অসহায় নারীর জন্য কিছু পরামর্শ
প্রশ্নঃ ৩৪৯১৪. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আজকের কথা গুলো একটু বড় হবে যদি কিছু না মনে করেন আপনারা অনেক উপকার হবে আমার। আল্লাহ আপনাদের কে উওম প্রতিদান দান করুক আমিন। আল্লাহ আপনাদেরকে ধৈর্য সহকারে পড়ার তাওফিক দান করুক আমিন। আমি একজন বিবাহিত মেয়ে। এর আগেও প্রশ্ন করেছি। আমার বিয়ে হয়েছে নিজের পছন্দে এখনো তুলে নেয় নাই আমার মায়ের বাসায় থাকি বাবা নাই। আমাদের ইনকাম করার মতো ও কেউ নাই আমি চাকরি করতাম ২ বছর আগে স্বামী পছনৃদ করে না তাই ছেড়ে দিয়েছিলাম এর পর থেকে পরিপূর্ণ পর্দা করি আলহামদুলিল্লাহ। বাসায় টুকটাক সেলাইএর কাজ করি এখন তাও ও হয় না আমার মা আমাকে প্রতিদিন ই কথা শুনায় কারন আমি তাদের জন্য কিছুই করতে পারি না আমার স্বামী ও বেকার সেও আমাকে কোন আর্থিক সাহায্য করতে পারে না। এমন অবস্থায় পড়েছি যে এখন খাবার খাওয়া টাও কষ্টের। রুম ভাড়া থাকি। আমার স্বামী আমাকে আর্থিক সাহায্য ও করে না মানসিক সাহয্য ও আমি খুব কষ্টে আছি আমার মা এর কষ্ট ও আমি বুঝি তার ও অনেক কষ্ট হয় সে কষ্ট পেয়ে ই আমাকে কথা শুনায় আমার ছোট ভাই আর বোন আছে তাদের জন্য ও কিছুই করতে পারি না আমি এখন সম্পূর্ণ পর্দা করি তাই চাকরি করা সম্ভব না আর আমার স্বামী আমাকে মানসিক অনেক কষ্ট দেয় নিজে সাহায্য তো করে না আর আমার কষ্টের কথা বললে আরো খারাপ কথা বলে আমাকে কষ্ট দেয় বাসা ছেড়ে ছোট বাসা নিতে চাইলে বলে এই বাসা ছেড়ে অন্য বাসায় গেলে পর্দা ঠিক ভাবে করতে পারবো না এজন্য নাকি আমাকে ছেড়ে দিবে বাসা চেন্জ করলেই। অনেক বড়াই করে উঠতে বসতে আমাকে কথা শুনায় বলে ছেড়ে দিবে আরো বলে তোর সাথে আমার সম্পর্ক টিকবে না গেরান্টি দিলাম। অনেক কষ্ট দিয়ে কথা বলে আমি অনেক অসহায় আমি আমার মা এর জন্য ভাই বোন কারো জন্য ই কিছু করতে পারতেছি না তাদের কষ্ট দেখে অনেক কষ্ট হয় আমার নানু ও আমার নানুর মা ও আমাদের সাথে থাকে। আমার যে কষ্ট হয় কেউ ই বুঝে না। আমি হিফজ করতেছি এতেও মনোযোগী হতে পারছি না। আমি দুই নৌকায় পা দিয়ে আছি। না স্বামীর কাছে ভালো না পরিবার এর কাছে মানসিক চাপ এ ভোগছি 🥺 আমাকে কিছু আমল ও পরামর্শ দিন দয়া করো অনেক উপকার হবে আমার। আমি কি করতে পারি এই অবস্থায়। আর মাফ করবেন এতো কিছু শেয়ার করার জন্য আফওয়ান
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
প্রিয় বোন! আপনার দীর্ঘ লেখা মনোযোগ দিয়ে পড়লাম। আল্লাহ তাআলা আপনাকে সকল সমস্যা থেকে মুক্তি দান করুন। আমরা আপনার জন্য দোআ করি। আপনার জন্য কয়েকটি পরামর্শ।
১। আপনি ভেঙে পরবেন না। আল্লাহর উপর পূর্ণ তাওয়াক্কুল রাখুন। রিজিকির মালিক একমাত্র আল্লাহ তিনি আমাদেরকে না খাইয়ে মারবেন না। সেজন্য আল্লাহর বিধান মতো জীবন-যাপন করুন। আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক আরো দৃঢ় করুন।
২। আপনি আপনার স্বাীমর পূর্ণ আনুগত্য করুন। তাকে ভালোবাসার চেষ্টা করুন। সে যেন বোঝে আপনি তাকে প্রচণ্ড রকম ভালোবাসেন, এই মসেজটি তার মনে গেঁথে দিন। রাসূলুল্লাহ ﷺ সর্বোত্তম নারীর পরিচয় দেন এভাবে– الَّتِي تُطِيعُ إِذَا أَمَرَ ، وَتَسُرُّ إِذَا نَظَرَ ، وَتَحْفَظُهُ فِي نَفْسِهَا وَمَالِهِ যে স্বামীর অনুগত থাকে, স্বামী তার দিকে তাকালে সে আনন্দ প্রকাশ করে এবং নিজের চরিত্র ও স্বামীর সম্পদ হেফাজত করে। (নাসাঈ কুবরা ৮৬৩৮)
৩। আপনার যাবতীয় দুঃখ বেদনা আপনার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর কাছে বলুন। গভীর রজনীতে নামাজ পড়ে চোখের পানি ফেলে নিজের জন্য, আপনার মায়ের জন্য, আপনার স্বামীর জন্য দোআ করুন। সাথে সাথে আপনার প্রয়োজনের কথা আল্লাহকে বলুন। ইনশআল্লাহ আপনার দোআ কবুল করবেন। আল্লাহ বলেন,
وقال ربكم ادعوني أستجب لكم إن الذين يستكبرون عن عبادتي سيدخلون جهنم داخرين
তোমাদের প্রতিপালক বলেছেন, আমাকে ডাক। আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। নিশ্চয়ই অহংকারবশে যারা আমার ইবাদত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তারা লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (সূরা মুমিন, আয়াত : ৪০)
৪। বেশি ধৈর্যধারণ করুন। দুনিয়া চিরকাল থাকার যায়গা নয়। এখানে চাইলেও কেউ চিরকাল থাকতে পারবে না। আর দুনিয়া সুখ দুখ মিলিয়ে। এ জন্য ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার কথা বারবার চিন্তা করুন। ইনশাআল্লাহ আপনার মন প্রশান্ত হবে।
৫। বেশি বেশি ইস্তেগফার পরুন। ইস্তিগফারের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা বান্দার অন্তর থেকে যাবতীয় দুশ্চিন্তা ও পেরেশানি দূর করে দেন। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, কোনো ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তিগফার পড়লে আল্লাহ তাকে প্রত্যেক বিপদ হতে মুক্তির ব্যবস্থা করবেন, সকল দুশ্চিন্তা হতে মুক্ত করবেন এবং তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দিবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ১৫১৮)
৬। নিয়মিত কোরআন তিলাওয়াত করা। কারণ কোরআন তিলাওয়াত আল্লাহর পক্ষ থেকে নূর। যে বক্ষে কোরআন রয়েছে সেখানে শয়তান আসতে পারে না। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যার হৃদয়ে কোরআনের কিছুই নেই সে বর্জিত ঘরের মতো। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ২৯১৩)
অন্য আয়াতে এসেছে, ‘হে মানুষ! তোমাদের কাছে তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে এসেছে এক উপদেশ, অন্তরের রোগব্যাধির উপশম এবং মুমিনদের পক্ষে হিদায়াত ও রহমত।’ (সুরা : ইউনুস, আয়াত : ৫৭)
কোরআন সর্বরোগের নিরাময়, তা অন্তরের রোগই হোক কিংবা দেহেরই হোক। হাদিসের বর্ণনা ও উম্মতের আলেম সম্প্রদায়ের অসংখ্য অভিজ্ঞতাই এটির প্রমাণ যে কোরআন মজিদ যেমন আত্মার ব্যাধির জন্য অব্যর্থ মহৌষধ, তেমনি দৈহিক ব্যাধির জন্যও উত্তম চিকিৎসা।
والله اعلم بالصواب
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন