আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

দুনিয়া আখিরাতে সফলতা অর্জন করতে চাই:

প্রশ্নঃ ৪৩১২৭. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, দুনিয়াতে সফলতা আর আখেরাতের সফলতা একসাথে কিভাবে অর্জন করা যাবে ?? উপদেশ চাই , আমি একজন মেডিকেল স্টুডেন্ট ভবিষ্যতে আমি একজন হবো ডক্টর আর আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে চাই , এটার উপায় কি ?,

২০ অক্টোবর, ২০২৩

ঢাকা ১২০৫

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


দুনিয়াতে সফলতার জন্য করনীয়:

১. আপনি যেই প্রফেশন বেছে নেবেন সেই প্রফেশন অনুযায়ী নিজেকে পড়াশোনা ও অন্যান্য পারদর্শীতায় যোগ্য করে গড়ে তোলা।

২. চারিত্রিক উন্নত গুণাগুণ অর্জন করে আচার ব্যবহার ও লেনদেনে স্বচ্ছ সঠিক হওয়া।
মিথ্যা, প্রতারণা, হিংসা-বিদ্বেষ পরিহার করে চারিত্রিক যাবতীয় দোষ ত্রুটি থেকে দূরে থাকা।

৩. পারিবারিক জীবনে সুখ ও সম্প্রীতির পথ বেছে নেওয়া।

৪. সমাজসেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ করে সকলের আস্থা, ভক্তি, মহব্বত ও ভালোবাসা অর্জন করা।

====

আখিরাতে সফলতার জন্য কুরআনুল কারীমে উদ্ধৃত সফলতার নির্দেশক আয়াতের নির্দেশিকাগুলোকে অনুসরণ করা।

১. অদৃশ্যের প্রতি বিশ্বাস: পঞ্চ ইন্দ্রিয় ও মেধা শক্তির দ্বারা যা জানা সম্ভব নয়, তা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ডাকে সাড়া দিয়ে তা বিশ্বাস করা। যে সব বিষয় মানুষের কাছে অদৃশ্যমান। যেমন- আল্লাহ, রাসুলের রিসালাত, পুনরুত্থান, জান্নাত, জাহান্নাম।

২. নামাজ প্রতিষ্ঠা করা: সব ধরনের আরকান-আহকাম, বিনয়, ভয়, নম্রতার আদব, হুকুমসহ যথাযথভাবে তা সম্পাদন করা।

৩. আল্লাহর পথে ব্যয়: আল্লাহ তাআলা মানুষকে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য যত নিয়ামাত দান করেছেন তা আল্লাহর দ্বীনের (ইসলামের) জন্য সত্যের পথে ব্যয় করা এবং আল্লাহর নাফরমানি ও গর্হিত কাজে ব্যয় না করা। অর্থাৎ আল্লাহর পথে ফরজ, ওয়াজিব ও নফল দান-সাদকা করা বুঝানো হয়েছে।

৪. কুরআনের প্রতি বিশ্বাস করা: কুরআন পূর্ববর্তী যে সব আসমানি কিতাব পৃথিবীতে এসেছে শুধু সেগুলোর প্রতি বিশ্বাস করে কুরআন অবিশ্বাস করা যাবে না। বরং কুরআনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা।

৫. পূর্ববর্তী আসমানি কিতাবের বিশ্বাস: শুধুমাত্র কুরআনকে বিশ্বাস করে আল্লাহ তাআলা কর্তৃক প্রেরিত পূর্ববর্তী নবী রাসুলগণের ওপর অবতীর্ণ হওয়া আসমানি গ্রন্থ তাওরাত, ইঞ্জিল ও যাবুরের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা।
(সাথে সাথে এটাও জেনে রাখা পূর্ববর্তী সেই কিতাবগুলো বর্তমানে অবিকল অবস্থায় নেই। আমরা কেবলই বিকৃত হওয়ার আগে যা ছিল সেগুলোকে বিশ্বাস করি।)

৬. পরকালের প্রতি বিশ্বাস: বর্তমান জীবনের অবসারে পর দারুল আখিরাত তথা পরকালের প্রতি বিশ্বাস। অর্থাৎ শাস্তি ও পুরষ্কার প্রদানের যে দিবস তার ওপর পরিপূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করা।

#

জান্নাতি মানুষের পরিচিতিতে আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজিদে সপ্তসূত্র বর্ণনা করেছেন, এগুলো নিজের মধ্যে বাস্তবায়ন করা।

قَدۡ اَفۡلَحَ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ ۙ ١
الَّذِیۡنَ ہُمۡ فِیۡ صَلَاتِہِمۡ خٰشِعُوۡنَ ۙ ٢
وَالَّذِیۡنَ ہُمۡ عَنِ اللَّغۡوِ مُعۡرِضُوۡنَ ۙ ٣
وَالَّذِیۡنَ ہُمۡ لِلزَّکٰوۃِ فٰعِلُوۡنَ ۙ ٤
وَالَّذِیۡنَ ہُمۡ لِفُرُوۡجِہِمۡ حٰفِظُوۡنَ ۙ ٥
اِلَّا عَلٰۤی اَزۡوَاجِہِمۡ اَوۡ مَا مَلَکَتۡ اَیۡمَانُہُمۡ فَاِنَّہُمۡ غَیۡرُ مَلُوۡمِیۡنَ ۚ ٦
فَمَنِ ابۡتَغٰی وَرَآءَ ذٰلِکَ فَاُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡعٰدُوۡنَ ۚ ٧ وَالَّذِیۡنَ ہُمۡ لِاَمٰنٰتِہِمۡ وَعَہۡدِہِمۡ رٰعُوۡنَ ۙ ٨
وَالَّذِیۡنَ ہُمۡ عَلٰی صَلَوٰتِہِمۡ یُحَافِظُوۡنَ ۘ ٩
اُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡوٰرِثُوۡنَ ۙ ١۰
الَّذِیۡنَ یَرِثُوۡنَ الۡفِرۡدَوۡسَ ؕ ہُمۡ فِیۡہَا خٰلِدُوۡنَ ١١

‘অবশ্যই সফল হয়েছে, সেসব বিশ্বাসীগণ, যারা তাদের নামাজে বিনয়ী বিনম্র,
যারা অসার ক্রিয়াকলাপ হতে বিরত থাকে,
যারা জাকাত প্রদানে সক্রিয়,
যারা নিজেদের গোপনাঙ্গ সংযত রাখে, নিজেদের স্ত্রী ও তাদের মালিকানাধীন দাসীদের ছাড়া অন্য সকলের থেকে, কেননা এতে তারা নিন্দনীয় হবে না। তবে কেউ এ ছাড়া অন্য কিছু কামনা করলে তারাই হবে সীমালঙ্ঘনকারী।
যারা তাদের আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে এবং
যারা তাদের নামাজে যত্নশীল হয়,
তারা হবে জান্নাতুল ফেরদৌসের অধিকারী। যাতে তারা চিরস্থায়ী হবে।’ (সুরা-২৩ মুমিনুন, আয়াত: ১-১১)

#

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কুরআন মাজিদে তাঁর প্রিয় বান্দাদের আরও পরিচয়ে ঊনবিংশ ধাপ উল্লেখ করেছেন, ‘দয়াময় আল্লাহর প্রকৃত বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং তাদের যখন অজ্ঞ লোকে মূর্খতাসুলভ সম্বোধন করে, তখনো তারা সালাম ও শান্তির বাণী বলে। তারা রাত্রি যাপন করে তাদের প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সিজদাবনত হয়ে ও দাঁড়িয়ে ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে এবং তারা বলে—“হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদিগ হতে জাহান্নামের শাস্তি বিদূরিত করুন; উহার শাস্তি তো নিশ্চিত বিনাশ! নিশ্চয় তা অস্থায়ী ও স্থায়ী আবাস হিসেবে নিকৃষ্ট!”

আর যখন তারা ব্যয় করে তখন অপচয় করে না এবং কার্পণ্যও করে না; বরং তারা উভয়ের মধ্যে মধ্যপন্থায় থাকে। তারা আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোনো ইলাহ বা মাবুদকে ডাকে না। আল্লাহ যার হত্যা নিষেধ করেছেন, যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। যারা এসব করে, তারা শাস্তি ভোগ করবে, কিয়ামতের দিন তাদের শাস্তি দ্বিগুণ করা হবে এবং সেখানে তারা হীনাবস্থায় স্থিত হবে। তবে তারা নয়, যারা তওবা করে ইমান আনে ও সৎকর্ম করে। আল্লাহ তাদের পাপ-পুণ্যের দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। যারা তওবা করে ও সৎকর্ম করে তারা সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর অভিমুখী হয়।

আর যারা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না এবং অসার ক্রিয়াকলাপের সম্মুখীন হলে স্বীয় মর্যাদার সঙ্গে তা উপেক্ষা করে চলে। আর যারা তাদের প্রতিপালকের নিদর্শন স্মরণ করিয়ে দিলে তার প্রতি অন্ধ ও বধিরের মতো আচরণ করে না এবং যারা প্রার্থনা করে, “হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জন্য এমন স্ত্রী ও সন্তানসন্ততি দান করুন, যারা আমাদের জন্য নয়ন প্রীতিকর হবে এবং আমাদেরকে মুত্তাকিদের ইমাম বানিয়ে দিন।” তাদের প্রতিদান হিসেবে দেওয়া হবে জান্নাতের সুউচ্চ কক্ষসমূহ, যেহেতু তারা ছিল ধৈর্যশীল। তাদের সেখানে অভ্যর্থনা জানানো হবে অভিবাদন ও সালাম সম্ভাষণ সহকারে; সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। আশ্রয়স্থল ও আবাসন হিসেবে তা কতই-না উৎকৃষ্ট!’ (সুরা-২৫ ফুরকান, আয়াত: ৬৩-৭৬)

#

সফলতার জন্য বাহ্যিক আমলের সঙ্গে অভ্যন্তরীণ শুদ্ধি অপরিহার্য। কুরআন হাকিমের বাণী,

قَدۡ اَفۡلَحَ مَنۡ زَکّٰىہَا ۪ۙ
যে নিজেকে শুদ্ধ করে, সেই সফলকাম হয়।

وَقَدۡ خَابَ مَنۡ دَسّٰىہَا ؕ
এবং যে নিজেকে কলুষিত করে, সে ব্যর্থ মনোরথ হয়।
—আশ শামস - ৯-১০

হাদীস শরীফে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আত্মশুদ্ধি সম্পর্কে ইরশাদ করেন।

حَدَّثَنَا أَبُو نُعَيْمٍ، حَدَّثَنَا زَكَرِيَّاءُ، عَنْ عَامِرٍ، قَالَ سَمِعْتُ النُّعْمَانَ بْنَ بَشِيرٍ، يَقُولُ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " ....
أَلاَ وَإِنَّ فِي الْجَسَدِ مُضْغَةً إِذَا صَلَحَتْ صَلَحَ الْجَسَدُ كُلُّهُ، وَإِذَا فَسَدَتْ فَسَدَ الْجَسَدُ كُلُّهُ. أَلاَ وَهِيَ الْقَلْبُ ".

৫০। আবু নুআয়ম (রাহঃ) ......... নু’মান ইবনে বশীর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি রাসূল (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি যে, ...
জেনে রাখ, শরীরের মধ্যে একটি গোশতের টুকরো আছে, তা যখন ঠিক হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন ঠিক হয়ে যায়। আর তা যখন খারাপ হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন খারাপ হয়ে যায়। জেনে রাখ, সে গোশতের টুকরোটি হল কলব।

—সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫০ (আন্তর্জাতিক নং ৫২)

আপনি যেখানে অবস্থান করছেন তার আশপাশে কোন যোগ্য মুত্তাক্বী আলিম এর সাথে ইসলাহী তা'আল্লুক করেন। মাঝেমধ্যে আপনার অবস্থা তার সামনে পেশ করে দ্বীনি পরামর্শ ও হিদায়াত গ্রহণ করুন। বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে যারা দ্বীনদার তাদের সাহচর্য গ্রহণ করুন। দুষ্ট প্রকৃতির লোকদেরকে এড়িয়ে চলুন।

সর্বদা হালাল খাদ্য গ্রহণ করুন। যাবতীয় গুনাহ বিশেষ করে চোখের গুনার থেকে বেঁচে থাকুন। বিবাহের বয়স হলে দ্বীনদার উপযুক্ত পাত্রী দেখে শরীয়ত সম্মতভাবে পারিবারিকভাবে বিবাহ করুন।

আমরা দোয়া করি আল্লাহ তায়ালা আপনাকে দুনিয়া ও আখিরাতে সুখী করেন, সফল করেন। হায়াতে তাইয়্যিবাহ নসিব করেন। সুস্থতা নিরাপত্তা দান করেন। আমীন

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ ইসহাক মাহমুদ
মুফতী ও মুহাদ্দিস, জামিআ মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়া, মোহাম্মদপুর

প্রসঙ্গসমূহ:

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৯৩১৮৬

রমজান মাসে কারা ক্ষমা পাবে না?


৫ মার্চ, ২০২৫

বগুড়া

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

৭৪৭৮৩

স্বামীর জন্য স্ত্রীর নৃত্য


৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

Imamnagar

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি জাওয়াদ তাহের

৯১৩৬৩

তলাবায়ে কেরাম যেন নিজের ‘শুরু’ না ভোলেন


২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

ভৈরব

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

৫০৯৩৭

কুরআনের প্রতি ভালোবাসা তৈরির উপায়


৬ জানুয়ারী, ২০২৪

Chattogram

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি জাওয়াদ তাহের

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy