প্রশ্নঃ ৩৬২৮. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আসসালামু আলাইকুম। (১)কাগজ দিয়ে ৩ তালাক দেওয়া হয়েছে একসাথেই। জামাই প্রথম সাইন করসে কাগজে ( জামাই তার নিজের পিতা((স্ত্রীর পিতা না)), কাজী পাশাপাশি আর কিছু মানুষের সামনে সাইন করসে প্রথম ) আর বউ ( স্ত্রী তার নিজের পিতা আর কাজী) সামনে সেই দিন সাইন করে।ইদ্দত চলতেসে ( তালাক এর ১ মাস উপর চলছে )।জামাই আর স্ত্রীর আবার পুনরায় বিয়ে করার উপায় কি? (আবার এক্ সাথে হবার মাধ্যম কি?) (২) এই অবস্থায় তাদের ৩ তালাক হয়ে গেছে ( এক্ দিনে সাইন দিয়ে) ? (৩) সংগত কারণে মহিলা নিজের বাবার বাসায় ইদ্দত পালন করতে হচ্ছে ।প্রথম দিকে ইদ্দতের গুরুত্ব খেয়াল করেনি ইচ্ছামত বাইরে চলাফেরা আর সেইসাথে সাজসজ্জা অনেক সময় করেছে । কিন্তু বাকি দিন ঠিকমত ইদ্দত পালন করতে চাচ্ছে ইসলাম মেনে ইনশাআল্লাহ। ইদ্দত পালনকাল সময় কানেদুল (আগেথেকেই সুন্দর লাগার উদ্দেশ্যে না গুসলের পানি ঠিকমত লাগার উদ্দেশ্যে কানে পড়ে দুল), যত্ন নিতে অথবা সুন্দর থাকতে চুলে তেল,মুখে ক্রিম, ভেসলিন দিতে পারবে? ( মাহরাম দের সামনে)?(৪) ইদ্দত কালে মাহরাম দের সামনে সাজতে পারবে?
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
১. ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্নভাবে অথবা এক সঙ্গে এক বৈঠকে তিন তালাক দিয়ে দেওয়ার পর স্বামী-স্ত্রী একত্র হওয়ার আর কোন সুযোগ থাকে না।
(উল্লেখ্য: এক বৈঠকে তিন তালাক দিলে তিন তালাকই প্রযোজ্য হবে। এ ব্যাপারে সাহাবায়ে কেরাম ও চার মাযহাবের ঐক্যমত রয়েছে।) স্বামী-স্ত্রী বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পর যদি আবার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে চায় তাহলে একমাত্র উপায় হলো স্ত্রীর ইদ্দত শেষ হওয়ার পর অন্যত্র বিবাহ হবে। এরপর দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে স্বামী-স্ত্রী সুলভ সম্পর্ক হওয়ার পর স্বামীর মৃত্যু অথবা স্বামী তালাক দেওয়ার পর স্ত্রীর ইদ্দত শেষ হলে পূর্বের স্বামীর সাথে বিবাহ হতে পারবে।
২. জি, আপনার বর্ণনা অনুযায়ী এই অবস্থায় তাদের তিন তালাক হয়ে গেছে।
৩. এ ধরনের ইদ্দতকালে কানের দুল ব্যবহার করবে না। কানের ছিদ্রে পানি পৌঁছানোর জন্য ছোট রিং অথবা এ জাতীয় কিছুর সহযোগিতা নেবে।
৪. ইদ্দতকালে মাহরামদের সামনেও স্বাভাবিক চলাফেরা করবে। সাজগোজ করবে না।
فَإِن طَلَّقَهَا فَلاَ تَحِلُّ لَهُ مِن بَعْدُ حَتَّىَ تَنكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ فَإِن طَلَّقَهَا فَلاَ جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَن يَتَرَاجَعَا إِن ظَنَّا أَن يُقِيمَا حُدُودَ اللّهِ وَتِلْكَ حُدُودُ اللّهِ يُبَيِّنُهَا لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ
তারপর যদি সে স্ত্রীকে (তৃতীয়বার) তালাক দেয়া হয়, তবে সে স্ত্রী যে পর্যন্ত তাকে ছাড়া অপর কোন স্বামীর সাথে বিয়ে করে না নেবে, তার জন্য হালাল নয়। অতঃপর যদি দ্বিতীয় স্বামী তালাক দিয়ে দেয়, তাহলে তাদের উভয়ের জন্যই পরস্পরকে পুনরায় বিয়ে করাতে কোন পাপ নেই। যদি আল্লাহর হুকুম বজায় রাখার ইচ্ছা থাকে। আর এই হলো আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা; যারা উপলব্ধি করে তাদের জন্য এসব বর্ণনা করা হয়।
সুরা বাকারা ২:২৩০
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُحَمَّدٍ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ عُرْوَةَ، عَنْ عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها ـ جَاءَتِ امْرَأَةُ رِفَاعَةَ الْقُرَظِيِّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَتْ كُنْتُ عِنْدَ رِفَاعَةَ فَطَلَّقَنِي فَأَبَتَّ طَلاَقِي، فَتَزَوَّجْتُ عَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ الزَّبِيرِ، إِنَّمَا مَعَهُ مِثْلُ هُدْبَةِ الثَّوْبِ. فَقَالَ " أَتُرِيدِينَ أَنْ تَرْجِعِي إِلَى رِفَاعَةَ لاَ حَتَّى تَذُوقِي عُسَيْلَتَهُ وَيَذُوقَ عُسَيْلَتَكِ ". وَأَبُو بَكْرٍ جَالِسٌ عِنْدَهُ وَخَالِدُ بْنُ سَعِيدِ بْنِ الْعَاصِ بِالْبَابِ يَنْتَظِرُ أَنْ يُؤْذَنَ لَهُ، فَقَالَ يَا أَبَا بَكْرٍ، أَلاَ تَسْمَعُ إِلَى هَذِهِ مَا تَجْهَرُ بِهِ عِنْدَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم.
‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, রিফা‘আ কুরাযীর স্ত্রী নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বলল, আমি রিফা‘আর স্ত্রী ছিলাম। কিন্তু সে আমাকে বায়েন তালাক দিয়ে দিল। পরে আমি ‘আবদুর রহমান ইবনু যুবাইরকে বিয়ে করলাম। কিন্তু তার সঙ্গে রয়েছে কাপড়ের আঁচলের মতো নরম কিছু (অর্থাৎ তার পুরুষত্ব নাই)। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তবে কি তুমি রিফা‘আর নিকট ফিরে যেতে চাও? না, তা হয় না, যতক্ষণ না তুমি তার মধুর স্বাদ গ্রহণ করবে আর সে তোমার মধুর স্বাদ গ্রহণ করবে। আবু বক্র (রাঃ) তখন তাঁর নিকট উপবিষ্ট ছিলেন। আর খালিদ ইবনু সা‘ঈদ ইবনু ‘আস (রাঃ) দ্বারপ্রান্তে প্রবেশের অনুমতির অপেক্ষায় ছিলেন। তিনি বললেন, হে আবূ বক্র! এই নারী নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দরবারে উচ্চ আওয়াজে যা বলছে, তা কি আপনি শুনতে পাচ্ছেন না?
সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২৬৩৯
مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ حَدَّثَنَا يَحْيٰى عَنْ عُبَيْدِ اللهِ قَالَ حَدَّثَنِي الْقَاسِمُ بْنُ مُحَمَّدٍ عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ رَجُلاً طَلَّقَ امْرَأَتَه“ ثَلاَثًا فَتَزَوَّجَتْ فَطَلَّقَ فَسُئِلَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَتَحِلُّ لِلأَوَّلِ قَالَ لاَ حَتّٰى يَذُوقَ عُسَيْلَتَهَا كَمَا ذَاقَ الأَوَّلُ.
আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
যে, এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তিন ত্বলাক্ব দিলে সে (স্ত্রী) অন্যত্র বিয়ে করল। পরে দ্বিতীয় স্বামীও তাকে ত্বলাক্ব দিল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে জিজ্ঞেস করা হল মহিলাটি কি প্রথম স্বামীর জন্য হালাল হবে? তিনি বললেনঃ না, যতক্ষন না সে (দ্বিতীয় স্বামী) তার স্বাদ গ্রহণ করবে, যেমন স্বাদ গ্রহণ করেছিল প্রথম স্বামী।
সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫২৬১
وَهُوَ فِي الاِصْطِلاَحِ: امْتِنَاعُ الْمَرْأَةِ مِنَ الزِّينَةِ وَمَا فِي مَعْنَاهَا مُدَّةً مَخْصُوصَةً فِي أَحْوَالٍ مَخْصُوصَةٍ، وَكَذَلِكَ مِنَ الإِْحْدَادِ امْتِنَاعُهَا مِنَ الْبَيْتُوتَةِ فِي غَيْرِ مَنْزِلِهَا (2) .
وَأَمَّا الْمُعْتَدَّةُ مِنْ طَلاَقٍ بَائِنٍ بَيْنُونَةً صُغْرَى أَوْ كُبْرَى فَقَدِ اخْتَلَفَ الْعُلَمَاءُ فِيهِ عَلَى اتِّجَاهَيْنِ:
الأَْوَّل: ذَهَبَ الْحَنَفِيَّةُ وَالشَّافِعِيُّ فِي قَدِيمِهِ، وَهُوَ إِحْدَى الرِّوَايَتَيْنِ فِي مَذْهَبِ أَحْمَدَ، أَنَّ عَلَيْهَا الإِْحْدَادَ، لِفَوَاتِ نِعْمَةِ النِّكَاحِ. فَهِيَ تُشْبِهُ مِنْ وَجْهٍ مَنْ تُوُفِّيَ عَنْهَا زَوْجُهَا
الموسوعة الفقهية
والله اعلم بالصواب
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন