আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

যেসব ক্ষেত্রে গীবত হয়না

প্রশ্নঃ ৮০৮৮. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, অন্যের দোষ ত্রুটি তার অগোচরে বর্ণনা করা গীবত। এমনকি কারো সামনেও তাকে অপমান করা ঠিক নয়।কিন্তু সেই ব্যাক্তির যদি চরিত্রে দোষ থাকে বা কারো ক্ষতি করার প্রচেষ্টায় থাকে বা আমানত খেয়ানত করে। তার অনিষ্ট থেকে অন্যকে বাঁচানোর জন্য যদি কাউকে বলা হয় যে, 'এই ব্যক্তির এরূপ দোষ আছে, তার থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখো।' তাতে কোনো সমস্যা আছে?

২৮ মে, ২০২৫
বরিশাল

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


যেসব ক্ষেত্রে গীবত হয়না
গীবত-এর সংজ্ঞা তো আপনাদের অজানা নয়। কারো অনুপস্থিতিতে দোষচর্চা করা। বাস্তবে দোষ থাকুক বা না থাকুক সে শুনলে মনে কষ্ট পাবে। এটাই তো গীবত-এর সংজ্ঞা। এই সুবাদে আমাদের ভালো করে বুঝতে হবে যে, ইসলাম প্রকৃতির ধর্ম। প্রতিটি জিনিসের স্বভাব বা প্রকৃতির প্রতি লক্ষ্য রেখেই ইসলাম বিধান প্রণয়ন করেছে। মানুষের স্বভাব ও চাহিদার প্রতিও ইসলাম লক্ষ রেখেছে। তদনুযায়ী বিধান প্রদান করেছে। এরই নিমিত্তে ইসলাম কয়েকটি বিষয়কে গীবতের আওতামুক্ত রেখেছে। বিষয়গুলো বাহ্যিক দৃষ্টিতে গীবত মনে হবে। অথচ ইসলামের দৃষ্টিতে এগুলো গীবত নয়।

কারো অনিষ্টতা থেকে বাঁচানোর লক্ষ্যে গীবত করা যাবে
যেমন কেউ এমন কাজ করছে, যার দ্বারা অন্য লোকের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, তাহলে এটা ষড়যন্ত্র। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে এ সম্পর্কে অবহিত না করলে সে ষড়যন্ত্রের শিকার হবে। তাই তাকে এটা বলে দেওয়া জায়েজ হবে যে, তুমি সতর্ক থেকো, তোমার বিরুদ্ধে অমুক এই ষড়যন্ত্র পাকাচ্ছে। এটাই নবীজি ﷺ-র শিক্ষা। তিনি আমাদেরকে সবকিছু শিক্ষা দিয়ে তারপর বিদায় নিয়েছেন।

হযরত আয়েশা রাযি. বলেন, একদিনের ঘটনা। আমি নবীজির খেদমতে বসা ছিলাম। ইত্যবসরে দেখলাম, সামনের দিক থেকে এক লোক আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে। রাস্তায় থাকাকালীন নবীজি ﷺ তার দিকে ইঙ্গিত করে আমাকে বললেন, লোকটি তার গোত্রের নিকৃষ্ট ব্যক্তি। হযরত আয়েশা রাযি. বলেন, একথা শুনে আমি একটু সতর্ক হয়ে বসলাম। কারণ দুষ্ট লোকের থেকে সতর্ক থাকা উচিত। তারপর লোকটি যখন মজলিসে এসে বসল, নবীজি ﷺ তার সাথে স্বভাব অনুযায়ী সদাচরণ করলেন।

লোকটি চলে যাওয়ার পর হযরত আয়েশা রাযি. নবীজিকে জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনার ভাষ্যমতে লোকটি গোত্রের নিকৃষ্ট ব্যক্তি। অথচ সে আপনার মজলিসে বসল আর আপনি তার সঙ্গে এত সুন্দর ব্যবহার করলেন; এর কারণ কী? নবীজি ﷺ উত্তর দিলেন, দেখো, লোকটি আসলেই ভয়ঙ্কর। সন্ত্রাস ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা তার স্বভাব। মানুষ তার থেকে পালিয়ে বাঁচে। তার সঙ্গে যদি সুন্দর ব্যবহার করা না হয়, তাহলে এসে ত্রাস ও অরাজকতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই আমি তার সঙ্গে অভ্যাসমাফিক সুন্দর ব্যবহার করলাম। (তিরমিজি শরিফ ১৯৯৬)

হাদীসটির ব্যাখ্যায় ওলামায়ে কেরাম লিখেছেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আয়েশাকে যে বললেন, ‘লোকটি গোত্রের নিকৃষ্ট ব্যক্তি।’ সাধারণ দৃষ্টিতে এটা গীবত হয়েছে। যেহেতু মন্তব্যটি তার অনুপস্থিতিতে হয়েছে। তবু এটা জায়েজ। কারণ এর দ্বারা নবীজির উদ্দেশ্য ছিল, লোকটির অনিষ্টতা থেকে আয়েশা রাযি.-কে সতর্ক করা। যেন আয়েশা রাযি. লোকটির কোনো ফ্যাসাদের শিকার না হন। সুতরাং হাদীসটি থেকে আমরা বুঝতে পারলাম, কাউকে অন্যের ষড়যন্ত্র অত্যাচার থেকে বাঁচানোর জন্য গীবত করা যাবে। এটা জায়েজ। বরং এজাতীয় গীবত গীবতের অন্তর্ভুক্ত নয়।

যদি কারো প্রাণনাশের আশঙ্কা হয়
অবস্থাবিশেষে অপরের দোষ বর্ণনা করার প্রয়োজন পড়তে পারে। যেমন আপনি দেখলেন, একজন আরেকজনকে খুন বা আক্রমণ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই অবস্থায় আপনি চোখ বুজে থাকতে পারবেন না। বরং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে বলে দিতে হবে যে, তোমার জীবন হুমকির সম্মুখীন। এতে সে নিজেকে বাঁচানোর সুযোগ পাবে। এই বিশেষ ক্ষেত্রে গীবত করা আপনার জন্য বৈধ হবে।

والله اعلم بالصواب

মুসলিম বাংলা ইফতা বিভাগ

মন্তব্য (0)

কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন