আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

ধৈর্যশীল হওয়ার পথ ও পদ্ধতি

প্রশ্নঃ ৪৪৬২২. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, বলছিলাম হুজুর আমার ধৈর্য খুব কম কি করে ধরে যে বেশি হবে যদি কোন আমল বলে দিতেন খুব ভালো হতো কোন কাজে গেলে ঠিক মতো কাজ করতে পারিনা মন বসে না যাব একরকম হয়ে যে খুব কাজ করব কিন্তু সেখানে গিয়ে মন পাল্টে যায় ঘরে চলে আসি আমার বিয়ে হয়ে গেছে আর তিন মাস পরে বাচ্চা হবে তো সে কাজে যাচ্ছি একটু দোয়া করবেন যাতে ভালোভাবে কাজ করতে পারি ধৈর্য ধরে থাকতে পারি কিছু একটা আমল বলে দিন।

১ নভেম্বর, ২০২৩
Diamond Harbour, South Twenty Four Parganas, West Bengal, India

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


ধৈর্যশীল হওয়ার পথ ও পদ্ধতি

ধৈর্য সৌভাগ্যের প্রতীক। ধৈর্যহীন ব্যক্তি আলোহীন মশালের মতো। ধৈর্য জন্মগত কিংবা পৈতৃকসূত্রে পাওয়া কোনো কিছু নয়। কেউ যদি নিজেকে ধৈর্যশীল বান্দা হিসেবে গড়ে তুলতে চায় তাহলে তার জন্য সম্ভব।
কারণ ধৈর্য এমন ফুল, যা সব জায়গায় সুবাস ছড়ায়। আল্লাহ তাআলা কোরআনের বিভিন্ন জায়গায় ধৈর্যশীলদের প্রশংসা করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করো এবং নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করবে না, করলে তোমরা সাহস হারাবে এবং তোমাদের শক্তি বিলুপ্ত হবে। আর ধৈর্য ধারণ করো।
নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।’ (সুরা আনফাল, আয়াত : ৪৬)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর আমরা তোমাদের অবশ্যই পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং ধন-সম্পদ, জীবন ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা। আর আপনি সুসংবাদ দিন ধৈর্যশীলদের।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৫৫)

যেভাবে ধৈর্যের চর্চা করব
এক. এ কথা বিশ্বাস করা যে সব কিছুর রাজত্ব একমাত্র আল্লাহর।
ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি যা চান তা-ই করতে পারেন। তাঁর কোনো কাজের ওপর প্রশ্ন করার কারো কোনো অধিকার নেই। আল্লাহ তাআলা বলেন, তিনি যা করেন সে বিষয়ে তিনি জিজ্ঞাসিত হবেন না; বরং তাদের জিজ্ঞাসা করা হবে।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত : ২৩ )

দুই. সব বিষয় আল্লাহর কাছে লিপিবদ্ধ আছে। আমার কখন কোন মুসিবত আসবে তা আল্লাহর কাছে লিপিবদ্ধ আছে।
অসুস্থতা, দারিদ্র্য, দুঃখ-বেদনা যাবতীয় কল্যাণ-অকল্যাণ সব কিছু আল্লাহর কাছে লিপিবদ্ধ আছে, এ ধারণা একজন মুমিন সর্বদাই পোষণ করে। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘যদি সব উম্মত তোমার কোনো উপকারের উদ্দেশ্যে ঐক্যবদ্ধ হয়, তাহলে ততটুকু উপকার করতে পারবে, যতটুকু আল্লাহ তাআলা তোমার জন্য লিখে রেখেছেন। অন্যদিকে যদি সব উম্মত তোমার কোনো ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে একতাবদ্ধ হয়, তাহলে ততটুকু ক্ষতি করতে সক্ষম হবে, যতটুকু আল্লাহ তাআলা তোমার তকদিরে লিখে রেখেছেন। কলম তুলে নেওয়া হয়েছে এবং লিখিত কাগজও শুকিয়ে গেছে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৫১৬ )

তিন. এ কথা বিশ্বাস করা, পৃথিবীতে যত মানুষ এসেছে কেউ-ই আপদমুক্ত নয়। ছোট-বড় বিপদাপদে সবাই আক্রান্ত হয়েছে। এ দুনিয়া বিপদের জায়গা। তাই এমন ধারণা পোষণ করা যে আমার কোনো ধরনের বিপদাপদ আসবে না, তা চরম ভুল; বরং এর মধ্যে বেঁচে থাকতে হবে। আল্লাহ তাআলা কখনো কখনো পরীক্ষার জন্য বিপদ দিয়ে থাকেন, আবার গুনাহ মাফ করার জন্য বিপদ দিয়ে থাকেন, বান্দাকে আরো আল্লাহর নৈকট্য করে তোলার জন্য বিপদ দিয়ে থাকেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মানুষ কি মনে করেছে যে আমরা ঈমান এনেছি—এ কথা বললে তাদের পরীক্ষা না করে অব্যাহতি দেওয়া হবে?’ (সুরা আনকাবুত, আয়াত : ২-৩)

চার. বান্দা যেন বিপদে পড়ে আল্লাহর কাছে ফিরে আসে, সে জন্য আল্লাহ বান্দাকে ছোট-বড় বিপদ দিয়ে থাকেন; এই বিশ্বাস স্থাপন করা। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যারা তাদের ওপর বিপদ এলে বলে, আমরা তো আল্লাহরই। আর নিশ্চয়ই আমরা তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৫৬)

পাঁচ. বান্দার জানা নেই তার জন্য কোনটা কল্যাণকর আর কোনটা অকল্যাণকর। তাই কখনো কখনো বিপদ তার জন্য আশীর্বাদ নিয়ে আসে। আল্লাহ তাআলা কোরআনে স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘তোমরা যা অপছন্দ করো হতে পারে তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর এবং যা ভালোবাসো, হতে পারে তা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। আর আল্লাহ জানেন তোমরা জানো না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২১৬)

ছয়. এ কথা চিন্তা করা যে দুনিয়া কারো স্থায়ী জায়গা নয়; বরং এটি একটি স্টেশনের মতো। তাই ছোট ছোট মসিবতের ওপর যদি ধৈর্য ধারণ করি, তাহলে আল্লাহ তাআলা এর জন্য অনেক বড় বিনিময় দান করবেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘দুনিয়া মুমিনের জন্য কয়েদখানা এবং কাফিরের জন্য জান্নাততুল্য।’ (মুসলিম, হাদিস : ৭৩০৭)

সাত. বিপদাপদে এ কথা মনে করা যে আল্লাহ তাআলা যুগে যুগে বিভিন্ন নবী-রাসুল ও তাঁর প্রিয় বান্দাদের নানাভাবে পরীক্ষা করেছেন। আমাকেও পরীক্ষা করে আমাকে নেক বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করবেন। নিশ্চয়ই বিপদের সঙ্গে মুক্তি আছে, কষ্টের সঙ্গে আছে স্বস্তি। এ ছাড়া একজন মুমিনের এ কথা বিশ্বাস রাখা চাই যে আল্লাহ তাআলা বান্দাকে এমন কোনো মসিবত দেন না, যা তার সক্ষমতার বাইরে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহ কারো ওপর এমন কোনো দায়িত্ব চাপিয়ে দেন না, যা তার সাধ্যাতীত।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৮৬)

আট. দুনিয়ার কোনো মানুষ যদি কষ্ট দিয়ে থাকে, তাহলে এর জন্য সুন্দর ব্যাখ্যা বের করার চেষ্টা করা। যেকোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে একটি সুন্দর ব্যাখ্যা দাঁড় করানো। যেমন—কোনো ব্যক্তি আপনাকে রূঢ় ভাষায় আক্রমণ করেছে। আপনি মনে মনে ভাবলেন, লোকটা মনে হয় এমনিতেই রাগী। তাই আমার সঙ্গে এভাবে কথা বলেছে। তার স্বভাব এটা। সুন্দরভাবে কারো সঙ্গে কথা বলতে না পারা, এটা এক ধরনের তার অসুস্থতা।

এ ছাড়া যারা ধৈর্যশীলদের সংশ্রবে যায়, তাদের মধ্যে এই গুণ ধীরে ধীরে চলে আসবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে ধৈর্যশীল বান্দা হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

والله اعلم بالصواب

মুফতি জাওয়াদ তাহের মুহাদ্দিস, জামিয়া বাবুস সালাম, বিমানবন্দর ঢাকা

মন্তব্য (0)

কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন