و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

১. আরবের মুশরিকদেরকে যখন জিজ্ঞাসা করা হতো তোমরা এইসব মূর্তির পূজা অর্চনা কেন করো?
তারা এর জবাবে বলতো, আমরা তো এসব মূর্তির ইবাদত করি না। আমরা শুধু এই উদ্দেশ্যে ইবাদত করি যে, এই মূর্তিগুলো আমাদেরকে আল্লাহর নৈকট্যশীল করে দেবে।

اَلَا لِلّٰہِ الدِّیۡنُ الۡخَالِصُ ؕ وَالَّذِیۡنَ اتَّخَذُوۡا مِنۡ دُوۡنِہٖۤ اَوۡلِیَآءَ ۘ مَا نَعۡبُدُہُمۡ اِلَّا لِیُقَرِّبُوۡنَاۤ اِلَی اللّٰہِ زُلۡفٰی ؕ اِنَّ اللّٰہَ یَحۡکُمُ بَیۡنَہُمۡ فِیۡ مَا ہُمۡ فِیۡہِ یَخۡتَلِفُوۡنَ ۬ؕ اِنَّ اللّٰہَ لَا یَہۡدِیۡ مَنۡ ہُوَ کٰذِبٌ کَفَّارٌ

স্মরণ রেখ, খালেস আনুগত্য তাঁরই প্রাপ্য। যারা তাঁকে ছাড়া অন্যসব অভিভাবক বানিয়ে নিয়েছে (এই কথা বলে যে, ) আমরা তাদের উপাসনা করি কেবল এজন্য যে, তারা আমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেবে, আল্লাহ তাদের মধ্যে সেই বিষয়েমীমাংসা করে দেবেন যার মাঝে তারা মতবিরােধ করছে। নিশ্চয়ই আল্লাহ এমন কোন ব্যক্তিকে পথে আনেন না, যে চরম মিথ্যুক, ঘোর কাফের।
—আয্‌-যুমার - ৩

আরবের সেই সব মূর্তিপূজারীদের যেমন আকীদা-বিশ্বাস ছিল, কথিত ঐলোকের কথায় সে ধরনের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার সাথে বান্দা সরাসরি কিছু চাইতে পারবে না। বলতে পারবে না। সব পীরদের মাধ্যমে হতে হবে। (নাউযুবিল্লাহ)!
এইসব শিরকী কথাবার্তা।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা বান্দার সব কথা শুনেন। বান্দার ডাকে সাড়া দেন। দেখুন কুরআনে আল্লাহ তাআলা নিজের সম্পর্কে কী বলছেন।

وَاِذَا سَاَلَکَ عِبَادِیۡ عَنِّیۡ فَاِنِّیۡ قَرِیۡبٌ ؕ اُجِیۡبُ دَعۡوَۃَ الدَّاعِ اِذَا دَعَانِ ۙ فَلۡیَسۡتَجِیۡبُوۡا لِیۡ وَلۡیُؤۡمِنُوۡا بِیۡ لَعَلَّہُمۡ یَرۡشُدُوۡنَ

(হে নবী! ) আমার বান্দাগণ যখন আপনার কাছে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে, তখন (আপনি তাদেরকে বলুন যে, ) আমি এত নিকটবর্তী যে, কেউ যখন আমাকে ডাকে আমি তার ডাক শুনি। সুতরাং তারাও আমার কথা অন্তর দিয়ে গ্রহণ করুক এবং আমার প্রতি ঈমান আনুক, যাতে তারা সঠিক পথে এসে যায়।
—আল বাকারা - ১৮৬

২. আমরা ঈমান বিনির্মাণে কালিমা শাহাদাত পড়েছি-
أشهد ألآ إله إلا الله وأشهد أن محمدا عبده و رسوله
অর্থ: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নাই, আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ তাঁর বান্দা ও তাঁর রাসূল।

এই বাক্যে আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে আল্লাহর বান্দা বলে সাক্ষ্য দিয়েছি। যিনি আল্লাহর বান্দা তিনি আল্লাহর সকল মুমিন বান্দাদের ঘরে ঘরে কেন থাকবেন? তিনি তো সকলের রব নন। যিনি আমাদের মালিক, আমাদের রব, তিনি আমাদের সকলের সঙ্গে সঙ্গে থাকবেন, এটাই স্বাভাবিক। এই বৈশিষ্ট্য তো কেবল মাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার। কোন বান্দার পক্ষে এটা কি করে সম্ভব?

পবিত্র কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তাআলা নিজের পরিচয় দিচ্ছেন -

ہُوَ الَّذِیۡ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَالۡاَرۡضَ فِیۡ سِتَّۃِ اَیَّامٍ ثُمَّ اسۡتَوٰی عَلَی الۡعَرۡشِ ؕ یَعۡلَمُ مَا یَلِجُ فِی الۡاَرۡضِ وَمَا یَخۡرُجُ مِنۡہَا وَمَا یَنۡزِلُ مِنَ السَّمَآءِ وَمَا یَعۡرُجُ فِیۡہَا ؕ وَہُوَ مَعَکُمۡ اَیۡنَ مَا کُنۡتُمۡ ؕ وَاللّٰہُ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ بَصِیۡرٌ

তিনিই আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। তারপর আরশে ইসতিওয়া ৩ গ্রহণ করেছেন। তিনি এমন প্রতিটি জিনিস জানেন, যা ভূমিতে প্রবেশ করে এবং যা তা থেকে বের হয় এবং জানেন এমন প্রতিটি জিনিস, যা আকাশ থেকে নেমে আসে এবং যা তাতে উত্থিত হয়। তােমরা যেখানেই থাক, তিনি তােমাদের সাথে আছেন এবং তােমরা যা-কিছুই কর, তা তিনি দেখেন।
—আল হাদীদ - ৪

لَہٗ مُلۡکُ السَّمٰوٰتِ وَالۡاَرۡضِ ؕ وَاِلَی اللّٰہِ تُرۡجَعُ الۡاُمُوۡرُ

আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর রাজত্ব তারই এবং সমস্ত বিষয় আল্লাহরই কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে।
—আল হাদীদ - ৫

এখানে দেখুন, এই রাজত্বে যদি অন্য কাউকে অংশীদার বানিয়ে দেয়া হয়, তবে সেটি কি ইনসাফ হবে? এতে কি শিরক হয়ে যায় না?

২. আল্লাহর রাসূলের কাছে আমাদের দুরুদ ও সালাম পৌঁছানোর জন্য আল্লাহ তাআলা একদল মালাইকাহ (ফেরেশতা) নিয়োজিত করে রেখেছেন। যারা জমিনে চষে বেড়ায়। উম্মতের সালাম নবীর কাছে পৌঁছে দেয়। এটি হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে নবীর প্রতি বিশেষ সম্মান।

বিপরীতে নবীর আশেক দাবিদার(!) একদল মূর্খ লোক নবীকে "সর্বত্র বিরাজমান" বলে, "সকল মুমিনের ঘরে ঘরে নবীর রূহ আছে" এমন কথা বলে নবীকে অসম্মান করে। তাদের কথায় এই মর্ম দাঁড়ায়, নবী সালাম কালেকশন করার জন্য আমাদের ঘরে ঘরে ভিক্ষুকের মতো ঘুরে বেড়ান (নাউযুবিল্লাহ)।

বাস্তবতায় বিষয়টি কি?
দেখুন আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র বাণী-

أَخْبَرَنَا عَبْدُ الْوَهَّابِ بْنُ عَبْدِ الْحَكَمِ الْوَرَّاقُ، قَالَ: حَدَّثَنَا مُعَاذُ بْنُ مُعَاذٍ، عَنْ سُفْيَانَ بْنِ سَعِيدٍ، ح وأَخْبَرَنَا مَحْمُودُ بْنُ غَيْلَانَ، قَالَ: حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، وَعَبْدُ الرَّزَّاقِ، عَنْ سُفْيَانَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ السَّائِبِ، عَنْ زَاذَانَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ لِلَّهِ مَلَائِكَةً سَيَّاحِينَ فِي الْأَرْضِ يُبَلِّغُونِي مِنْ أُمَّتِي السَّلَامَ»

আব্দুল্লাহ রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত:
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তা’আলার কতক ফেরেশতা এমনো রয়েছেন, যাঁরা পৃথিবীতে বিচরণ করে বেড়ায়, তাঁরা আমার উম্মতের সালাম আমার কাছে পৌঁছিয়ে থাকেন।
—সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ১২৮২

এই ধরনের ঈমান বিধ্বংসী কথাবার্তা- আকীদা থেকে আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে হিফাযত করুক।
মানুষকে হিদায়াতের কথা বলার পরিবর্তে মুমিনদের আকীদা ধ্বংসকারক ঐ দুষ্টু লোকগুলোর অশুভ বলয় থেকে এই উম্মতকে আল্লাহ তাআলা রক্ষা করুক।
আমীন।

والله اعلم بالصواب