আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

প্রশ্নঃ ৪৩৮২. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আস্সালামু আ,লাইকুম ওয়া রহ্ মাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু........ জাযাকাল্লাহ খাইর। ১. নাবী (সা:) মাগরিবের ৩ রাকাআত ফজর , ২ রাকাআত সুন্নত আদায়ের পর , নিয়মিত /মাঝেমাঝে আর কোন নফল নামাজ আদায়ের কোন সহিহ হাদীস আছে কি না ???২ নাবী কারীম (সা:) পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ফরজ নামাজের পর একা একা সব সময় মোনাজাত করতেন ? পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সুন্নত এবং নফল নামাজের পর একা একা মোনাজাত করা কোন সহিহ হাদীস আছে কি না ( আমার প্রশ্ন অনুযায়ী পরিষ্কার উত্তর চাচ্ছি ),

১৯ জানুয়ারী, ২০২১

ঢাকা

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


السلام علیکم ورحمة الله وبركاته

ইবনে মাজাহ শরীফে মাগরিবের পরে ছয় রাকাআত নফল সম্পর্কিত এ হাদীসটি রয়েছে, যদিও নফল নামাযের ফযীলত সম্বলিত হাদীসটি দুর্বল, তারগীবের ক্ষেত্রে ও মূল প্রমাণের জন্য এ হাদীসই যথেষ্ট।

حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ مُحَمَّدٍ، حَدَّثَنَا أَبُو الْحُسَيْنِ الْعُكْلِيُّ، أَخْبَرَنِي عُمَرُ بْنُ أَبِي خَثْعَمٍ الْيَمَامِيُّ، أَنْبَأَنَا يَحْيَى بْنُ أَبِي كَثِيرٍ، عَنْ أَبِي سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَوْفٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ قَالَ ‏ "‏ مَنْ صَلَّى بَعْدَ الْمَغْرِبِ سِتَّ رَكَعَاتٍ لَمْ يَتَكَلَّمْ بَيْنَهُنَّ بِسُوءٍ عُدِلْنَ لَهُ بِعِبَادَةِ ثِنْتَىْ عَشْرَةَ سَنَةً ‏"‏ ‏.‏

আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত :
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি মাগরিবের সলাতের পর ছয় রাকআত নফল সালাত পড়লো এবং তার মাঝখানে কোন মন্দ কথা বলেনি, তাকে বারো বছরের ইবাদাতের সম-পরিমাণ নেকী দান করা হলো।
সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ১১৬৭

সলাত শেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তা'আলার কাছে তিন বার ইস্তেগফার করতেন এবং এই দোয়াটি পড়তেন।

أَخْبَرَنَا مَحْمُودُ بْنُ خَالِدٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا الْوَلِيدُ، عَنْ أَبِي عَمْرٍو الْأَوْزَاعِيِّ، قَالَ: حَدَّثَنِي شَدَّادٌ أَبُو عَمَّارٍ، أَنَّ أَبَا أَسْمَاءَ الرَّحَبِيَّ حَدَّثَهُ، أَنَّهُ سَمِعَ ثَوْبَانَ مَوْلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُحَدِّثُ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، كَانَ إِذَا انْصَرَفَ مِنْ صَلَاتِهِ اسْتَغْفَرَ ثَلَاثًا، وَقَالَ: «اللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلَامُ، وَمِنْكَ السَّلَامُ، تَبَارَكْتُ يَا ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ»

মাহমূদ ইবন খালিদ রহিমাহুল্লাহ থেকে বর্ণিত :
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর (আযাদকৃত) গোলাম সাওবান রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন তাঁর সালাতে সালাম ফিরাতেন, তিনবার ইস্তিগফার করতেন এবং বলতেনঃ
«اللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلَامُ، وَمِنْكَ السَّلَامُ، تَبَارَكْتُ يَا ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ
সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ১৩৩৭

বিনয় ও একাগ্রতার সাথে নামাজ আদায়ের পর "হে আল্লাহ! হে আল্লাহ!" বলে দোয়া করা এই হাদিস থেকে প্রমাণিত। যে ব্যক্তি এমনটি করে না তার সবই যেন ত্রুটিপূর্ণ।

حَدَّثَنَا ابْنُ الْمُثَنَّى، حَدَّثَنَا مُعَاذُ بْنُ مُعَاذٍ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، حَدَّثَنِي عَبْدُ رَبِّهِ بْنُ سَعِيدٍ، عَنْ أَنَسِ بْنِ أَبِي أَنَسٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ نَافِعٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الْحَارِثِ، عَنِ الْمُطَّلِبِ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ الصَّلاَةُ مَثْنَى مَثْنَى أَنْ تَشَهَّدَ فِي كُلِّ رَكْعَتَيْنِ وَأَنْ تَبَاءَسَ وَتَمَسْكَنَ وَتُقْنِعَ بِيَدَيْكَ وَتَقُولَ اللَّهُمَّ اللَّهُمَّ فَمَنْ لَمْ يَفْعَلْ ذَلِكَ فَهِيَ خِدَاجٌ ‏"‏ ‏.‏ سُئِلَ أَبُو دَاوُدَ عَنْ صَلاَةِ اللَّيْلِ مَثْنَى قَالَ إِنْ شِئْتَ مَثْنَى وَإِنْ شِئْتَ أَرْبَعًا ‏.‏

আল-মুত্তালিব রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত :
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, সলাত দু’ রাক’আত দু’ রাক’আত করে আদায় করতে হয়। প্রত্যেক দু’ রাক’আতে তোমার তাশাহহুদ পড়তে হবে। অতঃপর তুমি তোমার বিপদাপদ ও দারিদ্রের কথা দু’ হাত উঠিয়ে দু’আ করবে, হে আল্লাহ! হে আল্লাহ! যে ব্যাক্তি এরূপ করে না তার আচরণ হবে ক্রটিপূর্ণ।
ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ)-কে রাতে দু’ রাক’আত সলাত সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, তুমি ইচ্ছা করলে দু’ রাক’আত আদায় করতে পারো, আবার ইচ্ছে হলে চার রাক’আত করেও আদায় করতে পারো।
সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ১২৯৬

উপরোক্ত হাদীস থেকে কী প্রমান হচ্ছে? নামায শেষে সালাম ফিরিয়ে দৌড়ে চলে যাওয়া? নাকি আল্লাহর কাছে বিনয়ের সাথে দোয়া করা?

আল্লাহর বান্দা হাত তুলে দোয়া করলে এই হাত খালি অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে আল্লাহ তাআলা লজ্জাবোধ করেন।

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي عَدِيٍّ، قَالَ أَنْبَأَنَا جَعْفَرُ بْنُ مَيْمُونٍ، صَاحِبُ الأَنْمَاطِ عَنْ أَبِي عُثْمَانَ النَّهْدِيِّ، عَنْ سَلْمَانَ الْفَارِسِيِّ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ إِنَّ اللَّهَ حَيِيٌّ كَرِيمٌ يَسْتَحِي إِذَا رَفَعَ الرَّجُلُ إِلَيْهِ يَدَيْهِ أَنْ يَرُدَّهُمَا صِفْرًا خَائِبَتَيْنِ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ ‏.‏ وَرَوَاهُ بَعْضُهُمْ وَلَمْ يَرْفَعْهُ ‏.‏

সালমান আল ফারিসী রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত :
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তা’আলা অত্যধিক লজ্জাশীল ও দাতা। যখন কোন ব্যক্তি তাঁর দরবারে তার দুই হাত তুলে (প্রার্থনা করে) তখন তিনি তার হাত দু’খানা শুন্য ও বঞ্চিত ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন।
জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ৩৫৫৬

দোয়া কবুলের মোক্ষম যে সময়গুলো রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো ফরজ নামাজ শেষে দোয়া এবং শেষ রাত্রির দোয়া।
কোন বুদ্ধিমান মুসলমানের জন্য উচিত নয়, এই মোক্ষম সময় অবহেলায় ছেড়ে দেয়া।

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ يَحْيَى الثَّقَفِيُّ الْمَرْوَزِيُّ، حَدَّثَنَا حَفْصُ بْنُ غِيَاثٍ، عَنِ ابْنِ جُرَيْجٍ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ سَابِطٍ، عَنْ أَبِي أُمَامَةَ، قَالَ قِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَىُّ الدُّعَاءِ أَسْمَعُ قَالَ ‏"‏ جَوْفُ اللَّيْلِ الآخِرُ وَدُبُرَ الصَّلَوَاتِ الْمَكْتُوبَاتِ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ ‏.‏ وَقَدْ رُوِيَ عَنْ أَبِي ذَرٍّ وَابْنِ عُمَرَ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ قَالَ ‏"‏ جَوْفُ اللَّيْلِ الآخِرُ الدُّعَاءُ فِيهِ أَفْضَلُ أَوْ أَرْجَى ‏"‏ ‏.‏ أَوْ نَحْوَ هَذَا ‏.

আবূ উমামাহ রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত :
তিনি বলেন, বলা হল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! কোন সময়ের দু’আ বেশী (শোনা) গ্রহণযোগ্য হয়? তিনি বললেন, শেষ রাতের মাঝ ভাগের এবং ফরয নামায গুলোর পরবর্তী দু’আ।
জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ৩৪৯৯

অতএব ফরজ নামাজ শেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শেখানো ইস্তেগফার, তাসবীহ, তাহমীদ, তাকবীর ও আরো অন্যান্য দোয়াগুলো সহ আয়াতুল কুরসি, সূরা ফালাক, সূরা নাস ইত্যাদি আমলগুলো করা এবং নিজের একান্ত প্রয়োজনগুলো আল্লাহ তাআলার কাছে গোপনে ইনফেরাদী দোয়ার মাধ্যমে পেশ করা উচিত।

উল্লেখ্য : কোন নফল আমল নিয়ে বাড়াবাড়ি বা ছাড়াছাড়ি কোনোটিই কাম্য নয়। মধ্যপন্থার মধ্যেই রয়েছে ইবাদত। দু'পাশে রয়েছে প্রান্তিকতা।
দোয়া করতে গিয়ে প্রচলিত ধারা অনুযায়ী সম্মিলিতভাবে মাইকে উচ্চস্বরে মুনাজাত করা, যার মধ্যে গতানুগতিক এক' দুটি দোয়াই পড়া হয়। যার অর্থ অধিকাংশ মুসল্লী জানে না বা বোঝে না। যে দোয়ার মধ্যে শুধু প্রথা পালনই হয়ে থাকে। ওদিকে মাসবুক মুসল্লিদের (যাদের দু এক রাকাত ছুটে গিয়েছে) ছুটে যাওয়া রাকাআতগুলো পূরণে ভীষণ রকমের বিপত্তির সৃষ্টি করা, ইত্যাদি কোনোভাবেই উচিত নয়। কারো বিশেষ তাড়া থাকলেও এই মুনাজাত করতেই হবে। এমন বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করা, গোমরাহী ছাড়া কিছু নয়।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সকল প্রান্তিকতা মুক্ত হয়ে সুন্নতের উপর আসার তৌফিক নসীব করুন। আমীন

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ ইসহাক মাহমুদ, মুফতী ও মুহাদ্দিস, জামিআ মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়া, মোহাম্মদপুর

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৯০৭৩৭

ফরয নামাযের সিজদায় অতিরিক্ত দু‘আ করা


২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

মনাইর কান্দি

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী মাহমুদুল হাসান

৮৫৬৭১

মুমূর্ষু ব্যক্তির পাশে করনীয় আমাল


২০ জানুয়ারী, ২০২৫

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী আবু সাঈদ

২৬৫০০

দ্রুত বিয়ে হওয়ার কতিপয় আমল ও দোয়া


১৪ ডিসেম্বর, ২০২২

ঢাকা ১২০৪

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

২৬৩৩০

যেভাবে দোয়া করলে আল্লাহ কবুল করেন


৭ ডিসেম্বর, ২০২২

নামবিহীন রাস্তা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy