আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

ঘুষযুক্ত প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা

প্রশ্নঃ ৫২৫০০. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমার ভাই গাড়ির মালিকানা বদলির কাজ করে, তার কাজটি এরকম, গাড়ির শোরুম থেকে যখন কেউ গাড়ি কিনে তখন মালিকানা বদলির জন্য আমার ভাইকে শোরুম মালিক কাজ দেয় আর আমরা সবাই জানি যে বি.আর.টি.এতে মালিকানা বদলিতে ঘুষ ছাড়া কাজ হয় না, এটা এক রকম অসম্ভব। শোরুম মালিক মালিকানা বদলির টাকার সাথে ঘুষের টাকা এবং ভাইয়ের খরচ যোগ করে তাকে দেয়, আর আমার ভাই বি.আর.টি.এতে সেই টাকা জমা দিয়ে কাজটি করে দেয়। তো আমার জানার বিষয় হচ্ছে, এই কাজের জন্য ভাই যে খরচটা নেয় তা ওর জন্য হালাল হবে কি? বলা বাহুল্য যে, তার এই কাজ ছাড়া অন্য কাজের তেমন অভিজ্ঞতা নেই, কাজটি যদি হারাম হয়ে থাকে তাহলে কিভাবে করলে কাজটি হালাল হবে?,

৮ মার্চ, ২০২৪

ঢাকা

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


বৈধভাবে আয়-রোজগার করা ইবাদত। ঘুষ কিংবা উৎকোচ গ্রহণ করে অন্যায়ভাবে আয়-রোজগার করা বৈধ নয় বরং তা হারাম। আল্লাহ তাআলা অবৈধ পন্থায় উপার্জন করতে নিষেধ করেছেন। কেননা ঘুষ বা উৎকোচ গ্রহণ করা সুদ, চুরি-ডাকাতি, জিনা-ব্যভিচারের মতো হারাম ও অবৈধ কাজ। যার চূড়ান্ত পরিণাম জাহান্নামের কঠিন শাস্তি।
ঘুষ ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য মারাত্মক ব্যাধি। ঘুষের আদান-প্রদান তথা লেনদেন একটি নিকৃষ্ট পন্থা। এ ব্যাধি ও নিকৃষ্ট পন্থা থেকে বিরত থাকা ইসলামের নির্দেশ। ঘুষ গ্রহণে রয়েছে মারাত্মক পরিণতি। আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে ঘুষ গ্রহণের মাধ্যমে আয়-উপার্জন করাকে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না এবং মানুষের ধন-সম্পত্তির কিছু অংশ জেনে-বুঝে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে বিচারককে উৎকোচ দিও না।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৮)

ঘুষের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কোনো নেক কাজ এবং দোয়াও কবুল হয় না। এমকনি হজ ও ওমরাহ পালনও কবুল হয় না।
তাফসিরে ইবনে কাসিরের বর্ণনায় এসেছে- ঘুষের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি জালেম এবং আল্লাহর কাছে সে অপরাধী হিসেবে বিবেচিত হবে। ঘুষের প্রতি নিন্দা এবং তা আদান-প্রদানকারীর ওপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অভিসম্পাত করেছেন। হাদিসে এসেছে-
- হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘুষদাতা এবং গ্রহীতার ওপর অভিসম্পাত করেছেন।’ (মুসনাদে আহমাদ)- হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু আরও বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘ঘুষ আদান-প্রদানকারী উভয়ে জাহান্নামে যাবে।’ (তাবরানি)
ঘুষের কাজে সহযোগিতার কুফল : ঘুষের কাজে সহযোগিতাকারী দালালরাও অভিশপ্ত। ইসলামের দৃষ্টিতে ঘুষ আদান-প্রদানকারী যেভাবে অভিশপ্ত। ঠিক সেভাবে ঘুষ লেনদেনের দালালরাও অভিশপ্ত। হাদিসে এসেছে- হজরত সাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘুষ আদান-প্রদানকারী এবং এর দালালদের সবার ওপর অভিশম্পাত করেছেন।’ (মুসনাদে আহমাদ)
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু তো এই পর্যন্ত বলেছেন যে, বিচারকের জন্য কারও থেকে ঘুষ নিয়ে ফয়সালা করা কুফরীর সমতুল্য। আর সাধারণ মানুষের জন্য পরষ্পর ঘুষ লেনদেন করা হারাম অপবিত্র উপার্জন।’ (তাবরানি)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, ঘুষ থেকে নিজেকে বিরত রাখা। ঘুষের কাজে অন্যকে সহযোগিতা না করা। ঘুষের কাজে কারো পক্ষে দালালি না করা। এই মারাত্মক ব্যাধি ও ক্ষত থেকে বেঁচে থাকাই ঈমানের অনিবার্য দাবি।

বাকি বাধ্য হলে সুদ এবং ঘুষ দেয়া জায়েজ আছে। তবে যিনি তা গ্রহণ করবেন তিনি সর্বদাই মারাত্মক গুনাহে গুনাহগার হবেন এবং পূর্ব থেকে না জেনে কেউ যদি কোন ঘুষযুক্ত প্রতিষ্ঠানের সাথে চাকরি নিয়ে থাকেন তাহলে অন্যত্র কোন ভালো এবং হালাল চাকরি পাওয়ার আগ পর্যন্ত একান্ত অপারগতায় এমন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা জায়েজ আছে। তবে ঘুষের লেনদেন ছাড়া ভাল কোন চাকরি বা ব্যবসার চেষ্টাও চালিয়ে যেতে হবে। এবং মোটামুটি চলার ব্যবস্থা হয়ে যায় এমন কোন উপার্জনের ব্যবস্থা হলেও ঘুষযুক্ত প্রতিষ্ঠান বা চাকরি বর্জন করে হালাল চাকরি গ্রহণ করতে হবে এবং এর সাথে সাথে আল্লাহ তাআলার কাছে সর্বদা তওবা ও ইস্তিগফার করতে হবে।
হালাল চাকরির ব্যবস্থা হয়ে গেলে বা মোটামুটি চলা যায় এরকম কোন ব্যবস্থা হয়ে গেলে অতিরিক্ত বা মোটা অংকের আশায় ঘুষযুক্ত চাকরি করা কোনভাবেই জায়েজ হবে না।
আল্লাহর কাছে দোয়া করুন, ইনশাআল্লাহ, আল্লাহ তাআলা হালাল রুজির ব্যবস্থা করে দিবেন।
دفع المال للسلطان الجائر لدفع الظلم عن نفسه وماله ولاستخراج حق له ليس برشوة يعني في حق الدافع (رد المحتار، كتاب الحظر ولاباحة-9/607، فتح القدير، كتاب ادب القاضى-7/255، البحر الرائق، كتاب القضاء-6/262

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি মোহাম্মদ আমীর হোসাইন
মুহাদ্দীস, শাইখ আবু সাঈদ ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার মোহাম্মাদপুর।

প্রসঙ্গসমূহ:

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৫৫২৫৫

হালাল হারাম


১৮ মার্চ, ২০২৪

টঙ্গী

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি মোহাম্মদ আমীর হোসাইন

৭১৪৮১

মানুষের কঙ্কাল বিক্রি করার বিধান


২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

নারায়ণগঞ্জ ১৩৬১

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী সিরাজুল ইসলাম

৫৪৬৩০

সরকারী চাকুরী কি জায়েয?


২ মে, ২০২৪

হাটহাজারী

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

৭৯৩৮৪

টাকা দিয়ে মিথ্যা ব্যাংক স্টেটমেন্ট বানানো কি জায়েয?


২০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

Narayanganj

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী নাঈম সিদ্দীকী বিন আব্দুস সাত্তার

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy