আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

বদনজর থেকে মুক্তির উপায় কি?

প্রশ্নঃ ৭৮৪২. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, শায়েখ! বদনজর থেকে মুক্তির উপায় কি?? এবং যে বদ নজর করেছে তার থেকে অযুর পানি নিয়ে গোসল করতে হবে কিন্তূ তার পা ধোয়া পানি ও কি নিতে হবে?? আর বদ নজর দুর করতে পারলে কি পূর্বের অবস্থায় ফেরা যাবে?? মনে যে অবস্থায় থাকা অবস্থায় বদ নজর করা হয়েছে।জাজাকাল্লাহ খায়রান,

১ অক্টোবর, ২০২৩

ঢাকা ১২০৫

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


এখানে দুইটি বিষয়। একটি হলো বদনজর যেন না লাগে সে লক্ষ্যে পূর্ব থেকেই প্রটেকশন গ্রহণ করা।
এর জন্য হাদীস শরীফের দোয়া শেখানো হয়েছে। যে দোয়াটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর দুই প্রিয় নাতি হযরত হাসান ও হযরত হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুমা উভয়কে লক্ষ্য করে পড়তেন। দোয়া পড়ে তাদের দুজনকে ঝাড়ফুঁক করে দিতেন।

দোয়াটি এই:
أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لاَمَّةٍ
অর্থ : আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কল্যাণময় বাক্যাবলির ওয়াসীলায় প্রতিটি শয়তান, প্রাণনাশী বিষাক্ত জীব ও অনিষ্টকারী বদনজর থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
—সুনানু ইবন মাজাহ ৩৫২৫

আরেকটি বিষয় হলো; কখনো বদ নজর লেগে গেলে যখন অসুস্থতা ও বদ নজরের ক্ষতিকর দিকগুলো প্রকাশ পেয়ে যায়, তখন সে অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আমল করা।
এ সম্পর্কে হাদীস শরীফে শেখানো আমল হলো; যার পক্ষ থেকে বদ নজর লেগেছে, তাকে একটি পাত্রে অজু করতে বলা হবে, ওজু শেষে লজ্জাস্থান ধুইতে বলা হবে, ওযু এবং লজ্জাস্থান ধোয়া পানিগুলো ঐ পাত্রে একত্র করা থাকবে। এরপর এই পানি রোগীর পেছন থেকে গায়ে ঢেলে দেয়া হবে অর্থাৎ রোগীকে এ ব্যবহৃত পানি দিয়ে গোসল করানো হবে।

হাদীস শরীফে এসেছে:

حَدَّثَنَا هِشَامُ بْنُ عَمَّارٍ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ أَبِي أُمَامَةَ بْنِ سَهْلِ بْنِ حُنَيْفٍ، قَالَ مَرَّ عَامِرُ بْنُ رَبِيعَةَ بِسَهْلِ بْنِ حُنَيْفٍ وَهُوَ يَغْتَسِلُ فَقَالَ لَمْ أَرَ كَالْيَوْمِ وَلاَ جِلْدَ مُخَبَّأَةٍ ‏.‏ فَمَا لَبِثَ أَنْ لُبِطَ بِهِ فَأُتِيَ بِهِ النَّبِيَّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ فَقِيلَ لَهُ أَدْرِكْ سَهْلاً صَرِيعًا ‏.‏ قَالَ ‏"‏ مَنْ تَتَّهِمُونَ بِهِ ‏"‏ ‏.‏ قَالُوا عَامِرَ بْنَ رَبِيعَةَ ‏.‏ قَالَ ‏"‏ عَلاَمَ يَقْتُلُ أَحَدُكُمْ أَخَاهُ إِذَا رَأَى أَحَدُكُمْ مِنْ أَخِيهِ مَا يُعْجِبُهُ فَلْيَدْعُ لَهُ بِالْبَرَكَةِ ‏"‏ ‏.‏ ثُمَّ دَعَا بِمَاءٍ فَأَمَرَ عَامِرًا أَنْ يَتَوَضَّأَ فَيَغْسِلَ وَجْهَهُ وَيَدَيْهِ إِلَى الْمِرْفَقَيْنِ وَرُكْبَتَيْهِ وَدَاخِلَةَ إِزَارِهِ وَأَمَرَهُ أَنْ يَصُبَّ عَلَيْهِ ‏.‏ قَالَ سُفْيَانُ قَالَ مَعْمَرٌ عَنِ الزُّهْرِيِّ وَأَمَرَهُ أَنْ يَكْفَأَ الإِنَاءَ مِنْ خَلْفِهِ ‏.‏

আবূ উমামাহ বিন হুনায়ফ রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত:
আমির বিন রাবীআহ (রাঃ) সাহল বিন হুনায়ফ (রাঃ) এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি তখন গোসল করছিলেন। আমির (রাঃ) বলেন, আমি এমন খুবসুরত সুপুরুষ দেখিনি, এমনকি পর্দানশীন নারীকেও এরুপ সুন্দর দেখিনি, যেমন আজ দেখলাম। অতঃপর কিছুক্ষণের মধ্যেই সাহল (রাঃ) বেহুঁশ হয়ে পড়ে গেলেন। তাকে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট নিয়ে যাওয়া হল এবং তাঁকে বলা হলো, ধরাশায়ী সাহলকে রক্ষা করুন। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমরা কাকে অভিযুক্ত করছো? তারা বললো, আমির বিন রাবীআহ কে। তিনি বলেন, তোমাদের কেউ বদনজর লাগিয়ে তার ভাইকে কেন হত্যা করতে চায়? তোমাদের কেউ তার ভাইয়ের মনোমুগ্ধকর কিছু দেখলে যেন তার জন্য বরকতের দুআ’ করে। অতঃপর তিনি পানি নিয়ে ডাকলেন, অতঃপর আমিরকে উযু করতে নির্দেশ দিলেন। তিনি তার মুখমণ্ডল, দু’হাত কনুই পর্যন্ত, দু’পা গোছা পর্যন্ত ও লজ্জাস্থান ধৌত করলেন। তিনি আমিরকে পাত্রের (অবশিষ্ট) পানি সাহলের উপর ঢেলে দেয়ার নির্দেশ দিলেন।
যুহরীর বর্ণনায় আছে; তিনি সাহলের পেছন দিক থেকে পানি ঢেলে দেয়ার জন্য আমিরকে নির্দেশ দেন।
—সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ৩৫০৯

একই বিষয়টি অন্য বর্ণনায় এভাবে এসেছে-

و حَدَّثَنِي مَالِك عَنْ ابْنِ شِهَابٍ عَنْ أَبِي أُمَامَةَ بْنِ سَهْلِ بْنِ حُنَيْفٍ أَنَّهُ قَالَ رَأَى عَامِرُ بْنُ رَبِيعَةَ سَهْلَ بْنَ حُنَيْفٍ يَغْتَسِلُ فَقَالَ مَا رَأَيْتُ كَالْيَوْمِ وَلَا جِلْدَ مُخْبَأَةٍ فَلُبِطَ سَهْلٌ فَأُتِيَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقِيلَ يَا رَسُولَ اللهِ هَلْ لَكَ فِي سَهْلِ بْنِ حُنَيْفٍ وَاللهِ مَا يَرْفَعُ رَأْسَهُ فَقَالَ هَلْ تَتَّهِمُونَ لَهُ أَحَدًا قَالُوا نَتَّهِمُ عَامِرَ بْنَ رَبِيعَةَ قَالَ فَدَعَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَامِرًا فَتَغَيَّظَ عَلَيْهِ وَقَالَ عَلَامَ يَقْتُلُ أَحَدُكُمْ أَخَاهُ أَلَّا بَرَّكْتَ اغْتَسِلْ لَهُ فَغَسَلَ عَامِرٌ وَجْهَهُ وَيَدَيْهِ وَمِرْفَقَيْهِ وَرُكْبَتَيْهِ وَأَطْرَافَ رِجْلَيْهِ وَدَاخِلَةَ إِزَارِهِ فِي قَدَحٍ ثُمَّ صُبَّ عَلَيْهِ فَرَاحَ سَهْلٌ مَعَ النَّاسِ لَيْسَ بِهِ بَأْسٌ

আবূ উমামা ইবনু সহল (র) থেকে বর্ণিত:
‘আমির ইব্নু রবী‘আ সহল ইব্নু হানীফকে গোসল করতে দেখে বললেন, আজ আমি যেই সুন্দর মানুষ দেখলাম, এই রকম কাউকেও দেখিনি, এমন কি সুন্দরী যুবতীও এত সুন্দর দেহবিশিষ্ট দেখিনি। (‘আমিরের) এই কথা বলার সাথে সাথে সহল সেখানে লুটাইয়া পড়ল। এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে হাযির হয়ে আরয করল, ইয়া রসূলাল্লাহ! আপনি সহল ইব্নু হুনাইপ (বা হানীফ)-এর কিছু খবর রাখেন কি ? আল্লাহর কসম! সে মস্তক উত্তোলন করতে পারছে না। তখন রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি মনে করছ যে, তাকে কেউ বদনজর দিয়েছে ? লোকটি বলল, হ্যাঁ আমর ইব্নু রবী‘আ (বদনজর দিয়েছে)। অতঃপর রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আমির ইব্নু রবী‘আকে ডেকে ক্রোধান্বিত হয়ে তাঁকে বললেন, তোমাদের কেউ নিজের মুসলমান ভাইকে কেন হত্যা করছ ? তুমি بارك الله কেন বললে না ? এইবার তুমি তার জন্য গোসল কর। অতএব ‘আমির হাত মুখ, হাতের কনুই, হাঁটু, পায়ের আশেপাশের স্থান এবং লুঙ্গির নিচের আবৃত দেহাংশ ধৌত করে ঐ পানি একটি পাত্রে জমা করল। সেই পানি সহলের দেহে ঢেলে দেয়া হল। অতঃপর সহল সুস্থ হয়ে গেল এবং সকলের সাথে রওয়ানা হল।

সহীহ, ইবনু মাজাহ ৩৫০৯,
মুসনাদ আহমাদ ১৬০২৩,
মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হাদীস নং ১৬৮৯

এভাবে আমল করলে আল্লাহ তায়ালা বদ নজর লাগা ব্যক্তিকে পরিপূর্ণ সুস্থ করে দেবেন ইনশাআল্লাহ।

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ ইসহাক মাহমুদ
মুফতী ও মুহাদ্দিস, জামিআ মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়া, মোহাম্মদপুর

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

২৬৮০৬

জন্মদিন উপলক্ষে ফেসবুকে উইশ করা কি জায়েজ?


২২ ডিসেম্বর, ২০২২

Q৪R৭+Q৪W Kamal house

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

৩৪১৯৩

কবর বা মাজারে ফুল দেওয়া যাবে কি?


৩ জুন, ২০২৩

ওয়েস্ট বেঙ্গল

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

২৬০৮১

গজল ইত্যাদিতে নারীবিহীন অভিনয়ের বিধান


১৮ ডিসেম্বর, ২০২২

রাজশাহী

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

২৪৯৫৬

দাড়ি ছোট করে রাখা যাবে কি?


১০ নভেম্বর, ২০২২

টাঙ্গাইল

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy