মুসলিম বিবাহ

আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

দোকানের এডভান্সের টাকার যাকাত কে দিবে?

প্রশ্নঃ ৩৪৩৯৫. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমি জানতে চাই আমার একটা দোকান ভাড়া দেওয়া আমি তার থেকে ৪০০০০০ টাকা এডভান্স নেয়েছি। সে দোকান ছেড়ে দিলে আমার টাকা ফেরত দিতে হবে। এখন আমি যদি নিসাব পরিমাণ মালের মালিক হই তাহলে যাকাত দিতে হবে কিনা?

২৮ জুলাই, ২০২৫
ঢাকা ১২৩০

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


এক. প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই, আপনার প্রশ্নের উত্তর এক কথায় দেয়া মুশকিল। কেননা, প্রথমত জানতে হবে, আপনি এডভান্সের টাকাটা কী হিসেবে নিয়েছেন?
যদি আপনি জামানত (সিকিউরিটি) হিসেবে নিয়ে থাকেন তাহলে উক্ত টাকা আপনার কাছে আমানত। অনুরূপভাবে যদি বন্ধক হিসেবে নিয়ে থাকেন তাহলেও এটি আমানত। আর আমানতের বস্তুতে হস্তক্ষেপ করা তথা খরচ করা জায়েয নয়। সে হিসেবে উক্ত টাকা আপনার কাছে থাকলেও তা খরচ করতে পারবেন না এবং এর মালিকানা থাকবে ভাড়াটিয়ার। সুতরাং সিকিউরিটি মানির জাকাত প্রতি বছর ভাড়াটিয়া প্রদান করবে।

দুই. কিন্তু আমরা সাধারণত দেখতে পাই, ভাড়াদাতা উক্ত টাকার উপর হস্তক্ষেপ করেন অর্থাৎ, তিনি টাকাটা নিয়ে খরচ করে ফেলেন। যেমন, প্রশ্ন থেকে বুঝা যায়, আপনার বেলায়ও এটাই হয়েছে। সুতরাং এটিকে আমানত বলা যায় না। তাছাড়া আমানতের বস্তু আমানতগ্রহীতার কাছে কোনো কারণে নষ্ট হয়ে গেলে এবং এতে তার হাত না থাকলে তা মূল মালিককে ফেরত দিতে হয় না। অথচ ভাড়াটিয়া পরবর্তীতে ওই টাকাটা সর্বাবস্থায় ফেরত পায়। সুতরাং এটিকে কোনোভাবে আমানত বলা যায় না।
অনুরূপভাবে একে ঋণ মনে করারও সুযোগ নেই। কেননা, তখন চুক্তিটি বৈধ হচ্ছে না। কারণ ঋণের বিনিময়ে কারো থেকে উপকার অর্জন করা সুদ। যা নিসন্দেহে হারাম।

তিন. তবে এক্ষেত্রে একে জায়েয পদ্ধতির আওতাভুক্ত করার একটি সুরত আছে। আর তা হল–দীর্ঘ মেয়াদী ভাড়া চুক্তি সম্পাদন। অর্থাৎ ভাড়া চুক্তি সম্পাদনের সময় প্রতি মাসের জন্য নির্দিষ্ট ভাড়া নির্ধারণ করে নিবে। তারপর সামনের মাসগুলোর ভাড়া অগ্রিম পরিশোধের নামে এডভান্স মানি ভাড়াদাতাকে দেয়া হবে। এরপর প্রতি মাসে ভাড়াটিয়া নির্ধারিত ভাড়া পরিশোধ করতে থাকবে। আর যে মাসে দোকান ছেড়ে ভাড়াটিয়া চলে যাবে তার কয়েক মাস আগে থেকে ভাড়াদাতার কাছে জমাকৃত এডভান্সের টাকা থেকে ভাড়া হিসেবে কেটে নেয়া হবে। যদি কোনো অর্থ এরপরও বেঁচে যায়, তাহলে মালিক তা ফেরত দিতে বাধ্য থাকবে।

যদি এ সুরত অবলম্বন করা হয়, তাহলে উক্ত চুক্তিটি এবং এডভান্স হিসেবে ভাড়াটিয়া ভাড়াদাতাকে অতিরিক্ত টাকা প্রদান করা জায়েয হবে। তখন মৌলিকভাবে উক্ত এডভান্সের টাকার মালিক হবে ভাড়াদাতা এবং ভাড়াটিয়ার কোনো মালিকানা বাকি থাকবে না। যেহেতু ভাড়াটিয়া উক্ত টাকার মালিক থাকছে না, তাই তার উপর উক্ত টাকার জাকাত আবশ্যক হবে না। পক্ষান্তরে যেহেতু দোকান-মালিক উক্ত টাকার মালিক হয়ে যাচ্ছে, তাই উক্ত টাকা খরচ করা তার জন্য জায়েয হয়ে যাবে। সেই সাথে উক্ত টাকার যাকাতও দোকান-মালিকের উপর আবশ্যক হবে। (জাদীদ ফিক্বহী মাসায়েল ১/১৪৭-১৪৮, মালে হারাম আওর উসকে মাসারেফ ওয়া আহকাম ৮৫)

والله اعلم بالصواب

শাইখ উমায়ের কোব্বাদী সিনিয়র মুহাদ্দিস, মাদরাসা দারুর রাশাদ, মিরপুর খতীব, বাইতুল ফালাহ জামে মসজিদ, মিরপুর

মন্তব্য (0)

কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন