আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

সরকারী অফিসের সম্পদ নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেওয়া

প্রশ্নঃ ৩৭৮৭০. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমি স্বামী একজন সরকারি চাকুরীজীবি। প্রতি জুন মাসে সরকারি অফিসগুলোতে হিসাব ক্লোজ করা হয়।এই সময় ওই অফিসের জন্য যে টাকা সরকারি বরাদ্দ ছিলো তার হিসাব সরকারকে দিতে হয়।যদি বরাদ্দকৃত টাকা খরচ না হয়ে থাকে তাহলে অব্যবহৃত টাকা ফিরিয়ে দিতে হয়।আর ভবিষ্যতে বরাদ্দকৃত টাকা কমে যায়।তাই সরকারি অফিসগুলো উচ্ছিষ্ট টাকা অনেক সময় অফিসের স্টাফদের মাঝে বিতরণ করে দেয় বা ওই টাকা দিয়ে বিভিন্ন গিফট যেমন বেডশিট, সিরামিকের জিনিস ইত্যাদি দিয়ে থাকে।আমার প্রশ্ন হচ্ছে এই টাকা বা গিফট আইটেম গুলো নেওয়া কি আমার স্বামীর জন্য জায়েজ হবে? আমাদের বাসায় এমন একটা বেডশিট আছে।যদি জায়েজ না হয় তবে এটা কি করবো?

৮ আগস্ট, ২০২৩
ঢাকা

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


সম্মানিত প্রশ্নকারী!
শরীয়তের বিধান মতে কারও সম্পদ তার সন্তুষ্টি ব্যতীত ব্যবহার করা জায়েজ নাই।
এই মর্মে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَاۡکُلُوۡۤا اَمۡوَالَکُمۡ بَیۡنَکُمۡ بِالۡبَاطِلِ اِلَّاۤ اَنۡ تَکُوۡنَ تِجَارَۃً عَنۡ تَرَاضٍ مِّنۡکُمۡ ۟ وَ لَا تَقۡتُلُوۡۤا اَنۡفُسَکُمۡ ؕ اِنَّ اللّٰہَ کَانَ بِکُمۡ رَحِیۡمًا ﴿۲۹﴾
হে ইমানদারগণ ! তোমরা একে অপরের সম্পত্তি অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করো না। তবে তোমরা পরস্পর রাযী হয়ে ব্যবসা করা বৈধ। এবং নিজেদের হত্যা করো না।নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু। (সুরা নিসা ২৯)

হাদীস শরীফে আবূ হুররাহ্ আর্ রক্কাশী (রহঃ) তাঁর চাচা হতে বর্ণনা করে বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন,

أَلَا لَا تَظْلِمُوا أَلَا لَا يَحِلُّ مَالُ امْرِئٍ إِلَّا بِطِيبِ نَفْسٍ مِنْهُ». رَوَاهُ الْبَيْهَقِىُّ فِىْ شُعَبِ الْإِيْمَانِ وَالدَّارَقُطْنِىِّ فِى الْمُجْتَبٰى
সাবধান! কারো ওপর জুলুম করবে না। সাবধান! কারো মনোতুষ্টি ছাড়া তার মাল অন্য কারো জন্য হালাল নয়।-(আহমাদ ২০৬৯৫, শু‘আবুল ঈমান ৫১০৫, ইরওয়া ১৪৫৯, সহীহ আল জামি‘ ৭৬৬২।)

সম্মানিত প্রশ্নকারী!
প্রশ্নোক্ত টাকা সরকারের সম্পত্তি। আপনার স্বামী বা তার কলিগগণ যেভাবে এই টাকা ব্যবহার করেন তা সম্পূর্ণ হারাম। এটা সরাসরি রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাত। ব্যক্তিগত সম্পত্তি অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করলে তো চাইলে রিফান্ড করার বা ক্ষমা চেয়ে নেওয়ার সুযোগ থাকে। কিন্তু রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি আত্মসাৎ করলে সেখানে শুধুমাত্র রিফান্ডই করতে হবে। সেখানে ক্ষমা চাওয়ার কোনো সুযোগ নাই। কেননা এই সম্পত্তি পুরো দেশের মানুষের হক।

তাই বাৎসরিক হিসাব ক্লোজ করার সময় পরবর্তী বছরের বরাদ্দ হ্রাস পাওয়ার “অনর্থক চিন্তায়” চলতি বছরের অবশিষ্ট সম্পদ নিজেদের মধ্যে এভাবে ভাগ করে নেওয়া জায়েজ নাই। এটা সম্পূর্ণ হারাম। আপনার স্বামী যেই বেডশিট এনেছেন সেটা ব্যবহার করাও আপনাদের জন্য জায়েজ নাই।

এখন করনীয় হলো সেই বেডশিটের সমপরিমাণ টাকা সরকারী কোষাগারে জমা দিয়ে দেওয়া। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সর্বপ্রকারের হারাম থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন ।

والله اعلم بالصواب

মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি উস্তাজুল ইফতা, জামিয়া ইমাম বুখারী, উত্তরা, ঢাকা।

মন্তব্য (0)

কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন