তাওবা : গুনাহের একমাত্র এলাজ!
প্রশ্নঃ ৭৫৮১. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমার প্রশ্ন হচ্ছে: কোনো একজন ব্যক্তি পাপ কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য আল্লাহর কাছে ওয়াদা করে বলেছে যে সে আর ওই পাপ কাজ করবে না। কিন্তু সে পরে আবার সেই পাপ কাজে লিপ্ত হয়ে গেছে, যার কারনে আল্লাহর সাথে করা ওয়াদা সে ভঙ্গ করে ফেলেছে। এমতাবস্থায় তার এখন কি করা উচিৎ? দয়া করে আমাকে উপায়টি বলুন।,
৭ ডিসেম্বর, ২০২৩
নোয়াখালী
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
গোনাহের এলাজ হলো তাওবা।
গোনাহ যেন মুমিনের কাছে মাথার উপর পতনোন্মুখ বিশাল পাহাড়, যে কোনো মুহূর্তে তা ধ্বংস করে দিতে পারে তাকে। ফলে কোনো গোনাহ হয়ে গেলে মুমিন পেরেশান হয়ে যায়- কীভাবে তা থেকে মাফ পাওয়া যায়; বান্দার হক হলে- কীভাবে তা থেকে দ্রুত মুক্ত হওয়া যায়।
পক্ষান্তরে ফাসেক-ফাজেরের কাছে গোনাহ কোনো পেরেশানীর বিষয়ই নয়। একটি হাদীসে একটি সুন্দর উপমার মাধ্যমে বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে-
إِنّ المُؤْمِنَ يَرَى ذُنُوبَهُ كَأَنّهُ قَاعِدٌ تَحْتَ جَبَلٍ يَخَافُ أَنْ يَقَعَ عَلَيْهِ، وَإِنّ الفَاجِرَ يَرَى ذُنُوبَهُ كَذُبَابٍ مَرّ عَلَى أَنْفِهِ.
মুমিনের কাছে গোনাহ যেন পতনোন্মুখ পাহাড়, যার পাদদেশে সে বসা; যে কোনো মুহূর্তে তা ভেঙে পড়তে পারে তার উপর (ধ্বংস করে দিতে পারে তাকে)। আর ফাসেক-ফাজেরের কাছে গোনাহ যেন নাকের উপর দিয়ে উড়ে যাওয়া সামান্য মাছির মত। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৩০৮
হাঁ, মুমিনের কাছে গোনাহ এমনই। গোনাহকে মুমিন পাহাড়সম বোঝা হিসেবে দেখে। কোনো পাপ হয়ে গেলে ব্যথিত হয়, কষ্টে থাকে। আফসোস-আক্ষেপ করতে থাকে- কেন পাপে জড়ালাম! আর এটিই ঈমানের আলামত।
গোনাহ তো হয়েই যায়। শয়তানের ধোঁকায়, নফসের প্ররোচনায়, ইচ্ছায়, অনিচ্ছায়- গোনাহ হয়েই যায়। কিন্তু আশার কথা হল, আল্লাহ বান্দার জন্য রেখেছেন পাপ মোচনের অগণিত পথ। একে তো যে কোনো পাপ মোচনের জন্যই আল্লাহ খোলা রেখেছেন তাওবার দরজা, যা বান্দার পাপ মোচন করে দেয় এবং শয়তানকে ব্যর্থ করে দেয়। সাথে সাথে বিভিন্ন উপলক্ষে, বিভিন্ন নেক আমলের দ্বারাও আল্লাহ বান্দার পাপ মোচন করেন। মুমিন বুদ্ধিমান। সে এসকল আমল-উপলক্ষকে কাজে লাগায় এবং পাপ থেকে নিজেকে মুক্ত করতে সচেষ্ট থাকে।
১- তওবা : সব গোনাহ মুছে দেয়
শয়তানের সারাদিনের চেষ্টা বরং দীর্ঘদিনের চেষ্টা মুহূর্তে ব্যর্থ করে দিতে পারে মুমিন বান্দা। মুমিনকে আল্লাহ তাআলা এমন হাতিয়ার দান করেছেন। কী সেই হাতিয়ার, যা ব্যর্থ করে দিতে পারে শয়তানের সকল চক্রান্ত?
তাওবা। তাওবার মাধ্যমে মহাপাপীও হয়ে যেতে পারে গোনাহমুক্ত; শয়তানের সকল অপচেষ্টা মুহূর্তে ধূলিস্মাৎ করে দিতে পারে। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে-
التّائِبُ مِنَ الذّنْبِ، كَمَنْ لَا ذَنْبَ لَهُ.
গোনাহ থেকে তওবাকারী গোনাহমুক্ত ব্যক্তির মত। -সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ৪২৫০
মুমিন তো গোনাহ নিয়ে বসে থাকতে পারে না। গোনাহ তো মুমিনের কাছে পাহাড়সম বোঝা। তাই মুমিন গোনাহ হওয়ার সাথে তওবা করে নেয়। কুরআনে কারীম আল্লাহ তাআলা মুমিনের এ গুণের কথা বর্ণনা করেছেন এভাবে-
وَ الَّذِیْنَ اِذَا فَعَلُوْا فَاحِشَةً اَوْ ظَلَمُوْۤا اَنْفُسَهُمْ ذَكَرُوا اللهَ فَاسْتَغْفَرُوا لِذُنُوْبِهِمْ وَ مَنْ یَّغْفِرُ الذُّنُوْبَ اِلَّا اللهُ، وَ لَمْ یُصِرُّوْا عَلٰی مَا فَعَلُوْا وَ هُمْ یَعْلَمُوْنَ.
এবং তারা সেই সকল লোক, যারা কখনো কোনো অশ্লীল কাজ করে ফেললে বা (অন্য কোনোভাবে) নিজেদের প্রতি যুলুম করলে সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তার ফলশ্রুতিতে নিজেদের গোনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ ছাড়া কেই বা আছে, যে গোনাহ ক্ষমা করতে পারে? আর তারা জেনেশুনে তাদের কৃতকর্মে অবিচল থাকে না। -সূরা আলে ইমরান (৩) : ১৩৫
আর আল্লাহ তাআলাও বান্দার তওবা কবুলের জন্য তাঁর ক্ষমার হাত প্রসারিত করেই রাখেন; দিনে-রাতে, সর্বদা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
إِنّ اللهَ عَزّ وَجَلّ يَبْسُطُ يَدَهُ بِاللّيْلِ لِيَتُوبَ مُسِيءُ النّهَارِ، وَيَبْسُطُ يَدَهُ بِالنّهَارِ لِيَتُوبَ مُسِيءُ اللّيْلِ، حَتّى تَطْلُعَ الشّمْسُ مِنْ مَغْرِبِهَا.
আল্লাহ তাআলা রাতে তাঁর (ক্ষমার) হাত প্রসারিত করেন, যাতে দিনে যারা পাপ করেছে তারা তওবা করতে পারে। আর দিনে তাঁর (ক্ষমার) হাত প্রসারিত করেন, যাতে রাতে যারা পাপ করেছে তারা তওবা করতে পারে। এভাবে (তাঁর অবারিত ক্ষমা) চলতে থাকবে সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদিত হওয়া পর্যন্ত। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৭৫৯
তো যত বড় গোনাহই হোক না কেন, তওবার মাধ্যমে সব গোনাহ মুছে যায়। বিভিন্ন নেক আমলের দ্বারা তো সগীরা গুনাহগুলো মিটে যায় কিন্তু তওবা- সগীরা-কবীরা সব গোনাহ মিটিয়ে দেয়।
২- নেক আমল : কৃত পাপ মুছে দেয়
কোনো পাপ হয়ে গেলে মুুমিনের করণীয় কী? পাপ হওয়ার সাথে সাথেই তো মুমিন পেরেশান হয়ে যায় তা মোচনের জন্য। আল্লাহ তাআলা মুমিনকে বাতলেছেন সে পথ। পাপ হয়ে গেছে বান্দা? তওবা কর এবং নেক আমল দ্বারা সেটি মিটিয়ে দাও। ইরশাদ হয়েছে-
وَ اَقِمِ الصَّلٰوةَ طَرَفَیِ النَّهَارِ وَ زُلَفًا مِّنَ الَّیْلِ، اِنَّ الْحَسَنٰتِ یُذْهِبْنَ السَّیِّاٰتِ، ذٰلِكَ ذِكْرٰی لِلذّٰكِرِیْنَ .
তুমি সালাত কায়েম কর দিবসের দুই প্রান্তভাগে এবং রজনীর প্রথমাংশে। অবশ্যই নেক আমল পাপসমূহ মিটিয়ে দেয়। যারা উপদেশ গ্রহণ করে, এ তাদের জন্য এক উপদেশ। -সূরা হূদ (১১) : ১১৪
সুতরাং নেক আমলের প্রতি যত্নবান হওয়া চাই। কোনো পাপ হয়ে গেলে সাথে সাথে তাওবা করা চাই এবং নেক আমলের মাধ্যমে পাপ মিটিয়ে ফেলা চাই। নবীজীর প্রিয় সাহাবী আবু যর রা.-কে একবার এ উপদেশই দিয়েছেন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-
اتّقِ الله حَيْثُمَا كُنْتَ، وَأَتْبِعِ السّيِّئَةَ الحَسَنَةَ تَمْحُهَا.
হে আবু যর! যেখানেই থাক আল্লাহকে ভয় কর এবং কোনো পাপ হয়ে গেলেই নেক আমল কর; তা তোমার পাপ মিটিয়ে দিবে। -জামে তিরমিযী, হাদীস ১৯৮৭
৩- যে সকল নেক আমল দ্বারা পাপ মিটে যায় এর শীর্ষে হল নামায; উপরোল্লেখিত আয়াতে সেদিকে ইশারা রয়েছে। আর পাপ হয়ে গেলে আল্লাহর কাছে মাফ চাওয়ার সর্বোত্তম পদ্ধতিও হল নামায। নামাযের মাধ্যমে মাফ চাইলে আল্লাহ দ্রুত মাফ করেন। হযরত আবু বকর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন-
مَا مِنْ رَجُلٍ يُذْنِبُ ذَنْبًا فَيَتَوَضّأُ فَيُحْسِنُ الْوُضُوءَ، قَالَ مِسْعَرٌ: وَيُصَلِّي، وَقَالَ سُفْيَانُ: ثُمّ يُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ، فَيَسْتَغْفِرُ اللهَ عَزّ وَجَلّ إِلّا غُفَرَ لَهُ.
কারো কোনো পাপ হয়ে গেলে সে যদি উত্তমরূপে ওযু করে এবং দুই রাকাত নামায পড়ে আল্লাহর কাছে মাফ চায় আল্লাহ তাকে মাফ করে দেন। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২
এছাড়াও হাদীস শরীফে নামাযের মাধ্যমে পাপ মোচন হওয়ার অনেক বর্ণনা এসেছে।
পাঁচ ওয়াক্ত নামায : মধ্যবর্তী গোনাহগুলো মিটিয়ে দেয়
যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের ব্যাপারে যত্নবান তার কি কোনো গোনাহ থাকতে পারে? একে তো নামাযী ব্যক্তি গোনাহ থেকে বেঁচে থাকতে চেষ্টা করবে, প্রতি নামাযেই গোনাহ থেকে মাফ চাইবে এবং গোনাহ থেকে বেঁচে থাকার সংকল্প করবে- এটাই স্বাভাবিক। তারপরও যদি কোনো গোনাহ হয়ে যায় তো আল্লাহ তাআলা গাফুরুর রাহীম- নামাযের মাধ্যমে বান্দার গোনাহগুলো মিটিয়ে দেন। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন-
أَرَأَيْتُمْ لَوْ أَنّ نَهْرًا بِبَابِ أَحَدِكُمْ يَغْتَسِلُ مِنْهُ كُلّ يَوْمٍ خَمْسَ مَرّاتٍ، هَلْ يَبْقَى مِنْ دَرَنِهِ شَيْءٌ؟ قَالُوا: لَا يَبْقَى مِنْ دَرَنِهِ شَيْءٌ، قَالَ: فَذَلِكَ مَثَلُ الصَّلَوَاتِ الْخَمْسِ، يَمْحُو اللهُ بِهِنّ الْخَطَايَا.
(তোমাদের কী মনে হয়?) কারো বাড়ির পাশে যদি নদী থাকে আর সে তাতে প্রতিদিন পাঁচ বার গোসল করে, তার শরীরে কি কোনো ময়লা থাকবে? সাহাবায়ে কেরাম উত্তরে বললেন, না, তার শরীরে কোনো ময়লা অবশিষ্ট থাকবে না। নবীজী তখন বললেন-
فَذلِكَ مَثَلُ الصّلَوَاتِ الْخَمْسِ، يَمْحُو اللهُ بِهِنّ الْخَطَايَا.
পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের দৃষ্টান্তও এরূপ। এর মাধ্যমে আল্লাহ (বান্দার) পাপসমূহ মিটিয়ে দেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬৬৭; সহীহ বুখারী, হাদীস ৫২৮
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন-
الصّلَوَاتُ الْخَمْسُ، وَالْجُمْعَةُ إِلَى الْجُمْعَةِ، وَرَمَضَانُ إِلَى رَمَضَانَ، مُكَفِّرَاتٌ مَا بَيْنَهُنّ إِذَا اجْتَنَبَ الْكَبَائِرَ
পাঁচ ওয়াক্ত নামায, এক জুমা থেকে আরেক জুমা, এক রমযান থেকে আরেক রমযান এর মধ্যবর্তী সময়ের গোনাহকে মিটিয়ে দেয়; যদি ওই ব্যক্তি কবীরা গোনাহ থেকে বেঁচে থাকে (ওই ব্যক্তির যদি কবীরা গোনাহ না থাকে)। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৩৩
অর্থাৎ, কবীরা গোনাহ করলে সকল গোনাহের কাফফারা হবে না; বরং শুধু সগীরা গোনাহের কাফফারা হবে। কারণ, কবীরা গোনাহ তওবা ছাড়া মাফ হয় না (তেমনি বান্দার হকও; যা অন্য হাদীস থেকে বোঝা যায়)।
জুমার নামায : সারা সপ্তাহের গোনাহ মিটিয়ে দেয়
হযরত আবু হুরায়রা রা. বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
مَنْ تَوَضّأَ فَأَحْسَنَ الْوُضُوءَ، ثُمّ أَتَى الْجُمُعَةَ، فَاسْتَمَعَ وَأَنْصَتَ، غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْجُمُعَةِ، وَزِيَادَةُ ثَلَاثَةِ أَيّامٍ، وَمَنْ مَسّ الْحَصَى فَقَدْ لَغَا.
যে ব্যক্তি উত্তমরূপে ওযু করল এবং জুমায় এল। এরপর মনোযোগসহ খুতবা শুনল ও চুপ থাকল। আল্লাহ তাআলা তার গত জুমা ও এই জুমার মধ্যবর্তী সময়ের গোনাহ মাফ করে দিবেন; আরো অতিরিক্ত তিন দিনের গোনাহও মাফ করবেন। আর যে ব্যক্তি নুড়ি স্পর্শ করল সে অনর্থক কাজ করল। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৮৫৭
৪- ওযু : গোনাহ ধুয়ে দেয়
নামাযের জন্য, তিলাওয়াত বা অন্য কোনো আমলের জন্য আমরা ওযু করি। নির্দিষ্ট অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধৌত করি; ওযুর মাধ্যমে আমরা পবিত্র হই। আমরা দেখি, আমাদের শরীরের ধুলো-ময়লা ধুয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে ওযু এর চেয়েও বেশি কিছু। তা শুধু শরীরের ধুলো-ময়লা ধুয়ে দেয় এবং আমাদের পবিত্র করে- এটুকুই নয়; বরং তা আমাদের গোনাহগুলোও ধুয়ে দেয়। গোনাহের নাপাকী থেকেও আমাদের পবিত্র করে। হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
إِذَا تَوَضّأَ الْعَبْدُ الْمُسْلِمُ - أَوِ الْمُؤْمِنُ - فَغَسَلَ وَجْهَهُ خَرَجَ مِنْ وَجْهِهِ كُلّ خَطِيئَةٍ نَظَرَ إِلَيْهَا بِعَيْنَيْهِ مَعَ الْمَاءِ - أَوْ مَعَ آخِرِ قَطْرِ الْمَاءِ -، فَإِذَا غَسَلَ يَدَيْهِ خَرَجَ مِنْ يَدَيْهِ كُلّ خَطِيئَةٍ كَانَ بَطَشَتْهَا يَدَاهُ مَعَ الْمَاءِ أَوْ مَعَ آخِرِ قَطْرِ الْمَاءِ -، فَإِذَا غَسَلَ رِجْلَيْهِ خَرَجَتْ كُلّ خَطِيئَةٍ مَشَتْهَا رِجْلَاهُ مَعَ الْمَاءِ - أَوْ مَعَ آخِرِ قَطْرِ الْمَاءِ - حَتّى يَخْرُجَ نَقِيّا مِنَ الذّنُوبِ.
যখন মুসলিম ওযু করে- চেহারা ধোওয়ার সময় পানির ফোঁটার সাথে চোখের গোনাহগুলো ধুয়ে যায় (বর্ণনাকারী বলেন, অথবা নবীজী বলেছেন, পানির শেষ ফোঁটার সাথে ধুয়ে যায়)। যখন হাত ধোয় তো হাতের গোনাহগুলো ধুয়ে যায়।... যখন পা ধোয় তো পানির ফোঁটার সাথে পায়ের দ্বারা কৃত গোনাহগুলো ধুয়ে যায়।... এভাবে বান্দা গোনাহ থেকে একেবারে পাক-সাফ হয়ে যায়। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৪৪
কষ্টের মুহূর্তে পূর্ণরূপে ওযু করা : গোনাহের কাফফারা
প্রচ- শীতের রাতে ওযু করতে যে কী কষ্ট- তা বর্ণনা করা সম্ভব নয়; শুধু ওযু করার সময় তা অনুভব করা যায়। পানি ছুতেই যেন ভয় লাগে। সে অবস্থায় যে পূর্ণরূপে ওযু করবে তার পুরস্কার কী?
এর পুরস্কার হল, গোনাহ মিটে যাওয়া। এর দ্বারা আল্লাহ গোনাহ মিটিয়ে দেন। বান্দার গোনাহ মিটে যাওয়ার চেয়ে বড় পুরস্কার আর কী হতে পারে? একটি দীর্ঘ হাদীসে একে ‘কাফফারাতুন’-পাপ মোচনকারী বলা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে-
وَالكَفّارَاتُ المكْثُ فِي المَسَاجِدِ بَعْدَ الصّلَاةِ، وَالْمَشْيُ عَلَى الْأَقْدَامِ إِلَى الْجَمَاعَاتِ، وَإِسْبَاغُ الوُضُوءِ فِي المَكَارِهِ.
পাপ মোচনাকরী হল- নামাযের পর (আরেক নামাযের অপেক্ষায়) মসজিদে অবস্থান করা। পায়ে হেঁটে মসজিদে গমন এবং কষ্টের মুহূর্তে পূর্ণরূপে ওযু করা। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৩২৩৩
গোনাহের সর্বোত্তম এলাজ বা চিকিৎসা হলো তাওবাঃ
***তাওবা দু’প্রকার। ইজমালি তাওবা ও তাফসীলি তাওবা।
ইজমালি তাওবা হলো একসঙ্গে পিছনের সমস্ত গোনাহ থেকে তাওবা করা। অর্থাৎ প্রথমে দু’রাকাত ‘ছালাতে তাওবা’ পড়ে এভাবে দু’আ করবে, ‘হে আল্লাহ! জীবনে আমার যত গোনাহ হয়েছে, যত ভুল-ভ্রান্তি ও পদস্খলন ঘটেছে, সমস্ত কিছু থেকে আমি আপনার কাছে মাফ চাই। হে আল্লাহ, আমি তাওবা করছি, ইসতিগফার করছি, এবং দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করছি যে, বাকি জীবনে কখনো কোন গোনাহ করবো না। আপনি কবুল করুন এবং তাওফীক দান করুন, আমীন।’ এটা হলো ইজমালি তাওবা।
এর পর হলো তাফছীলি তাওবা। অর্থাৎ প্রতিটি গোনাহ থেকে আলাদা আলাদা তাওবা করা। এই তাওবার নিয়ম এই যে, যে গোনাহ থেকে তাওবা করা হচ্ছে যদি তার ক্ষতিপূরণ করা সম্ভব হয় তাহলে তার ক্ষতিপূরণ করতে হবে। যেমন কারো সম্পদ আত্মসাৎ করা হয়েছে; এখন ক্ষতিপূরণ না করে বসে বসে তাওবা করছে। তো এমন তাওবা কীভাবে কবুল হতে পারে! আগে তো পয়সা ফেরত দিতে হবে, কিংবা যার পয়সা তার কাছ থেকে মাফ নিতে হবে, তারপর তাওবা করতে হবে। তদ্রূপ কাউকে কষ্ট দেয়া। তো মাফ চেয়ে নেয়ার মাধ্যমে এর ক্ষতিপূরণ হতে পারে। এটা না করে শুধু তাওবা করা যথেষ্ট নয়। উপরে যা বলা হলো তা হচ্ছে হুকূকুল ইবাদ বা বান্দার হক থেকে তাওবা করার বিষয়। আল্লাহর হক থেকে তাওবা করা সম্পর্কেও একই কথা।
মোটকথা, তাফছীলি তাওবা এই যে, মানুষ নিজের পিছনের জীবনের হিসাব নিয়ে দেখবে যে, তার যিম্মায় আল্লাহর, কিংবা বান্দার কোন হক ওয়াজিব আছে কি না? এবং সেগুলোর ক্ষতিপূরণ করা সম্ভব কি না? যদি সম্ভব না হয় তাহলে শুধু তাওবা করাই যথেষ্ট। আর যদি ক্ষতিপূরণ করা সম্ভব হয় তাহলে অবশ্যই ক্ষতিপূরণ করতে হবে। যেমন নামায আল্লাহর হক। তো হিসাব করে দেখবে যে, আমার যিম্মায় কত ওয়াক্তের নামায কাযা আছে। সেগুলো আদায় করার চেষ্টা-ফিকির শুরু করে দেবে।
এটা হলো তাফছীলি তাওবা।
জনৈক ব্যক্তি হযরত থানবী (রাহ.)-এর কাছে পত্র লিখেছেন যে, প্রতিসপ্তাহেই আমি তাওবা করি, কিন্তু একদিন পার না হতেই সব প্রতিজ্ঞা তছনছ হয়ে যায়। এ অবস্থা অবশ্য প্রায় প্রত্যেকের জীবনেই দেখা দেয়। মানুষ পিছনের সমস্ত গোনাহ থেকে খাঁটি মনেই তাওবা করে এবং ভবিষ্যতে গোনাহ না করার বিষয়ে খুব দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করে, কিন্তু একদু’দিন পরই নফস ও শয়তানের প্ররোচনায় এবং পরিবেশ ও পরিসি'তির মোকাবেলায় সব সংকল্প ভেসে যায় এবং আবার গোনাহ ও নাফরমানিতে লিপ্ত হয়ে পড়ে। সাধারণত প্রায় প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই এ অবস্থা দেখা দেয়। এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
এই পেরেশানির সমাধানের জন্য প্রথমেই আমাদের বুঝতে হবে তাওবার শর্ত কী কী? তাওবাতুন্নাছূহ বা খাঁটি তাওবার জন্য শরীয়াতে তিনটি শর্তের কথা বলা হয়েছে। এই শর্ততিনটি পাওয়া গেলেই বলা হবে যে, বান্দা খাঁটি তাওবা করেছে।
প্রথম শর্ত হলো অন্তরে গোনাহের প্রতি ঘৃণা থাকা এবং গোনাহ ও নাফরমানির কারণে অন্তরে লজ্জা ও অনুশোচনা আসা। যদি গোনাহের প্রতি ঘৃণাই না থাকে, অন্তরে যদি লজ্জা ও অনুশোচনাই না জাগে, গোনাহকে যদি গোনাইই মনে না করে তাহলে আর তাওবা হলো কোথায়? সেটা তো বরং বড় ভয়ের কথা। আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক মুসলমানকে তা থেকে হেফাযত করুন, আমীন। তো তাওবার জন্য প্রথম শর্ত হলো গোনাহের কারণে লজ্জিত ও শরমিন্দা হওয়া যে, ইয়া আল্লাহ, আমার তো বড় ভুল হয়ে গেছে! হায়, কেয়ামতের দিন কীভাবে আল্লাহর সামনে মুখ দেখাবো! আয় আল্লাহ, আমি ভুল স্বীকার করছি, আমাকে মাফ করে দিন।
দ্বিতীয় শর্ত হলো সঙ্গে সঙ্গে ঐ গোনাহটি ছেড়ে দেয়া। এছাড়া তাওবা পূর্ণ হতে পারে না। এটা কীভাবে সম্ভব যে, মানুষ একদিকে তাওবা করবে, অন্যদিকে গোনাহও করে যাবে! এটা তো আল্লাহর সঙ্গে তামাশার মত হলো! এর পরিণতি তো খুবই ভয়াবহ!
তাওবার তৃতীয় শর্ত হলো ভবিষ্যতে গোনাহ না করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা এবং প্রতিজ্ঞার উপর অবিচল থাকার আন্তরিক চেষ্টা করা। এই তিনটি হলো তাওবার শর্ত। এছাড়া তাওবা পূর্ণ হয় না।
তাওবার প্রথম যে শর্ত, অর্থাৎ গোনাহের কারণে লজ্জিত ও শরমিন্দা হওয়া, এটা তো প্রায় প্রত্যেক ঈমানদার ব্যক্তিরই হয়ে থাকে। সামান্য ঈমান যার দিলে আছে সে গোনাহ করার পর অবশ্যই লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়। তারপর দ্বিতীয় শর্ত গোনাহ ছেড়ে দেয়া, এর উপরও সাধারণত আমল হয়ে যায়। মানুষ গোনাহ করার পর কিছু সময়ের জন্য হলেও গোনাহ ছেড়ে দেয়। তবে তৃতীয় শর্তটি সম্পর্কে মনে দ্বিধা-সন্দেহ আসতে পারে। অর্থাৎ ভবিষ্যতে গোনাহ না করার যে প্রতিজ্ঞা সেটা দৃঢ় প্রতিজ্ঞা হলো কি না তা অনেক সময় বোঝা যায় না। কারণ প্রতিজ্ঞা করার সময়ও মনের মধ্যে এই খটকা লেগে থাকে যে, তাওবা তো করছি, কিন্তু কে জানে, কতক্ষণ এই তাওবার উপর অবিচল থাকতে পারবো? কতটা সময় নিজেকে গোনাহ থেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারবো? মনের মধ্যে এই খটকা ও দ্বিধা-সন্দেহ থাকা অবস্থায় কি আর দৃঢ় প্রতিজ্ঞা হয়? আর প্রতিজ্ঞতার দৃঢ়তা সম্পর্কেই যখন দ্বিধা-সন্দেহ, তখন আর তাওবা পূর্ণ হলো কোথায়? এসব কারণে মানুষ খুব পেরেশানির শিকার হয়। খটকা ও উৎকণ্ঠা তাওবার বিরোধী নয় বিষয়টি গভীরভাবে চিন্তা করে বুঝে নিন যে, পাক্কা ও সাচ্চা তাওবার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞা অবশ্যই জরুরি।
والله اعلم بالصواب
মন্তব্য (০)
কোনো মন্তব্য নেই।
এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর
৪৫২৬৯
সুদখোর বা সুদদাতাকে ঋণ দেওয়ার বিধান
২৮ নভেম্বর, ২০২৩
নামুজা

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি
সাম্প্রতিক প্রশ্নোত্তর
মাসায়েল-এর বিষয়াদি
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে