প্রশ্নঃ ৪১০৯. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, সুদ ও মুনাফার মধ্যে পার্থক্য কি?,
২৭ ডিসেম্বর, ২০২১
ঢাকা
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
“আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন আর সুদকে হারাম করেছেন।” (সূরা বাকারা-২৭৫)
রিবা (সুদ) : আভিধানিক অর্থঃ বৃদ্ধি, আধিক্য, পরিবর্ধন ইত্যাদি।
ইসলামী শরীয়াহ মতে, লেনদেনের ক্ষেত্রে চুক্তির শর্তানুযায়ী শরীয়াহ সম্মত কোনোরুপ বিনিময় ব্যতীত মূলধনের উপর অতিরিক্ত যা কিছু গ্রহণ করা হয় তাকে সুদ বলে।
তাফসিরবিদ ইবনে জারীর মুজাহিদ থেকে বর্ণনা করেন, জাহেলী যুগে প্রচলিত ও কুরআনে নিষিদ্ধ 'রিবা' (সুদ) হল কাউকে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য ঋণ দিয়ে মূলধনের অতিরিক্ত নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ গ্রহণ করা। আরবেরা সে যুগে তা-ই করতো এবং নির্দিষ্ট মেয়াদে ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে সুদ বাড়িয়ে দেবার শর্তে মেয়াদ বাড়িয়ে দিত।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ঋণ কোন মুনাফা টানে তাই সুদ।
মুনাফা : ব্যবসায় মূলধন খাটানোর মাধ্যমে মূলধনের অতিরিক্ত আয়।
সুদ ও মুনাফার পার্থক্য : অনেকেই বলে থাকে যে সুদ ও মুনাফা একই জিনিস। কিন্তু আসলে তা নয়। নিম্নে সুদ ও মুনাফার পার্থক্য তুলে ধরা হলো:
১. সময়ের সাথে ঋনের অতিরিক্ত গ্রহন করলে তা ঋণ। অপরদিকে ব্যবসায় মূলধন খাটানোর মাধ্যমে মূলধনের অতিরিক্ত আয় হলো মুনাফা।
২. সুদের উপাদান সময়, সুদের হার ও ঋণের পরিমাণ। মুনাফা নির্ভর করে ব্যয় সাশ্রয় ও অনুকুল বাজার চাহিদার উপর।
৩. সুদের উৎপত্তি ঋণ থেকে। মুনাফার উৎপত্তি ব্যবসাতে মুলধন বিনিয়োগ থেকে।
৪. সুদে ঋণদাতা ঝুঁকি বহন করে না। কিন্তু মুনাফাতে ক্ষতির ঝুঁকি থাকে।
৫. সুদের ফলাফল ঋণদাতা একা ভোগ করে। অপরদিকে মুনাফা যোগানদার ও ব্যবহারকারী উভয়ই ব্যবহার করে।
৬. সুদ পূর্ব নির্ধারিত। অপরদিকে মুনাফা অর্জিত হয় পরে।
সুদের প্রকারভেদ : ইসলামী অর্থনীতি একটি প্রাথমিক বিশ্লেষন বইয়ে এম এ হামিদ সুদকে দুইভাগে বিভক্ত করেছেন।
১. রিবা আন নাসিয়া
২. রিবা আল ফযল
রিবা আন নাসিয়া
নাসা আর্থ বিলম্ব করা এবং ঋণগ্রহিতাকে প্রিমিয়াম প্রদানের শর্তে ঋণ পরিশোধের জন্য মঞ্জুরকৃত সময়কে নির্দেশ করে। এ প্রকারের সুদ কুরআনের আয়াত দ্বারা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
উদাহরণ স্বরূপ-নিশাত এক বছরের জন্য নাবিলকে ১০০ টাকা দিল, এই শর্তে যে এক বছর পর নাবিল নিশাতকে ১১০ টাকা ফিরত দিবে। অতিরিক্ত ১০ টাকা রিবা আন নাসিয়া।
রিবা আল ফজল : পণ্য সামগ্রী হাতে হাতে বিক্রয়ের ক্ষেত্রে রিবা আল ফজলের উদ্ভব। এক জাতীয় পণ্যের কম পরিমানের সাথে বেশি পরিমাণ পণ্য হাতে হাতে বিনিময় করা হলে পণ্যটির অতিরিক্ত পরিমানকে বলা হয় রিবা আল ফজল।
প্রখ্যাত সাহাবী আবু সাঈদ খুদরী হতে বর্ণিত,একদা বিলাল রা. রাসুল স.-এর নিকট কিছু উন্নত মানের খেজুর নিয়ে হাজির হলো। রাসুল স. জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কোথা থেকে এ খেজুর পেলে? বিলাল রা. বললেন, আমাদের খেজুর নিকৃষ্ট মানের ছিল আমি তা দু ‘সা’-এর বিনিময়ে এক ‘সা’ বারমী খেজুর বদলিয়ে নিয়েছি। রাসুল স. বললেন, ওহ! এতো নির্ভেজাল সুদ, এতো নির্ভেজাল সুদ, এতো নির্ভেজাল সুদ। কখন এরুপ করোনা। তোমরা যদি উত্তম খেজুর পেতে চাও নিজের গুলো বাজারে বিক্রি করবে তারপর উন্নতমানের খেজুর কিনবে।
অন্য হাদীসে বর্নিত আছে, সোনার বিনিময়ে সোনা রুপার বিনিময়ে রুপা গমের বিনিময়ে গম খেজুরের বিনিময়ে খেজুর যবের বিনিময়ে যব লবনের বিনিময়ে লবন সমান সমান এবং উপস্থিত ক্ষেত্রে হাতে হাতে। যে ব্যক্তি বেশি দিয়েছে বা নিয়েছে সে সুদী কারবার করেছে।
কোন কোন ফকিহের মতে, শুধুমাত্র হাদীসে বর্নিত ৬টি পন্যের ব্যাপারেই রিবা আল ফজলের সীমা নির্ধারিত। কিন্তু অধিকাংশ শরীয়ত বিশেষজ্ঞ মনে করেন হাদীসে উল্লেখিত পণ্য ব্যতিত ও হাতে হাতে অন্য যেকোন পণ্য বদলের এ নীতি প্রযোজ্য হবে।
“যারা সুদ খায়, তারা সেই ব্যক্তির মত দাঁড়াবে যাকে শয়তান তার স্পর্শ দ্বারা পাগল করে। এটা এজন্য যে, তারা বলে ক্রয়-বিক্রয় তো সুদের মতোই। অথচ আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন আর সুদকে হারাম করেছেন।” (সূরা বাকারা-২৭৫)
“আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দান-খয়রাতকে বাড়িয়ে দেন। আর আল্লাহ কোন অকৃতজ্ঞ পাপীকে ভালবাসেন না।” (সূরা বাকারা-২৭৬)
“যারা ঈমান আনে, সৎ কাজ করে, সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয়, তাদের পুরস্কার তাদের রবের কাছে রয়েছে। তাদের কোন ভয় নেই তারা দুঃখিতও হবে না।” (সূরা বাকারা-২৭৭)
“হে মুমিনগণ,তোমরা আল্লাহকে ভয় কর,আর সুদের যা বকেয়া আছে তা ছেড়ে দাও, যদি তোমরা মুমিন হও।” (সূরা বাকারা-২৭৮)
“যদি তোমরা না ছাড় তবে আল্লাহ ও তার রাসূলের পথে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হও। কিন্তু যদি তোমরা তাওবা কর তবে মূলধন তোমাদেরই। এতে তোমরা অত্যাচার করবে না এবং অত্যাচারিত হবে না।” (সূরা বাকারা-২৭৯)
“আর তুমি তাদের অনেককে দেখতে পাবে যারা পাপে সীমালঙ্ঘনে ও হারাম ভক্ষণে ছুটাছুটি করছে। তারা যা করছে তা কতই না মন্দ। কেন তাদের ধর্মবিদগণ তাদের পাপের কথা ও হারাম ভক্ষণ থেকে নিষেধ করে নাই? তারা যা করছে নিশ্চয় তা কতই না মন্দ।” (সূরা মায়েদা-৬২, ৬৩)
“তোমরা তোমাদের উপর অঙ্গীকারকে নিজেদের মধ্যে প্রতারণা হিসেবে গ্রহণ করেছ যে, একদল অপর দলের উপর বড় হবে।” (সূরা নাহল-৯২)
কুরআন মাজীদে সুদ প্রসঙ্গ : ইসলামে সুদকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। এ সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসে অসংখ্য প্রমাণাদি বিদ্যমান। সুদ সম্পর্কিত আল কুরআনে ১৫ টি আয়াত রয়েছে। তার মধ্যে ৭টি আয়াতে সরাসরি সুদকে হারাম বলে ঘোষণা করা হয়েছে। সুদ সম্পর্কিত ১ম আয়াত নাযিল হয় রাসুল (সা:) এর মক্কী জীবনে ৬১৫ খ্রিষ্টাব্দে।
“মানুষের ঋণবৃদ্ধির জন্য তোমরা যে সুদ দিয়ে থাকো আল্লাহর দৃষ্টিতে তা ধনসম্পদ বৃদ্ধি করে না কিন্তু যে যাকাত তোমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দিয়ে থাকো তাই বৃদ্ধি পায় এবং তারাই সমৃদ্ধশালী।” (সুরা রুম :৩৯)
“এবং তাদের সুদ গ্রহণের জন্য যদিও তা তাদের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছিল এবং অন্যায়ভাবে লোকদের ধন সম্পদ গ্রাস করার জন্য আর আমি তাদের মধ্যে অবিশ্বাসীদের জন্য কষ্টদায়ক শাস্তি তৈরী করে রেখেছি।” (সুরা নিসা : ১৬১)
“হে ঈমানদারগন তোমরা চক্রবৃদ্ধিহারে সুদ খেয়োনা এবং আল্লাহকে ভয় করো যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো।” (সুরা আল ইমরান : ১৩০)
হাদীসের বাণীতে সুদ প্রসঙ্গ :
ইবনে মাসউদ (রা:) বলেন, যারা সুদ খায়, সুদ দেয়, সুদের হিসাব লিখে এবং সুদের সাক্ষ্য দেয়, রাসূল (সা:) তাদের উপর লানত করেছেন এবং তারা অপরাধের ক্ষেত্রে সকলেই সমান।
আবু হুরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত, সুদের ৭০টি স্তর রয়েছে। যার নিম্নতম স্তর মায়ের সাথে যিনা করার পাপ।
আব্দুল্লাহ ইবনে হানজালা হতে বর্ণিত, রাসূল (সা:) বলেন,কোনো ব্যক্তি যদি এক দিরহাম রিবা বা সুদ জ্ঞাতসারে গ্রহণ করে তাতে তার পাপ ৩৬ বার ব্যভিচারের চেয়েও অনেক বেশি।
কুফার ক্বাযী হিসেবে খ্যাত তাবেঈ আবু বুরদা বিন আবু মুসা বলেন,আমি মদীনায় এলাম এবং সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে সালামের সাথে সাক্ষাৎ করলাম। তখন তিনি বললেন, তুমি এমন এক এলাকাতে বাস কর, যেখানে সুদ ব্যাপক হারে প্রচলিত। অতএব,যদি কারো নিকট তোমার কোনো পাওনা থাকে, আর সে যদি তোমাকে এক থলে ভুসি বা যব কিংবা এক আঁটি ঘাসও উপঢৌকন দেয়, তবুও তুমি তা গ্রহণ করোনা, কেননা এটাই সুদ।
আলী (রা:) থেকে বর্ণিত,তিনি রাসূল (সা:)-কে অভিশাপ করতে শুনেছেন সুদখোরের প্রতি, সুদ দাতার প্রতি, সুদের প্রমাণপত্র লেখকের প্রতি ও সাদকা প্রদানে বাধাদানকারীর প্রতি। আর তিনি নিষেধ করতেন মৃতের জন্য বিলাপ করতে।
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ বলেন, সুদের দ্বারা সম্পদ যতই বৃদ্ধি পাক না কেন তার শেষ পরিণতি হল নি:স্বতা।
আবু হুরায়রা হতে বর্ণিত, রাসূল (সা:) মিরাজ রজনীতে গিয়ে একশ্রেণীর লোক দেখতে পেলেন যাদের পেটের ভিতর ছিল সাপ। জিব্রাইল (আ:) কে জিজ্ঞেস করলেন, এরা কারা? জিব্রাইল বললেন, সুদখোর।
আবু হুরায়রা হতে বর্ণিত, রাসুল (সা:) বলেন, ৪ শ্রেণীর লোক জান্নাতে যাবে না-সুদখোর, ইয়াতিমের মাল ভক্ষণকারী, পিতামাতার অবাধ্য এবং মদ পানকারী।
আবু হুরায়রা হতে বর্ণিত, রাসূল (সা:) বলেন,এমন এক যুগ আসবে যখন কেউ সুদের স্পর্শ থেকে বেঁচে থাকতে পারবে না। যদিও সে সুদ না খায় তবুও সুদের ধোঁয়া ও ধূলিকণা তাকে স্পর্শ করবে।
والله اعلم بالصواب
মন্তব্য (০)
কোনো মন্তব্য নেই।
এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর
৪২৮৪৬
কিস্তিতে ক্রয় বিক্রয় এবং ঋণের কিস্তি উভয়টি কি একই?
১২ অক্টোবর, ২০২৩

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি
সাম্প্রতিক প্রশ্নোত্তর
মাসায়েল-এর বিষয়াদি
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে