আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

প্রশ্নঃ ৭০৫২. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আসসালামু আলাইকুম, তুলনামূলকধর্মতত্ত্ব নিয়ে ইসলাম কি বলে?অনেকে মনে করেন এটি হচ্ছে দ্বীন থেকে গাফেল হয়ে যাওয়া। দয়া করে বিস্তারিত জানাবেন।

৫ জুলাই, ২০২১
সখিপুর

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم







তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বকে আরবিতে مقارنة الأديان ‘মুকারানাতুল-আদইয়ান’ এবং ইংরেজিতে ‘কম্পারেটিভ রিলিজিয়ন’ বলে অভিহিত করা হয়।

এই বিষয়ের উপর কুরআনুল কারীমের কিছু আয়াতের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে মুসলিম মনীষীগণ বহু পূর্ব থেকে লেখালেখি করেছেন। পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ রচনা করেছেন।

হিজরি দ্বিতীয় শতাব্দীতে মুসলিম পণ্ডিতেরা তফসীর, হাদীস ও ফিকাহ বিজ্ঞান গবেষণা ও সংকলনের কাজ শুরু করার সময় থেকেই কতিপয় ইসলামী পণ্ডিত "তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের" চর্চায় ব্রতী হন। ফলে, অন্যান্য ইসলামী জ্ঞানের সঙ্গে এ বিষয়ও ইসলামী জ্ঞানচর্চার একটি অংশ বলে বিবেচিত হয়।
যেসব ইসলামী পণ্ডিত ধর্মতত্ত্বের চর্চায় ব্রতী হন, তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য 'আন-নাওবাখতি'। তাঁর লিখিত কিতাবের নাম ‘আল-আরা ওয়াদ দিয়ানাত’ তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের ইতিহাসে প্রথম বই। যাতে বিভিন্ন ধর্মের ওপর বিস্তর আলোচনা এসেছে।
আল-মাসউদি লিখিত ‘আদ-দিয়ানাত’, আল-মাযহাবি (৪২০ হি.) লিখিত ধর্মতত্ত্বের ওপর তিন হাজার পৃষ্ঠা সংবলিত সবচেয়ে বড় গ্রন্থ ‘দারকুল বাগয়াতি ফি ওয়াসফিল আদিয়ান ওয়াল ইবাদাহ’ প্রকাশিত হয়।
ধর্মতত্ত্বের এ বিষয়ের ওপর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রামাণ্য গ্রন্থ রচনা করেন আবু মনসুর বাগদাদি (৪২৯ হি.)।
তাঁর লিখিত কিতাবের নাম ‘আল-মিলাল ওয়ান নিহাল’।
এ বিষয়ে লিখিত ইবনে হাজাম আন্দালুসির (৪৫৬ হি.) ‘আল-ফাসলু ফিল মিলাল ওয়াল আহওয়া ওয়ান নেহাল’। শাহরেস্তানির (৫৪৮ হি.) ‘আল-মিলাল ওয়ান নিহাল’ গ্রন্থ অন্যতম। এখানে আবু রায়হান আল-বিরোনির (৪৪০ হি.) লিখিত ‘তাহকিকু মা লিল হিন্দ মিন মাকুলাতিন-মাকবুলাতুন ফিল আকলে আও মারজুলাতিন’ গ্রন্থটির কথা উল্লেখ না করলেই নয়।
হিন্দুধর্মের ওপর লেখা বইটির লেখক অত্যন্ত পরিশ্রম করে হিন্দুধর্মের ইতিহাস-ঐতিহ্য, বিশ্বাস, অন্যান্য দৃষ্টিভঙ্গি, বিভিন্ন উপদল নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছেন।
ইসলামী পণ্ডিতদের এরূপ ব্যাপক গবেষণা ও পর্যালোচনায় তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের বিষয়টি ইসলামী জ্ঞানের অন্যান্য শাখার মতোই উন্নীত হয়। কেউ কেউ তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বকে ইসলামী জ্ঞান বলে অভিহিত করেছেন।

সর্বশেষ উল্লেখ করতে চাই, তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের উদ্দেশ্য হতে হবে ইসলামের সৌন্দর্য ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করা এবং এটাই আল্লাহ তাআলার কাছে একমাত্র মনোনীত ও গৃহীত ধর্ম হিসেবে প্রমাণ করা। তাহলেই এই বিষয়টি ইসলামী জ্ঞানের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে এবং এই বিষয়টির উদ্দেশ্য সার্থক হবে।

والله اعلم بالصواب

ইসহাক মাহমুদ মুফতী ও মুহাদ্দিস, জামিআ মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়া, মোহাম্মদপুর

মন্তব্য (0)

কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর