আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

প্রশ্নঃ ৭৭৬৫. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তো উম্মতের দ্বারে দ্বারে বারে বারে গিয়ে দাওয়াতের কাজ করেছেন কিন্তু বর্তমান জামানার নবী ওয়ারিশগণ সেই গুরুত্বপূর্ণ দাওয়াতের কাজটাকে সেই ভাবে না করে ওয়াজ মাহফিলের নামে মোটা অংকের টাকা নিয়ে করছেন কেন? সূরা ইয়াসিনের 21 নম্বর আয়াতের অনুসরণে উত্তর দিলে খুশি হব,

৭ আগস্ট, ২০২১

ঢাকা

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


السلام عليكم ورحمة الله وبركاته



রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিজরতের পূর্বে মক্কার জিন্দেগীতে কাফির-মুশরিকদের কাছে ইসলামের দাওয়াত নিয়ে বারবার গিয়েছেন। কাফিরদের কাছে দারে দারে বারে বারে গিয়েছেন।
নবীজির দাওয়াতে অথবা সাহাবীদের দাওয়াতে যারা দূর-দূরান্ত থেকে মুসলমান হতো, তারা নবীজির দরবারে ছুটে আসত। মুসলমানদের কাছে দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে যাওয়ার ঘটনা না নবীজির কাছ থেকে আছে, না সাহাবীদের কাছ থেকে। মুসলমানদেরকে বিভিন্ন বিষয়ে ওয়াজ-নসিহত, ইসলাহ-সংশোধন ইত্যাদি কাজে নবীজি সময় দিয়েছেন, সাহাবায়ে কেরামও এই কাজগুলো আঞ্জাম দিয়েছেন।
নবীজির সময় এবং খোলাফায়ে রাশেদীনের শাসনামলে মুসলমানদের কুরআনুল কারীম শিক্ষা দেয়ার জন্য রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হতো। তাদের জন্য বায়তুলমাল থেকে ভাতা ধার্য হতো। এ ভাতা তাদের পরিবারের প্রয়োজন পূরণে যথেষ্ট ছিল। এই ধারাবাহিকতা ইসলামী খেলাফত ধ্বংসের পূর্ব পর্যন্ত অবিরত ছিল।
বর্তমান পৃথিবীতে ইসলামী খেলাফত বিলুপ্তির পর কুরআনুল কারীম শিক্ষা দেয়া, মুসলমানদের ইসলাহ-সংশোধনের এই দায়িত্ব আঞ্জাম দেয়ার জন্য যেহেতু রাষ্ট্রীয় কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই ব্যক্তি বা প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে যদি কেউ এই কাজ আঞ্জাম দেয় আর তার জীবিকা নির্বাহের জন্য কিছু তোহফা দেওয়া হয় সেটি হালাল।
মনে রাখতে হবে ওয়াজ মাহফিলে বয়ান করা, মাদরাসায় পড়ানো, মসজিদে নামাজে ইমামতি করার জন্য যাদেরকে নিয়োগ দেওয়া হয় সেটি জনসাধারণের দ্বীনী প্রয়োজনে করা হয়। ঐ ওয়ায়েজ, মাদরাসার শিক্ষক, মসজিদের ইমাম জনসাধারণের দ্বীনী প্রয়োজনকে পূরণ করার জন্য নিজেদেরকে আত্মনিয়োগ করেন। জনগণের দায়িত্ব হলো তাদের পরিবারের জীবিকার দায়িত্ব নেয়া।
বিপরীতে যে মুসলমান নিজেই উদ্যোগী হয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাফির-মুশরিকদের কাছে দাওয়াত নিয়ে গেল সে কাফিরদের কাছে দাওয়াত পৌঁছিয়ে পারিশ্রমিক কি করে চাইবে?
সূরা ইয়াসিনের ২১ নং আয়াত সহ কুরআনুল কারীমে এই জাতীয় যতগুলো আয়াত আছে সবগুলো কাফির-মুশরিকদেরকে সম্বোধন করে বলা হয়েছে। সেসব আয়াতের সারমর্ম এই যে, নবীগণ কাফিরদেরকে বলেছেন, আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে এসেছি, এই দাওয়াত গ্রহণ করার জন্য তোমরা আমাকে কোন পারিশ্রমিক দিতে হবেনা। আমি তোমাদের কাছে বিনিময় চাই না। আমার প্রতিদান আল্লাহর কাছে।

হিজরতের পর থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি-বাকরি কোনটার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। সাহাবায়ে কেরাম হাদিয়া তোহফা দিয়ে নবীজির পরিবারের জীবিকা চালিয়ে নিতেন। এরপর যখন গনিমতের মাল এসেছে, তখন তার এক পঞ্চমাংশ নবীজির জন্য বরাদ্দ হত।
খোলাফায়ে রাশেদীন এর প্রথম খলীফা হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু আনহু খলীফাতুল মুসলিমীন হওয়ার পর সকলের সম্মুখে যে ভাষণ দিয়েছিলেন, সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন, আবু বকর এর পরিবার আবু বকরের কামাই রোজগার এর উপর নির্ভর করে চলা যথেষ্ট ছিল। এখন যেহেতু আবু বকর তোমাদের দ্বীনি ও রাষ্ট্রীয় কাজে আত্মনিয়োগ করবে, এখন আবু বকরের পরিবারের ভরণপোষণ তোমাদেরকে দায়িত্ব নিতে হবে। এরপর বায়তুলমাল থেকে তার জন্য ভাতা ধার্য করা হলো। এভাবে সরকারি সকল কর্মকর্তাদের ভাতা বায়তুলমাল থেকে ধার্য হল। এর মধ্যে মসজিদের ইমাম, মাদরাসার শিক্ষক সকলের জন্যই বায়তুলমাল থেকে ভাতা ধার্য হলো।

حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ حَدَّثَنِي ابْنُ وَهْبٍ، عَنْ يُونُسَ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، قَالَ حَدَّثَنِي عُرْوَةُ بْنُ الزُّبَيْرِ، أَنَّ عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها ـ قَالَتْ لَمَّا اسْتُخْلِفَ أَبُو بَكْرٍ الصِّدِّيقُ قَالَ لَقَدْ عَلِمَ قَوْمِي أَنَّ حِرْفَتِي لَمْ تَكُنْ تَعْجِزُ عَنْ مَئُونَةِ أَهْلِي، وَشُغِلْتُ بِأَمْرِ الْمُسْلِمِينَ، فَسَيَأْكُلُ آلُ أَبِي بَكْرٍ مِنْ هَذَا الْمَالِ وَيَحْتَرِفُ لِلْمُسْلِمِينَ فِيهِ‏.‏

‘আয়িশা রাযিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত:
তিনি বলেন, যখন আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ)-কে খলীফা বানানো হল, তখন তিনি বললেন, আমার জাতি জানে যে, আমার উপার্জন আমার পরিবারের ভরণ পোষণের জন্য অপর্যাপ্ত ছিল না। কিন্তু এখন আমি মুসলিম জনগণের কাজে সার্বক্ষণিক ব্যাপৃত হয়ে গেছি। অতএব আবূ বকরের পরিবার এই রাষ্ট্রীয় কোষাগার হতে খাদ্য গ্রহণ করবে এবং আবূ বকর (রাঃ) মুসলিম জনগণের সম্পদের তত্ত্বাবধান করবেন।
—সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০৭০

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ ইসহাক মাহমুদ
মুফতী ও মুহাদ্দিস, জামিআ মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়া, মোহাম্মদপুর

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৯৩২৮৩

বছরের শুরু শেষ নেসাব ঠিক ছিলো, মাঝে যে সম্পদ বেড়েছে তার যাকাতের জন্য বৎসর পূর্ণ হতে হবে?


৫ মার্চ, ২০২৫

Mahini

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

৮১৭৯৯

অমুসলিমের সাথে বর্গা চুক্তি করলে উশর নাকি খারাজ দিবে?


২০ ডিসেম্বর, ২০২৪

নামবিহীন রাস্তা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

৮৮৫৩৫

মুসলিম বাংলা অ্যাপে আরবি তারিখ কেন দুইটি দেখায়?


১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

১৮২২

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

৮৫৯৭৬

স্ত্রীর সাথে কথা বন্ধ রাখা


২২ জানুয়ারী, ২০২৫

১৭০২

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী আবু সাঈদ

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy