মৃত ব্যক্তির জন্য কুরআন বখশানো
প্রশ্নঃ ৬৯৬৩. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আস্সালামুওয়ালাইকুম আমার প্রশ্নটি হচ্ছে খতম বিষয়ক।মানুষ মারা গেলে যে ২৫০০০ এর দুয়া, সুরা পড়ে যে খতমে ইউনুস বলা হয় বক্শায় দেয় এটা কি গুনাহ? কোনো ভালো কিছুকে উদ্দেশ্য করে কুরআন খতম দিয়ে দুয়া করা বা কোনো মহৎ উদ্দেশ্য করে খতম বক্শায় দেয়া কি গুনাহ? আবার অনেকে অনেক দুয়া করে বক্শায় দেয় বলে যে এগুলো করা কি জায়েজ নাকি জায়েজ নয়?২. সূরা মূল্ক এর ফযীলত কি জানতে চাচ্ছিলাম। ৩. নামাজ পড়ার সময় হঠাৎ করে কেঁদে উঠলে কি নামাজ পুনরায় পড়তে হয়? ফরয ও সুন্নাতে নামাজের মুনাজাতে বাংলায় দুয়া করা নিষেধ এবং নফলে বাংলায় দুয়া করা যায়। এটার সত্যতা কতটুক তা জানতে চাচ্ছিলাম। ধন্যবাদ
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
ওয়া আলাইকুমুস সালাম,
১- দোয়া, সদকা,কুরআন খতমের মাধ্যমে মৃতের পর্যন্ত সওয়াব পৌঁছানো / বখশানো যায়। এটা জায়েয আছে। যে কোনো নেক কাজের ঈসালে সওয়াব করা জায়েয।
তবে দোয়া ইত্যাদিতে কোন নির্দিষ্ট সংখ্যার কথা হাদীসে আসে নি।
এটা আমরা সুবিধার জন্য করে থাকি, তবে কেউ নির্দিষ্ট সংখ্যাকে বাধ্যতামূলক বানালে এবং তাকে ইবাদত গন্য করলে এটা সহীহ হবেনা।
এখানে ২৫০০০ এর কম বা বেশী হলেও ঈসালে সওয়াব পুরা হয়ে যাবে।
মুমিনের প্রতিটি কাজ হওয়া চাই সুন্নাহসম্মত পন্থায়। নবীজীর পবিত্র সীরাত হওয়া উচিত তার কাজের আদর্শ। যে কাজে থাকে আদ্যোপান্ত নববী সুন্নাহ ও আদর্শের উপস্থিতি তা রূপে-রসে হয়ে ওঠে অপূর্ব। তার নূর ও খায়ের-বরকত হয় অনন্য। আর যে কাজ করা হয় মনগড়া ও নবউদ্ভাবিত পন্থায় এবং যার অনুপ্রেরণা হয় প্রচলিত রীতি-রেওয়াজ সেটা হয় নিষ্প্রাণ। তাতে কোনো খায়ের ও বরকত থাকে না।
২- সূরা আল-মুলকের কিছু ফযীলতঃ
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ الْمَلِكِ بْنِ أَبِي الشَّوَارِبِ، حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ عَمْرِو بْنِ مَالِكٍ النُّكْرِيُّ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي الْجَوْزَاءِ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ ضَرَبَ بَعْضُ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم خِبَاءَهُ عَلَى قَبْرٍ وَهُوَ لاَ يَحْسِبُ أَنَّهُ قَبْرٌ فَإِذَا فِيهِ إِنْسَانٌ يَقْرَأُ سُورَةَ تَبَارَكَ الَّذِي بِيَدِهِ الْمُلْكُ حَتَّى خَتَمَهَا فَأَتَى النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي ضَرَبْتُ خِبَائِي عَلَى قَبْرٍ وَأَنَا لاَ أَحْسِبُ أَنَّهُ قَبْرٌ فَإِذَا فِيهِ إِنْسَانٌ يَقْرَأُ سُورَةَ تَبَارَكَ الْمُلْكُ حَتَّى خَتَمَهَا . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " هِيَ الْمَانِعَةُ هِيَ الْمُنْجِيَةُ تُنْجِيهِ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ " . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ . وَفِي الْبَابِ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ .
ইবনু আব্বাস (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ কোন এক সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এক সাহাবী একটি কবরের উপর তার তাবু খাটান। তিনি জানতেন না যে, তা একটি কবর। তিনি হঠাৎ বুঝতে পারেন যে, কবরে একটি লোক সূরা আল-মুলক পাঠ করছে। সে তা পাঠ করে সমাপ্ত করলো। তারপর তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে এসে বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমি একটি কবরের উপর তাঁবু খাটাই। আমি জানতাম না যে, তা কবর। হঠাৎ বুঝতে পারি যে, একটি লোক সূরা আল-মুলক পাঠ করছে এবং তা সমাপ্ত করেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ সূরাটি প্রতিরোধকারী নাজাত দানকারী। এটা কবরের আযাব হতে তিলাওয়াতকারীকে নাজাত দান করে। (সূনান আত তিরমিজী-২৮৯০ ও তাবারানী - ১২৮০১)
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ جَعْفَرٍ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ عَبَّاسٍ الْجُشَمِيِّ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " إِنَّ سُورَةً مِنَ الْقُرْآنِ ثَلاَثُونَ آيَةً شَفَعَتْ لِرَجُلٍ حَتَّى غُفِرَ لَهُ وَهِيَ سُورَةُ تَبَارَكَ الَّذِي بِيَدِهِ الْمُلْكُ " . هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ .
আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কুরআনের মধ্যে ত্রিশ আয়াত বিশিষ্ট একটি সূরা আছে যেটি কারো পক্ষে সুপারিশ করলে তাকে মাফ করে দেয়া হয়। এ সূরাটি হল তাবারাকাল্লায়ী বিয়াদিহিল মুলক।(সূনানে তিরমিজী - ২৮৯১)
حَدَّثَنَا هُرَيْمُ بْنُ مِسْعَرٍ، - تِرْمِذِيٌّ - حَدَّثَنَا الْفُضَيْلُ بْنُ عِيَاضٍ، عَنْ لَيْثٍ، عَنْ أَبِي الزُّبَيْرِ، عَنْ جَابِرٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ لاَ يَنَامُ حَتَّى يَقْرَأَ : (الم * تَنْزِيلُ ) وَ ( تَبَارَكَ الَّذِي بِيَدِهِ الْمُلْكُ ) . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ رَوَاهُ غَيْرُ وَاحِدٍ عَنْ لَيْثِ بْنِ أَبِي سُلَيْمٍ مِثْلَ هَذَا . وَرَوَاهُ مُغِيرَةُ بْنُ مُسْلِمٍ عَنْ أَبِي الزُّبَيْرِ عَنْ جَابِرٍ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم نَحْوَ هَذَا . وَرَوَى زُهَيْرٌ قَالَ قُلْتُ لأَبِي الزُّبَيْرِ سَمِعْتَ مِنْ جَابِرٍ فَذَكَرَ هَذَا الْحَدِيثَ . فَقَالَ أَبُو الزُّبَيْرِ إِنَّمَا أَخْبَرَنِيهِ صَفْوَانُ أَوِ ابْنُ صَفْوَانَ وَكَأَنَّ زُهَيْرًا أَنْكَرَ أَنْ يَكُونَ هَذَا الْحَدِيثُ عَنْ أَبِي الزُّبَيْرِ عَنْ جَابِرٍ .
حَدَّثَنَا هَنَّادٌ، حَدَّثَنَا أَبُو الأَحْوَصِ، عَنْ لَيْثٍ، عَنْ أَبِي الزُّبَيْرِ، عَنْ جَابِرٍ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم نَحْوَهُ .
قَالَ حَدَّثَنَا هُرَيْمٌ، حَدَّثَنَا فُضَيْلٌ، عَنْ لَيْثٍ، عَنْ طَاوُسٍ، قَالَ تَفْضُلاَنِ عَلَى كُلِّ سُورَةٍ فِي الْقُرْآنِ بِسَبْعِينَ حَسَنَةً .
জাবির (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরা আলিফ লাম-মীম তানয়ীল ও সূরা “তাবারাকাল্লায়ী বিয়াদিহিল মুলক” না পাঠ করে ঘুমাতেন না।
হান্নাদ (রহঃ) ... জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণিত আছে। হুরায়ম ইবন মিসআর (রহঃ) ... তাউস (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেনঃ এই দুটো সূরা কুরআন করীমের প্রতিটি সূরার উপর সত্তর গুণ বেশী নেকী ধারণ করে।(সূনানে তিরমিজী - ২৮৯২)
অতএব, ঘুমানোর আগে সূরা মূল্ক পড়া উচিত।
৩- এ প্রশ্নটি আলাদাভাবে পুনরায় করুন।
والله اعلم بالصواب
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন