আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

সাদকাতুল ফিতর: কে দিবে? কী দিবে? কখন দিবে? কাকে দিবে?

প্রশ্নঃ ৩২৫৬৬. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, ফিতরা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই। আমার ফিতরা কিভাবে দান করলে সবচেয়ে ভালো হবে?,

১৬ মার্চ, ২০২৪

Chattogram

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


এক. সাদকাতুল ফিতর কার ওপর ওয়াজিব?
প্রত্যেক স্বাধীন মুসলমানের ওপর যার কাছে ঈদের দিন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য (ঘর, কাপড়, গাড়ি ইত্যাদি)-এর অতিরিক্ত নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকবে, তার ওপর সাদকাতুল ফিতর ওয়াজিব। (আল জাওহারাতুন নিয়ারাহ ১/১৭০)
পরিবারের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব যার; সাদকাতুল ফিতর আদায় করার দায়িত্বও তার। তাই স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি ও অধীনস্থদের সাদকাতুল ফিতর আদায় করবে পরিবারের দায়িত্বশীল কর্তা ব্যক্তি। যদি তাদের সবাই নিজ নিজ ফিতরা দিতে সামর্থ্য না রাখে। তবে নিজেরাই নিজেদের ফিতরা আদায় করা উত্তম। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাযি. বলেন,
فَرَضَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ زَكَاةَ الْفِطْرِ صَاعًا مِنْ تَمَرٍ أَوْ صَاعًا مِنْ شَعِيْرٍ عَلَى الْحُرِّ وَالْعَبْدِ وَالذَّكَرِ وَالأُنْثَى وَالصَّغِيْرِ وَالْكَبِيْرِ مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ وَأَمَرَ بِهَا أَنْ تُؤَدَّى قَبْلَ خُرُوْجِ النَّاسِ إِلَى الصَّلاَةِ
গোলাম, স্বাধীন, পুরুষ, নারী, ছোট, বড় সব মুসলিমের ওপর রাসূলুল্লাহ ﷺ এক ‘সা’ খেজুর, অথবা এক ‘সা’ গম জাকাতুল ফিতর ফরজ করেছেন এবং নামাজের পূর্বে তা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। (মুসলিম ৯৮৪)
দুই. কী দিয়ে আদায় করবেন?
সাদকাতুল ফিতর সম্পর্কিত হাদীসগুলো পর্যালোচনা করলে এ বিষয়ে মোট পাঁচ প্রকার খাদ্যের বর্ণনা পাওয়া যায়: যব, খেজুর, পনির, কিসমিস ও গম। হাদীসে এ ৫টি দ্রব্যের যেকোনোটি দ্বারা ফিতরা আদায়ের সুযোগ দেওয়া হয়েছে যেন মুসলমানগণ নিজ নিজ সামর্থ্য ও সুবিধা অনুযায়ী এর যেকোনো ১টি দ্বারা তা আদায় করতে পারে। এ পাঁচ প্রকারের মধ্যে যব, খেজুর, পনির ও কিসমিস দ্বারা সদকা ফিতর আদায় করতে চাইলে প্রত্যেকের জন্য এক সা’ দিতে হবে। আর গম দ্বারা আদায় করতে চাইলে আধা ‘সা’ দিতে হবে। (তিরমিযী ১/৮৫ আবু দাউদ ১/২২৯ মুয়াত্তা মালেক ১২৪ মুসনাদে আহমদ ৬/৩৪৬ শরহু মাআনিল আছার ১/৩৫০ মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৬/৫০১ আলইসতিযকার ৯/৩৫৫)
তবে যেহেতু উপরোক্ত খাদ্যবস্তুর পরিবর্তে সেগুলোর মূল্য আদায় করারও অবকাশ আছে। সেহেতু উল্লেখিত খাদ্যবস্তুগুলোর মধ্য থেকে কোনো একটিকে মাপকাঠি ধরে তার সমমূল্যও সদাকাতুল ফিতর হিসাবে আদায় করা যাবে। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা-৩/১৭৪ )
অর্থাৎ গম,গমের আটা বা গমের ছাতু যদি হয়,তবে তা পৌনে দুই সের সাবধানতাবশত পুরো দুই সের দিতে হবে। এর সমপরিমাণ মূল্যও দেওয়া যায়। আর যদি খেজুর, কিসমিস, যব, যবের ছাতু এসবের কোন একটি দ্বারা ফিতরা দেয়া হয় তাহলে ৩ কিলো দেড়শ গ্রাম অথবা এর সমপরিমাণ মূল্য দিতে হবে। বর্ণিত যে বস্তুর হিসাবে দেওয়া হোক কিছু বেশি দেওয়াই ভালো। কারণ সামান্য কম হলে ফিতরা আদায় হবেনা। আর বেশি দিলে সওয়াব পাওয়া যায়। (আলমগীরী১/১৯৩)
তিন. কখন আদায় করবেন?
এটি ঈদের দিন ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে আদায় করা উত্তম। হাদীস শরীফে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি. বলেন,
فَرَضَ رَسُولُ اللهِﷺ زَكَاةَ الْفِطْرِ طُهْرَةً لِلصّائِمِ مِنَ اللّغْوِ وَالرّفَثِ، وَطُعْمَةً لِلْمَسَاكِينِ، مَنْ أَدّاهَا قَبْلَ الصّلَاةِ، فَهِيَ زَكَاةٌ مَقْبُولَةٌ، وَمَنْ أَدّاهَا بَعْدَ الصّلَاةِ، فَهِيَ صَدَقَةٌ مِنَ الصّدَقَاتِ
রাসূলুল্লাহ ﷺ সাদকাতুল ফিতরের বিধান দিয়েছেন- রোযাদারকে অনর্থক ও অশ্লীল কথা থেকে পবিত্র করার জন্য এবং মিসকিনদের খাবারের ব্যবস্থা করার জন্য। সুতরাং যে ব্যক্তি ঈদের নামাযের পূর্বে তা আদায় করবে তার জন্য তা মাকবুল সদকা হবে। আর নামাযের পর আদায় করলে তা অন্যান্য সদকার মতো হবে। (আবু দাউদ ১৬০৯)
অবশ্য কোনো কোনো সাহাবী থেকে ঈদের কয়েকদিন পূর্বেও ফিতরা আদায়ের কথা প্রমাণিত আছে। যেমন নাফে রাহ. বলেন,
كَانَ ابْنُ عُمَرَ يُؤَدِّيهَا قَبْلَ ذَلِكَ بِالْيَوْمِ وَالْيَوْمَيْنِ ‏
আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাযি. ঈদের দু’ একদিন পূর্বেই তা (ফিতরা) আদায় করে দিতেন। (আবু দাউদ ১৬০৬)
সুতরাং সদকাতুল ফিতর রমযানের শেষ দিকেই আদায় করা উচিত। এতে করে গরীব লোকদের জন্য ঈদের সময়ের প্রয়োজন পূরণেও সহায়তা হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আদায় না করলে পরবর্তীতে আদায় করে দেওয়া আবশ্যক।
চার. কাকে দেওয়া যাবে?
যারা যাকাত পাওয়ার অধিকার রাখে তারাই সাদকায়ে ফিতরের হকদার। যেসব খাত ও ব্যক্তি যাকাতের হকদার নয়, তাদের ফিতরা দেয়া যাবে না। (ফাতাওয়া শামী ৩/৩২৫)
আল্লাহ তাআলা বলেন,
إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاء وَالْمَسَاكِينِ وَالْعَامِلِينَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ وَفِي الرِّقَابِ وَالْغَارِمِينَ وَفِي سَبِيلِ اللّهِ وَابْنِ السَّبِيلِ فَرِيضَةً مِّنَ اللّهِ وَاللّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ
সাদকা হলো কেবল ফকির, মিসকিন, যাকাত আদায়কারী ও যাদের চিত্ত আকর্ষণ প্রয়োজন তাদের হক এবং তা দাস-মুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে জেহাদকারীদের জন্য এবং মুসাফিরদের জন্য, এই হলো আল্লাহর নির্ধারিত বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। (সুরা তাওবাহ : আয়াত ৬০)
উল্লেখ্য, একজনের ফিতরা একজন ফকিরকে দেওয়া উত্তম। একজনের ফিতরা কয়েকজন ফকিরকে বন্টন করে দেওয়া কমপক্ষে মাকরূহে তানযীহী।
তবে কয়েকজনের ফিতরা একজনকে দেওয়া জায়েজ আছে, কোন অসুবিধা নেই । (ফাতাওয়া শামী ৩/৯২১)

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী
সিনিয়র মুহাদ্দিস, মাদরাসা দারুর রাশাদ, মিরপুর
খতীব, বাইতুল ফালাহ জামে মসজিদ, মিরপুর

প্রসঙ্গসমূহ:

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy