আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

প্রশ্নঃ ৮২৬৭. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, রবিউল আউয়াল মাসের বর্জনীয় আমল কি ?,

২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

গৌরনদী

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


السلام عليكم ورحمة الله وبركاته



রবিউল আউয়াল মাসের বর্জনীয় আমলঃ

দুটি ভিত্তিহীন বর্ণনা
এক. যে ব্যক্তি মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপলক্ষ্যে এক দিরহাম খরচ করবে সে জান্নাতে আমার (আবু বকরের) সঙ্গী হবে
দুই. যে ব্যক্তি মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনাকে সম্মান করবে, সে ঈমানের সাথে মৃত্যুবরণ করবে।

প্রতি বছর রবিউল আউয়াল মাস এলে আমাদের দেশের একটি বিদআতী ফেরকার পক্ষ থেকে কিছু জাল বর্ণনা প্রচার করা হয়। সেসব জাল বর্ণনার মধ্য থেকে তাদের প্রচারিত দুটি প্রসিদ্ধ বর্ণনা আরবী পাঠ, লিপি ও হরকতের ভুলসহ নি¤েœ পেশ করা হল-

এক. “সর্বশ্রেষ্ঠ সাহাবী ও ইসলামের প্রথম খলীফা হযরত আবু বকর সিদ্দীক আলাইহিস সালাম বলেন-

من انفق درهما على قراةَ مولد النبيُ صلي الله عليه وسلم كان رفيقي فى الجنة.

অর্থাৎ- যে ব্যক্তি মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপলক্ষ্যে এক দিরহাম খরচ করবে সে জান্নাতে আমার সঙ্গী হবে।”

দুই. “চতুর্থ খলীফা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়জহাহু আলাইহিস সালাম বলেন-

من عظَّم مولدِ النبى صلى الله عليه وسلم، وكان سَببَا لقراته، لا يخرج من الدنيا إلا بالايمان، ويدخل الجنة بغير حساب.

অর্থাৎ- যে ব্যক্তি মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনাকে সম্মান করবে, সে ঈমানের সাথে মৃত্যুবরণ করবে এবং বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে।”

এগুলো একেবারেই ভিত্তিহীন বর্ণনা। যাদের নামে এগুলো জাল করা হয়েছে তাদের সঙ্গে এগুলোর কোনো সম্পর্ক নেই।

আশ্চর্যের বিষয় হল, এগুলোর সমর্থনে তারা ইবনে হাজার মাক্কী রাহ.-এর ‘আননি‘মাতুল কুবরা আলাল আলাম’-এর উদ্ধৃতি দিয়েছে। অথচ তাতে এগুলোর চিহ্নমাত্র নেই। এই কিতাবটির মাখতূতাহ (পা-ুলিপি) দারুল কুতুবিল মিছরিয়্যাহ কায়রোতে (ইতিহাস ২৫০৮/১৯২১) সংরক্ষিত রয়েছে এবং আমাদের কাছে এর ফটোকপি রয়েছে। আমরা তা অদ্যোপান্ত দেখেছি। তাতে এসব বর্ণনা নেই।

ইবনে হাজার মাক্কী রাহ.-এর মূল কিতাবটি এখন ছাপা আকারেও পাওয়া যায়। প্রকাশক : দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ, বাইরুত, লেবানান।

আসল বিষয় হল, তারা মানুষকে ধোঁকা দেওয়ার জন্য একটি নকল ‘আননি‘মাতুল কুবরা’র হাওয়ালা দেয়, যা ইস্তাম্বুলের ফাতিহ অঞ্চলের-

مكتبة ايشيق شارع دار الشفقة

থেকে ছাপা হয়েছে। এটি তুরস্কের কট্টর বিদআতপন্থীদের প্রকাশনা مكتبة الحقيقة -এর সমগোত্রীয় একটি প্রকাশনা, যারা প্রচলিত বিভিন্ন শিরক-বিদআতের সমর্থনে কিতাবপত্র প্রকাশ করে। এমনকি কখনো কখনো কোনো বিদআতপন্থী লেখকের বাজে কিতাব হাজির করে কিতাবের বা লেখকের নাম পরিবর্তন করে পূর্ববর্তী কোনো সর্বজনস্বীকৃত আলেমের নামে চালিয়ে দেয়। এখানেও এমনটিই ঘটেছে। ইবনে হাজার মাক্কী রাহ.-এর নাম ও তাঁর কিতাব ‘আননি‘মাতুল কুবরা’র নাম এমন একটি কিতাবের উপর লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে, যা কোনো বে-দ্বীন ও নির্বোধ বিদআতীর রচনা; যার কি না কিছুটা বুদ্ধি খরচ করে জাল বর্ণনা তৈরি করারও যোগ্যতা নেই।

বর্ণনাদুটির আরবী দেখেই বিজ্ঞজন বুঝতে পারবেন যে, এটি অত্যন্ত কাঁচা হাতে গড়া একটি জাল কথা; যার জালকারী আরবী ভাষাও ভালো করে জানে না। [সাথে সাথে এ দেশে এগুলো যারা প্রচার করছে, তারাও এর আরবী লিপি ঠিকমত লেখার যোগ্যতা রাখে না এবং ই‘রাব লাগানোর ক্ষেত্রে তাদের ভুল তো নযীরবিহীন; যা পাঠক দেখেছেন।]

আর যার নামে এবং যে কিতাবের উদ্ধৃতিতে এমন বানোয়াট কথা প্রচার করা হচ্ছে, সে কিতাবেই তিনি মীলাদকে ইসলামের প্রথম তিন শতাব্দীর অনেক পরের উদ্ভাবিত বিদআত বলেছেন এবং মীলাদের তথাকথিত বর্ণনাগুলো খ-ন করে বলেছেন যে, মানুষকে এগুলো থেকে দূরে রাখা ওয়াজিব। [দ্র. আননি‘মাতুল কুবরা আলাল আলাম, ইবনে হাজার মাক্কী, ওয়ারাকা ২-৩ (পা-ুলিপি)]

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এসব জাল বর্ণনা ও তার অনিষ্ট থেকে হেফাজত করুন।

৩- রবিউল আউয়ালে বিশেষ নামায এবং দরূদ পাঠের ফযীলত

বাজারে প্রচলিত বার চান্দের ফযীলত নামের কিছু পুস্তিকায় রবিউল আউয়াল মাসের আমল শিরোনামের অধীনে লেখা হয়েছে-

এক. “যে ব্যক্তি রবীউল আউয়াল মাসের চাঁদ দেখে সে রাতে দুই দুই রকাত করে ১৬ রাকাত নামায আদায় করে। প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহার পর তিনবার সূরা ইখলাস পাঠ করবে। আর নামায শেষ করে নি¤েœাক্ত দরূদ শরীফ ১০০০ বার পাঠ করবে। এরূপ একাধারে ১২ দিন পর্যন্ত পাঠ করলে ১২ দিন যেতে না যেতেই সে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে স্বপ্নযোগে দেখতে পাবে। দরূদ শরীফটি হল...।”

দুই. “যে ব্যক্তি এ মাসের প্রথম দিন হতে শুরু করে মাসের শেষ দিন পর্যন্ত প্রত্যহ এশার নামাযের পর নি¤েœাক্ত দরূদ...। ...সে ব্যক্তি প্রচুর পরিমাণে ধন-সম্পদের মালিক হবে এবং তার সংসারে সুখ-শান্তি বিরাজ করবে...।”

তিন. “যে ব্যক্তি ১২ই রবিউল আউয়াল তারিখে বেশি পরিমাণে নফল নামায, কোরআন তেলাওয়াত, যিকির... তার গুনাহ মাফ করে সম্মান বৃদ্ধি করে দেবেন...। ”

চার. “ যে ব্যক্তি এই দরূদ শরীফ সোয়া লক্ষ বার রবিউল আউয়াল মাসের মধ্যে পড়িবে সে...। ”

পাঁচ. “১২ রবিউল আউয়ালে তাবে তাবেয়ীগণ হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পবিত্র রূহের প্রতি হাদিয়া স্বরূপ ২০ রাকাত নফল নামায পড়িতেন। প্রত্যেক রাকাতে...।”

এভাবে বিভিন্ন পুস্তকে রবিউল আউয়াল মাসের আমল হিসাবে বিভিন্ন ধরনের মনগড়া পদ্ধতির নামায ও দরূদ শরীফের আমল এবং তার মনগড়া ফযীলত লেখা হয়েছে। এগুলো সবই বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।

সাখাবী রাহ. দরূদ শরীফ বিষয়ক তার কিতাব ‘আলকাওলুল বাদী’-এ সপ্তাহের বিভিন্ন দিনে বা নির্দিষ্ট মাসে বিশেষ ধরনের নামাযের সাথে সাথে দরূদ পাঠের ফযীলত বিষয়ক কিছু জাল বর্ণনা উল্লেখ করার পর বলেন-

ولم أورد هذه وشبهه إلا للتنبيه على وهائه.

এ বর্ণনাটি এবং এজাতীয় অন্যান্য যে (ভিত্তিহীন) বর্ণনা আমি এখানে উল্লেখ করেছি; তা কেবল এগুলোর অসারতা ও ভিত্তিহীন হওয়ার বিষয়ে সতর্ক করার উদ্দেশ্যেই। -আলকাওলুল বাদী‘, পৃ. ২৯৮

আর আমাদের আলোচ্য বর্ণনাগুলো এমন ধরনের বানোয়াট কথা যে, জাল বর্ণনা বিষয়ক কিতাবাদিতেও তা পাওয়া যায় না। জাল বর্ণনা বিষয়ক বেশ কিছু কিতাব ঘেঁটেও রবিউল আউয়াল মাস কেন্দ্রিক বিশেষ কোনো নামাযের জাল বর্ণনাও পাওয়া যায়নি। পূর্ববর্তী হাদীস জালকারীরা বছরের অন্যান্য মাস বা দিনের আমল সম্পর্কে হাদীস জাল করেছে, কিন্তু রবিউল আউয়াল মাস বিষয়ে কোনো জাল বর্ণনা পাওয়া যায়নি। কারণ, রবিউল আউয়াল মাস-মুহাররম, রমযান, যিলহজ্ব ইত্যাদি মাসের মত বিশেষ আমলের মাস নয়। আল্লাহই ভালো জানেন, বার চান্দের আমল শিরোনামের পুস্তিকাওয়ালারা এসকল কথা কোথা থেকে পেল; যা তারা ‘কিতাবে উল্লেখ আছে’ বা ‘কিতাবে বর্ণিত আছে’ ইত্যাদি বলে পেশ করেছে।

আর দরূদ শরীফ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত ও বহুত বড় নেক আমল। আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারীমে মুমিনদের দরূদ পাঠের নির্দেশ দিয়েছেন। এর সবচে বড় ফযীলত হল, দরূদ পাঠকারীর উপর আল্লাহ তাআলা রহমত নাযিল করেন। কেবল রহমতই নাযিল করেন না; একবার দরূদ পাঠ করার কারণে দশবার রহমত নাযিল করেন। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

مَنْ صَلَّى عَلَيَّ وَاحِدَةً صَلَّى الله عَلَيْهِ عَشْرًا.

যে আমার প্রতি একবার দরূদ পাঠ করে আল্লাহ তার প্রতি দশবার রহমত বর্ষণ করেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৪০৮

এছাড়াও দরূদ পাঠের মাধ্যমে গুনাহ মাফ হয় এবং মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

مَنْ صَلَّى عَلَيَّ مِنْ أُمَّتِي صَلَاةً مُخْلِصًا مِنْ قَلْبِهِ، صَلَّى الله عَلَيْهِ بِهَا عَشْرَ صَلَوَاتٍ، وَرَفَعَهُ بِهَا عَشْرَ دَرَجَاتٍ، وَكَتَبَ لَهُ بِهَا عَشْرَ حَسَنَاتٍ، وَمَحَا عَنْهُ عَشْرَ سَيِّئَاتٍ.

যে ব্যক্তি আমার প্রতি অন্তর থেকে একবার দরূদ পেশ করবে আল্লাহ তাআলা এর বিনিময়ে তার উপর দশবার রহমত বর্ষণ করবেন। তার মর্তবা দশ স্তর পর্যন্ত উন্নীত করবেন। তাকে দশটি নেকী দান করবেন এবং তার দশটি গুনাহ মাফ করে দেবেন। -সুনানে কুবরা, নাসায়ী, হাদীস ৯৮৯২, ৯৮৯৩; সুনানে নাসায়ী, হাদীস ১২৯৭; আমালুল ইয়াউমি ওয়াল লাইলাহ, নাসায়ী, হাদীস ৩৬২

তেমনি বেশি বেশি দরূদ পাঠের মাধ্যমে নবীজীর নৈকট্য লাভ হয়, ফিরিশতাদের দুআ লাভ হয়। চিন্তা-পেরেশানী দূর হয়। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

أَوْلَى النَّاسِ بِي يَوْمَ القِيَامَةِ أَكْثَرُهُمْ عَلَيَّ صَلاَةً.

কিয়ামতের দিন আমার নৈকট্য লাভ করবে ঐ ব্যক্তি, যে আমার প্রতি অধিক পরিমাণে দরূদ পাঠ করে। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৪৮৪

আমের ইবনে রবীআ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

مَا صَلّى عَلَيّ أَحَدٌ صَلَاةً، إِلّا صَلّتْ عَلَيْهِ الْمَلَائِكَةُ مَا دَامَ يُصَلِّي عَلَيّ، فَلْيُقِلّ عَبْدٌ مِنْ ذَلِكَ أَوْ لِيُكْثِرْ.

কোনো ব্যক্তি যতক্ষণ আমার উপর দরূদ পাঠ করতে থাকে ফিরিশতারা তার জন্য দুআ-ইসতিগফার করতে থাকে। এখন ব্যক্তির ইচ্ছা, চাইলে আমার উপর অধিক পরিমাণে দরূদ পাঠ করুক অথবা কম। (যে পরিমাণে দরূদ পাঠ করবে সে হিসাবেই ফিরিশতাদের দুআ-ইসতিগফার লাভ করবে।) -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৫৬৮৯; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ৯০৭; আলমুনতাখাব মিন মুসনাদি আবদ ইবনু হুমাইদ, হাদীস ৩১৭

উবাই ইবনে কা‘ব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ...আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আপনার প্রতি বেশি বেশি দরূদ পড়ে থাকি।... (একপর্যায়ে) নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-

إِذًا تُكْفَى هَمَّكَ، وَيُغْفَرُ لَكَ ذَنْبُكَ.

তাহলে তো তোমার (দুনিয়া-আখিরাতের) সকল প্রয়োজন পুরা হবে, সকল পেরেশানী দূর হবে এবং তোমার গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। -জামে তিরমিযী, হাদীস ২৪৫৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২১২৪২

আর নির্দিষ্ট দিনে দরূদ পড়ার বিষয়ে সহীহ হাদীসে যা পাওয়া যায় তা হল, জুমার দিন বেশি বেশি দরূদ পাঠ করা। হযরত আউস ইবনে আউস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

إنَّ مِنْ أفضل أيامِكُم يومَ الجُمعة... فأكثروا عَلَيَّ مِن الصَّلاةِ فيه، فإنَّ صَلاتَكم مَعرُوضَةٌ عَلَيَّ...

নিশ্চয়ই জুমার দিন শ্রেষ্ঠতম দিনগুলোর অন্যতম। ...সুতরাং সেদিন তোমরা আমার উপর বেশি বেশি দরূদ পড়। নিশ্চয় তোমাদের দরূদ আমার কাছে পেশ করা হয়। ... -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১০৪৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৬১৬২; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৯১০

অন্য হাদীসে হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

أَكْثِرُوا الصَّلَاةَ عَلَيَّ يَوْمَ الْجُمُعَةِ وَلَيْلَةَ الْجُمُعَةِ؛ فَمَنْ صَلَّى عَلَيَّ صَلَاةً صَلَّى الله عَلَيْهِ عَشْرًا.

তোমরা জুমার রাত ও জুমার দিনে আমার উপর বেশি বেশি দরূদ পাঠ কর। যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ পাঠ করে আল্লাহ তাআলা তার উপর দশবার রহমত নাযিল করেন। -সুনানে কুবরা, বায়হাকী (৩/২৪৯), হাদীস ৫৯৯৪;; ফাযাইলুল আওকাত, বায়হাকী, হাদীস ২৭৭; আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ, ইবনুস সুন্নী, হাদীস ৩৭৯

দরূদ পাঠের ফযীলত বিষয়ক এরকম আরো অনেক সহীহ হাদীস রয়েছে। এসকল সহীহ বর্ণনা এবং সেগুলোতে দরূদের এত বড় বড় ফযীলত বর্ণিত হওয়া সত্ত্বেও একশ্রেণির মানুষ নিজে থেকে আরো বিভিন্ন ফযীলত আবিষ্কার করেছে। আল্লাহ তাদের মাফ করুন এবং আমাদেরকে সহীহটা জেনে আমল করার তাওফীক দান করুন। নবীজীর উপর বেশি বেশি দরূদ পাঠ এবং তাঁর সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার মাধ্যমে তাঁর শাফাআত লাভে ধন্য করুন- আমীন।

৪- ঈদে মীলাদুন্নবী উদযাপনঃ মুসলমানদের নয় খৃষ্টানদের কালচার
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

মীলাদ মানে কি?

মীলাদ শব্দটি আরবী। যার অর্থ হল জন্ম। সুতরাং মীলাদুন্নবী মানে হল নবীর জন্ম।

একজন সাধারণ মুসলমানও বুঝবেন জন্মদিন উদযাপনের কোন বিষয় নয়। এটি কেবলি আলোচনার বিষয় হতে পারে। এটি পালনীয় বিষয় হলে রাসূল সাঃ নিজেই তা পালন করে দেখাতেন। সাহাবাগণ যারা সবচে’ বেশি আশেকে রাসূল ছিলেন। নবীজী সাঃ এর প্রতি মুহাব্বাতের চূড়ান্ত পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করে যারা অকাতরে জীবন বিলিয়েছেন। সন্তান এতিম করেছেন। স্ত্রী বিধবা করেছেন। পরিবার, সমাজ, অর্থ, বিত্তবৈভব সবই বিসর্জন করেছেন নবীজী সাঃ এর মোহাব্বতে। কিন্তু সেসব সাহাবাগণ কেন নবীজী সাঃ এর জন্মদিন পালন করেননি? কেন, আবু বকর রাঃ, ওমর রাঃ, উসমান রাঃ ও হযরত আলী রাঃ এরম ত খুলাফায়ে রাশেদীনের জমানায় এ ঈদ উদযাপিত হয়নি?

এসব কি প্রমাণ করে? এটি উদযাপনের বিষয়? যদি এটি সওয়াবের বিষয় হতো, তাহলে সাহাবায়ে কেরামগণ কেন এটি পালন করেননি? কেন তাবেয়ীগণ পালন করেননি? কেন তাবে তাবেয়ীগণ পালন করেননি?

কেন এ ঈদের কথা কুরআন, হাদীস এবং ফিক্বহের কিতাবে লিখা হয়নি?

যা পরিস্কার প্রমাণ করে এটি একটি পরিস্কার বিদআত।

খৃষ্টানদের থেকে ধার করা এ কথিত ঈদ

খৃষ্টানরা তাদের নবীর জন্মদিন পালন করে থাকে। কিন্তু তাদের নবীর সীরাত আমলে নেয় না। অর্থাৎ তারা মীলাদুন্নবীর প্রবক্তা। কিন্তু তাদের নবীর সীরাতুন্নবীর প্রবক্তা নয়। কারণ সীরাত হল নবীর আদর্শ মেনে চলা। নবীর বাতানো পথে নিজেকে সঁপে দেয়া। যদি খৃষ্টানরা তাদের নবীর সেই সীরাতকে মেনে নিত, তাহলে তারা আর খৃষ্টান থাকতে পারতো না, হয়ে যেতো মুসলমান হয়ে। আর মদ, জুয়া, যিনা ইত্যাদিতে মত্ত থাকতে পারতো না। হয়ে যেতে খাটি মুসলমান।

খেয়াল খুশির জীবন পরিহার করে খাটি মুসলমান হবার ভয়ে ওরা তাদের নবীর সীরাত বাদ দিয়ে পালন করে মীলাদ তথা নবীর জন্ম দিবস।

ঠিক একই পদ্ধতিতে কতিপয় নামধারী মুসলমান নবীর সীরাত পালন না করে খৃষ্টানদের মত মীলাদুন্নবী পালনে মত্ত। যাদের না চেহারায় আছে নবীর সুন্নত, না পোশাকে নবীর সুন্নত, না আখলাকে নবীর সুন্নত। কিন্তু সেজে বসেছে বিশাল আশেকে রাসূল।

আমাদের নবীজী সাঃ ২৩ বছর নবুওয়তী জিন্দিগীতে যেসব বিষয়ের জন্য মার খেলেন, রক্তাক্ত হলেন, সেই সীরাত রেখে একটি অযথা ও বিদআতি কর্ম মীলাদুন্নবী পালন করা খৃষ্টানদের বড়দিন পালনের মত ধোঁকাবাজী ছাড়া আর কিছু নয়।

মীলাদুন্নবী অস্বিকারকারী কেউ নয় কিন্তু সীরাতুন্নবী অস্বিকারকারীর অভাব নেই!

মীলাদুন্নবী মানে হল, নবীর জন্ম। নবীর জন্ম কেউ অস্বিকার করে না। আরবের মুশরিকরাও নবীর মীলাদকে অস্বিকার করেনি। অস্বিকার করে না কোন কাফির, মুশরিক বা নাস্তিকও। কিন্তু তারা কেউ নবীজী সাঃ এর সীরাতকে মানে না।

তাই মীলাদুন্নবীর মাঝে কোন ফযীলতের বিষয় নেই। ফযীলতের বিষয় হল সীরাতুন্নবী পালনে।

মীলাদুন্নবীতে খুশি সবাইঃ আরবের মুশরিকরাও খুশি ছিল!

রাসূল সাঃ এর জন্মে যেমন পৃথিবীর সকল মুমিন খুশি। খুশি পৃথিবীর সকল সৃষ্টিজীবও। তেমনি খুশি ছিল আবু লাহাবও। খুশি ছিল আবু তালেবও। কিন্তু নবীর জন্মের এ খুুশি তাদের জন্নাতে নিয়ে যেতে পারেনি। যেহেতু তারা নবীজী সাঃ এর সীরাতকে নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করেনি।

তাই নবীর জন্মে খুশি হওয়া মানেই জান্নাতে যাবার মাধ্যম মনে করা আহমকী ছাড়া কিছু নয়। যতক্ষণ না নবীজী সাঃ এর সীরাত তথা আনীত জীবন বিধান নিজের জীবনে বাস্তবয়ান করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এ ঈদে মীলাদুন্নবী ব্যর্থতায় পর্যবশিত হবে।

তাই মীলাদ নিয়ে মাতামাতি নয়, নবীজী সাঃ এর সীরাত নিজের জীবনে আঁকড়ে ধরতে হবে।

আমাদের প্রিয় নবীজী সাঃ এর মৃত্যু দিবসে এ কোন ইবলীসী আনন্দে মেতে উঠে কথিত আশেকে রাসূলরা?

অধিকাংশ ঐতিহাসিক এবং সীরাত বিশেষজ্ঞগণ একথার উপর একমত যে, ১২ ই রবিউল আউয়াল তারিখে রাসূল সাঃ এ দুনিয়া থেকে আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে যান।

যেসব ঐতিহাসিক এবং সীরাত গবেষকগণ এমত পোষণ করেন, তাদের কয়েকজনের নাম নিচে উদ্ধৃত করা হল-

১- ইবনে সাদ হযরত আয়শা রাঃ এবং হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ থেকে নকল করেছেন যে, রাসূল সাঃ ১২ ই রবিউল আউয়াল ইন্তেকাল করেছেন। {তবাক্বাতে ইবনে সাদ-২/২৭২}

২- হাফেজ যাহাবী রহঃ ও তাই বলেন- {তারীখে ইসলাম লিয যাহাবী-৫৬৯।

৩- হাফেজ ইবনে কাসীর রহঃ ও একই কথা নকল করেছেন- {আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া-৫/২৫৫।

৪- ঐতিহাসিক ইবনে আসীর রহঃ ও তাই লিখেছেন- {আসাদুল গাবাহ-১/৪১, আলকামেল-৪/২১৯}

৫- ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ ও ১২ ই রবিউল আউয়াল ইন্তেকালের কথা বলেছেন। {ফাতহুল বারী-১৬/২৬১}

৬- মুহাদ্দিস ইবনে হিব্বান রহঃ এর মতও তাই। {আসসীরাতুন নাবাবিয়্যাহ লিইবনে হিব্বান-৪০৪}

৭- ইমাম নববী রহঃ একই কথা বলেছেন। {শরহে মুসলিম}

৮- ঐতিহাসি ও মুফাসসির ইবনে জারীর তাবার তাবারী রহঃ ১২ ই রবিউল আউয়াল ওফাতের কথা উল্লেখ করেছেন। {তারীখে তাবারী-৩/২০৭}

৯- ইমাম বায়হাকী রহঃ এরও একই রায়। {দালায়েলুন নবুয়্যাহ-৭/২২৫}

১০- মোল্লা আলী কারী রহঃ ও এই ফায়সালাই দিয়েছেন। {মিরকাত শরহে মিশকাত-১১/১০৪}

১১- সীরাত বিশেষজ্ঞ মাওলানা শিবলী নূমানী ও তাই ফাতাওয়া দিয়েছেন। {সীরাতুন নবী-২/১৮৩}

১২- কাযী সুলাইমান মানসূরপূরী একই কথা বলেছেন। {রাহমাতুল্লিল আলামীন-১/২৫১}

১৩- আররহীকিল মাখতুমের লেখক সফীউর রহমান মুবারকপুরীও তাই বলেন। {আর রহীক-৭৫২}

১৪- মাওলানা আবুল হাসান আলী নদবীও তাই লিখেছেন। {আসসীরাতুন নববিয়্যাহ-৪০৪}

১৫- আহমাদ রেজা খাঁ বেরেলবীও তাই ফায়সালা করেছেন। {মালফুযাতে আহমদ রেজা}

এবার পাঠকদের কাছে আমার জিজ্ঞাসা। পৃথিবীর কোন ধর্মের মূল ব্যক্তির মৃত্যু দিবসে তার প্রকৃত অনুসারীদের কখনো আনন্দ উল্লাস করতে দেখেছেন?

নাকি সেই মহান ব্যক্তিত্বের শত্রুরা আনন্দ উল্লাস করে থাকে?

রাসূল সাঃ এর মৃত্যুর দিনে কোন ব্যক্তি আনন্দ করতে পারে না। আনন্দ করতে পারে কেবল শয়তান। আর তার দোসররা।

রাসূল সাঃ এর মৃত্যুর খবর শুনে সেদিন সাহাবাগণ বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। যে যেই স্থানে ছিল, সেখানেই নিথর হয়েছিল। চোখ দিয়ে বয়েছিল অশ্রুর বন্যা।

আর নিশ্চয় শয়তান হাসছিল। বগল বাজাচ্ছিল। ইহুদী-খৃষ্টান আর মুশরিকরা হাসছিল। মনে মনে আনন্দে নাচছিল।

ঠিক একই কাজটাই কি করা হচ্ছে না রাসূল সাঃ এর মৃত্যু দিবসে?

৯০ ভাগ মুসলমানের রাষ্ট্রে আমাদের মহান নবীর মৃত্যু দিবসে এভাবে জশনে জুলুস বের করে আনন্দ করা, হুল্লোড় করা, মিষ্টি বিতরণ করা, আনন্দ র‌্যালী বের করা দেখেও রাসূল সাঃ এর সাচ্চা অনুসারীরা কি করে চুপ করে বসে থাকে? আমাদের রাসূল প্রেম গেল কোথায়?

যে ব্যক্তি নিজের মায়ের মৃত্যু দিবসে আনন্দ উল্লাসের আয়োজন করতে পারে না। মন সাড়া দেয় না।

নিজের সন্তানের মৃত্যু দিবসে আনন্দ করতে পারে না।

স্বজনের মৃত্যু দিবসে আনন্দ র‌্যালি বের করতে পারে না।

সেই ব্যক্তি কি করে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের শ্রেষ্টতম সৃষ্টি, যাকে সমগ্র জগতের জন্য রহমাত স্বরূপ আল্লাহ তাআলা প্রেরণ করেছেন, যার নাম আমাদের কালিমার অংশ। যার নাম না বলে কবরে মুক্তি নেই, হাশরের ময়দানে যার সুপারিশ ছাড়া উপায় নেই। যার হাতে হাউজে কাউসারের পানি পান করা ছাড়া আমাদের গত্যান্তর নেই।

সেই নবীজী সাঃ এর মৃত্যু দিবসের দিন কতিপয় নবীর দুশমন আনন্দ র‌্যালি বের করবে, আনন্দ উল্লাস করবে, ঈদের আনন্দ করবে। এটি কি করে একজন নবী প্রেমিক বরদাশত করতে পারে? কি করে মিষ্টি বিতরণ করতে পারে?

সাড়ে চৌদ্দশত বছর আগে ১২ই রবিউল আউয়ালে আমাদের প্রিয় নবীর ইন্তেকালের এ দিনে সাহাবারা ছিলেন অশ্রুসজল। আর ইবলিশ ছিল হাস্যোজ্জল। সাহাবাগণ ছিলেন কান্নারত আর ইবলীশ এবং ইহুদী খৃষ্টানদের ছিল ঈদের দিন।

আজ সাড়ে চৌদ্দশত বছর পর এসে সেই ইবলীশ এবং ইহুদী খৃষ্টানদের ঈদ আমাদের দেশে পালিত হয় মহা আড়ম্বরের সাথে। কতিপয় নবীর দুশমনদের এ দৌরাত্ম কি এতটাই বেশি হয়ে গেছে যে, এমন ভয়াবহ নবী দুশমনদের প্রতিহত করার মত ঈমানী শক্তি কোন নবীর আশেকের নেই?

আমি কার কাছে যাব? কার কাছে মাতম করবো? কার কাছে বিচার জানাবো? এ কেমন জুলুম ভাই? এ কেমন অবিচার ভাই? তুমি তোমার মায়ের মৃত্যু দিবসে ঈদ করতে পারো না। বাবার মৃত্যু দিবসে আনন্দ করতে পারো না। সন্তানের মৃত্যুর দিন মিষ্টি বিতরণ করতে পারো না, তাহলে তোমার পরিবারের চেয়েও কি আমার নবী কম মোহব্বতের হয়ে গেল? কি করে এসব নবীর আশেক দাবী করে রাসূল সাঃ এর মৃত্যু দিবসে আনন্দ উল্লাস আর ঈদ পালন করতে পারে এ নবী বিদ্বেষীরা?

জন্মের খুশিতে ঈদ পালন নয় রোযা রাখাই আমার নবীর শিক্ষা

আবু কাতাদা আনসারী রাযিঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা রাসূল সাঃ কে তাঁর সোমবারে রোযা রাখার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হল, [কারণ রাসূল সাঃ সোমবার দিন রোযা রাখতেন] তখন রাসূল সাঃ [কারণ দর্শাতে গিয়ে] বলেন যে, এদিন আমি জন্ম নিয়েছি, আর এদিনই আমার উপর কুরআন নাজিল হয়েছে। [তাই আমি শুকরিয়ার নিমিত্তে রোযা রাখি]

{সহীহ মুসলিম,হাদীস নং-২৮০৭
সুনানে আবু দাউদ,হাদীস নং-২৪২৮
সুনানে বায়হাকী [কুবরা],হাদীস নং-৮২১৭
সহীহ ইবনে খুজাইমা,হাদীস নং-২১১৭
মুসনাদে আবি আওয়ানা,হাদীস নং-২৯২৬
মুসনাদে আহমাদ,হাদীস নং-২২৫৫০}

আমরা লক্ষ্য করলেই দেখতে পাবো, রাসূল সাঃ আমাদের এই হাদীসে কি চমৎকার একটি শিক্ষা দিলেন। সেটা হল-জন্মের খুশিতে রোযা রেখে আল্লাহর শুকরিয়া জানানো, এই কাজে আনন্দ উল্লাস করা মুসলমানের কাজ নয়।
আর আমরা জানি-ঈদের দিন রোযা রাখা হারাম যা নাকি বহু হাদীসে সরাসরি উল্লেখ আছে। যদি নবীজী সাঃ এর জন্মদিনটা ঈদের দিন হত তাহলে নবীজী সাঃ নিষিদ্ধ রোযা রাখলেন কেন? রাসূল সাঃ এর রোযা রাখার মাধ্যমে এটাই শিখালেন যে, এটা কোন ঈদের দিন নয়। আনন্দ উল্লাসের দিন নয়। বরং শুকরিয়া জানিয়ে রোযা রাখার দিন।

নবীর জন্মদিন পালন হল খৃষ্টানদের কালচার। মুসলমানদের নয়। বরং মুসলমানদের কালচার হল শুকরিয়া হিসেবে রোযা রাখা। তাই আসুন সত্যিকার অর্থে নবীর সুন্নাতের পাবন্দির মাধ্যমে নবীকে ভালবাসি। কথিত “জশনে জুলুশে ঈদে মীলাদুন্নবী” পালন করে ঈমান বিধ্বংসী মারাত্মক বিদআতে শরীক না হই। আল্লাহ তায়ালা আমাদের বুঝার তৌফিক দান করুন। আমীন।

৫- এটা হাদীস নয় : আবু বকর সিদ্দীক রা. কি মীলাদ দিতেন
কিছুদিন আগে এক ব্যক্তি ফোন করে বললেন যে, জনৈক বিদআতপন্থী প্রচলিত মিলাদের সমর্থনে বলেছে যে, হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা. নাকি প্রতি বছর মিলাদ করতেন। একবার মিলাদের জন্য তার কাছে খরচপাতি ছিল না তো স্বপ্নে দেখলেন যে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলছেন, কিছু না থাকলে খেজুর দিয়েই মিলাদ কর!!

ওই ব্যক্তি জানতে চাচ্ছিলেন যে, এই রেওয়ায়েত সহীহ কি না এবং তা কোন কিতাবে আছে।

আমি তাকে বললাম, ভাই, এটা তো একদম তাজা বানানো গল্প। মওজু রেওয়ায়েতের কিতাবসমূহেও আপনি তা পাবেন না। কে না জানে যে, প্রচলিত মিলাদ নবী-যুগ ও খোলাফায়ে রাশেদীন ও সাহাবা-যুগের শত শত বছর পরে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের অনুকরণে শুরু হয়েছে। অতএব এর আলোচনা তো কোনো সহীহ হাদীসের কিতাবে থাকা সম্ভবই নয়।

বিদআতপন্থীদের এই নতুন সৃষ্ট রেওয়ায়েতটি থেকেও বোঝা যায় যে, তাঁদের কাছে মিলাদ মাহফিলের সবচেয়ে বড় বিষয় হল খাবার-দাবার এবং জশন-জুলুস।

অথচ এটা সবাই জানেন যে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্মবৃত্তান্ত ও তাঁর পবিত্র সীরাত আলোচনা দ্বীনের একটা জরুরি আমল, যেটা যেকোনো সময়, যেকোনো স্থানে হতে পারে। আর এর জন্য খরচপাতিরও প্রয়োজন নেই, অতএব অর্থ না থাকার কারণে তা থেকে বিরত থাকা বা বঞ্চিত থাকার প্রশ্নই সৃষ্টি হয় না।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে নবীপ্রেমের সঠিক অর্থ বোঝার এবং তার হক আদায় করার তাওফীক দান করুন। আমাদেরকে কথার উম্মত না বানিয়ে কাজের উম্মত বানিয়ে দিন। আমীন।

৬-

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ইফতা বিভাগ

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

১৩১৯০

আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, রজব মাসের কিছু আমল বিস্তারিত বললে ভালো হতো ।

৩০ জানুয়ারী, ২০২২

রংপুর

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ফাতওয়া বিভাগ

৩৪৮৫৮

মেয়েরা মোটর সাইকেল চালাতে পারবে?


১৮ জুন, ২০২৩

বিয়ানীবাজার

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি জাওয়াদ তাহের

১১৯৫৪

আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আসসালামু আলাইকুম,জুমার দিনেক বিশেষ কোনো আমল থাকলে বলবেন এবং বিশেষ কোনো দুরুদ

২৫ ডিসেম্বর, ২০২১

৪০ ৩ B St - Umm Suqeim - Umm Suqeim ৩ - Dubai - সংযুক্ত আরব আমিরাত

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ফাতওয়া বিভাগ

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy