতিত তার আশপাশের সকলেই তা শুনতে পাবে। (সহীহ বুখারী-১৩৭৪)
২-
حَدَّثَنَا عَبْدُ بْنُ حُمَيْدٍ، حَدَّثَنَا يُونُسُ بْنُ مُحَمَّدٍ، حَدَّثَنَا شَيْبَانُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ قَتَادَةَ، حَدَّثَنَا أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ، قَالَ قَالَ نَبِيُّ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " إِنَّ الْعَبْدَ إِذَا وُضِعَ فِي قَبْرِهِ وَتَوَلَّى عَنْهُ أَصْحَابُهُ إِنَّهُ لَيَسْمَعُ قَرْعَ نِعَالِهِمْ " . قَالَ " يَأْتِيهِ مَلَكَانِ فَيُقْعِدَانِهِ فَيَقُولاَنِ لَهُ مَا كُنْتَ تَقُولُ فِي هَذَا الرَّجُلِ " . قَالَ " فَأَمَّا الْمُؤْمِنُ فَيَقُولُ أَشْهَدُ أَنَّهُ عَبْدُ اللَّهِ وَرَسُولُهُ " . قَالَ " فَيُقَالُ لَهُ انْظُرْ إِلَى مَقْعَدِكَ مِنَ النَّارِ قَدْ أَبْدَلَكَ اللَّهُ بِهِ مَقْعَدًا مِنَ الْجَنَّةِ " . قَالَ نَبِيُّ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " فَيَرَاهُمَا جَمِيعًا " . قَالَ قَتَادَةُ وَذُكِرَ لَنَا أَنَّهُ يُفْسَحُ لَهُ فِي قَبْرِهِ سَبْعُونَ ذِرَاعًا وَيُمْلأُ عَلَيْهِ خَضِرًا إِلَى يَوْمِ يُبْعَثُونَ .
আনাস ইবনু মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বান্দাকে যখন তার কবরের মধ্যে রেখে তার সঙ্গী-সাথীরা সেখান থেকে ফিরে আসে এবং সে তাদের জুতার শব্দ শুনতে পায় তখন তার কাছে দু’জন ফেরেশতা এসে তাকে উঠিয়ে বসান। তারপর তাকে তারা জিজ্ঞেস করে, এ লোকটির ব্যাপারে তুমি কি বলতে? মু’মিন বান্দা তখন বলে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, তিনি আল্লাহর বান্দা এবং তার রসূল। তখন তাকে বলা হয়, জাহান্নামে তুমি তোমার আসন দেখে নাও। আল্লাহ তা’আলা তোমার এ আসনকে জান্নাতের আসনের দ্বারা পরিবর্তন করে দিয়েছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তখন সে তার উভয় আসন অবলোকন করে নেয়।
বর্ণনাকারী কাতাদাহ্ (রহঃ) বলেন, আমাদের নিকট এ কথাও উল্লেখ করা হয়েছে যে, অতঃপর তার কবরকে (দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে) সত্তর হাত প্রশস্ত করে দেয়া হয় এবং সবুজ শ্যামল গাছের দ্বারা পরিপূর্ণ করে দেয়া হয় কিয়ামত পর্যন্ত। (সহীহ মুসলিম - ২৮৭০)
দেখুন, উভয় হাদীসেই 'এ সময় দু’জন ফিরিশতা তার কাছে এসে তাকে বসান' এধরণের কথা এসেছে।
আর এ হাদীসদুটির বিশুদ্ধতার ব্যপারে কোন হাদীসবিশারদের দ্বিমত নেই।
যে অস্বীকার করবে, তার ঈমান নিয়ে সংশয় আছে।
*এবার আসি সেই ব্যক্তির দাবীর ব্যপারেঃ
উক্ত ব্যক্তির দাবী সম্পূর্ণ অসার, এর সপক্ষে সে কোন প্রমাণই পেশ করতে পারবে না।
তার সমস্যা সে কবরের আযাবের সত্যতা মানতে চাচ্ছে না।
অথচ কুরআনে হাদীসে কবরের আযাব সম্পর্কে বহু জায়গায় বর্ণিত হয়েছে।
প্রত্যেক মৃত ব্যক্তিকেই কবরের আযাব ও ফেরেশতাদ্বয়ের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। যদিও তাকে দাফন না করা হয়। কবরের আযাব ও নিয়ামত বলতে বারযাখী জীবনের আযাব বা নিয়ামত উদ্দেশ্য। আখিরাতের জীবন ও দুনিয়ার জীবনের মধ্যবর্তী সময়কে বারযাখী জিন্দেগী বলা হয়।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَمِنْ وَرَائِهِمْ بَرْزَخٌ إِلَى يَوْمِ يُبْعَثُونَ ‘‘তাদের সামনে রয়েছে একটি পর্দা পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত’’। (সূরা মুমিনূন: ১০০)
কুরআন থেকেঃ
(১) আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَوْ تَرَى إِذِ الظَّالِمُونَ فِي غَمَرَاتِ الْمَوْتِ وَالْمَلَائِكَةُ بَاسِطُوا أَيْدِيهِمْ أَخْرِجُوا أَنفُسَكُمْ الْيَوْمَ تُجْزَوْنَ عَذَابَ الْهُونِ بِمَا كُنتُمْ تَقُولُونَ عَلَى اللَّهِ غَيْرَ الْحَقِّ وَكُنتُمْ عَنْ آيَاتِهِ تَسْتَكْبِرُونَ﴾
‘‘তুমি যদি যালেমদেরকে ঐ সময়ে দেখতে যখন তারা মৃত্যু যন্ত্রনায় থাকবে এবং ফেরেশতাগণ হাত বাড়িয়ে বলবে, তোমরা নিজেরাই নিজেদের প্রাণ বের করে আনো। তোমাদের আমলের কারণে আজ তোমাদেরকে অবমাননাকর আযাব দেয়া হবে। কারণ তোমরা আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করেছিলে এবং তোমরা তার আয়াতের বিরুদ্ধে অহংকার করেছিলে’’। (সূরা আনআম: ৯৩)
এটি মৃত্যুর সময় মানুষের জন্য ফেরেশতাগণের সম্বোধন। সত্যবাদী ফেরেশতাগণ এখানে সংবাদ দিয়েছেন যে, তারা মৃত্যুর সময় মানুষকে অবমাননাকর শাস্তি দিয়ে থাকেন। দুনিয়া শেষ হওয়া পর্যন্ত যদি তাদের শাস্তি বিলম্বিত করা হতো, তাহলে তাদেরকে সম্বোধন করে এ কথা বলা ঠিক হতো না যে, আজ তোমাদেরকে অবমাননাকর শাস্তি দেয়া হবে। এর দ্বারা বুঝা গেলো যে, আয়াত দ্বারা কবরের আযাব উদ্দেশ্য।
(২) আল্লাহ তা‘আলা সূরা তুরের ৪৫- ৪৭ নং আয়াতে বলেন,
﴿فَذَرْهُمْ حَتَّىٰ يُلَاقُوا يَوْمَهُمُ الَّذِي فِيهِ يُصْعَقُونَ يَوْمَ لَا يُغْنِي عَنْهُمْ كَيْدُهُمْ شَيْئًا وَلَا هُمْ يُنصَرُونَوَإِنَّ لِلَّذِينَ ظَلَمُوا عَذَابًا دُونَ ذَٰلِكَ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَهُمْ لَا يَعْلَمُونَ﴾
‘‘অতএব, হে নবী! তাদেরকে আপন অবস্থায় থাকতে দাও। যাতে তারা সে দিনটির সাক্ষাত পায়, যেদিন তাদেরকে (মেরে-পিটিয়ে) বেহুশ করা হবে। সেদিন না তাদের কোন চালাকি কাজে আসবে, না কেউ তাদেরকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসবে। আর সেদিনটি আসার আগেও যালেমদের জন্য একটা আযাব আছে। কিন্তু তাদের অধিকাংশই জানে না’’।
এখানে আযাব দ্বারা দুনিয়াতে হত্যা ও অন্যান্যভাবে তাদেরকে শাস্তি দেয়া উদ্দেশ্য হতে পারে। আলমে বারযাখের শাস্তিও উদ্দেশ্য হতে পারে। এটিই অধিক সুস্পষ্ট। কেননা তাদের অনেকেই দুনিয়ার শাস্তি ভোগ না করেই মৃত্যু বরণ করেছে। কেউ কেউ বলেছেন, অপরাধীদের যারা দুনিয়াতে শাস্তি ভোগ করার আগেই মারা গেছে, তাদেরকে বারযাখী জিন্দেগীতে শাস্তি দেয়া হবে আর যারা রয়ে গেছে, তাদেরকে দুনিয়াতে হত্যা কিংবা অন্যান্যভাবে শাস্তি দেয়া হবে। সুতরাং তাদেরকে শাস্তির ভয় দেখানো হয়েছে। এ আযাব দ্বারা দুনিয়ার আযাব, বারযাখের আযাব এবং অন্যান্য আযাবও উদ্দেশ্য হতে পারে।
(৩) আল্লাহ তা‘আলা সূরা গাফেরের ৪৫-৪৬ নং আয়াতে বলেন,
﴿ فَوَقَاهُ اللَّهُ سَيِّئَاتِ مَا مَكَرُوا وَحَاقَ بِآلِ فِرْعَوْنَ سُوءُ الْعَذَابِالنَّارُ يُعْرَضُونَ عَلَيْهَا غُدُوًّا وَعَشِيًّا وَيَوْمَ تَقُومُ السَّاعَةُ أَدْخِلُوا آلَ فِرْعَوْنَ أَشَدَّ الْعَذَابِ﴾
‘‘অতঃপর আল্লাহ তাকে তাদের ষড়যন্ত্রের অনিষ্ট হতে রক্ষা করলেন এবং ফেরাউন সম্প্রদায়কে কঠিন শাস্তি ঘিরে ফেললো। দোযখের আগুনের সামনে তাদেরকে সকাল-সন্ধ্যায় পেশ করা হয়। কিয়ামত সংঘটিত হলে নিদের্শ দেয়া হবে, ফেরাউনের অনুসারীদেরকে কঠিন আযাবে নিক্ষেপ করো’’। এখানে উভয় জগতের আযাবের কথা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে অন্য কোনো কিছু বুঝার সুযোগ নেই। সুতরাং আয়াত দ্বারা কবরের আযাব সাব্যস্ত হয়েছে।
হাদীস থেকেঃ
প্রিয় পাঠক! আপনি যখন কবরের আযাব কিংবা নিয়ামত সংক্রান্ত হাদীছগুলো নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করবেন, তখন দেখবেন, এগুলো উক্ত বিষয়ে কুরআনের আয়াতগুলোর ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ স্বরূপ এসেছে। কবরের আযাব সম্পর্কিত হাদীছগুলো নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে মুতাওয়াতির হিসাবে বর্ণিত হয়েছে।
ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.) বলেন, কবরের আজাব ও সেখানকার সুখ সম্পর্কে হাদিসগুলো মুতাওয়াতির। আমার কাছে এ বিষয়ে ৫০-এর অধিক হাদিস রয়েছে।
নিম্নে আমরা কয়েকটি হাদীছ উল্লেখ করছি,
(১) সহীহ বুখারী ও মুসলিমে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে যে,
«أن النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم مَرَّ بِقبرين فَقال إنهما يُعَذَّبَانِ وَمَا يُعَذَّبَانِ فِي كَبِيرٍ أما أَحَدُهُمَا فكان لا يَسْتَبرئ مِنْ البَوْلِ، وَأما الآخَرُ فكان يَمْشِي بِالنَّمِيمَةِ». ثُمَّ دَعَا بِجَرِيدَةٍ فشقها ْنصفين فَوَضَعَ عَلَى كُلِّ قَبْرٍ مِنْهُمَا نصفين فقَالَ: لَعَلَّهُ أَنْ يُخَفَّفَ عَنْهُمَا مَا لَمْ يَيْبَسَا». (بخارى:216)
‘‘একদা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা অথবা মদীনার কোনো একটি বাগানের পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় দু’টি কবরের নিকট দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। তখন দু’জন মানুষের আওয়াজ শুনলেন। তাদেরকে কবরে শাস্তি দেয়া হচ্ছিল। তিনি বললেনঃ কবর দু’টির অধিবাসীদেরকে আযাব দেয়া হচ্ছে। আযাবের কারণ খুব বড় নয়। তাদের একজন নিজেকে পেশাব থেকে পবিত্র রাখত না। অন্য জন ছিল চোগলখোর। সে একজনের কথা অন্যজনের নিকট বলে বেড়াতো। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি খেজুরের ডাল আনতে বললেন। ডাল আনয়নের পর সেটাকে দু’ভাগে ভাগ করে প্রত্যেক কবরের উপর এক অংশ গেড়ে দিলেন। অতঃপর তিনি বললেন, হতে পারে ডালগুলো না শুকানো পর্যন্ত তাদের আযাব হালকা করা হবে’’।
(২) সহীহ মুসলিমে যায়েদ ইবনে ছাবেত রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, একদা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বনী নাজ্জার গোত্রের কোনো একটি বাগানে খচ্চরের উপর আরোহনরত ছিলেন। আমরা তার সাথেই ছিলাম। এমন সময় খচ্চরটি তাকে নিয়ে ছুটাছুটি শুরু করলো। তিনি পড়ে যাওয়ার উপক্রম হলেন। তখন সেখানে পাঁচ-ছয়টি বা চারটি কবর দেখা গেলো। তিনি বললেন, এসব কবরবাসীদের কে চিনে? তখন এক ব্যক্তি বললো, আমি তাদেরকে চিনি। তিনি বললেন, এরা কখন মারা গেছে? লোকটি বললো, জাহেলী যুগে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন,
«إِنَّ هَذِهِ الأُمَّةَ تُبْتَلَى فِى قُبُورِهَا فَلَوْلاَ أَنْ لاَ تَدَافَنُوا لَدَعَوْتُ اللَّهَ أَنْ يُسْمِعَكُمْ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ الَّذِى أَسْمَعُ مِنْهُ»
‘‘এ উম্মতকে কবরের ফিতনায় ফেলা হয়। কবরের আযাব শুনালে আমার যদি এ আশঙ্কা না হতো যে, তোমরা তোমাদের মৃতদেরকে দাফন করা বর্জন করবে, তাহলে আমি আল্লাহর কাছে দু‘আ করতাম, তিনি যেন কবরের আযাব থেকে তোমাদেরকেও কিছু শুনান, যা আমি শুনতে পাই’’।
(৩) সহীহ মুসলিম এবং সুনানগ্রন্থসমূহে আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন শেষ তাশাহুদ পাঠ করবে তখন যেন আল্লাহর কাছে চারটি বিষয় থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে। সে যেন বলে,
«اللَّهُمَّ إِنِّى أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جهنم و من عذاب الْقَبْرِ وفِتْنَةِ الْمَحْيَا وَ الْمَمَاتِ ومِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ»
‘‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি কবরের আযাব হতে, জাহান্নামের শাস্তি হতে, জীবণ ও মরণকালীন ফিতনা হতে এবং মসীহ দাজ্জালের ফিতনা হতে’’।
(৪) সহীহ বুখারী ও মুসলিমে আবু আইয়্যুব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর ঘর থেকে বের হলেন। এ সময় তিনি একটি শব্দ শুনে বললেন, একজন ইয়াহূদীকে তার কবরে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। আর এটি হচ্ছে সেই আযাবের শব্দ।
(৫) সহীহ বুখারী ও মুসলিমে আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা থেকে আরো বর্ণিত হয়েছে যে, একদা মদীনার ইয়াহূদীদের মধ্য থেকে একজন বৃদ্ধ মহিলা আমার ঘরে প্রবেশ করলো। মহিলাটি বললো, কবরবাসীদেরকে তাদের কবরে শাস্তি দেয়া হয়ে থাকে। আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বলেন, আমি তার কথাকে মিথ্যা মনে করলাম এবং তাকে মোটেই বিশ্বাস করতে পারলাম না। অতঃপর সে বের হয়ে যাওয়ার পর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি আমার কাছে প্রবেশ করলেন। আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ! মদীনার জনৈক ইয়াহূদী বৃদ্ধ মহিলা আমার কাছে প্রবেশ করে বললো যে, কবরবাসীদেরকে তাদের কবরে শাস্তি দেয়া হয়ে থাকে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন, সে সত্য বলেছে। কবরবাসীদেরকে কবরে এমন শাস্তি দেয়া হয়, যার আওয়াজ সমস্ত চতুষ্পদ জন্তুই শুনতে পায়। আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা বলেন, এরপর থেকে তাকে প্রত্যেক নামাযেই কবরের আযাব থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতে শুনেছি।
**তবে যারা কুরআন হাদীস মানবে না তাদের তো আর কুরআন হাদীস থেকে দলীলের মাধ্যমে বুঝানো যাবে না। তারা তো নাস্তিক বা আজ্ঞেয়বাদী।
আর নাস্তিক ও অবিশ্বাসীরাই কেবল কবরের আযাব ও সুখ-শান্তিকে অস্বীকার করেছে। তাদের কথা হলো, আমরা কবর খনন করলে তাতে ফেরেশতা দেখি না এবং মৃতদেরকে পিটাতেও দেখি না। সেখানে সাপ-বিচ্ছু দেখি না এবং আগুনও জ্বলতে দেখিনা। চোখের দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত কবর প্রশস্ত করে দেয়া কিংবা তা খুব সংকীর্ণ করে দেয়া হয় কিভাবে? অথচ আমরা কবরকে হুবহু আপন অবস্থায় পাই। কবর যে পরিমাণ খনন করা হয়, সে পরিমাণ প্রশস্ত হিসাবেই পাই। তাতে কোনো বৃদ্ধি কিংবা সংকীর্ণতা দেখিনা। সুতরাং কবর জান্নাতের বাগান কিংবা আগুনের গর্ত হয় কিভাবে!!
এর জবাব আমরা বিভিন্নভাবে দিতে পারি।
(১) বারযাখী জীবনের বিষয়গুলো গায়েবের অন্তর্ভুক্ত। নবী-রসূলগণ এ ব্যাপারে সংবাদ দিয়েছেন। তাদের ঐশী খবরগুলো আমাদের সসীম ও সীমাবদ্ধ বিবেক-বুদ্ধি দ্বারা যাচাই করাই মূর্খতা ও বোকামী । লিমিটেড যুক্তির আশ্রয় নেয়া এখানে অবান্তর। সুতরাং তাদের খবরসমূহ বিনাবাক্যব্যায়ে বিশ্বাস করা আবশ্যক।
(২) কবরের আগুন ও সবুজ-শ্যামল পরিবেশ দুনিয়ার আগুন ও সবুজ-শ্যামল সশ্যময় পরিবেশ এক রকম নয়। যাতে করে যে ব্যক্তি দুনিয়ার আগুন ও সতেজ-সবুজ পরিবেশ দেখেছে, সে কবরের আগুন কিংবা সবুজ-শ্যামল ও আনন্দময় পরিবেশ দেখতে পারে। সেটি আখিরাতের আগুন কিংবা শান্তিময় অবস্থা। সেটি দুনিয়ার আগুনের চেয়ে ভয়াবহ। দুনিয়াবাসীরা সেটার উত্তাপ পাবে না। আল্লাহ তা‘আলা কবরবাসীর উপরের মাটি-পাথর এবং তার নীচের মাটি-পাথর উত্তপ্ত করেন। তা দুনিয়ার আগুনের চেয়ে বেশি গরম হয়। যদিও যমীনবাসীরা যদি সে মাটি-পাথর স্পর্শ করে, তা অনুভব করে না। আল্লাহ তা‘আলার ক্ষমতা এর চেয়ে অধিক সুপ্রশস্ত ও বিস্ময়কর।
তবে আল্লাহ তা‘আলা যখন ইচ্ছা তার কতিপয় বান্দাকে কবরের আযাব বা সুখ-শান্তি দেখান এবং অন্যদের থেকে সেটা গায়েব রাখেন। তিনি যদি সমস্ত মানুষকে কবরের আযাব দেখাতেন, তাহলে শরী‘আতের আদেশ-নির্দেশ দেয়া এবং গায়েবের প্রতি ঈমান আনয়নের হিকমত ছুটে যেতো। লোকেরা মরা লাশ দাফনও করতো না। যেমন সহীহ বুখারী-মুসলিমের হাদীছে এসেছে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
فَلَوْلاَ أَنْ لاَ تَدَافَنُوا لَدَعَوْتُ اللَّهَ أَنْ يُسْمِعَكُمْ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ الَّذِى أَسْمَعُ مِنْهُ»
‘‘এ উম্মতকে কবরের ফিতনায় ফেলা হবে। আমার যদি এ আশঙ্কা না হতো যে কবরের আযাব শুনালে, তোমরা মৃতদেরকে দাফন করা বর্জন করবে, তাহলে আমি আল্লাহর কাছে দু‘আ করতাম, তিনি যেন কবরের আযাব থেকে তোমাদেরকেও কিছু শুনাতাম, যা আমি শুনতে পাই’’।
পশু-পাখিকে কবরের আযাব না শুনানোর মধ্যে কোনো হিকমত ছিলনা, তাই তারা কবরের আযাব শুনতে পায় এবং তা অনুভব করতে সক্ষম হয়। যেমন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন খচ্চরের উপর আরোহন করে এমন এক কিছু কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন, যেগুলোর অধিবাসীদেরকে শাস্তি দেয়া হচ্ছিল। খচ্চরের ছুটাছুটির কারণে তখন তিনি তার উপর থেকে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিলেন। কবরের আযাব দেখা ফেরেশতা ও জিন দেখার মতই। আল্লাহ তা‘আলা যাকে দেখাতে চান সে দেখতে পায়।
সুতরাং যারা আল্লাহ তা‘আলার সীমাহীন ক্ষমতা সম্পর্কে জ্ঞান রাখে ও তার স্বীকৃতি প্রদান করে তারা কিভাবে এমন ঘটনাসমূহ অস্বীকার করতে পারেন, যা তিনি ঘটান এবং বিশেষ হিকমত, বান্দাদের প্রতি দয়া ও তা দেখার ও শ্রবণ করতে সক্ষম নয় বলে তা থেকে তাদের দৃষ্টি ফিরিয়ে রাখেন? মূলত কবরের আযাব দেখতে বান্দার দৃষ্টি শক্তি দুর্বল এবং তার আযাব শোনাও তার শ্রবণ শক্তির ধারণ ক্ষমতার বাইরে।
আসলে কবরের প্রশস্ততা, সংকীর্ণতা, কবরের আলো, সবুজ-শ্যামল পরিবেশ কিংবা তার আগুন এ নশ্বর জগতের জ্ঞাত-পরিচিত জিনিস সমূহের মতো নয়। আল্লাহ তা‘আলা এ দুনিয়াতে কেবল এর মধ্যকার জিনিসগুলো দেখিয়েছেন। আর আখিরাতের বিষয়গুলোর উপর পর্দা ঝুলিয়ে রেখেছেন। যাতে না দেখে ও না শুনে তা বিশ্বাস করা ও স্বীকার করা তাদের সৌভাগ্যের উপকরণ হয়। তিনি যদি তার বান্দা থেকে গায়েবের পর্দা উন্মুক্ত করে দেন, তখন সেগুলো প্রত্যক্ষভাবে দেখা যাবে। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলার হিকমত যেহেতু এমনই ছিল যে, মানুষ তাকে না দেখেই তার প্রতি ঈমান আনয়ন করুক, কবরের আযাব ও আখিরাতের অন্যান্য বিষয় না দেখেই বিশ্বাস করুক এবং এর মাধ্যমে তারা তার প্রিয় বান্দা হিসেব পরিণত হোক ও দুনিয়া আখিরাতে সৌভাগ্যবান হোক, তাই হিকমতের দাবি হিসাবে তিনি গায়েবের বিষয়গুলো তাদের থেকে আড়াল করে রেখেছেন। গায়েবী বিষয়গুলো তাদের সামনে প্রকাশ করলে গায়েবের প্রতি ঈমান আনয়নের হিকমত ঠিক থাকতো না।
কবর ও আখিরাতের অন্যান্য গায়েবী বিষয়গুলোর উপর আল্লাহ তা‘আলা এমন পর্দা ঝুলিয়ে রেখেছেন যে, কোনো মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার আগেই তার জীবিত আত্মীয়-স্বজন ও অন্যান্য লোকদের সামনে নাকীর-মুনকার ফেরেশতাদ্বয় আগমন করে উপস্থিত লোকদের টের পাওয়া ছাড়াই জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে দেয়া মোটেই অসম্ভব নয়। মৃত ব্যক্তি ফেরেশতাদ্বয়ের প্রশ্নের জবাবে যা বলে উপস্থিত লোকদের তা শ্রবণ করারও কোনো পথ নেই। ফেরেশতারা মৃত ব্যক্তিকে মাটির উপরে থাকতেই মারপিট শুরু করলেও উপস্থিত লোকদের মারপিট দেখা ও তার ভয়ানক চিৎকারের আওয়াজ শ্রবণ করারও কোনো সুযোগ নেই।
আমাদের কেউ তার জাগ্রত সাথীর পাশে ঘুমিয়ে থাকে। তাকে ঘুমন্ত অবস্থায় স্বপ্নের মধ্যে মারপিট করা হয়, শাস্তি দেয়া হয়, সে কষ্ট পায়। তার পার্শ্বের জাগ্রত লোকেরা এ সম্পর্কে কোনো খবরই রাখে না।
ইমাম ইবনে তাইমীয়া রহঃ বলেন, কবরের আযাব এবং নাকীর-মুনকার সম্পর্কে অনেক হাদীছ রয়েছে। এগুলো নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে মুতাওয়াতির হিসেব বর্ণিত হয়েছে। বুখারী ও মুসলিম শরীফে ইবনে আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, একদা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দু’টি কবরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বললেন, এ দু’জনকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে, তবে বড় কোনো অপরাধের কারণে শাস্তি দেয়া হচ্ছে না। তাদের একজন চোগলখোরী করতো এবং অন্যজন পেশাব করার সময় নিজেকে মানুষ থেকে আড়াল করতো না। অতঃপর খেজুর গাছের একটি তাজা ডাল এনে দ্বিখন্ডিত করে প্রত্যেক কবরের উপর একটি করে গেড়ে দিলেন। লোকেরা বললো, ইয়া রসূলাল্লাহ! কেন এমনটি করলেন? তিনি বললেন, সম্ভবত ডাল দু’টি না শুকানো পর্যন্ত তাদের কবরের আযাব হালকা করা হবে’’।
সহীহ মুসলিম এবং সুনান গ্রন্থসমূহে আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন শেষ তাশাহুদ পাঠ করবে তখন সে যেন আল্লাহর কাছে চারটি বিষয় থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে। সে যেন বলে,
«اللَّهُمَّ إِنِّى أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جهنم و من عذاب الْقَبْرِ وفِتْنَةِ الْمَحْيَا وَ الْمَمَاتِ ومِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ»
‘‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি কবরের আযাব হতে, জাহান্নামের শাস্তি হতে, জীবণ ও মরন কালীন ফিতনা হতে এবং মসীহ দাজ্জালের ফিতনা হতে’’।
তিনি কবরের আযাব সংক্রান্ত বিষয়ে আরো হাদীছ বর্ণনা করার পর বলেন, যে ব্যক্তি কবরের আযাব ভোগ করার হকদার এবং যে তার সুখ-শান্তি উপভোগ করার যোগ্য, তার জন্য তা সাব্যস্ত হওয়া এবং কবরে নাকীর-মুনকার ফেরেশতাদ্বয়ের প্রশ্ন সাব্যস্ত হওয়ার অনেক মুতাওয়াতির হাদীছ রয়েছে। সুতরাং এটি বিশ্বাস করা আবশ্যক। তবে কবরের আযাব ও নিয়ামতপ্রাপ্ত হওয়ার ধরণ-পদ্ধতি সম্পর্কে আমরা কথা বলবো না। বিবেক-বুদ্ধি এটি উপলব্ধি করতে সক্ষম নয়। কারণ দুনিয়ার জীবনে বিবেক-বুদ্ধির এ বিষয়ে কোনো অভিজ্ঞতা নেই। আর শরী‘আত বিবেক-বুদ্ধি দ্বারা বোধগম্য নয়, এমন কোনো বিষয় নির্ধারণ করে না। তবে কখনো কখনো এমন বিষয় শরী‘আতভুক্ত করা হয়, যা মানুষের বিবেক-বুদ্ধিকে হয়রান করে ফেলে। কেননা মৃতদেহে রূহ ফিরে আসা দুনিয়ায় পরিচিত স্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়। বরং মৃতদেহে রূহ এমনভাবে ফেরত দেয়া হবে, যা দুনিয়ার মানুষের নিকট পরিচিত পদ্ধতির ব্যতিক্রম।
والله اعلم بالصواب
মন্তব্য (০)
কোনো মন্তব্য নেই।
এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর
৯২১১
৪ অক্টোবর, ২০২১
কিশোরগঞ্জ

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি
১১১৭৩
গল্প-উপন্যাস পড়া বা বিক্রি করার বিধান
১০ আগস্ট, ২০২৪
Nekmarad

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি
১১৮৭২
২৬ ডিসেম্বর, ২০২১
State of Tripura

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ফাতওয়া বিভাগ
সাম্প্রতিক প্রশ্নোত্তর
মাসায়েল-এর বিষয়াদি
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে