প্রশ্নঃ ৬৮৭৮. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, হযরত, এতিমের হক নষ্ট করে যে ব্যক্তি তার সম্পকে ইসলামে কি বিধান রয়েছে???
২৪ জুন, ২০২১
নারায়নগঞ্জ
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
এতীমের হক নষ্ট করা অন্যতম কবীরা গুনাহ।
এর শাস্তি সরাসরি জাহান্নাম।
কুরআনে হাদীসে এ বিষয়ে বহুবার সতর্ক করা হয়েছে এবং ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে।
এ ব্যপারে কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে,
১-
وَآتُوا الْيَتَامَىٰ أَمْوَالَهُمْ ۖ وَلَا تَتَبَدَّلُوا الْخَبِيثَ بِالطَّيِّبِ ۖ وَلَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَهُمْ إِلَىٰ أَمْوَالِكُمْ ۚ إِنَّهُ كَانَ حُوبًا كَبِيرًا
ইয়াতীমদেরকে তাদের সম্পদ দিয়ে দাও, আর ভালো মালকে মন্দ মাল দ্বারা পরিবর্তন করো না। আর তাদের (ইয়াতীমদের) সম্পদকে নিজেদের সম্পদের সাথে মিশিয়ে খেয়ো না। নিশ্চয়ই এটা মহাপাপ।(সুরা নিসা-০২)
ব্যাখ্যাঃ কেউ মারা গেলে তার মীরাছে তার ইয়াতীম সন্তানদেরও অংশ থাকে। কিন্তু বয়স কম হওয়ার কারণে সে সম্পদ তাদের হাতে সোপর্দ করা হয় না; তাদের যারা অভিভাবক থাকে, যেমন চাচা, ভাই প্রমুখ তারা ইয়াতীম শিশু সাবালক না হওয়া পর্যন্ত তাদের অংশ আমানত হিসেবে নিজেদের হেফাজতে রাখে। এ আয়াতে সেই অভিভাবকদেরকে তিনটি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। (ক) ইয়াতীম শিশু যখন সাবালক হয়ে যায়, তখন বিশ্বস্ততার সাথে তাদের সে আমানত তাদের বুঝিয়ে দাও। (খ) তোমরা এরূপ অবিশ্বস্ততার কাজ করো না যে, তারা তো তাদের পিতার মীরাছ হিসেবে ভালো ভালো জিনিস পেয়েছিল, আর তোমরা তা নিজেরা রেখে দিয়ে তার পরিবর্তে তাদেরকে মন্দ কিসিমের মাল দিয়ে দিলে। (গ) এরূপ করো না যে, তাদের মাল নিজেদের মালের সাথে মিশিয়ে তার কিছু অংশ জেনেশুনে বা অবহেলাভরে নিজেরা ব্যবহার করলে।
২- إِنَّ الَّذِينَ يَأْكُلُونَ أَمْوَالَ الْيَتَامَىٰ ظُلْمًا إِنَّمَا يَأْكُلُونَ فِي بُطُونِهِمْ نَارًا ۖ وَسَيَصْلَوْنَ سَعِيرًا
নিশ্চয়ই যারা ইয়াতীমদের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করে, তারা নিজেদের পেটে কেবল আগুন ভরতি করে। তারা অচিরেই এক জ্বলন্ত আগুনে প্রবেশ করবে। (সুরা নিসা-১০)
সারকথাঃ এতিমের হক নষ্ট করে এমন ব্যক্তির জন্য আল্লাহ তাআলা জ্বলন্ত আগুন তথা জাহান্নামের ব্যবস্থা করেছেন। জাহান্নামকে তার শাস্তি হিসাবে ধার্য করেছেন। এতীমের হক নষ্টের আগে এই ভয়াবহ শাস্তির কথা স্মরন করা দরকার।
আল্লাহ তাআলা কবীরা গুনাহ থেকে বাচার তাওফীক দান করেন।
হাদীসে এসেছেঃ
১- حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيْزِ بْنُ عَبْدِ اللهِ قَالَ حَدَّثَنِيْ سُلَيْمَانُ بْنُ بِلَالٍ عَنْ ثَوْرِ بْنِ زَيْدٍ الْمَدَنِيِّ عَنْ أَبِي الْغَيْثِ عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ اجْتَنِبُوْا السَّبْعَ الْمُوْبِقَاتِ قَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ وَمَا هُنَّ قَالَ الشِّرْكُ بِاللهِ وَالسِّحْرُ وَقَتْلُ النَّفْسِ الَّتِيْ حَرَّمَ اللهُ إِلَّا بِالْحَقِّ وَأَكْلُ الرِّبَا وَأَكْلُ مَالِ الْيَتِيْمِ وَالتَّوَلِّيْ يَوْمَ الزَّحْفِ وَقَذْفُ الْمُحْصَنَاتِ الْمُؤْمِنَاتِ الْغَافِلَاتِ
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, সাতটি ধ্বংসকারী বিষয় থেকে তোমরা বিরত থাকবে। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! সেগুলো কী? তিনি বললেন, (১) আল্লাহর সঙ্গে শরীক করা (২) যাদু (৩) আল্লাহ্ তা‘আলা যাকে হত্যা করা হারাম করেছেন, শরীয়ত সম্মত কারণ ব্যতিরেকে তাকে হত্যা করা (৪) সুদ খাওয়া (৫) ইয়াতীমের মাল গ্রাস করা (৬) রণক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যাওয়া এবং (৭) সরল স্বভাবা সতী-সাধ্বী মু’মিনাদের অপবাদ দেয়া। (বুখারী- ২৭৬৬)
২- حَدَّثَنِي هَارُونُ بْنُ سَعِيدٍ الأَيْلِيُّ، حَدَّثَنَا ابْنُ وَهْبٍ، قَالَ حَدَّثَنِي سُلَيْمَانُ بْنُ بِلاَلٍ، عَنْ ثَوْرِ بْنِ زَيْدٍ، عَنْ أَبِي الْغَيْثِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " اجْتَنِبُوا السَّبْعَ الْمُوبِقَاتِ " . قِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَا هُنَّ قَالَ " الشِّرْكُ بِاللَّهِ وَالسِّحْرُ وَقَتْلُ النَّفْسِ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلاَّ بِالْحَقِّ وَأَكْلُ مَالِ الْيَتِيمِ وَأَكْلُ الرِّبَا وَالتَّوَلِّي يَوْمَ الزَّحْفِ وَقَذْفُ الْمُحْصَنَاتِ الْغَافِلاَتِ الْمُؤْمِنَاتِ " .
আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ ধ্বংসকারী সাতটি কাজ থেকে তোমরা বেঁচে থেকো। প্রশ্ন করা হলো- হে আল্লাহর রাসূল! সেগুলো কী? তিনি বললেনঃ (১) আল্লাহর সাথে শারীক করা; (২) যাদু করা; (৩) আল্লাহ যার হত্যা নিষেধ করেছেন যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করা; (৪) ইয়াতীমের মাল অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করা; (৫) সুদ খাওয়া; (৬) যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়ন করা এবং (৭) সাধ্বী, সরলমনা ও ঈমানদার নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করা। (মুসলীম-৮৯)
والله اعلم بالصواب
মুসলিম বাংলা ইফতা বিভাগ
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন
এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর
মাসায়েল-এর বিষয়াদি
আল কুরআনুল কারীম
৪
হাদীস ও সুন্নাহ
৬
তাসাউফ-আত্মশুদ্ধি । ইসলাহী পরামর্শ
৩
শরীআত সম্পর্কিত
১৪
ফিতনাসমুহ; বিবরণ - করণীয়
২
আখিরাত - মৃত্যুর পরে
৩
ঈমান বিধ্বংসী কথা ও কাজ
৬
ফিরাকে বাতিলা - ভ্রান্ত দল ও মত
২
পবিত্রতা অর্জন
৮
নামাযের অধ্যায়
১৯
যাকাত - সদাকাহ
৫
রোযার অধ্যায়
৬
হজ্ব - ওমরাহ
২
কাফন দাফন - জানাযা
৫
কসম - মান্নত
১
কুরবানী - যবেহ - আকীকা
৪
বিবাহ শাদী
৮
মীরাছ-উত্তরাধিকার
২
লেনদেন - ব্যবসা - চাকুরী
৯
আধুনিক মাসায়েল
৬
দন্ড বিধি
২
দাওয়াত ও জিহাদ
৩
ইতিহাস ও ঐতিহ্য
৬
সীরাতুন নবী সাঃ । নবীজীর জীবনচরিত
৩
সাহাবা ও তাবেঈন
৩
ফাযায়েল ও মানাকেব
৩
কিতাব - পত্রিকা ও লেখক
৩
পরিবার - সামাজিকতা
৭
মহিলা অঙ্গন
২
আখলাক-চরিত্র
২
আদব- শিষ্টাচার
১২
রোগ-ব্যধি। চিকিৎসা
২
দোয়া - জিকির
২
নাম। শব্দ জ্ঞান
৩
নির্বাচিত
২
সাম্প্রতিক
১
বিবিধ মাসআলা
১