আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

প্রশ্নঃ ৭৭৮৫. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, চিরকুমার কি থাকা যাবে।শাহ জালাল,শাহ পরান,ইবনু তাইমিয়া উনারা বিয়ে করেননি কেন??,

৩ আগস্ট, ২০২১

ঢাকা ১২০৯

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


বিবাহ করা আম্বিয়ায়ে কিরামের সুন্নাহ।
বিবাহ এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত যে, এতদ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন, “বান্দা যখন বিবাহ করল তখন তার দ্বীনদারী অর্ধেক পূর্ণ হয়ে গেল। অবশিষ্ট অর্ধেকের ব্যাপারে সে যেন আল্লাহকে ভয় করতে থাকে।” (মিশকাত শরীফ -২৬৭)

২- রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো ইরশাদ করেছেনঃ
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، وَأَبُو كُرَيْبٍ قَالاَ حَدَّثَنَا أَبُو مُعَاوِيَةَ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ عُمَارَةَ بْنِ عُمَيْرٍ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ يَزِيدَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ قَالَ لَنَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمُ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ ‏"‏ ‏.‏
আবদুল্লাহ (ইবনু মাসউদ) (রাযিঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের বলেছেনঃ হে যুব সমাজ! তোমাদের মধ্যে যে বৈবাহিক জীবনের ব্যয়ভার বহনে সক্ষম সে যেন বিয়ে করে। কারণ তা দৃষ্টিকে নিচু করে দেয় এবং লজ্জাস্থানকে সংরক্ষণ করে। আর যে (ভরণপোষণে) সমর্থ নয়, তাকে অবশ্যই সওম পালন করতে হবে। কারণ তা তার যৌবন কামনা দমনকারী।(সহীহ মুসলিম ১৪০০)

বিবাহ করার সামর্থ্য বলতে দুইটি বিষয় বুঝানো হয়:

প্রথম বিষযটি হলো: বিবাহ করার সামর্থ্য এবং নিজের স্ত্রীর ভরণপোষণের ক্ষমতা।
দ্বিতীয় বিষযটি হলো: যৌন ক্ষমতা বা সংগমের ক্ষমতা।

সুতরাং যে ব্যক্তি নিজের স্ত্রীর ভরণপোষণের ক্ষমতা রাখবে এবং যৌন ক্ষমতা বা সঙ্গমের ক্ষমতা রাখবে, সে ব্যক্তি বিবাহ করবে।

৩-
وَحَدَّثَنِي أَبُو بَكْرِ بْنُ نَافِعٍ الْعَبْدِيُّ، حَدَّثَنَا بَهْزٌ، حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ سَلَمَةَ، عَنْ ثَابِتٍ، عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ نَفَرًا، مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم سَأَلُوا أَزْوَاجَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم عَنْ عَمَلِهِ فِي السِّرِّ فَقَالَ بَعْضُهُمْ لاَ أَتَزَوَّجُ النِّسَاءَ ‏.‏ وَقَالَ بَعْضُهُمْ لاَ آكُلُ اللَّحْمَ ‏.‏ وَقَالَ بَعْضُهُمْ لاَ أَنَامُ عَلَى فِرَاشٍ ‏.‏ فَحَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ ‏.‏ فَقَالَ ‏ "‏ مَا بَالُ أَقْوَامٍ قَالُوا كَذَا وَكَذَا لَكِنِّي أُصَلِّي وَأَنَامُ وَأَصُومُ وَأُفْطِرُ وَأَتَزَوَّجُ النِّسَاءَ فَمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِي فَلَيْسَ مِنِّي ‏"‏ ‏.‏
আনাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কতিপয় সাহাবী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিণীদের নিকট তার গোপন ইবাদত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। তাদের মধ্যে কেউ বললেন, আমি কখনও বিয়ে করব না, কেউ বললেন, আমি কখনও গোশত খাব না, কেউ বললেন, আমি কখনও বিছানায় ঘুমাব না। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান করলেন এবং বললেনঃ “লোকদের কী হল যে, তারা এরূপ এরূপ বলছে? অথচ আমি তো সালাত (সালাত/নামাজ/নামায)ও আদায় করি আবার নিদ্ৰাও যাই, সওম পালন করি এবং ইফতারও করি এবং বিয়েও করেছি। অতএব যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, সে আমার কেউ নয়।" (সহীহ মুসলিম ১৪০১)

৪-
حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ وَكِيعٍ، حَدَّثَنَا حَفْصُ بْنُ غِيَاثٍ، عَنِ الْحَجَّاجِ، عَنْ مَكْحُولٍ، عَنْ أَبِي الشِّمَالِ، عَنْ أَبِي أَيُّوبَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ أَرْبَعٌ مِنْ سُنَنِ الْمُرْسَلِينَ الْحَيَاءُ وَالتَّعَطُّرُ وَالسِّوَاكُ وَالنِّكَاحُ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ وَفِي الْبَابِ عَنْ عُثْمَانَ وَثَوْبَانَ وَابْنِ مَسْعُودٍ وَعَائِشَةَ وَعَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو وَأَبِي نَجِيحٍ وَجَابِرٍ وَعَكَّافٍ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى حَدِيثُ أَبِي أَيُّوبَ حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ ‏.‏

আবূ আয়্যুব আল-আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ চারটি জিনিস নবীদের চিরাচরিত সুন্নাত। লজ্জা-শরম, সুগন্ধি ব্যবহার, মিসওয়াক করা এবং বিয়ে করা। (সূনান আত তিরমিজী ১০৮০)

মানুষের অধিকাংশ গুনাহ দুটি কারণে সংঘটিত হয়। একটি হয় তার লজ্জাস্থানের চাহিদা পূরণের কারণে আর অন্যটি হয় পেটের চাহিদা পূরণের কারণে। বিবাহের কারণে মানুষ প্রথমটি থেকে হেফাজতের রাস্তা পেয়ে যায়। সুতরাং তাকে কেবল রিযিকের ব্যাপারে চিন্তান্বিত থাকতে হয়। যাতে করে সে হারাম থেকে বেঁচে থাকতে পারে। একজন লোক খুব বড় আবেদ, তাহাজ্জুদ-চাশত-আওয়াবীন ইত্যাদি নফল নামায খুব পড়ে; কিন্তু সংসারের সাথে তার কোন সংশ্রব নেই। আরেকজন লোক ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাতে মুআক্কাদা আদায় করে এবং বিবি বাচ্চার হক আদায়ে তৎপর থাকে ফলে তার বেশী বেশী নফল পড়ার কোন সময় হয় না। এতদসত্বেও শরীআত কিন্তু দ্বিতীয় ব্যক্তিকেই ইবাদাতগুজার হিসেবে মর্যাদা প্রদান করেছে। অর্থাৎ যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সুন্নাত মুতাবিক বিবাহ-শাদী করে পরিবারের দায়দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে হালাল রিযিকের ফিকির করছে, সে ঐ ব্যক্তি অপেক্ষা অধিক মর্যাদাশীল- যে চব্বিশ ঘন্টা মসজিদে পড়ে থাকে বা বনে জঙ্গলে সন্যাসীর মত জীবন যাপন করে আর সব রকমের সাংসারিক ঝামেলা থেকে মুক্ত থেকে তাসবীহ তাহলীলে মশগুল থাকে।

অতএব, বিবাহ করার সামর্থ্য থাকলে অবশ্যই বিবাহ করুন, চিরকুমার থাকার কোন সুযোগ নেই।
বিবাহ করার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও না করলে নবীজীর সাঃ সুন্নত থেকে বিমুখতা প্রদর্শন করা হবে যা সরাসরি আল্লাহ্‌র বিধানের নাফরমানির মধ্যে শামিল।

আল্লাহ্‌র ইরশাদঃ
قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ ۗ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ

(হে নবী! মানুষকে) বলে দিন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবেসে থাক, তবে আমার অনুসরণ কর, তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করবেন। আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (আল ইমরান আয়াত নং - ৩১)

আল্লাহ্‌ আমাদের হেফাযত করুন।

এবার শাহ জালাল,শাহ পরান,ইবনু তাইমিয়া উনারা বিয়ে করেননি কেন এ বিষয়ে আসি...

এর উত্তরে ইলমের ভালোবাসায় চিরকুমার ওলামায়ে কেরাম -লেখক : শায়খ আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ (রহ.)- থেকে কিছু উদৃতি পেশ করছিঃ

এ সম্পর্কে গ্রন্থকার আবদুল ফাত্তাহ (রহ.) নিজে বলেন, ‘বক্ষমান গ্রন্থটি একটি সংক্ষিপ্ত রচনামাত্র। তাতে আমি ওই সকল ওলামায়ে কেরামের জীবনী উল্লেখ করার প্রয়াস পেয়েছি, যারা বিবাহ বর্জন করেছিলেন। ’জ্ঞান-সাধনায় নিমগ্নতার কারণে যাঁরা নারীর প্রেমময় সান্নিধ্য থেকে নিজেদেরকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন; ইলমের প্রেমে বুঁদ হয়ে যাঁরা একাকিত্ব ও নিঃসঙ্গ জীবনকে বেছে নিয়েছিলেন; যাঁদের মর্যাদা ছিল সুপ্রতিষ্ঠিত; যাঁদের ইলমি প্রসিদ্ধি ছিল দিগন্ত-বিস্তৃত; যাঁদের জিন্দেগির আবে হায়াত ছিল ইলম, তাঁদেরই মহান জীবনের কিছু চিত্র আঁকা হয়েছে এ বইয়ে। বইটি পড়লে বিয়ের বাসনা ছাড়তে হবে কিংবা বইটি লেখা হয়েছে বৈরাগ্যবাদের দিকে আহবান করার জন্য— এমনটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। কারণ ‘বিয়ের চেয়ে নফল ইবাদতে লিপ্ত থাকা উত্তম’ অভিমত পোষণকারী ইমাম শাফিয়ি রাহিমাহুল্লাহও কিন্তু বিয়ে করেছিলেন। সর্বোপরি লেখক স্বয়ং বিবাহিত— একজন আদর্শ স্বামী এবং আদর্শ বাবা ছিলেন।

যদি বৈরাগ্যের প্রতি আহ্বান করা উদ্দেশ্য না হয়, তাহলে লেখক কোন উদ্দেশ্যে এ ধরনের বই লিখলেন— এমন প্রশ্ন মনে উত্থাপিত হওয়া অস্বাভাবিক নয়। এর জবাবে লেখক স্বয়ং বলছেন, ‘পূর্বসূরিদের কাছে ইলমের মর্যাদা কী ছিলো? ইলমের জন্য তাদের আগ্রহ উদ্দীপনা কেমন ছিলো? কীভাবে তারা ইলমের জন্য নিজেকে মিটিয়ে দিয়েছেন? পৃথিবীর অন্য সব বস্তুর তুলনায় ইলমকে কতটুকু প্রাধান্য দিয়েছেন? কীভাবে তারা জীবনের প্রয়োজনীয় তাকিদেও সাড়া না দিয়ে ইলমের অধ্যাবসায়ে লিপ্ত ছিলেন? বর্তমান সময়ের তালিবুল ইলমগণ যাতে তা অনুধাবন করতে পারে এ উদ্দেশ্যেই এ গ্রন্থটি রচনা করেছি।

আশা করি বুঝতে পেরেছেন, উনারা দ্বীনের ফরয যিম্মাদারী ইলমে দ্বীনের গবেষণা ও তার প্রচার প্রসারের দরুন বিবাহের জন্য সময় করতে পারেন নি।
আমি আপনি কি সেরকম??
তাহলে আমার আপনার জন্য ইনাদের উপমা টেনে বিবাহের মহান সুন্নত থেকে পিছু হটা মোটেও জায়েয হবে না।
আর বিবাহ করেন নি এবং করার সময় পান নি দুটি এক জিনিস নয়। তাদের ব্যক্তিগত কারণ আমরা তো জানি না।।
বিবাহবর্জন সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কঠিন সতর্কবাণী থাকা সত্ত্বেও এত বড় বড় শ্রেষ্ঠ আলেম কেন বিয়ে করেননি— এমন প্রশ্নের উত্তর বইয়ের নামেই আছে। তবে গ্রন্থকার (রহ.) ‘ওলামায়ে কেরামের কৌমার্য : কারণ ও রহস্য’ শিরোনামে একটি ভূমিকা লিখে সে সম্পর্কে দীর্ঘ আলোচনা করেছেন। বইয়ের শুরুতেই পাঠকের কাছে বিষয়টা খোলাসা করে দিয়েছেন, যাতে আর সন্দেহ ও প্রশ্নের সম্মুখীন হতে না হয়।
ইচ্ছে আছে সেটা অনুবাদ করে সবিস্তারে প্রকাশ করার। আর খুলাসা তো এক্টূ আগে বললাম।
আল্লাহ্‌ বুঝার তাওফীক দিন।

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ইফতা বিভাগ

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

২৭৯৪৫

ফাতেমা রাযি.-এর মহর কত ছিল?


১২ জানুয়ারী, ২০২৩

Dhaka, Bangladesh

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

৩০২৮১

ব্যাংকারের মেয়েকে বিবাহ করা বা ব্যাংকার ছেলের কাছে মেয়ে বিয়ে দেওয়া কি জায়েজ?


১৬ আগস্ট, ২০২৪

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

৯০৭৭২

রমাযান মাসে বিবাহ করা


২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

চুয়াডাঙ্গা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী মাহমুদুল হাসান

৭৮৯৮৭

গৃহস্থলি কাজে নারীর দায়বদ্ধতা


২ ডিসেম্বর, ২০২৪

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy