তাকদীর সম্পর্কে এমন ধারণা রাখা কি ঈমান বিধ্বংসী চিন্তা?
প্রশ্নঃ ৩৪৪১৪. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, তাকদীর সম্পর্কে এমন ধারণা রাখা কি ঈমান বিধ্বংসী চিন্তা যে, তাকদীর মানে এই না যে আমার সাথে যা ঘটছে বা ঘটবে আল্লাহ তাই চেয়েছেন বলেই হয়েছে বরং আল্লাহ জানতেন যে আমি এমনই করবো এবং আমি শুধু আমার কর্মফল পাচ্ছি যেটা আমি আমার স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি দিয়েই করেছি। মোটকথা,"আমার জীবনে প্রতি পদক্ষেপ এ অনেকগুলো সম্ভাবনা আছে যার সবগুলোর পরিণাম আল্লাহ প্রদত্ত এবং আল্লাহ যে জানেন আমি কোন পথ নিবো এটাই তাকদীর" এরকম বিশ্বাস ঈমানপন্থী নাকি ঈমান বিধ্বংসী?,
৪ জুলাই, ২০২৩
Dhaka, Dhaka, Bangladesh
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
তাকদির শব্দটি আরবি। এর অর্থ নির্ধারণ করা, নির্দিষ্ট করা, ধার্য করা, নিয়তি, ভাগ্য, ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি। এই মহাবিশ্বে ভবিষ্যতে যা কিছু ঘটবে, প্রজ্ঞাময় আল্লাহ তাআলা তাঁর পূর্বজ্ঞান ও প্রজ্ঞা অনুযায়ী সেসব নির্ধারণ করে রাখাকে তাকদির বলে। পৃথিবীর সব বস্তু তথা মানব-দানবসহ যত সৃষ্টি রয়েছে, সব কিছুর উত্থান-পতন, ভালো-মন্দ, উপকার-অপকার, লাভ-ক্ষতি ইত্যাদি কোথায়, কোন সময়, কিভাবে ঘটবে—আল্লাহ তাআলা নির্ধারণ করে রেখেছেন।
তাকদিরের বাইরে কোনো কিছু নেই। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক জিনিসই তাকদির অনুযায়ী সংঘটিত হয়ে থাকে। এমনকি অক্ষমতা ও বুদ্ধিমত্তাও।’ (মুসলিম, রিয়াদুস সলিহিন. পৃষ্ঠা ২৮২)
তাকদির কি পরিবর্তিত হয়?
তাকদির বা ভাগ্যলিপি দুই প্রকার; যথা—১. তাকদিরে মুবরাম (অপরিবর্তনীয় ভাগ্যলিপি) ও ২. তাকদিরে মুআল্লাক (ঝুলন্ত ভাগ্যলিপি)।
তাকদিরে মুবরাম কখনোই পরিবর্তিত হয় না। আর তাকদিরে মুআল্লাক বান্দার নেক আমল, দোয়া ইত্যাদির মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়। হজরত সালমান (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, দোয়া আল্লাহর ফয়সালাকে পরিবর্তন করাতে পারে। আর নেক আমল বয়সকে বৃদ্ধি করাতে পারে।
’ (তিরমিজি, হাদিস নম্বর : ২১৩৯)
তাকদির কি মানুষের কাজের কারণ ও উপকরণ?
তাকদির মানুষের কাজের কারণ নয় এবং তাকদির লিপিবদ্ধ আছে বলে মানুষ ভালো-মন্দ ইত্যাদি কাজ করছে—বিষয়টি এমন নয়; বরং ভবিষ্যতে মানুষ যা করবে, আল্লাহ তাআলা তা আগে থেকেই জানেন, ফলে তিনি তা আদিতেই লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। আল্লাহ তাআলা আদিতে লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন বলে মানুষ লেখা অনুযায়ী কর্ম করছে—এ কথা মোটেও ঠিক নয়। বরং আমরা কখন কী করব, কী খাব, কোথায় কী ঘটবে—এগুলো আল্লাহ তাআলা পূর্ব থেকে জানেন। কারণ তিনি ইলমে গায়েবের অধিকারী। তাঁর পূর্বজ্ঞান অনুযায়ী তা লিখে রেখেছেন।
উদাহরণস্বরূপ—
১. একজন শিক্ষক পাঁচজন ছাত্রকে শিক্ষাদানের পর তাঁর অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি যদি তাঁর ডায়েরিতে লিপিবদ্ধ করেন যে অমুক ছাত্র ‘এ প্লাস’ পাবে, অমুক ছাত্র ‘এ’ পাবে, অমুক ছাত্র ‘এ মাইনাস’ পাবে, অমুক ছাত্র ‘বি’, অমুক ছাত্র ‘সি’ পাবে। এখন পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর যদি শিক্ষকের আগের লেখা অনুযায়ী ফলাফল হয়, তাহলে কি শিক্ষকের লেখার কারণে এই ফলাফল হলো? অবশ্যই না। তাকদিরের বিষয়টিও এমনই।
২. একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার তাঁর রোগীর অবস্থা বুঝে অভিজ্ঞতার আলোকে তাঁর ডায়েরিতে লিখে রেখেছেন যে এই রোগী অমুক দিন, অমুক অবস্থায় মারা যাবে। কার্যত যদি তা-ই হয়, তাহলে ডাক্তারের লিখে রাখার কারণেই কি তার মৃত্যু হলো? নিশ্চয়ই না। ঠিক তেমনই আল্লাহ তাআলা মানুষের অবস্থা আদি থেকেই জানেন বলে সব কিছু লিখে রেখেছেন। কিন্তু এই লিপিবদ্ধকরণ মানুষের কার্যের কারণ নয়। বরং কার্যের কারণ হলো তার ইচ্ছা। ফলে ব্যক্তির কজের জন্য সে নিজেই দায়ী।
তাকদিরের প্রতি ঈমানের স্বরূপ
তাকদিরের প্রতি বিশ্বাস করা ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাকদিরের ওপর সন্তুষ্ট থাকা ফরজ। তাকদিরে বিশ্বাসের অর্থ হলো—
১. আল্লাহর ব্যাপারে এই বিশ্বাস রাখা যে তিনি আদি থেকে সব কিছুর ব্যাপারে ওয়াকিফহাল।
২. তিনি লাওহে মাহফুজে (সংরক্ষিত ফলকে) সব কিছু লিখে রেখেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তাআলা সৃষ্টিকুল সৃষ্টির ৫০ হাজার বছর আগে সৃষ্টিকুলের তাকদির লিখে রেখেছেন।’ (মুসলিম) তিনি আরো বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা প্রথমে কলম সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর কলমকে বললেন—লেখো। কলম বলল, হে রব! কী লিখব? তিনি বলেন, কিয়ামত পর্যন্ত প্রত্যেক জিনিসের তাকদির লেখো।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৭০০) আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তুমি কি জানো না যে নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলে যা কিছু আছে আল্লাহ সব কিছু জানেন। নিশ্চয়ই এসব কিতাবে লেখা আছে। অবশ্যই এটা আল্লাহর কাছে সহজ।’ (সুরা : হজ, আয়াত : ৭০)
৩. আল্লাহর ইচ্ছার বাইরে কোনো কিছু ঘটে না। তাঁর বাণী হলো, ‘আপনার পালনকর্তা যা ইচ্ছা করেন এবং (যা ইচ্ছা) মনোনীত করেন।’ (সুরা : কাসাস, আয়াত : ৬৮)
৪. সব কিছুর সত্তা, বৈশিষ্ট্য, গতি, স্থিতি—সবই আল্লাহর সৃষ্টি। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ সব কিছুর স্রষ্টা এবং তিনি সব কিছুর তত্ত্বাবধায়ক।’ (সুরা : জুমার, আয়াত : ৬২) কোরআনের অন্য আয়াতে এসেছে, ‘তিনি (আল্লাহ) সব কিছু সৃষ্টি করেছেন এবং প্রত্যেককে যথোচিত আকৃতি দান করেছেন।’ (সুরা : ফুরকান, আয়াত : ২)
আরো ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ কোনো ব্যক্তিকে তার সামর্থ্যের বাইরে দায়িত্ব দেন না। সে যা অর্জন করে, তা-ই তার জন্য এবং সে যা কামাই করে তা তারই ওপর বর্তাবে।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৮৬)
আলী (রা.) থেকে আরো বর্ণিত আছে, মহানবী (সা.) বলেন, কোনো বান্দাই মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না চারটি বিষয়ে বিশ্বাস স্থাপন করে। তা হলো—১. এ সাক্ষ্য দেওয়া যে আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই এবং আমি তাঁর প্রেরিত রাসুল। ২. মৃত্যুতে বিশ্বাস করা, ৩. মৃত্যুর পর পুনরুত্থানে বিশ্বাস করা, ৪. তাকদিরে বিশ্বাস করা। (বায়হাকি)
ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসী হওয়া তাকদিরের বিশ্বাসের ওপর নির্ভরশীল। ফলে যে ব্যক্তি ঈমান আনে, কিন্তু তাকদিরে অবিশ্বাস করল, সে প্রকৃতপক্ষে একত্ববাদকেই অস্বীকার করল। (সূত্র : তাবলিগে দ্বিন, ইমাম গাজালি (রহ.)
তাকদিরে অবিশ্বাসীদের রাসুলুল্লাহ (সা.) লানত করেছেন। রাসুল (সা.) বলেন, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, যদি কেউ আমার নির্ধারিত তাকদিরের ওপর সন্তুষ্ট না থাকে এবং বিপদাপদে ধৈর্যধারণ না করে, তাহলে সে যেন আমি ছাড়া অন্য কাউকে রব বানিয়ে নিল। (বায়হাকি)
====
উপরের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট হয়েছে, আপনার প্রশ্নের ঐ কথা ঈমান বিধ্বংসী নয়। এটাই সত্য কথা যে, আল্লাহ তায়ালা আগে থেকেই সবকিছু নির্ধারণ করে রেখেছেন। মানুষকে ভালো-মন্দ করার ইচ্ছাশক্তি আল্লাহ তাআলা দিয়ে দিয়েছেন। মানুষ নিজের ইচ্ছায় ভালো অথবা মন্দ বেছে নেয়। যার ফলে তার ভালো কাজের সওয়াব হয়, মন্দ কাজের শাস্তি হয়।
والله اعلم بالصواب
মুফতী ও মুহাদ্দিস, জামিআ মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়া, মোহাম্মদপুর
মন্তব্য (০)
কোনো মন্তব্য নেই।
এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর
৪০৯৩৩
রাসূলুল্লাহ সা. কি সম্পর্কে ওয়ারাকা ইবনে নওফিলের ভাতিজা ছিলেন?
১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
গোবিন্দগঞ্জ

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি
৯৫৩১৪
সালামের জবাবে পাল্টা সালাম দেয়া কি ঠিক?
১২ মার্চ, ২০২৫
মুরাদনগর

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী
সাম্প্রতিক প্রশ্নোত্তর
মাসায়েল-এর বিষয়াদি
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে