আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

জান্নাত জাহান্নামের সংখ্যা কয়টি? সেগুলোর কয়টি দরজা আছে?

প্রশ্নঃ ৫০৭৬১. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমি জানি জান্নাত ৭ টি এবং জাহান্নাম ৮ টি। কিন্তু অনেকে বলে জান্নাত ১ টি আর জাহান্নাম ১ টি! কোনটি সঠিক। আর যদি তাদের কথা সঠিক হয়ে থাকে তাহলে সুরা নিসা আয়াত ১৩- ১৪ এ আল্লাহ পাক বলেছেন (এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমা। যে কেউ আল্লাহ ও রসূলের আদেশমত চলে, তিনি তাকে জান্নাত সমূহে প্রবেশ করাবেন, যেগুলোর তলদেশ দিয়ে স্রোতস্বিনী প্রবাহিত হবে।) এখানে জান্নাত সমুহ বলতে কি বোঝানো হয়েছে

৪ জানুয়ারী, ২০২৪
Dhaka

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


এক. জান্নাত অনেক, যার প্রকৃত সংখ্যা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। আল্লাহ তাআলা বলেন,

إِنَّ اللَّهَ يُدْخِلُ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ إِنَّ اللَّهَ يَفْعَلُ مَا يُرِيدُ

নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে আল্লাহ্‌ তাদেরকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতসমূহে, যেগুলোর তলদেশ দিয়ে নির্ঝরণীসমূহ প্রবাহিত হয়। আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করেন। (সূরা হজ ১৪)

وَلِمَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ جَنَّتَانِ যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সামনে পেশ হওয়ার ভয় রাখে, তার জন্যে রয়েছে দু’টি জান্নাত। (সুরা আর-রহমান ৪৬)

وَمِن دُونِهِمَا جَنَّتَانِ এই দু’টি ছাড়া আরও দু’টি জান্নাত রয়েছে। (সুরা আর-রহমান ৬২)

হাদিস শরিফে এসেছে, আনাস বিন মালিক রাযি. কর্তৃক বর্ণিত, বদরের যুদ্ধে হারিসা রাযি. শহীদ হলেন। আর তখন তিনি তরুণ ছিলেন। তাঁর মা নবী ﷺ-এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! হারিসা আমার কত আদরের আপনি তো তা অবশ্যই জানেন। (বলুন) সে যদি জান্নাতী হয় তাহলে আমি ধৈর্য ধারণ করব এবং আল্লাহর নিকট সাওয়াবের আশা পোষণ করব। আর যদি এর অন্যথায় হয় তাহলে আপনি তো দেখতেই পাচ্ছেন, আমি (তার জন্য) যা করছি। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন,
وَيْحَكِ أَوَهَبِلْتِ أَوَجَنَّةٌ وَاحِدَةٌ هِيَ إِنَّهَا جِنَانٌ كَثِيرَةٌ، وَإِنَّهُ فِي جَنَّةِ الْفِرْدَوْسِ
তোমার জন্য আফসোস! অথবা তুমি কি নির্বোধ হয়ে গেলে! জান্নাত মাত্র একটাই না কি? জান্নাতের সংখ্যা অনেক। আর সে আছে জান্নাতুল ফিরদাউসে। (বুখারী ৩৬৯৩)

দুই. একাধিক হাদিসে এসেছে জান্নাতে প্রবেশের দরজা আটটি। যেমন, এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

مَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ يَتَوَضَّأُ فَيُبْلِغُ – أَوْ فَيُسْبِغُ – الْوُضُوءَ ثُمَّ يَقُولُ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُ اللَّهِ وَرَسُولُهُ إِلاَّ فُتِحَتْ لَهُ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ الثَّمَانِيَةُ يَدْخُلُ مِنْ أَيِّهَا شَاءَ ‏

তোমাদের মধ্যে থেকে যখন কোনো ব্যক্তি যত্নসহকারে সম্পূর্ণরূপে অথবা উত্তম রূপে ওজু করবে এবং বলবে– أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ، وَأَنََّ مُحَمَّدًا عَبْدُ اللَّهِ وَرَسُولُهُ
(অর্থ: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো সত্য উপাস্য নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, অব্যশই মুহাম্মাদ ﷺ আল্লাহর অতি প্রিয় বান্দা য় রাসূল।)

তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেওয়া হবে, সে যে দরজা দিয়ে ইচ্ছে করবে, সেই দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। (মুসলিম ৪৪৬)

উক্ত আট দরজার সুপ্রশস্তার বিবরণ দিতে গিয়ে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,

أَنَّ مَا بَيْنَ مِصْرَاعَيْنِ مِنْ مَصَارِيعِ الْجَنَّةِ مَسِيرَةُ أَرْبَعِينَ سَنَةً

জান্নাতের দরজার দুই পাল্লার মাঝে চল্লিশ বছরের সফরের পথ। (মুসলিম ৭১৬৬)

তিন. জাহান্নাম একটি, তবে তার দরজা সাতটি। আল্লাহ বলেন,

وَإِنَّ جَهَنَّمَ لَمَوْعِدُهُمْ أَجْمَعِينَ . لَهَا سَبْعَةُ أَبْوَابٍ لِّكُلِّ بَابٍ مِّنْهُمْ جُزْءٌ مَّقْسُومٌ

তাদের সবার নির্ধারিত স্থান হচ্ছে জাহান্নাম। এর সাতটি দরজা আছে। প্রত্যেক দরজার জন্যে এক একটি পৃথক দল আছে। (সূরা হিজর ৪৩, ৪৪)

উক্ত আয়াতের তাফসিরে ইবনু জুরাইজ রহ. বলেন,

لَهَا سَبْعَة أَبْوَاب أَوَّلهَا جَهَنَّم , ثُمَّ لَظَى , ثُمَّ الْحُطَمَة , ثُمَّ السَّعِير , ثُمَّ سَقَر , ثُمَّ الْجَحِيم , ثُمَّ الْهَاوِيَة

তার রয়েছে সাতটি দরজা। প্রথমটির নাম ‘জাহান্নাম’ (দুর্ভোগ, তীব্রতা, অন্ধকার)। তারপর ‘লাযা’ (অগ্নিশিখা)। তারপর ‘হুতামা’ (ধ্বংস করা, চূর্ণ করা)। তারপর ‘সায়ীর’ (চরম প্রজ্বলন)। তারপর ‘সাকার’ (প্রচণ্ড তাপ)। তারপর ‘জাহীম’ (জ্বলন্ত শিখা)। তারপর ‘হাবিয়া’ (প্রজ্বলিত আগুন)। (তাফসীরে তাবারী)

আলী রাযি বলেন,

أَبْوَاب جَهَنَّم سَبْعَة بَعْضهَا فَوْق بَعْض , فَيَمْتَلِئ الْأَوَّل , ثُمَّ الثَّانِي , ثُمَّ الثَّالِث , ثُمَّ تَمْتَلِئ كُلّهَا

জাহান্নামের দরজা সাতটি। একটি আরেকটির ওপর স্থাপিত (উপর-নীচ)। প্রথমটি পূর্ণ হয়ে গেলে দ্বিতীয়টি, এরপর তৃতীয়টি…এভাবে সবগুলো পূর্ণ করা হবে। (প্রাগুক্ত)
– (শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী)

والله اعلم بالصواب

মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি উস্তাজুল ইফতা, জামিয়া ইমাম বুখারী, উত্তরা, ঢাকা।
প্রসঙ্গসমূহ:

মন্তব্য (0)

কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন