আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

ঘৃণার কারণে কোনো মুসমানের জানাযায় শরীক না হওয়া

প্রশ্নঃ ৩৯০৭৮. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, এমন কোনো মুসলিম ব্যক্তি যে কিনা অন্যের সম্পদ লুট করে খেয়েছে। সাধারণ মানুষের উপর জুলুম করেছে। সে যখন মারা যাবে তখন উপরে উল্লেখিত পাপের জন্য তার প্রতি ঘৃণা থাকায় যদি আমি তার জানাযায় ইচ্ছা করে না যাই তাহলে কি আমার পাপ হবে?,

১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

ঢাকা

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


সম্মানিত প্রশ্নকারী!
জানাজায় শরীক হওয়া এবং তার লাশের সাথে গোরস্থানে গমন করা মুসলমনের হক।

এক. সহীহ মুসলিমের ৫৪৬৫ নং হাদীসে আছে, আবু হুরায়রা (রাযিঃ) বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, পাঁচটি বিষয় মুসলমানের জন্য তার ভাইয়ের ব্যাপারে ওয়াজিবঃ
) أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ : سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ : ( حَقُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ خَمْسٌ : رَدُّ السَّلامِ ، وَعِيَادَةُ الْمَرِيضِ ، وَاتِّبَاعُ الْجَنَائِزِ ، وَإِجَابَةُ الدَّعْوَةِ ، وَتَشْمِيتُ الْعَاطِسِ(.
১.সালামের জবাব দেওয়া, ২. হাঁচিদাতাকে (তার আলহামদু লিল্লাহ বলার জবাবে) রহমতের দুআ করা, ৩. দাওয়াত কবুল করা, ৪. অসুস্থকে দেখতে যাওয়া এবং ৫. জানাযার সাথে গমন করা।
দুই. "সহীহ বুখারী হাদীস নং: ২২৮৩ আন্তর্জাতিক নং: ২৪৪৫- এ আছে, “বারা ইবনে আযিব (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ নবী (ﷺ) আমাদেরকে সাতটি বিষয়ে আদেশ দিয়েছেন এবং সাতটি বিষয়ে নিষেধ করেছেন। তারপর তিনি উল্লেখ করলেন, পীড়িতের খোঁজখবর নেয়া, জানাযার অনুসরণ করা, হাঁচির জবাবে ইয়ারহামুকাল্লাহ বলা, সালামের জওয়াব দেওয়া, মাযলুমকে সাহায্য করা, আহবানকারীর প্রতি সাড়া দেওয়া, কসমকারীকে দায়িত্ব মুক্ত করা।
حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ الرَّبِيعِ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنِ الأَشْعَثِ بْنِ سُلَيْمٍ، قَالَ: سَمِعْتُ مُعَاوِيَةَ بْنَ سُوَيْدٍ، سَمِعْتُ البَرَاءَ بْنَ عَازِبٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: " أَمَرَنَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِسَبْعٍ، وَنَهَانَا عَنْ سَبْعٍ فَذَكَرَ: عِيَادَةَ المَرِيضِ، وَاتِّبَاعَ الجَنَائِزِ، وَتَشْمِيتَ العَاطِسِ، وَرَدَّ السَّلاَمِ، وَنَصْرَ المَظْلُومِ، وَإِجَابَةَ الدَّاعِي، وَإِبْرَارَ المُقْسِمِ
উপরোক্ত দুই হাদিস থেকে মুসলিমের জানাজায় শরীক অপর মুসলিমের ওপর হক হওয়ার কথা প্রতিয়মাণ হয়।

এতদ্বসত্ত্বেও, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, কতিপয় মানুষের জনাজায় অংশ গ্রহন করা থেকে বিরত থেকেছেন।এটা তাদের জন্য শাস্তিস্বরূপ এবং তাদের কর্মের নিন্দাস্বরূপ। এবং যারা গনীমতের মাল চুরি করেছিল এবং যারা আত্মহত্যা করেছিল তিনি তাদের জানাজায়ও শরীক হননি।

حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، أَنَّ يَحْيَى بْنَ سَعِيدٍ، وَبِشْرَ بْنَ الْمُفَضَّلِ، حَدَّثَاهُمْ عَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيدٍ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ يَحْيَى بْنِ حَبَّانَ، عَنْ أَبِي عَمْرَةَ، عَنْ زَيْدِ بْنِ خَالِدٍ الْجُهَنِيِّ، أَنَّ رَجُلاً، مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم تُوُفِّيَ يَوْمَ خَيْبَرَ فَذَكَرُوا ذَلِكَ لِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ " صَلُّوا عَلَى صَاحِبِكُمْ " . فَتَغَيَّرَتْ وُجُوهُ النَّاسِ لِذَلِكَ فَقَالَ " إِنَّ صَاحِبَكُمْ غَلَّ فِي سَبِيلِ اللَّهِ " . فَفَتَّشْنَا مَتَاعَهُ فَوَجَدْنَا خَرَزًا مِنْ خَرَزِ يَهُودَ لاَ يُسَاوِي دِرْهَمَيْنِ .
মুসাদ্দাদ (রাহঃ) ..... যায়দ ইবনে খালিদ জুহানী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। নবী (ﷺ) এর সাহাবীদের থেকে জনৈক ব্যক্তি খায়বরের যুদ্ধের দিন মারা যায়। তখন সাহাবীরা এ খবর রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)কে দিলে তিনি বলেনঃ তোমরা তোমাদের সাথীর (জানাযার) নামায পড়, (আমি তার জানাযার নামাযে শরীক হব না)। এ কথা শুনে লোকদের চেহারা ভয়ে পরিবর্তিত হয়ে যায়। তখন তিনি বলেনঃ তোমাদের সাথী আল্লাহর রাস্তায় চুরি করে খিয়ানত করেছে।
(রাবী বলেন) এরপর আমরা তার জিনিসপত্র অনুসন্ধান করি এবং ইয়াহুদীদের ব্যবহৃত একটি মণিমুক্তা খচিত কণ্ঠহার পাই, যা দুই দিরহামের সমান ছিল না।
আবু দাউদ, হাদীস নং: ২৭০১ আন্তর্জাতিক নং: ২৭১০
হাদীসের লিংকঃ https://muslimbangla.com/hadith/17048

এই হাদিসে দেখা যাচ্ছে রাসূলুল্লাহ সা. গনিমতের মাল চুরি করার কারণে ওই ব্যক্তির জানাজায় শরীক হননি।
والغلول : هو الأخذ من الغنيمة خفية قبل قسمتها .
“গুলুল” বলা হয় গনিমতের মাল বণ্টন হওয়ার আগে গোপনে তার কিয়দাংশ নিজের কাছে রেখে দেওয়া।

উপরোক্ত হাদিস থেকে বুঝা যায় যেখানে মাত্র দুই দিরহাম সমপরিমাণ গনিমতের মাল চুরি করার কারণে রাসূলুল্লাহ সা. সাহাবীর জানাজা পরিত্যাগ করেছেন সেখানে যারা সমাজের জুলুম করে বেড়ায়, ডাকাতি করে, খুন ধর্ষণ করে তাদের জানাজায় আলেম ওলামা, খতিব, বক্তা, ইমাম-মুয়াজ্জিন, বা সমাজের অনুসৃত ব্যক্তিদের জন্য এজাতীয় লোকদের জানাজায় শরীক হওয়া উচিত নয়-যেন সেটা পরবর্তীদের জন্য শিক্ষার বস্তু হয়।
তবে সাধারণ মুসলমানদের জন্য তাদের জানাজায় শরীক হওয়া উত্তম। যাতে তারা জানাজায় শরীক হওয়ার ফজিলত লাভ করেন। তার জুলুমের শাস্তি সেই ভোগ করবে। তার অপরাধের কারণে নিজে সাওয়াব থেকে বঞ্চিত হওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়।

আর যেহেতু জানাজার নামাজ ফরজে কিফায়াহ। তাই কোনো মুসলমান যদি তাতে অংশ গ্রহন করা থেকে বিরত থাকে তাহলে যদিও সে গুনাহগার হবে না তবে সে এক কিরাত/দুই কিরাত সমপরিমাণ সাওয়াব থেকে মাহরূম থাকবে।

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি
উস্তাজুল ইফতা, জামিয়া ইমাম বুখারী, উত্তরা, ঢাকা।

প্রসঙ্গসমূহ:

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৯১৩৮৬

প্রজেক্টর বা ডিজিটাল পর্দার মাধ্যমে বক্তাকে দেখা মহিলাদের কতটুকু শরীয়তসম্মত?


২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

নওগাঁ

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ আল কাউসার

৫১৮৩১

সাত আসমান কি দিয়ে তৈরি?


১৪ জানুয়ারী, ২০২৪

সোনাগাজী পৌরসভা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

৩৪২৫০

একসাথে একাধিক কসমের কাফফারা


৯ জুন, ২০২৩

ভারই

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি মোহাম্মদ আমীর হোসাইন

৪৩৩৭৩

ইলেক্ট্রিক ব্যাট দিয়ে মশা মারা জায়েজ?


১৯ অক্টোবর, ২০২৩

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি জাওয়াদ তাহের

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy