আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

হরতাল-অবরোধ:ইসলামী দৃষ্টিকোণ

প্রশ্নঃ ৪৫৬৩০. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমার প্রশ্ন টা হলো ইসলামে রাজনৈতিক দলের (ইসলামি দল) অবরোধ বা হরতাল কতটুকু জায়েজ বা অধিকার আছে বিশেষ করে আমাদের দেশে?,

১৩ নভেম্বর, ২০২৩

ঢাকা ১২১৭

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


সম্মানিত প্রশ্নকারী!
আপনার প্রশ্নের জবাবে আমরা শাইখুল ইসলাম আল্লামা তাকি উসমানী হাফি. এর লিখিত “রাজনীতি:ইসলামী চিন্তাধারা” নামক গ্রন্থ থেকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তার প্রদত্ত্ব বক্তব্য তুলে ধরছি। আশা করছি ইসলামের দৃষ্টিতে এগুলোর বিধান সুস্পষ্টভাবে ফোঁটে উঠবে।

শাইখুল ইসলাম বলেন, “হরতাল ... ইত্যাদির মাধ্যমে সরকারের সামগ্রিক কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দিয়ে সরকারকে দাবী মনতে বাধ্য করা হয় । এ সব কর্মপদ্ধতির কোন কোনটি যেমন- অনশন ধর্মঘট পুরোপুরি হারাম। অনশন ধর্মঘট কখনও কখনও আত্মহত্যার দিকে নিয়ে যায়। মানুষের জীবন, সম্পদ, সম্মানের জন্যে ক্ষতিকর অন্য কোন পদ্ধতি অবলম্বনও হারাম। অনুরূপভাবে সরকারি সম্পদ নষ্ট করাও হারাম। কেননা, সরকারি সম্পদ শাসকের সম্পদ জনগণের যৌথ-সম্পদ । এই সম্পদের ক্ষতি সাধন করে সমগ্র জাতির ক্ষতি সাধন করা হয় । এই গোনাহের ক্ষমাপ্রাপ্তিও কঠিন । কেননা এর সম্পর্ক ব্যক্তির হকের সাথে । সুতরাং কেবল তওবা করার দ্বারা এই গুনাহ থেকে ক্ষমা পাওয়া যাবে না । ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। আর যেহেতুে সরকারি সম্পদ সব নাগারিকের সম্পদ, তাই রাষ্ট্রের প্রতিটি ব্যক্তির কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে । এটা কার্যত অসম্ভব । সুতরাং ব্যক্তিগত সম্পদ নষ্টের চেয়ে রাষ্ট্রীয় সম্পদ নই। করা আরো বেশি জটিল।

হরতাল হলো শাসকের কর্মকাণ্ডের প্রতি অসন্তুষ্টি ও প্রতিবাদের প্রকাশ হিসেবে নিজেদের কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার আবেদন জানানো। এই আবেদনের পর মানুষকে কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে বাধ্য করা না হলে এই ধরনের আবেদন জানানো এবং এই আবেদনে স্বেচ্ছায় সাড়া প্রদান করে নিজস্ব কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকাতে কোন গুণাহ নেই । এটি মুবাহ বা বিবেচনা সাপেক্ষ বিষয় এবং সাধারণভাবে জায়েয বা বৈধ। তবে এই শর্তারোপ আবশ্যক যে, মানুষের অতি আবশ্যক বিষয়গুলো যেমন অসুস্থ ব্যক্তির যাতায়াত এই ধরনের কর্মসূচির আওতামুক্ত রাখতে হবে ।

কিন্তু কার্যত ধর্মঘট আহবানকারীরা কেবল এতটুকুতে ক্ষান্ত দেন না । তারা সাধারণ জনতাকে দাপ্তরিক বা ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে বাধ্য করে। এটা ধর্মঘটের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। গাড়ি চলাচল করতে থাকলে তাতে ইট-পাথর নিক্ষেপ করা হয়, রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা স্থাপন করা হয় এবং কোন ব্যক্তি ধর্মঘটে অংশ না নিলে তাকে অন্তত ক্ষোভের দৃষ্টিতে দেখা হয় অথবা তাকে জোরপূর্বক ধর্মঘটে অংশ নিতে বাধ্য করা হয় । তার উপর অত্যাচার করা হয়। এই সকল কর্মকা- সম্পূর্ণরূপে হারাম। এর ফলে প্রতিদিনের রুজি প্রতিদিন উপার্জনকারী দরিদ্র ব্যক্তি নিজের রুষি হতে বঞ্চিত হয়। অনেক অসুস্থ ব্যক্তি চিকিৎসা নিতে না পেরে কষ্ট পায়, অনেকে মৃত্যুমুখে পতিত হয়।

আশ্চর্যের বিষয় হলো, গণতন্ত্র মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলে। কিন্তু ধর্মঘটে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকা ব্যক্তিকে তার মতামত প্রকাশের সুযোগ প্রদান করা হয় না। এটি ইসলামসম্মত নয়। নৈতিকতা ও মত প্রকাশের মৌলিক স্বাধীনতার মূল-নাতির আলোকেও এটি গ্রহণযোগ্য নয়। বর্তমান সময়ের ধর্মঘট এ সব বিষয় থেকে মুক্ত নয়। হরতাল আহবানকারী শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল আহবান করে এবং জনগণ স্বেচ্ছায় কর্মকা- চালিয়ে যায় অথবা কর্মকা- চালানো থেকে বিরত থাকে- এই ধরনের হরতাল বর্তমানে একেবারেই বিরল। অনেক মুবাহ বা বিবেচনা- সাপেক্ষ কর্ম না-জয়েয কর্মকাণ্ড-র মাধ্যমে পরিণত হয় । এসব ক্ষেত্রে ‘মাধ্যম- প্রতিহত করার নীতি প্রয়োগ করা হয় এবং এই নীতির আলোকে সেই মুবাহ কাজটিও না-জায়েয বিবেচিত হয়।

সুতরাং জোর-জরবদস্তিমূলক এবং জান-মালের নিরাপত্তার নষ্ট করে হরতাল পালন শরীআসম্মত কর্মকাণ্ডের মাঝে গণ্য হয় না। আর রাজনীতি লক্ষ্য নয়; লক্ষ্য হলো আল্লাহ তায়ালার আনুগত্য। সুতরাং রাজনীতির ক্ষেত্রে গৃহীত কর্মকাণ্ডও শরীআ-সম্মত হওয়া উচিত এবং সেগুলোর সাথে শরীআ বিরোধী কোন কিছুই সম্পৃক্ত থাকা উচিত নয় । ইসলামি বিধান লঙ্ঘন করে ইসলাম প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করার কোন অর্থ নেই ।

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি
উস্তাজুল ইফতা, জামিয়া ইমাম বুখারী, উত্তরা, ঢাকা।

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৮১৭৯৯

অমুসলিমের সাথে বর্গা চুক্তি করলে উশর নাকি খারাজ দিবে?


২০ ডিসেম্বর, ২০২৪

নামবিহীন রাস্তা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

৯৩২৮৩

বছরের শুরু শেষ নেসাব ঠিক ছিলো, মাঝে যে সম্পদ বেড়েছে তার যাকাতের জন্য বৎসর পূর্ণ হতে হবে?


৫ মার্চ, ২০২৫

Mahini

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

৭৭১৪৪

নবীর কাছে উম্মতের গুনাহ পেশ করা হয়?


২৪ নভেম্বর, ২০২৪

HHMC+F৪৭ - Old Umm Al Quwain - Umm Al Quawain - সংযুক্ত আরব আমিরাত (AE)

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

৮৮৭৩৭

মুদারাবার পদ্ধতি


১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

খাগড়াছড়ি

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy