و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

সম্মানিত প্রশ্নকারী!
আপনার উল্লিখিত কিতাবে আদদুররুল মুখাতারের হাওয়ালায় যে কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেই বক্তব্যের সত্যতা রয়েছে। আমাদের সামনে ফতোয়া শামী সম্বলিত আদদুররুল মুখতারের যেই কপি আছে তার ২/২৪০ পৃষ্ঠার নিচের লাইনে সেই বক্তব্যটি উদ্বৃত হয়েছে। তার আরবী ইবারত হলো, (ويسن أن يلصق كعبيه) অর্থ: রুকুতে দুই পায়ের টাখনু মিলিয়ে রাখা সুন্নত।

আল্লামা ইবনে আবিদীন শামী এই ইবারতের ব্যাখ্যায় এ সংক্রান্ত কোনো কথা উল্লেখ না করে বরং সাইয়্যেদ আবুস সাউদ রহ. এর ব্যাখ্যা উল্লেখ করে বলেন, قال السيد أبو السعود: وكذا في السجود أيضا، অর্থাৎ আবুস সাউদের মতে সেজদায়ও টাখনু মিলিয়ে রাখা সুন্নত।

আল্লামা ইবনে আবিদীন শামী রাহ. এর এই বক্তব্য থেকে বুঝা যায় তিনিও রুকুতে উভয় পায়ের টাখনু মিলিয়ে রাখাকে সুন্নত মনে করেন। এবং তরিকুল ইসলাম কিতাবে সেই ভিত্তিতেই এটাকে সুন্নত বলা হয়েছে।

কিন্তু আমাদের কাছে ফতোয়া শামীর যেই কপিটি আছে সেটা এযাবৎ কালের সব থেকে বিশুদ্ধ এবং নির্ভরযোগ্য কপি। যা দারুল মা’রেফাহ্, বৈরুত, লেবানন থেকে প্রকাশিত। এর সাথে তাকরিরাতে রাফেয়ী নামে আব্দুল কাদের রাফেয়ী রহ.(মৃত: ১৩১২ হি. ১৯০৫ ইং) কৃত সর্বজন স্বীকৃত একটি টিকা আছে। সেখানে তিনি রুকুতে উভয় পায়ের টাখনু মিলানো সুন্নত হওয়া প্রসঙ্গে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে উল্লেখ করেন,

قال الرافعي: قول الشارح: ويسن أن يلصق كعبيه قال الشيخ أبو الحسن السندي الصغير في تعليقته على الدر: هذه السنة إنما ذكرها من ذكرها من المتأخرين تبعاً للمجتبى، وليس لها ذكر في الكتب المتقدمة كالهداية وشروحها، وكان بعض مشايخنا يرى أنها من أوهام صاحب المجتبى، ولم ترد في السنة على ما وقفنا عليه وكأنهم توهموا ذلك مما ورد أن الصحابة كانوا يهتمون بسد الخلل في الصفوف حتى يضمون الكعاب والمناكب ولا يخفى أن المراد هنا إلصاق كعبه بكعب صاحبه لا كعبه مع كعبه الآخر . اهـ :قلت ولعل الشيخ أبا الحسن لحظ إلى الآثار الواردة في أن التراوح بين القدمين في الصلاة مطلقاً أفضل من الصاقهما . اهـ سندي. وقد ذكر الآثار الواردة في التراوح فانظره .

উপরোক্ত বক্তব্যের সারাংশ হলো, শায়েখ আবুল হাসান আস সিন্ধী তার দুররুল মুখতারের টিকায় উল্লেখ করেছেন যে, মুতাআখখিরীন ওলামায়ে কেরামের মধ্যে যারা এটাকে সুন্নত হিসেবে ‍উল্লেখ করেছেন তারা মুলত “আল মুজতাবা” কিতাবের অনুসরণে এমনটি উল্লেখ করেছেন। অথচ বিষয়টি সম্পর্কে হেদায়া কিংবা তার কোনো ব্যাখ্যাগ্রন্থসহ পূর্ববর্তী কোনো কিতাবে সুস্পষ্ট উল্লেখ নেই। আমাদের কোনো কোনো মাশায়েখ এটাকে আলমুজতাবা গ্রন্থকারে ভুল মনে করেন। এবং সুন্নত হওয়ার ব্যাপারে তাদের থেকে কোনো বক্তব্য উদ্বৃত হয়নি। বরং সাহাবায়ে কেরামের কাতার সোজা করতে এবং কাতারের মাঝের ফাঁকা জায়গা পুরণ করতে যেভাবে গোড়ালীর সাথে গোড়ালী এবং টাখনুর সাথে টাখনু মিলাতেন সেটা থেকেই হয়তো তাঁরা রুকুতেও টাখনুর সাথে টাখনু মিলানোকে সুন্নত মনে করেছেন। আসলে বিষয়টি তা নয়। বরং সেখানেও উদ্দেশ্য হলো, একজনের টাখনুর সাথে অপরের টাখনু মিলানো। নিজের এক টাখনুর সাথে অপর টাখনু মিলানো নয়।

প্রিয় দ্বিনী ভাই!
উপরের এই দীর্ঘ আলোচনা থেকে আমরা যে বিষয়টি পেলাম তাহলো, নির্ভরযোগ্য মতানুসারে রুকুতে টাখনুর সাথে টাখনু মিলানো সুন্নত নয়। যেসব গ্রন্থে সুন্নত বলা হয়েছে সেটা তাঁদের কিছুটা তাসামুহ (ভুল) এর কারণে হয়েছে। এবং সেই সূত্র ধরেই তরিকুল ইসলাম গ্রন্থেও মাসয়ালাটি উদ্বৃত হয়েছে। আপাত দৃষ্টিতে লক্ষ করলে আমরা তরিকুল ইসলামের বর্ণনাকে ভুল বলছি না। তবে আমরা আশা করছি যদি আমাদের এই লেখা গ্রন্থখানীর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে (সম্ভব হলে আপনিও পৌঁছাতে পাারেন) তাহলে তারা অবশ্যই পরবর্তী সংস্করণে বিষয়টি সংশোধন করে নিবেন। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে দ্বীনের উপর কামেয়-দায়েম (অটল-অবিচল) থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

والله اعلم بالصواب