আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

প্রশ্নঃ ১২৬২৭. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আল মুল্‌ক - ৩,৪ আয়াতে এ বলা হয়েছে,যিনি উপর-নীচ স্তর বিশিষ্ট সাত আকাশ সৃষ্টি করেছেন। তুমি দয়াময় আল্লাহর সৃষ্টিতে কোন অসঙ্গতি পাবে না।ফের দৃষ্টিপাত করে দেখ, কোন ফাটল দেখতে পাও কি?অতঃপর বারবার দৃষ্টিপাত কর। দৃষ্টি ক্লান্ত ও ব্যর্থ হয়ে তােমার দিকে ফিরে আসবে।তাহলে লোকেরা নিকাহ করার সময় ফর্সা মেয়ে খুজে কেন?কেন বেশিরভাগ লোকেরা কালো মেয়েদের নিকাহ করতে চায় না।কালো মেয়েরাও তো আল্লাহর তৈরি।এই বিষয়টিকে কি আমরা আল্লাহর সৃষ্টির অসংগতি বলতে পারি না?,

৯ জানুয়ারী, ২০২২

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সড়ক

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم





মানুষের বর্ণ ও ভাষার বৈচিত্র আল্লাহর সৃষ্টির চমত্কার নৈপুণ্য। এতে নয় বৈপরীত্য।

وَمِنَ النَّاسِ وَالدَّوَآبِّ وَالۡاَنۡعَامِ مُخۡتَلِفٌ اَلۡوَانُہٗ کَذٰلِکَ ؕ اِنَّمَا یَخۡشَی اللّٰہَ مِنۡ عِبَادِہِ الۡعُلَمٰٓؤُا ؕ اِنَّ اللّٰہَ عَزِیۡزٌ غَفُوۡرٌ

অর্থঃ
অনুরূপ ভাবে বিভিন্ন বর্ণের মানুষ, জন্তু, চতুস্পদ প্রাণী রয়েছে। আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে জ্ঞানীরাই কেবল তাঁকে ভয় করে। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী ক্ষমাময়।
—ফাতির, আয়াতঃ ২৮

তাফসীর (মুফতী তাকী উসমানী):
৮. অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার মাহাত্ম ও গৌরব সম্পর্কে যাদের জ্ঞান ও উপলব্ধি আছে কেবল তারাই বিশ্ব-জগতের এসব আশ্চর্যজনক সৃষ্টি দেখে এর দ্বারা তাঁর অপার শক্তি ও তার তাওহীদের সপক্ষে প্রমাণ পেশ করে এবং এর ফলশ্রুতিতে তাদের অন্তরে আল্লাহর ভয় জাগ্রত হয় এবং তারা তাঁর প্রতি বিনয়-বিগলিত হয়। আর যাদের সেই জ্ঞান ও উপলব্ধি নেই তারা সৃষ্টিজগতের এসব বিস্ময়কর বস্তুরাজির গভীরে পৌছা সত্ত্বেও আল্লাহ তাআলার অস্তিত্ব ও তার তাওহীদ পর্যন্ত পৌঁছতে পারে না।

ব্যাখ্যাঃ
অর্থাৎ কেবল উদ্ভিদ ও নির্জীব পদার্থ সমূহেই এ বিচিত্র লীলা শেষ নয়; বরং জীব-জন্তু সমূহেরও এই বিচিত্র শোভা বিদ্যমান আছে । স্বয়ং মানুষের প্রতি লক্ষ্য কর- একই মাতা-পিতা হতে একই অঞ্চলে জন্মিয়ে একই আবহাওয়ায় প্রতিপালিত হয়ে ও ভিন্ন প্রকৃতির ও ভিন্ন রং এর হয়- কেউ কাল, কেউ বা ফর্সা । যমীনে বিচরণকারী কীট-পতঙ্গ, সাপ-বিচ্ছু ইত্যাদি দেখ একই বিভাগের প্রাণী অথচ বিভিন্ন রং ও আকৃতির । চতুস্পদ জন্তুসমূহও এক জাতীয় পশু হওয়া এই সমস্ত বিষয়ে চিন্তা করে তাদের নিকট সুদৃঢ় বিশ্বাস জন্মিয়ে যায় যে, এই সমস্ত আবর্তন-বিবর্তন একমাত্র সেই সর্বাধিনায়ক মহা শক্তি ধর আল্লাহর কর্তৃত্বেই হচ্ছে । আল্লাহ্‌র এরূপ কুদরতের প্রতি চিন্তাশীল লোকেরা তাঁর শক্তির সামনে সর্বদা ভীত থাকে ।

আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সর্বোচ্চ সৌন্দর্য দিয়ে সৃষ্টি করেছেন।

لَقَدۡ خَلَقۡنَا الۡاِنۡسَانَ فِیۡۤ اَحۡسَنِ تَقۡوِیۡمٍ ۫

অর্থঃ
আমি সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতর অবয়বে।
—আত ত্বীন, আয়াতঃ ৪

তাফসীরে মাআ'রিফুল কুরআনঃ
শপথের পর বলা হয়েছে : تَقْوِيمٍ — لَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنسَانَ فِي أَحْسَنِ تَقْوِيمٍ-এর শাব্দিক অর্থ কোন কিছুর অবয়ব ও ভিত্তিকে ঠিক করা।
أَحْسَنِ تَقْوِيمٍ-এর উদ্দেশ্য এই যে, তার মজ্জা ও স্বভাবকেও অন্যান্য সৃষ্ট জীবের তুলনায় উত্তম করা হয়েছে এবং তার দৈহিক অবয়ব এবং আকার-আকৃতিকেও দুনিয়ার সব প্রাণী অপেক্ষা সুন্দরতম করা হয়েছে।
সমস্ত সৃষ্ট বস্তুর মধ্যে মানুষ সর্বাধিক সুন্দর। মানুষকে আল্লাহ্ তা'আলা সমস্ত সৃষ্ট বস্তুর মধ্যে সর্বাধিক সুন্দর করেছেন। ইবনে আরাবী বলেন : আল্লাহর সৃষ্ট বস্তুর মধ্যে মানুষ অপেক্ষা সুন্দর কেউ নেই। কেননা, আল্লাহ্ তা'আলা তাকে জ্ঞানী, শক্তিমান, বক্তা, শ্রোতা, দ্রষ্টা, কুশলী এবং প্রজ্ঞাবান করেছেন। এগুলো প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ্ তা'আলার গুণাবলী। সেমতে বুখারী ও মুসলিমের হাদীসে আছে ঃ ان الله خلق آدم على صورته অর্থাৎ আল্লাহ্ তা'আলা আদম (আ)-কে নিজের আকারে সৃষ্টি করেছেন। এর অর্থ এটাই হতে পারে যে, আল্লাহ্ তা'আলার কতিপয় গুণাবলী কোন কোন পর্যায়ে তাকেও দেওয়া হয়েছে। নতুবা আল্লাহ্ তা'আলার কোন আকার নেই।—(কুরতুবী)

মানব সৌন্দর্যের একটি অভাবনীয় ঘটনা : কুরতুবী এস্থলে বর্ণনা করেন, ঈসা ইবনে মুসা হাশেমী খলীফা আবূ জা'ফর মনসূরের একজন বিশেষ সভাসদ ছিলেন। তিনি স্ত্রীকে অত্যধিক ভালবাসতেন। একদিন জ্যোৎস্না রাত্রিতে স্ত্রীর সাথে বসে হাসি তামাশার ছলে বলে ফেললেনঃ أنت طالق ثلاثا ان لم تكوني أحسن من القمر অর্থাৎ তুমি তিন তালাক, যদি তুমি চাঁদ অপেক্ষা অধিক সুন্দরী না হও। একথা বলতেই স্ত্রী উঠে পর্দায় চলে গেল এবং বললঃ আপনি আমাকে তালাক দিয়েছেন। ব্যাপারটি যদিও হাসি তামাশার ছিল কিন্তু বিধান এই যে, পরিষ্কার তালাক শব্দ হাসি তামাশার ছলে উচ্চারণ করলেও তালাক হয়ে যায়। ঈসা ইবনে মূসা চরম অস্থিরতার মধ্যে রাত্রি অতিবাহিত করলেন। প্রত্যূষে খলীফা আবু জাফর মনসূরের কাছে উপস্থিত হয়ে তাকে সমস্ত বৃত্তান্ত জানালেন। খলীফা শহরের ফতওয়াবিদ আলিমগণকে ডেকে মাস'আলা জিজ্ঞেস করলেন। সবাই এক উত্তর দিলেন যে, তালাক হয়ে গেছে। কেননা, তাদের মতে চন্দ্র অপেক্ষা সুন্দর হওয়া কোন মানুষের পক্ষে সম্ভবপরই নয়। কিন্তু ইমাম আবু হানীফার জনৈক শিষ্য আলিম চুপচাপ বসে ছিলেন। খলীফা জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি নিশ্চুপ কেন? তখন তিনি বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম পাঠ করে আলোচ্য সূরা তীন তিলাওয়াত করলেন এবং বললেনঃ আমিরুল মু'মিনীন, আল্লাহ্ তা'আলা বলেছেন যে, মানুষ মাত্রেরই অবয়ব সুন্দরতম। কোন কিছুই মানুষ অপেক্ষা সুন্দর নয়। একথা শুনে উপস্থিত আলিমগণ বিস্ময়াভিভূত হয়ে গেলেন এবং কেউ বিরোধিতা করলেন না। সেমতে খলীফা তালাক হয়নি বলে রায় দিয়ে দিলেন।
এ থেকে জানা গেল যে, আল্লাহ্ তা'আলার সমগ্র সৃষ্টির মধ্যে মানুষ সর্বাধিক সুন্দর— রূপ ও সৌন্দর্যের দিক দিয়েও এবং শারীরিক গড়নের দিক দিয়েও। তাঁর মস্তকে কেমন অঙ্গ কি কি আশ্চর্যজনক কাজ করছে—মনে হয় যেন একটি ফ্যাক্টরী, যাতে নাযুক, সূক্ষ্ম ও সয়ংক্রিয় মেশিন চালু রয়েছে। তার বক্ষ ও পেটের অবস্থাও তদ্রুপ। তার হস্তপদের গঠন ও আকার হাজারো উপযোগিতার উপর ভিত্তিশীল। এ কারণেই দার্শনিকগণ বলেন : মানুষ একটি ক্ষুদ্র জগৎ অর্থাৎ সমগ্র জগতের একটি মডেল। সমগ্র জগতে যেসব বস্তু ছড়িয়ে আছে, তা সবই মানুষের মধ্যে সমবেত আছে।—(কুরতুবী)
সূফী বুযুর্গগণও এ বিষয়ের সমর্থন করেছেন এবং কেউ কেউ মানুষের আপাদমস্তক বিশ্লেষণ করে তাতে জগতের সব বস্তুর নমুনা দেখিয়েছেন।

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ ইসহাক মাহমুদ
মুফতী ও মুহাদ্দিস, জামিআ মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়া, মোহাম্মদপুর

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৯২১১

আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, সুন্নী এবং ওহাবী এই বিভাজনটি কিভাবে শুরু হলো সঠিক ইতিহাস টি জানতে চাই

৪ অক্টোবর, ২০২১

কিশোরগঞ্জ

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

১২৪৫৪

জুমার আজান দুইটি কেন?


১০ জুলাই, ২০২৪

Kolkata

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy